আনিসুর রহমান
ক. একক নেতৃত্ব
আওয়ামী লীগে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেতা থাকলেও যৌথ নেতৃত্ব সব সময়ই সক্রিয় ও শক্তিশালী ছিলেন। বিশেষ করে সভাপতিমণ্ডলী ছিল খুবই শক্তিশালী। কিন্তু ১৯৮১ সালে দলের হাল ধরলেন ৩৪ বছর বয়সী শেখ হাসিনা। এর পর টানা প্রায় সাড়ে চার দশক তিনিই সর্বেসর্বা। দলের নানা পর্যায়ে কমিটি থাকলেও যা, না থাকলেও তা। তাঁর কথা, কাজ আর ইশারাই দলের পথপরিক্রমা। দলটি শেষতক এমন পর্যায়ে চলে এসেছিল, শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিমত করতে পারে এমন কোনো কণ্ঠস্বর খুঁজে পাওয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। এমনভাবে তিনি দলটি চালিয়ে আসছিলেন, তা হয়ে উঠেছিল ঘরোয়া বিষয়। কাকে কখন ওঠাবেন, কাকে নামাবেন; কাকে বহিষ্কার আর কাকে দলে স্থান দেবেন; কাকে মন্ত্রী করবেন, মেয়র করবেন, রাষ্ট্রপতি করবেন– তাঁর কাছ থেকে ঘোষণা আসার আগে পর্যন্ত কারও পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না। যদিও কখনও কখনও লোক দেখানো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হতো; তাতে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তটি ছিল কর্তার ইচ্ছাতেই কর্ম।
খ. নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিপদ
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ভূমিধস বিজয় অর্জন করে। বিএনপি-জামায়াতের বাইরে প্রায় সব উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আস্থা রাখে। দেশের তরুণ প্রজন্ম বিশেষত ২০০৮ সালে প্রথমবার ভোটাররা বিপুল সমর্থন দেয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মহাজোট ৩০০ আসনের মধ্যে জিতেছিল ২৩০ আসনে; মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টি জিতেছিল আরও ২৭ আসনে। জামায়াত-বিএনপি জোটের আসন সংখ্যা ছিল ৩২; জামায়াত সাকল্যে ৩।
নির্বাচনে জিতে ২০০৯ সালে গঠিত সরকারে জাতীয় পার্টি ছাড়াও ছোট শরিকরাও মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছিল। দেশের ও দেশের বাইরের সামগ্রিক রাজনৈতিক আবহ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের অনুকূলে ছিল। কোনো দেশ পুনর্গঠনের জন্য নেতৃত্বের সামনে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গের মধ্যে অবাধ জনসমর্থন, অনুকূল গণতান্ত্রিক প্রেক্ষাপট, ইতিবাচক আন্তঃরাষ্ট্রীয় যোগাযোগ, ভারসাম্যমূলক পররাষ্ট্রনীতি আর প্রয়োজনীয় অর্থের প্রবাহ বিশেষভাবে উল্লেখ্য। শেখ হাসিনার সামনে এর সবক’টি সুযোগ কানায় কানায় অনুকূল ছিল। কিন্তু করুণ পরিণতির বীজটিও সম্ভবত এ রকম বিরল অনুকূল পরিস্থিতির মধ্যেই নিহিত ছিল। নিরঙ্কুশ ক্ষমতা, একচ্ছত্র নেতৃত্ব শেখ হাসিনাকে সম্ভবত বেপরোয়া করে তুলেছিল।
গ. আদর্শের দ্বিচারিতা
ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ ধীরে ধীরে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে থাকে। আদর্শ বিসর্জন দিয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে ডানপন্থি দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলে। বাইরে যদিও একাত্তরের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার মেঠো বক্তৃতা ছিল; কার্যক্ষেত্রে সেটার বাস্তবায়ন ছিল না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দীর্ঘ আন্দোলন করা দলটি ওই বিধান বাতিল করে দেয়। সংসদ কোনো বিষয়ে