আঙুল যারা চোষেন, জায়গায় বইস্যা আওয়াজ দ্যান

আঙুল যারা চোষেন, জায়গায় বইস্যা আওয়াজ দ্যান

Daily Nayadiganta

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবশেষে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন বলেই মনে হয়। তার মনোনীত ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক শোভন ও রাব্বানীর কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজির ঘটনা দিয়ে এই কাহিনীর শুরু।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেগা উন্নয়ন প্রকল্প থেকে এ দুই নেতা ভিসির কাছে ৬ শতাংশ হারে চাঁদা দাবি করেছিলেন। তাতে তাদের দিতে হতো ৮৬ কোটি টাকা। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফারজানা ইসলাম তাদের এক কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন, যেন ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে ‘কোনো বাধা না দেয়’। সে কথা তারা অকপটে স্বীকারও করেছেন। ওই এক কোটি ৬০ লাখ টাকাকে তারা বলেছিলেন ‘ঈদের বকশিশ’। আর যে ৮৬ কোটি টাকা তারা দাবি করেছিলেন, সেটাকে তারা বলেছিলেন, ‘ন্যায্য ভাগ’। জাহাঙ্গীরনগরের ওই দুর্নীতির সহযোগী ভিসি কোত্থেকে টাকা দিয়েছেন বা দেবেন, সেটি নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের কোনো মাথাব্যথা ছিল না। তারা বলেছিলেন, ওই এক কোটি ৬০ লাখ টাকা ছিল তাদের ঈদের বকশিশ। তা দিয়ে তারা ঈদও করেছিলেন ভালোই। বাকি ৮৬ কোটি টাকার জন্য তারা ভিসি ফারজানা ইসলামের সাথে বৈঠককালে চরম দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। তারা এ কথাও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ থেকে তারা যে ভাগ পান, এ কথা সবাই জানে।’

সাধারণত একজন পুলিশ কনস্টেবল ঘুষ খেলে আমরা বলে থাকি, এ বখরা আইজিপি পর্যন্ত যায়। এটা আমাদের সমাজের দীর্ঘকালের প্রচলিত ধারণা। তবে এর সত্য-মিথ্যা বলতে পারি না। জাহাঙ্গীরনগরের ভিসি ফারজানা ইসলাম যখন জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগকে ‘ঈদের বকশিশ’ দিতে গিয়েছিলেন, তখন তারা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বখরাটাও চেয়ে নিয়েছিলেন। এ পর্যন্ত যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যায়, সে আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছিলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা কেন্দ্রকে জানানোর দরকার কী?

কিন্তু কেন্দ্রের ‘বখরা’ ছাড়া জাবি ছাত্রলীগ কোনো নি®পত্তিতে আসতে চাইছিল না। পরের ৬ শতাংশ ‘ন্যায্য ভাগ’ আদায়ের জন্য ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাই ভিসির সাথে কথা বলেছিলেন। এ ঘটনা থেকে বলা যায়, ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি যে পর্যায়েই হোক না কেন তা কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে এক নেতা নাকি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন বা দিতে চেয়েছিলেন। তিনি নাকি দাবি করেছিলেন, ছয় মাসের মধ্যেই সে টাকা তিনি ডাবল করে নেবেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ডাবল কেন, তারা চাইলে ১০ গুণ করে নেয়ারও ক্ষমতা রাখতেন। একই ধরনের অভিযোগ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের এক নেতা। তার বক্তব্য, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক তাকে জবি শাখার সাধারণ সম্পাদক করার জন্য তার কাছে ঘুষ চেয়েছিলেন। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সে কথা তিনি প্রকাশ করে দিয়েছেন।

