১৭ মার্চ ২০২৩
নিজস্ব প্রতিনিধি
রমজান সামনে রেখে বাজার সামাল দিতে ব্যর্থ সরকার। আওয়ামী ব্যবসায়ী সিণ্ডিকেট রাজধানী ঢাকার কাঁচাবাজারে সবজী থেকে শুরু করে গরুর মাংস ও মুরগীর দাম লাগামহীনভাবে বাড়িয়ে চলেছে। অতি মুনাফা লোভী আওয়ামী ব্যবসায়ী সিণ্ডিকেট নিজেদের ইচ্ছামত সব জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছেন না তারা।
আওয়ামী ব্যবসায়ীদের সামাল দিতে ব্যর্থ শেখ হাসিনা। ১৬ মার্চ তাঁর একটি বক্তব্যের মধ্যেই এই ব্যর্থতার চিত্র ফুটে উঠেছে। তিনি ১৬মার্চ মসজিদের ইমামদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “কালোবাজারি ও যারা দাম বাড়ায় তাদের ব্যাপারে মসজিদের খুৎবায় বলুন।” প্রশ্ন উঠেছে আওয়ামী ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা কি মসজিদের খুৎবাকে পাত্তা দিয়ে চলেন? সুদ-ঘুষ, ও মানুষ শোষণই তো আওয়ামী লীগের চরিত্র।
এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় শুক্রবার (১৭ই মার্চ) সকালে রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে ভোগ্যপণ্যের লাগামহীন দাম চোখে পড়ছে। যদিও, গত ১২ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, “বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রমজানের আগে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় আমাদের কাছে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে, যা আমাদের জন্য সন্তোষজনক।”
রমজানের আগে দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে মর্মে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) জনসাধারণকে আতঙ্কিত হয়ে কেনাকাটা থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানানো হয়েছিল।
রমজান ও ঈদ-উল-ফিতরের আগে পিএমওতে অনুষ্ঠিত এক প্রস্তুতিমূলক বৈঠক থেকে এই আহ্বান জানানো হয়েছিল।
শুক্রবার সরেজমিনের গিয়ে দেখা গেছে (১৭ই মার্চ) ছুটির দিনে বাজারে প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। লম্বা ও গোল বেগুনের কেজি ৮০ টাকা। ৪০ টাকা কেজি টমেটো। এছাড়া- শিম ৪০-৫০ টাকা, করলা ১০০-১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০, পটল ৮০, ঢেঁড়স ১০০, কচুর লতি ১০০, পেঁপে ৩০-৪০, বরবটি ১২০ ও ধুন্দুল ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা।
এছাড়া আকার ভেদে লাউ ৫০-৬০ টাকা, চাল কুমড়া প্রতিটি ৫০-৬০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
সবজি বিক্রেতা আল মামুন বলেন, কিছু সবজির দাম বেশ বেড়েছে। এছাড়া, অন্যান্য সবজির দামও বাড়তির দিকে। রোজার আগে সবজির দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সবজির পাশাপাশি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগি। ব্রয়লার মুরগির কেজি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি ৩৫০ টাকা। লেয়ার মুরগির বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা কেজিতে।
মুরগি বিক্রেতা মো. শেখ আসলাম বলেন, জীবনে কখনো ব্রয়লার মুরগি ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করিনি। দাম বাড়ার পেছনে মূল কারণ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। রোজায় সিন্ডিকেটের কারণে আবারও বাড়তে পারে।
বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। এক কেজি গরুর মাংসের দাম ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা। বাজারে খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০৫০-১১০০ টাকা কেজিতে।
যদিও মাংস বিক্রেতা আলী হোসেনের জানান, ক্রেতা বুঝে দাম নিচ্ছেন তাঁরা। ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা যার কাছে যেমন পারছেন নিচ্ছেন।
এই মাংস বিক্রেতা জানান, দাম বাড়ার কারণে বিক্রি অবশ্য খুব ধীরে হচ্ছে। আগে বাচারে ক্রেতার চাপ থাকলেও মানুষ মাংসের দাম করেই চলে যাচ্ছেন।
গত সপ্তাহের তুলনায় আজ বাজারে মাছের দাম ছিলো বাড়তির দিকে। আকারভেদে প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৫০০ টাকায়। দেশি জলাশয়ের মাছের দাম ৮০০-১০০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ইলিশ মাছ এক হাজার ৩৫০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মাছ বিক্রেতা সজীব আহমেদ জানান, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে আড়ত থেকেই বেশি দামে মাছ কিনতে হচ্ছে। এজন্য খুচরা বাজারেও দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় মাছের দাম কেজিতে ন্যূনতম ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বাজারে পেঁয়াজ এক কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। বড় রসুন ১৩০-১৪০ টাকা কেজি। ছোট রসুনের বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়।
এছাড়া আদা ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, চায়না আদা ২২০ টাকা, আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা, খোলা চিনি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, ইন্ডিয়ান মসুর ডাল ১২০-১২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে খোলা আটার কেজি ৬০ টাকা ও প্যাকেট আটা ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ৭০ টাকা। দুই কেজির প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।
বাজারে বর্তমানে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে লিটার প্রতি ১৮৭ টাকা। লবণ ৩৮-৪০ টাকা কেজি।
ফার্মের মুরগির ডিম এক ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। হাঁসের ডিম ১৮০-১৯০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিমের ডজন ১৯০-২০০ টাকা।
ডিম বিক্রেতা সামসুদ্দিন মিঞা বলেন, ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বাড়া-কমার মধ্যেই উঠানামা করছে। ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা। পাড়া-মহল্লার দোকানের একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। রোজায় ডিমের দাম আরও বাড়তে পারে।