কার্যকর বিতর্ক চর্চার বদলে ক্ষমতাসীন দলের একপেশে বক্তৃতার মাঠ হয়ে উঠেছিল। বিএনপি-জামায়াত ছাড়া প্রায় সব দল সরকারমুখী হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের মাঝে অতি আত্মতুষ্টি ও ক্ষমতার দীর্ঘস্থায়ী বন্দোবস্তের মোহে পেয়ে বসে। আস্তে আস্তে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক ভূমিকা গৌণ হতে থাকে; পুলিশ, প্রশাসন ও ব্যবসায়ীনির্ভর হয়ে পড়ে। পেশাদার রাজনীতিবিদ আর সৎ, ঝানু রাজনৈতিক নেতাদের দৃশ্যমান উপস্থিতি কমতে থাকে। দল এবং সরকারে সুযোগসন্ধানী মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ও সমর্থকদের চাওয়া থেকে দল দূরে সরে যেতে থাকে। দল ও সরকারের বড় অংশ দৃশ্যে ও অদৃশ্যে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে; ঘুষ ও তদবির বাণিজ্য অতিমারি রূপ নেয়।
ঘ. একতরফা নির্বাচন
টালমাটাল অবস্থায় এসে যায় ২০১৪ সালের নির্বাচন। নির্বাচনের আগে ও পরে জামায়াত-বিএনপির নির্বাচন ঠেকানোর সর্বাত্মক আন্দোলনও ব্যর্থ হয়। সংসদের অর্ধেকের বেশি সংখ্যক আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসেন। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্ক্ষী অনেকে সরকারকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের পরামর্শ দিয়ে বিরাগভাজন হন। দেশের মানুষও সেটা আশা করেছিল। বাস্তবে তা ঘটেনি। ২০১৪ সালের পর কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আগ্রহ তলানিতে নেমে এসেছিল। ভোট ডাকাতির কারণে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতেও ভোটাররা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল।
ঙ. রাতের ভোট
দেশি ও বিদেশি মধ্যস্থতায় ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো অংশ নিয়েছিল। ড. কামাল হোসনের নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট’ নেতারা গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল– দেশের রাজনীতিতে সৌহার্দ্যের পরিবেশ বুঝি ফিরে এলো। কিন্তু বিধি বাম! ভোটের দিনের আগের রাতেই ব্যালট বাক্সে কারসাজি হয়। এই ভোট গণতন্ত্রমনস্ক মানুষকে হতভম্ভ করে তোলে। ধাক্কাটা এত বড় ছিল যে, ২০২৪ সালের নির্বাচন বিএনপিসহ প্রায় সব বিরোধী দল বর্জন করে। এবার আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনকে কৃত্রিম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে নিজ দলের নেতাদের স্বতন্ত্র দাঁড় করিয়ে দেয়। অন্যদিকে ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় পার্টিও হয়ে উঠেছিল আওয়ামী লীগের খেলার পুতুল। দলটি একই সঙ্গে সরকারে ও বিরোধী দলে বসার রেকর্ড স্থাপন করে।
চ. একাট্টা সরকারবিরোধীরা
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকেই ১৪ দলীয় জোট ছাড়া বাকি সব বিরোধী রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর সরকার হটানোর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় তারা একাট্টা হয়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের পক্ষে মোক্ষম দাওয়াই ছিল দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা; সাংগঠনিক ভিত্তিকে মজবুত করা। কিন্তু আওয়ামী লীগ করে গেছে তার উল্টো। