আওয়ামী লীগের কৌশল নিয়ে দুশ্চিন্তায় জাপা’র প্রার্থীরা

 

নানা নাটকীয়তার পর নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছে জাতীয় পার্টি। নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও স্বস্তিতে নেই দলের প্রার্থীরা। সব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা ও প্রতি আসনেই বিকল্প প্রার্থী দেয়ায় এই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীরা দুশ্চিন্তায়ও পড়েছেন এমন পরিস্থিতি নিয়ে। তারা মনে করছেন আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিকল্প প্রার্থীর  সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে পারবেন না তারা। এ অবস্থায় নির্বাচনে থাকলে দলের জন্য বড় বিপর্যয়  দেখা দিতে পারে।
জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ৩০৪ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরও কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেননি। ঢাকার একটি আসনে মনোনয়ন জমা দেয়া একজন নেতা জানান, আওয়ামী লীগের প্রার্থী এখনই হুমকি দিচ্ছেন। সামনে কি হয় জানি না। বাছাই শেষ হওয়ার পর তা দেখা যাবে।

 

বরিশাল-২ ও ৫ আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করতে দলীয় সম্মতি পেয়েছেন জাতীয় পার্টির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস।

তিনি বলেন, এখানে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসেছিলেন প্রটোকলসহ, বিপুল শোডাউন নিয়ে। আমি, সাবমিট করলাম কয়েকজন লোক নিয়ে। প্রশাসনের যে আয়োজন তা নিরপেক্ষ না।
ঢাকা-২ আসন থেকে নির্বাচন লড়তে চান শাকিল আহমেদ। তিনি বলেন, এখনো মাঠ পর্যায়ে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটে নাই। এবার যদি সরকার একতরফা নির্বাচন করতে চায়- এটা হবে সরকারের বড় ভুল। জনগণ কিন্তু আর নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। দিনের ভোট রাতে করার সুযোগ নাই আর। এরপরও যদি পরিবেশ না তৈরি হয় আমরা নির্বাচনে থাকবো কি না- সেটা দল থেকে সিদ্ধান্ত আসবে।

ঢাকা-৬ আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকের জন্য মনোনয়ন চেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। তার বিপরীতে লড়বেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। মনোনয়ন ফরম জমার দিনে গণমাধ্যমকর্মীরা কাজী ফিরোজ রশীদের প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, মেরে আঙ্গনে মে তুমহারা কেয়া কাম হ্যায়! তার এই বক্তব্য নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে।
কাজী ফিরোজ রশীদ মানবজমিনকে বলেন, প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই হচ্ছে। তাই এখনই মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আগে নির্বাচনী প্রচারণায় নামি এরপর  দেখি কী হয়।

লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনপ্রত্যাশী রংপুর বিভাগের একজন নেতা বলেন, আমাদের দলের কৌশল এখন যাচ্ছে তাই। আমাদের বলা হয়েছে বৈঠকের পর আসন ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। তাহলে নির্বাচনে আসার কী প্রয়োজন ছিল? আমাদের দলের কৌশল হওয়া উচিত আওয়ামী বিরোধী ভোটগুলো আয়ত্তে আনা। আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করায় নৌকার ভোটও ভাগ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের উপর অসন্তুষ্ট মানুষ। তারা নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দিতে চায়। আমাদের কৌশল হওয়া উচিত তাদের বিরুদ্ধে কৌশল সাজানো। একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা। পরিবেশ সৃষ্টি হলে সমঝোতার থেকে বেশি ভোট পাবে জাতীয় পার্টি।
রাজশাহী বিভাগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া একজন নেতা বলেন, আমরা কী শুধু ছাড় দেয়ার জন্য রাজনীতি করি। আসন ভাগাভাগি হলে আমার আসন ভাগে জুটবে না। আমার রাজনীতি করার দরকার কী? তিনি বলেন, এখন এমন একটা পরিবেশ দেখা দিয়েছে নৌকার বিরুদ্ধে- ‘কলাগাছ’ দাঁড়ালেও জয় পাবে। এই কৌশল, এই ভোট না নিয়ে আমরা ‘হালুয়া রুটি’র ভাগ নিয়ে পড়ে আছি।
জাতীয় পার্টির বর্তমান একজন সংসদ সদস্য বলেন, জাতীয় পার্টি নানা কারণে ভোটারদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ। অনেকের কাছে হাসির পাত্র। এখন দল হিসেবে টিকে থাকতে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা জরুরি। আমরা যদি সমঝোতা করে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারি তাহলে ক্ষতি কোথায়? তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকলেও বিপদ, না থাকলেও বিপদ উল্লেখ করে বলেন, এখন আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত যতো বেশি আসনে প্রতিনিধিত্ব করা যায়। ভোট করে হয়তো আমরা ১০ থেকে ১২ টা আসন পাবো। কিন্তু দেন-দরবারে বেশি আসলে জাতীয় পার্টির লাভ। আমাদের সবার লাভ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমঝোতা নাও হতে পারে। তখন আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানাবো। কিংবা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তও আসতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। আমাদের চিন্তাতেও বিষয়টি নেই। তিনি বলেন, ভোটাররা সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারলে জাতীয় পার্টির অবস্থান আগের থেকে ভালো হবে।

মানব জমিন