এই অ্যাশেজে এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার কারও কিছু নিয়েই অভিযোগ করার মতো কিছু আছে কি?
সিরিজের দুই টেস্ট শেষে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। জয়ের চেয়ে যেটি বেশি চোখে লেগেছে, দুই টেস্টের কোনোটিতেই ইংল্যান্ডকে দাঁড়াতে দেননি প্যাট কামিন্স-স্টিভ স্মিথরা। আগামী পরশু শুরু হতে যাওয়া তৃতীয় টেস্টেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করার কথা ভাবছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু এর মধ্যেও এবারের অ্যাশেজ নিয়ে একটা বিরক্তির কথা জানালেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার গ্লেন ম্যাকগ্রা।
বিরক্তিটা ক্রিকেট কিংবা অস্ট্রেলিয়ার দাপট নিয়ে নয়। তবে ম্যাকগ্রার যেটি চোখে লাগছে, সেটি হলো অ্যাশেজে ঝাঁজের অভাব।
আর এর পেছনে আইপিএল, বিগ ব্যাশের মতো টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোকেই দায়ী করছেন ম্যাকগ্রা। ‘দ্য পিজিয়নে’–এর চাওয়া, তৃতীয় টেস্টে ‘পলিটিক্যাল কারেক্টনেস’ বা নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক রাখার, বিতর্কমুক্ত থাকার প্রবণতা কম থাকুক, ফিরুক অ্যাশেজের সত্যিকারের তেজ!
‘মাঝেমধ্যে সবকিছুকে একটু বেশিই ভালো মনে হয়। সবকিছু তো সেভাবেই এগোচ্ছে, তা–ই না? বিতর্কমুক্ত থাকার চেষ্টা সব জায়গায়ই একটু বেশি দেখা যাচ্ছে। আগ্রাসী হতে, কঠোর হয়ে ক্রিকেটটা খেলতে সবাই কেন যেন ভয় পাচ্ছে!’—অস্ট্রেলিয়ার সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে ম্যাকগ্রার বিশ্লেষণ।
তাঁর সময়ে দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ খেলোয়াড়দের সম্পর্কেও কেমন প্রভাব ফেলেছে, সে গল্পও শোনালেন ম্যাকগ্রা, ‘মনে আছে, যখন নাসের হুসেইনের ইংল্যান্ড এখানে এসেছিল, আমাদের “দিনটা ভালো কাটুক” বলার অনুমতিও ছিল না ওদের!’
আপনি দেখবেন, ব্যাটসম্যান আর বোলার ক্রিজে হাসাহাসি করছে
সে জায়গায় এখন অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মতো দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটা একটু বেশিই চোখে লাগছে টেস্ট ইতিহাসে পঞ্চম সর্বোচ্চ এবং পেসারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি (৫৬৩) ম্যাকগ্রার।
উদাহরণ দিয়েই বললেন, ‘যখনই ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার কোনো খেলোয়াড়ের সাক্ষাৎকার শুনবেন, দেখবেন ওরা ডাকনাম ব্যবহার করছে। ব্রডি, জিমি, কেজ…। সেদিন জিজ্ঞেস করছিলাম, “কেজটা আবার কে?” উত্তর এল, “ওহ, অ্যালেক্স ক্যারি।” এখনকার খেলোয়াড়দের একে অন্যের সঙ্গে খাতির আমাদের সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।’
এর পেছনে আইপিএল, বিগ ব্যাশের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর ভূমিকাই দেখছেন ম্যাকগ্রা। সেখানে এক দেশের খেলোয়াড়ের সঙ্গে অন্য দেশের খেলোয়াড়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ম্যাকগ্রার চোখে, এই ধরনের সম্পর্কের কারণে মাঠে খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কম থাকে।
৫১ বছর বয়সী কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার যেন এতে কিছুটা বিরক্তই হচ্ছেন, ‘শরীরী ভাষাই অনেক কিছু বলে দেয়। নিজের দেশের হয়ে খেলা…এই ব্যাপারের অর্থ কী? ইংল্যান্ডের উচিত ড্রেসিংরুমে এই দিক নিয়ে কথা বলা। আইপিএল আর বিগ ব্যাশের কারণে এই খেলোয়াড়েরা এখন একে অন্যকে অনেক ভালোভাবে চেনে। আপনি দেখবেন, ব্যাটসম্যান আর বোলার ক্রিজে হাসাহাসি করছে!’
মেলবোর্নে বাংলাদেশ সময় আগামী পরশু ভোর ৫টা ৩০ মিনিট থেকে শুরু হতে যাওয়া তৃতীয় টেস্টে তাই আরও বেশি ঝাঁজই ম্যাকগ্রার চাওয়া, ‘ক্রিজে (ব্যাটসম্যান আর বোলারের মধ্যে) আরেকটু বেশি তেজ দেখতে চাই আমি। লড়াইটা আরেকটু জমে উঠুক, এটাই চাই।’
সব শেষে অবশ্য ম্যাকগ্রাসুলভ ভবিষ্যদ্বাণী আর প্রতিদ্বন্দ্বীকে খোঁচাও থাকল, ‘অস্ট্রেলিয়া ছাড় দেবে না। তার ওপর প্যাট কামিন্সও ফিরে আসছে। জেমস অ্যান্ডারসনকে দেখে মনে হচ্ছে, ওর বলের গতি কমে গেছে, এখানে সুইংও পাচ্ছে না। (ইংল্যান্ডের জন্য) আরও খারাপ কিছুই হতে পারে!’