- অনলাইন প্রতিবেদক
- ২৫ জানুয়ারি ২০২৩
বক্তব্য রাখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। – ছবি : নয়া দিগন্ত
আওয়ামী লীগ কখনোই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, ভিন্নমত সহ্য করে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ২৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে আমাদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ওরা আমাদের সংস্কৃতি, চিন্তাবোধকে ধ্বংস করেছে। এই আওয়ামী লীগ আবারো তামাশার নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু না, জনগণ এবার নিজেই নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। আর এই জনগণের সাথে থেকে এ দানবীয় সরকারকে বিদায় করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।
মির্জা ফখরুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও চেতনাকে ধ্বংস করেছে স্বাধীনতা যুদ্ধের দাবিদার আওয়ামী লীগ। এই ২৫ জানুয়ারি তারা গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছিল। নতুন প্রজন্ম এ ইতিহাস জানে না। তা তারা মুছে ফেলেছে। কেন গণতন্ত্র হত্যা করেছেন, আওয়ামী লীগের কাছে জিজ্ঞাসা করলেই তাদের গায়ে জ্বালা ধরে। উল্টা বলে বিএনপি নাকি গণতন্ত্র নষ্ট করেছে।
তিনি বলেন, সেদিন আপনাদের একদলীয় বাকশাল কায়েমের প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী, ব্যারিস্টার মঈনুল সরকার থেকে পদত্যাগ করেছিল। পল্লীকবি জসিমউদ্দীন তার পদক প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন, এই আওয়ামী লীগ কখনোই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ভিন্নমত সহ্য করে না। আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মওলানা ভাসানীকে সন্ত্রাসী কায়দায় দল থেকে বের করে দিয়েছিল। এরা সন্ত্রাসী দল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকারের সাথে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা মনে করে এদেশটি তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। জনগণকে তারা প্রজা মনে করে। জনগণও তাদের প্রত্যাখান করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম বলেন, আমাদের ১০ ডিসেম্বর সমাবেশকে নিয়ে আওয়ামী লীগ তার পুলিশ ডিবি বাহিনী দিয়ে হামলা চালিয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের গুলি করেছে, হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ মনে করছিল, বিএনপিকে ভয় দেখিয়ে আটকে রাখা যাবে। তারা কি শান্তিতে ছিলেন?
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ বলেন, সময় আর বেশি নাই। রক্ষা পাবেন না। এই দিন কি এমনি যাবে! আপনাকেও এমন অবস্থায় পড়তে হবে। জেল জুলুম আমাদের কাছে পান্তা ভাত। জুলুম করে কি আমাদের থামাতে পারছেন? এই দেশে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। অন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আমরা বিজয় অর্জন করবো ইনশাআল্লাহ।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড মোশাররফ হোসেন বলেন, ১৯৭৫ সালের এই দিনে যে কলঙ্কের যে ঘটনা ঘটেছিল। তা এদেশের জন্য বড় কলঙ্কের। শেখ মজিবুর রহমান বাকশাল করে সকল রাজনীতিক দল নিষিদ্ধ করেছিলেন। পরে জিয়াউর রহমান মাধ্যমে আবার এই আওয়ামী রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু এই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে টা বাতিল করেছে। আজকে দেশের কি অবস্থা করেছে এই আওয়ামী লীগ। দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই, মানবধিকার নেই। তারা গায়ের জোরে সরকার। ভোট নির্বাচিত সরকার নয় তারা। যেখানেই আওয়ামী লীগ সেখানেই তারা গণতন্ত্র হত্যা করছে। ১০ দফার মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনুদ্ধারের করবো ইনশাআল্লাহ।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, নতুন বাংলাদেশর ও নতুন প্রজন্ম এটা জানা প্রয়োজন যে স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। যারা মুক্তি পক্ষের শক্তি বলে দাবি করে তারা মুক্তি যুদ্ধে যাননি। সীমান্ত পার হয়ে তারা ভারতে লুকিয়ে ছিল। তারা কি করে মুক্তিযুদ্ধের শক্তি হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর তারা ক্ষমতা নিয়ে দেশের মানুষকে খুন, গুম করেছিল। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। আমরা আন্দোলনে নেমেছি , এ দেশে নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে ভোট দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। তারা যদি উন্নয়ন করে থাকে। তবে কেন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভোট করতে ভয় পায়।
স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য আজকের এইদিনে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিল শেখ মজিবুর রহমান। বাকশাল কায়েম করে তারা ধর্ষণ, লুটপাট, খুন, গুম করেছিল। তার পর আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্তমান সরকারের এই আওয়ামী লীগের চরিত্র সেই রকম। এদের চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আওয়ামী লীগের চরিত্র হলো একদলীয় শাসন কায়েম করা, এক নায়কতন্ত্র কায়েম করা। এটা অতীত ও বর্তমান দেখলেই বোঝা যায়।
আমান উল্লাহ আমান বলেন, আজকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস। আজকের এইদিনে অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের সকল রাজনীতি দল নিষিদ্ধ করেছিলেন বাকশালের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মজিবুর রহমান। শুধু চারটি মিডিয়া রেখে সব বন্ধ করেছিল। দেশটাকে কারাগার করেছে। কারাগারে নিয়ে কি আন্দোলন থেমে গিয়েছে। থামবে না। শেখ হাসিনা চায় দমন নীতি চালিয়ে ক্ষ্মতায় থাকতে। ১৪, ১৮ সালের মতো আরেকটি ভোটবিহীন নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকতে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চলনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবেদীন ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপি নেতা মীর সরাফত আলী সপু, ইশরাক হোসেন, তাবিথ আউয়াল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।