এহেন পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের এই জোরজবরদস্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। প্রধানমন্ত্রী এর প্রায় সাথে সাথেই ছাত্রলীগের ওই দুই নেতার গণভবনে প্রবেশের পাস স্থগিত করে দেন। তারপর দ্রুতই অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে। তবে ছাত্রলীগের এ দুই নেতার বিরুদ্ধে এই দুর্নীতিই একমাত্র অভিযোগ নয়। অভিযোগ ছিল, সাংগঠনিক কাজকর্ম বাদ দিয়ে তারা দুপুর পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকতেন। তারা ধরাকে এতটা সরাজ্ঞান করছিলেন যে, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদেরকেও তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় রেখেছেন। বিভিন্ন সম্মেলনে মন্ত্রীদের দাওয়াত দিয়ে তারা দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা পরে গিয়ে হাজির হয়েছেন। এর শিকার হয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি প্রমুখ নেতা।

এ ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে ছিল মাদক গ্রহণের অভিযোগ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, ছাত্রলীগের অফিস থেকে পাওয়া গিয়েছিল ফেনসিডিল ও অন্যান্য মাদক। পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের জন্য একেবারে অসহনীয় পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। আর তাই প্রধানমন্ত্রী নিজের মনোনীত হলেও, ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। শোভন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দি¦তা করে কর্তৃপক্ষের ব্যাপক কারচুপি সত্ত্বেও নুরুল হক নূরের কাছে পরাজিত হন। ওই কলঙ্কজনক নির্বাচনে রাব্বানীকে অবশ্য ‘জয়ী’ ঘোষণা করা হয়। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলছে রাব্বানীকে অপসারণের।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের নতুন মনোনীত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে গণভবনে গিয়েছিলেন। শুদ্ধি অভিযান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নতুন ছাত্রলীগ নেতাদের বলেছেন, ‘কোনো নালিশ শুনতে চাই না। ছাত্রলীগের পর যুবলীগকে ধরেছি। একে একে সব ধরব। সমাজের অসঙ্গতি এখন দূর করব। আমিই করব। জানি, এগুলো কঠিন কাজ। কিন্তু করব। এ কাজ করতে গিয়ে অনেক বাধা আসবে। তারপরও আমি করবই।’

এ ক’দিন আগে ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে দলের শীর্ষনেতাদের গোয়েন্দা ফাইল দেখিয়ে শেখ হাসিনা যুবলীগ নেতাদের অপকর্মের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে। তিনি এ নিয়ে ঢাকা দক্ষিণের দুই নেতার বিষয়ে ইঙ্গিত করার পর সব মহলই এ বিষয়ে সরব হয়ে পড়েন। শুদ্ধি অভিযান চালানো হতে পারে, এই আশঙ্কায় নীরবে চলতে থাকেন দাপুটে সব যুবলীগ নেতা। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। রাজধানীর ফকিরাপুলে তার নিয়ন্ত্রিত ক্লাব তথা ক্যাসিনো থেকে আটক করা হয়েছে অনেককে। কয়েক বছর আগে যুবলীগ নেতা মিল্কি ও তারেক হত্যার পর এই খালেদকে অস্ত্র উঁচিয়ে চলতে দেখা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী যে দু’জনের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন খালেদ তাদের একজন। ওইদিন ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী কার্যনির্বাহী সভায় বলেছিলেন, ‘কোনো চাঁদাবাজের দরকার নেই। বিপদ এলে আগে ওরা অস্ত্র নিয়ে পালাবে।’ আবেগতাড়িত হয়ে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর লাশ ৩২ নম্বরে পড়ে থাকলেও কোনো আওয়ামী লীগ নেতা দেখতে যায়নি। আওয়ামী লীগকে আমি চিনি।’ এরপরই শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়। ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী তার জন্মদিন উপলক্ষে যুবলীগের দোয়া অনুষ্ঠান ও যুব জাগরণ সমাবেশের প্রসঙ্গ এলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চাঁদাবাজির টাকা হালাল করার জন্যই এমন আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরের যুবলীগের একজন নেতা চার থেকে পাঁচজন দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা করেন। বড় বড় অস্ত্র নিয়ে অস্ত্রধারীরা তার চার পাশে অবস্থান করে। এসব দেখলে মানুষের কী ধারণা হয়? তা ছাড়া, আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। এখন কেন ওই নেতা এত নিরাপত্তাহীনতায় আছেন? প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমন যুবলীগের দোয়ার আমার প্রয়োজন নেই। কিছুতেই এসব অপকর্ম সহ্য করা হবে না। অস্ত্রবাজি ও ক্যাডার রাজনীতি চলবে না। যেকোনো মূল্যে এই অপরাজনীতির অবসান ঘটাতে হবে।’

