শনিবার (২৮ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাঁর ভাষায় ভাস্কর্য নির্মানে ‘বাড়াবাড়ি’ না করতে হুশিয়ারি দিয়েছেন। এরপরই নতুন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী রোববার (২৯ নভেম্বর) এনিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়ে প্রথম দিনই অফিসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভাস্কর্য ও মূর্তি এক জিনিস নয়। শনিবার আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা মো: হানিফ এক বক্তব্যে বলেছেন, ভাস্কর্য নির্মানের বিরোধীতা করতে গিয়ে যারা শাপলা চত্বরের উদাহরণ দিচ্ছেন, তাদের মনে রাখা উচিত সেদিনও হুঙ্কার দিয়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছিলেন। তিনি বলেন, তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের জবাবে শাপলা চত্বর থেকে পাল্টা হুঙ্কার দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল পালানোর পথ পাবে না। অথচ সন্ধ্যার পর তারাই লেজ গুটিয়ে পালিয়েছিলেন। শাপলায় যাদের পরাজয়ের ইতিহাস তাদের হুঙ্কারে আওয়ামী লীগ ভয় পায় না।
এদিকে ভাস্কর্যের নামে মূর্তির পক্ষে সাফাই গাইতে ইন্ডিয়াপন্থি আওয়ামী গণমাধ্যম গুলোও মাঠে সক্রিয়। বিভিন্ন আলোচনা ও টকশো’র মাধ্যমে তারা শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তিকে ভাস্কর্য বলে জনমত তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন।
অপর দিকে শুক্রবার চট্টগ্রামের এক তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ভাস্কর্যের নামে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি দেশের যেখানেই নির্মান করা হবে সেটাকে ছুড়ে ফেলা হবে। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নই। ভাস্কর্যের নামে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি নির্মানের বিরুদ্ধে।’ রাষ্ট্র ক্ষমতার সুযোগ পেলে সব ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলা হবে বলেও তিনি ঘোষণা করেন সংবাদ সম্মেলনে। ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থামবে না বলেও জানিয়েছেন মামুনুল হক। এসময় তিনি উল্লেখ করেন, ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিষটি ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সংশ্লিষ্ট।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মূর্তি নির্মানের বিরোধীতা প্রসঙ্গে প্রথম বলেছিলেন, সরকার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। শনিবার (২৮ নভেম্বর) তিনি পর্যবেক্ষণের পরবর্তি পদক্ষেপের বিষয় পরিস্কার করেছেন। মূর্তি নির্মানের পক্ষে দৃঢ় অবস্থানের কথা ব্যক্ত করে তাঁর ভাষায় ভাস্কর্য নির্মানে বিরোধীতার নামে বাড়াবাড়ি না করতে হুশিয়ারি দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীরা এখন মূর্তি এবং ভাস্কর্যের মধ্যে পার্থক্য খুজে বেড়ানোর অপচেষ্টা লিপ্ত হয়েছেন। তারা বলতে চাচ্ছেন মূর্তি ও ভাস্কর্য এক জিনিস নয়।
মূর্তি ও ভাস্কর্যে পার্থক্য কি?
কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইসলামিক স্কলাররা মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে পার্থক্য নেই বলেই উল্লেখ করেছেন। হাদিসের আলোকে বলা হচ্ছে প্রাণীর আকৃতি ধারন করে এমন কোন ভাস্কর্য নির্মান ইসলাম অনুমোদন করে না। সৌন্দর্যের জন্য বা শোভা বর্ধনের লক্ষ্যে প্রাণীর আকৃতি বা চেহারার অবয়ব নেই এমন ভাস্কর্য তৈরি করা যেতে পারে। মানুষের আকৃতি বা কোন প্রাণীর চেহারা বোঝা যায় এমন ভাস্কর্য তৈরি করা ইসলাম ধর্মীয় সংস্কৃতির বিরোধী। মানব আকৃতির ভাস্কর্য তৈরি করলে সেটা হারাম। তাহলে মূর্তির সাথে ভাস্কর্যের পার্থক্য কি, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসলামিক স্কলাররা বলেন, মূর্তি হচ্ছে যে বস্তুটিকে তৈরি করার পর পুজা করা হয়। এটা পুরোপুরি র্শিক গুণাহের কাজ। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার সাথে কাউকে শরীক বা অংশিদার করা। আর ভাস্কর্যকে পুজা করা হয় না। তবে এতে প্রাণীর আকৃতি ধারণ করা হয়। তাই ইসলাম ধর্মীয় সংস্কৃতিতে ভাস্কর্য নির্মান করা হারাম। ভাস্কর্যের সামনে দাড়িয়ে শ্রদ্ধা জানানো এবং ফুল দেয়াও ইসলাম ধর্মীয় সংস্কৃতিতে হারাম।
সুতরাং ইসলামি স্কলারদের মতে ভাস্কর্যের নাম দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি নির্মানের কোন অবকাশ নেই।
এদিকে সরকার ভাস্কর্যের কার্ড নিয়ে এখন মাঠে নামছে। সরকারের মন্ত্রি এবং আওয়ামী প্রচার মাধ্যম গুলো শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি না বলে ভাস্কর্যের প্রচারণা চালাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পুরো এক বছরকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করা হয়। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি স্থাপনের প্রতিযোগিতা চলছে। অপর দিকে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামও শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি নির্মানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।