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের মতো ব্যক্তিত্বহীন মানুষের লাগামহীন কথাবার্তা আওয়ামী লীগের সমর্থক ও সাধারণ মানুষকেও বিরক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অবস্থান মজবুত করতে কৌশলগত ভূমিকা দরকার ছিল। সেই সঙ্গে দরকার ছিল পেশাদারি কূটনৈতিক তৎপরতা। সেই জায়গায় দক্ষ কূটনৈতিক তৎপরতার পরিবর্তে সরকার হঠকারিতা করে যেতে থাকে। একদিকে সরকার বলে গেছে– সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়; অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানকে জড়িয়ে প্রকাশ্য বক্তৃতা দিতে থাকে। মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে দ্বৈরথ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকারের তরফ থেকে কোনো কার্যকর উদ্যোগও ছিল না।
ছ. বেহাল ছাত্রলীগ
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর লাখ লাখ টাকার মোটরসাইকেল, কোটি টাকার ব্যক্তিগত গাড়ি, হেলিকপ্টারে যাওয়া-আসা, ছাত্রনেতাদের জন্মদিন পালনের হিড়িক লেগে যায়। এসব আমোদ-ফুর্তির উৎস নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রশ্নের জন্ম হয়– অর্থের জোগান আসে কোথা থেকে? চাঁদাবাজি, ফটকাবাজি, তদবির, মাস্তানি কেবল নয়; বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়ে ওঠে ছাত্রলীগের অত্যাচার-অনাচারের লীলাক্ষেত্র। ছাত্রলীগের মাসোহারা আদায়, ঠিকাদারিতে বখরা বসানো, তদবির বলয়ের অংশ হওয়ার বিষয়গুলো আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দেখেও না দেখার ভান করে গেছে। এর মধ্যে অর্থের বিনিময়ে ‘হাইব্রিড’ ছাত্রলীগ তৈরি প্রকল্পেও কেউ কেউ টাকা কামাতে থাকে। এখন দেখা যাচ্ছে, গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া কেউ কেউ ছাত্রলীগের কমিটিতেও ছিল। আবার ছাত্রশিবিরের নেতারাও ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছে; নেতা পর্যন্ত হয়েছে। এই যদি হয় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের অবস্থা, তাদের জন্য ধস ছাড়া আর বিকল্প কী থাকতে পারে!
জ. নতুন প্রজন্মের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা
১৫ বছরে নতুন একটা প্রজন্ম বেরিয়ে আসে। তাদের মানবিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ ছিল না। লাখ লাখ তরুণ একবারও ভোট দিতে পারেনি। একবার বক্তৃতায় একজন নেতা বলেছিলেন, সাবধানের মাইর নাই। সেই সঙ্গে তিনি এও বলেছিলেন, মাইরেরও সাবধান নাই। টানা দেড় দশক ক্ষমতায় থেকে ছাত্র রাজনীতিকে সঠিক ধারায় ফিরিয়ে আনলে সাধারণ ছাত্রদের কোটা আন্দোলন ঘিরে গৃহীত কৌশলের কাছে সরকারকে বিপদে পড়তে হতো না।
ঝ. সংস্কৃতি অঙ্গনের তেলেসমাতি
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে সংস্কৃতি অঙ্গনকে করপোরেট মাজেজায় পেয়ে বসেছিল। এ অঙ্গনের মোড়ল অনেকেই সরকারের তেলবাজি আর চামচামিতে জিন্দেগি পার করে গেছেন। একটি গণমুখী রাজনৈতিক দলের সাংস্কৃতিক বিকাশের যে কর্মসূচি ও নীতিমালা, তা অনেকটা অ্যাডহক হুকুম জারির পর্যায়ে ছিল। ২০০৯-১৪ সাল ব্যতীত পরের তিন মেয়াদের এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা রুটিন দায়িত্ব পালন ছাড়া এমন কোনো কাজ দেখাতে পেরেছেন বলে জানা নেই। পাশাপাশি যাত্রাশিল্প, খেলাঘর আসর, উদীচীর মতো সংগঠনগুলো পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অনেকটা সংকুচিত হয়ে এসেছিল। অন্যদিকে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বামপন্থি রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের যোগাযোগ অনেকটা বাদানুবাদের পর্যায়ে ছিল।