অভিযানে যুবলীগ নেতা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের অন্যতম নেতা খালেদ মাহমুদকে গুলশানের বাসা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার হেফাজতে একটি অবৈধ অস্ত্র পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তার কাছে মেয়াদোত্তীর্ণ আরো দু’টি অস্ত্র পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে একটি ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। এরপর মধ্যরাতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের উত্তর পাশে একটি ভবনের চতুর্থ তলায় পাওয়া গেছে তার টর্চারসেল। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ইলেকট্রিক শক দেয়ার যন্ত্র ও লাঠিসোটা। খালেদ ফকিরাপুলের ইয়াংম্যানস ক্লাবের সভাপতি। র‌্যাবের অভিযানে সেখানে পাওয়া গেছে ২৪ লাখ ৩৯ হাজার নগদ টাকা, বিপুল পরিমাণ মদ, বিয়ার ও ইয়াবা। গ্রেফতার করা হয়েছে ১৪২ জনকে। তাদের ৪১ জনকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, যাদের ১৬ জনই ক্যাসিনোর কর্মী। বাকিদের ছয় মাস করে কারাদণ্ড হয়েছে। তারা এসেছিলেন এই ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতে। তবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে পাকড়াও করা হয়নি কিংবা সম্ভব হয়নি।

তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের ক্যাসিনো। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এদের এমন ছবিও ছিল যাতে দেখা যাচ্ছে, এ দুই ব্যক্তিকে পাহারা দিচ্ছে কিছু সশস্ত্র ব্যক্তি।
ঢাকা মহানগরীতে এখন অবৈধভাবে ৬০টিরও বেশি ক্যাসিনো পরিচালিত হচ্ছে। যুবলীগের নেতার এসব ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য নেপাল, থাইল্যান্ডসহ চারটি দেশ থেকে প্রশিক্ষিত নারীদের নিয়ে আসা হয়। নিয়ে আসা হয়েছিল পুরুষ কর্মীদেরও। ক্যাসিনোগুলোতে প্রতি রাতেই শতকোটি টাকার খেলা হয়ে থাকে। রাজধানীর সবগুলো ক্যাসিনোর কর্তৃত্বই যুবলীগ নেতাদের হাতে। একটি ক্যাসিনো চালান স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা।

গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে যুবলীগের সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক জি কে শামীমকে। তার অফিস থেকে নগদ এবং এফডিআর-এ প্রায় ২০০ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে র‌্যাব। তার মায়ের নামেই আছে ১৪০ কোটি টাকার এফডিআর। পাওয়া গেছে অস্ত্র, গোলাবারুদ, ম্যাগজিন, মদ ও মাদক।

