
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই ও আগস্ট মাসের আমদানি বিল পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফের ৩০ বিলিয়ন ডলারের নেমে এসেছে।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) দেড় বিলিয়ন (১৫০৩.৫০ মিলিয়ন) ডলারের সমপরিমাণ অর্থ আকুকে পরিশোধ করার পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মূলত জুলাই-আগস্ট মাসে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমদানি লেনদেন বাবদ গৃহীত পণ্যের অর্থ পরিশোধে এই বিল দেওয়া হয়। আকুর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে লেনদেনের জন্য দুই মাস পরপর এ ধরনের বিল পরিশোধ করতে হয়।
গত মাস শেষে রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। আকুর দেড় বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর তা ৩০ বিলিয়নে নেমে এলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ স্থিতিশীল রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের ইতিহাসে ২০২২ সালের আগস্টে রিজার্ভ উঠেছিল সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে। এর পর আওয়ামী সরকারের সহায়তায় কয়েকটি ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ব্যাপকভাবে অর্থ পাচার করতে থাকে। যার কারণে রিজার্ভে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়। প্রতি মাসে রিজার্ভ কমতে–কমতে সরকার পতনের আগে গত বছর জুলাই শেষে তা ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। তবে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর আর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি না করে অর্থ পাচার রোধে কঠোর হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিগত সরকারের রেখে যাওয়া প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়া পরিশোধ করার পরও গ্রহণযোগ্য অবস্থায় রয়েছে রিজার্ভ।
সবশেষ চলতি মাসের ৭ সেপ্টেম্বর শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে মোট রিজার্ভ ৩ হাজার ৩১ কোটি ডলার বা ৩০ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ ২ হাজার ৫৪০ কোটি বা ২৫ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার।
এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা সবসময়, প্রকাশ করা হয় না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) বা ব্যয়যোগ্য নিট রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রয়েছে।
প্রতি মাসে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার করে এ রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ৪ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন ভালো অবস্থানে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।
আকু কী?
আকু হলো- একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে আকুর সদর দপ্তর। এ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করে। তবে এখন আকুর সদস্য পদ নেই শ্রীলঙ্কার। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন যাবত আমদানি ব্যয় পরিশোধের বিভিন্ন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির আকু সদস্য পদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।
জাতিসংঘের এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতি ও সামাজিক কমিশনের (এসক্যাপ) ভৌগোলিক সীমারেখায় অবস্থিত সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য আকুর সদস্য পদ উন্মুক্ত।