ঞ. পারিবারিক দাপট
সবকিছুতে আত্মীয় খোঁজা, আত্মীয়তোষণ যদি একটি সরকার ও রাজনৈতিক দলকে একই সঙ্গে পেয়ে বসে, তাহলে যে পরিণতি হওয়ার কথা, তা-ই হয়েছে আওয়ামী লীগের। এর প্রভাব পড়েছে উপজেলা পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত। এমনও দেখা গেছে, পরিবারের মধ্যে মন্ত্রী, মেয়র, সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ভাগাভাগিতেই শুধু থাকেননি; এর পর পরিবারের কেউ কেউ ভাগ বসিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পদায়ন এবং পেশাজীবী নানা সংগঠনের নেতৃত্ব দখলে।
ট. ফুঁ দিয়ে নেতা তৈরি
প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে অপ্রত্যাশিতভাবে মেয়র হওয়ার সুযোগ পেয়ে বলেছিলেন, এক ফুঁতে তিনি নেতা হয়ে গেছেন। যুবলীগ সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং শেষতক রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকেও বেছে নেওয়ার মধ্যে একই মাজেজা কাজ করেছে। এতে দল এবং দেশের মানুষের একটা ধারণা হয়েছিল, ওপরে ওঠার বড় উপায় হচ্ছে ক্ষমতার কেন্দ্রের মানুষদের সঙ্গে আত্মীয়তা থাকতে হবে। তা না হলে তাদের নজরে আসার জন্য উপায় বের করতে হবে। তারা উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন টাকা আর তৈলমর্দনের পথ।
ঠ. দায়হীন বুদ্ধিজীবীরা
বুদ্ধিজীবীদের তৈল কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সংস্কৃতি অঙ্গনের মোড়ল, সামরিক-বেসামরিক আমলাদের একটা অংশ এবং কতিপয় সম্পাদক দলীয় চামচাবাজ হাইব্রিড নেতাদেরও ছাপিয়ে গিয়েছিলেন। বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের ক্ষমতা এবং এর বাইরের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ বা সখ্য থাকতে পারে। তা দোষের কিছু না। কিন্তু নিজ নিজ জায়গা থেকে মোক্ষম নৈতিক জায়গাটি হচ্ছে নিজের অনুরাগের রাজনীতিকে ঠিক জায়গায় দেখতে নিজের অবস্থান স্বতন্ত্র রেখে সত্য কথাটি বলে যাওয়া। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর গুটিকয়েক বুদ্ধিজীবী বস্তুনিষ্ঠতার জায়গা থেকে কলম ধরে আওয়ামী লীগ সরকারকে সতর্ক করে গেছেন। তাদের প্রয়াণের পর সরকার ক্রমশ দিশেহারা নাবিকের নৌকার হাল ধরার মতো অবস্থায় থেকেছে। আর কম্পাস হিসেবে গোয়েন্দাদের ওপর নির্ভরতা বাড়িয়েছে।
উপসংহার
১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ বারবার পরীক্ষার মধ্যে পড়েছে; বিপদের খাদে গিয়ে ঠেকেছে। সেই খাদ থেকে আবার ঠিক ঠিক সাংগঠনিক কৌশল দিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের সংগঠিত করেছে। সেই সংগঠিত স্রোতের সঙ্গে দেশের মানুষকে একত্রিত করতে পেরেছে– এ রকম উদাহরণ ১৯৫৪-এর নির্বাচন, ১৯৬৬-এর ছয় দফা, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচন, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৯৬-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে দেখিয়েছে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট পুরোপুরি আলাদা। ভিন্ন এই প্রেক্ষাপটে নেতৃত্বের দরকার আত্মবিশ্লেষণ এবং আত্মশুদ্ধির প্রত্যয়। ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় একটাই। ১৫ বছর ভালো বা মন্দ যা-ই করেছেন, কথা একটাই। দলটিকে অকপটে বলতে হবে– অতীতের সব ভুলের জন্য দেশের মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
samakal