যুবলীগ মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া গ্রেফতারের পর আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে যেন তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেছিলেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘বলছেন, ৬০টি ক্যাসিনো আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আপনারা ৬০ জনে কি এত দিন আঙুল চুষছিলেন? তাহলে যে ৬০ জায়গায় এই ক্যাসিনো, সেই ৬০ জায়গায় থানাকে অ্যারেস্ট করা হোক। সেই ৬০ থানার যে র‌্যাব ছিল, তাদের অ্যারেস্ট করা হোক।’ ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে মিরপুরের দারুস সালাম এলাকায় মহানগর যুবলীগ উত্তরের কয়েকটি ওয়ার্ডের যৌথ ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে যুবলীগ নেতা এ কথা বলেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অপরাধ করলে শাস্তির ব্যবস্থা হবে। প্রশ্ন হলো, এখন কেন অ্যারেস্ট হবে? অতীতে হলো না কেন? আপনি তো সবই জানতেন। আপনি কি জানতেন না? নাকি সহায়তা দিয়েছিলেন? সে প্রশ্নগুলো আমরা এখন তুলব। আমি অপরাধী। আপনি কী করছিলেন? আপনি কে, আমাকে আঙুল তুলছেন?’ উত্তেজিত হয়ে যুবলীগ চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘আমাকে অ্যারেস্ট করবেন? করেন। রাজনীতি করি। ১০০ বার অ্যারেস্ট হবো। আমি অন্যায় করেছি। আপনারা কী করছিলেন? অ্যারেস্ট করবেন? আমি বসে থাকব না। কারণ আপনিই প্রশ্রয় দিয়েছেন।’ ওমর ফারুক আরো বলেন, ‘এখন হঠাৎ করেই কেন জেগে উঠলেন? ব্যাপারটা কী? এটা কি বিরাজনীতিকরণের দিকে আসছেন? দলকে পঙ্গু করার কোনো ষড়যন্ত্রে আসছেন? নিষ্ক্রিয় করার ষড়যন্ত্রে আসছেন?’ তা শেষ কথাগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগ চেয়ারম্যান। তিনি দুগ্ধপোষ্য শিশু নন। তবে প্রশ্নটা তিনি ঠিকই করেছেন, এত দিন কেন হয়নি? এসব ক্যাসিনো এক দিনে গড়ে ওঠেনি। যেখানে প্রতি রাতে শতকোটি টাকার জুয়া খেলা হয়, সেটা র‌্যাব-পুলিশ জানে না, তা হতে পারে না। ওমর ফারুক চৌধুরী দাবি করেছেন, তার যুবলীগ বড় সুশৃঙ্খল দল।’ কিন্তু ঢাকার অন্ধকার জগতের সবটাই নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগ নেতারা। জনাব চৌধুরী কি এর কিছুই জানতেন না? নাকি তিনিও ‘বসে বসে আঙুল চুষছিলেন’? র‌্যাব-পুলিশের সহজ জবাব আছে। সেটা হলো, এসব ক্যাসিনো যারা পরিচালনা করেন, তারা খুবই প্রভাবশালী। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাস-মালিক ও চালকদের প্রসঙ্গে বলেছিলেন, তারা খুবই প্রভাবশালী। চাইলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না।

বাস মালিক-শ্রমিকদের হাতে আমরা অস্ত্র দেখিনি। কিন্তু যুবলীগ নেতাদের চার পাশে অস্ত্র দেখেছেন প্রধানমন্ত্রীও। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ না পেলে সম্ভবত তারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যেতেন। এ কথাও সত্য, জুয়ার যেসব মেশিন এ ক্লাবগুলোতে দেখা গেল, তার কোনোটাই বাংলাদেশে তৈরি নয়। এসব মেশিন নৌ কিংবা সড়কপথে আমদানি করা হয়েছে। থাইল্যান্ড ও নেপাল থেকে যে দক্ষ জুয়াড়িদের এসব ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল, তারাও এখানে পালিয়ে আসেনি। সরকারের কোনো-না-কোনো কর্তৃপক্ষ এদের আসার অনুমতি দিয়েছে। কেমন করে এটা সম্ভব হলো? যুবলীগ নেতারা কি তাদের পৃষ্ঠপোষক, রাজনৈতিক মুরব্বি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘ন্যায্য বখরা’ না দিয়েই এসব চালিয়ে যেতে পারছিলেন? উল্লেখ করা যায়, ক্যাসিনো অপারেটররা গত চার বছরে তাদের ব্যবসা চালানোর জন্য আইনের মারপ্যাঁচে ৫৬টি রিট পিটিশন দাখিল করেছেন। সে বিষয়েও সবাই চুপ। সুতরাং ওমর ফারুক চৌধুরী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই শুধু আঙুল চুষছিল, এমন কথা বলা যাবে না। তিনি অভিযোগ করেছেন, মিডিয়া কেন চুপ ছিল? না। আসলে চুপ ছিল না। মাঝে মধ্যে তারা দু-একটি রিপোর্ট করেছে। মিডিয়া এতটুকুই করতে পারে। রিপোর্টে কাজ না হলে মিডিয়ার কিছু করার থাকে না। আর ‘আঙুল চোষার’ অভিযোগ শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে করলেই হবে না, অভিযোগ উত্থাপনকারীকে নিজের দিকেও তাকাতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

[email protected]