আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি আলোচনায় আসে ‘কিংস পার্টি’ খ্যাত কয়েকটি ছোট দল। তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও যুক্তফ্রন্টকে নিয়ে প্রথম দিকে আগ্রহী হন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত, দলছুট ও নিষ্ক্রিয় নেতারা। একতরফা নির্বাচনে এমপি হওয়ার আশায় নতুন দল তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন বিএনপি’র সাবেক দুই নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। একই উদ্দেশ্যে বিরোধী জোটের রাজপথের আন্দোলন ছেড়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. ইবরাহিম। তবে দিন যত গড়াচ্ছে হতাশা ভর করছে এসব নেতাদের মধ্যে। কারণ এসব নেতা যে আসনগুলো থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন বা নির্বাচন করতে চাইছেন সেখানে রয়েছে সরকার দলের হেভিওয়েট প্রার্থী। সেজন্য তাদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ফলে অনেকে রাখঢাক না করে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া এ পর্যন্ত আসন নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে তাদের তেমন আলোচনাও হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতি আসনে ডামি প্রার্থী দেয়ার নির্দেশনা এসেছে।
ইতিমধ্যে প্রায় সব আসনে আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। এতে প্রতি আসনেই আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের ভোটযুদ্ধ হওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় কিংস পার্টির নেতারা নিজেদের প্রার্থী নিয়ে হতাশ।
এ ছাড়া এসব দল ও জোটের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন জায়গা থেকে আশ্বাস পেয়েছিলেন বিএনপিসহ অনেক দল থেকে বড় নেতারা তাদের দলে যোগ দেবেন। তাদের নিয়ে নির্বাচনে জমজমাট লড়াই করতে পারবেন। কিন্তু মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়েও এমন কোনো চিত্র দেখা যায়নি। বিএনপি বা অন্য দলের বড় কোনো নেতা কোনো কিংস পার্টিতে যাওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এতে এসব দল ও জোটের উদ্যোক্তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে তৃণমূল বিএনপি’র মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকারের আসন নিয়ে দেন-দরবারের ফোনালাপ। ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে বিএনপি’র এই সাবেক নেতাকে বলতে শোনা যায়- ‘না, আমি ৫-এ কিনবো না। প্রধানমন্ত্রীর সামনে আমি কথাটা বলেছি, যা বলার বলেছি। এ অবস্থায় আমি কথার পরিবর্তন করবো না। উনারা আমাদের গিনিপিগ মনে করে, যা খুশি আমাদের দ্বারা করাবে। তা হবে না।
এদিকে তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী মনোনয়ন ফরম কিনেছেন সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসন থেকে। ওই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ ছাড়া রয়েছে সরকারদলীয় একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী। বিএনপি ছেড়ে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেয়ার পর থেকে এলাকায় কোণঠাসা হয়ে আছেন সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব। বিয়ানীবাজারে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া এলাকায় তার নিজস্ব কোনো ভোটব্যাংক কিংবা তার দলের কোনো কমিটিও নেই। সম্প্রতি সিলেটের নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে অনেকটা ঘরবন্দি অবস্থায় ছিলেন তিনি। এলাকায় মুভমেন্ট করেন পুলিশ প্রটেকশনে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তার এমপি পদে বিজয়ী হওয়া অনেকটা দুরূহ বলা যায়।
এদিকে নির্বাচনী আসন নিয়ে দোটানায় পড়েছেন সৈয়দ ইবরাহিম। গত সোমবার প্রথমে ঢাকার দুটি আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর গতকাল চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) ও কক্সবাজার-৪ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনটি আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার কথা জানান তিনি। এদিকে তার নিজের এলাকা হাটহাজারীতে সৈয়দ ইবরাহিমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে উপজেলা বিএনপি। ২০১৮ সালে ধানের শীষ নিয়ে তিনি ওই আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন।
সৈয়দ ইবরাহিম মানবজমিনকে বলেন, আপনারা ধৈর্য ধরেন। ৩০ তারিখের পর বিষয়গুলোর ফয়সালা হবে। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে থাকলে তার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কতোটুকু থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, এটা লম্বা প্রশ্ন। এ প্রশ্নের উত্তর এই মুহূর্তে দেয়া সম্ভব না।
ওদিকে নানা রহস্য আড়ালে রেখে গঠন করা হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)। সপ্তাহ দুয়েক আগে প্রতিষ্ঠাকালীন কয়েকজন নেতাকে বাদ দিয়ে দলটির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। তখন হাঁকডাক দিয়ে জানানো হয়, হেভিওয়েট সাবেক মন্ত্রী এমপি দলে দলে যোগ দেবেন নতুন এই দলটিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেরকম কিছু ঘটেনি। হাতেগোনা ৪-৫ জন দলছুট সাবেক এমপি যোগ দেন বিএনএমে। দলটির মহাসচিব করা হয় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতা মো. শাহাজানকে। এ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয় বিএনপি’র সাবেক নেতা শাহ মো. আবু জাফরকে।
তবে এখন পর্যন্ত দলটির চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করতে পারেনি। বিএনএমের মহাসচিব শাহজাহান মনোনয়ন ফরম কিনেছেন চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসন থেকে। ওই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের একাধিকবারের সংসদ সদস্য প্রবীণ সাংবাদিক শফিকুর রহমান। এ ছাড়া রয়েছে আওয়ামী লীগের একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী। ফরিদগঞ্জে বিএনএমের কোনো কমিটি নেই। এ ছাড়া নেই কর্মী-সমর্থকও। সেক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনে তার বিজয়ী হওয়া অনেকটা অনিশ্চিত বলা যায়। এ বিষয়ে এডভোকেট শাহজাহান মানবজমিনকে বলেন, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী একজন কিংবা একশ’জন থাকলেও আমার কোনো সমস্যা নাই। আমার নিজস্ব ভোট রয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের লোকেরাও আমাকের ভোট দিবে।
এদিকে গতকাল ২৩০ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে তৃণমূল বিএনপি। তবে গতকাল পর্যন্ত প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেনি বিএনএম। দলটির এক নেতা জানিয়েছেন, গতকালও কয়েকজন দলে যোগ দিয়ে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। শেষদিনে হয়তো ৩০০ আসনেই একক প্রার্থী ঘোষণা করবেন।