আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আজ মঙ্গলবার থেকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ চলাকালে সড়ক, রেল ও নৌপথে রাতদিন পাহারায় থাকবেন। এই তিন দিন উন্নয়ন স্থাপনাসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন তারা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সমকালকে জানিয়েছেন, বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ চলাকালে দেশের উন্নয়ন স্থাপনাগুলো রক্ষায় দলের নেতাকর্মীরা সতর্ক পাহারায় থাকবেন। কেউ সহিংসতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করবেন।
এদিকে, অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে নেতাকর্মীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার প্রস্তুতি নিয়ে গতকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ সভায় কয়েকজন এমপিও উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, অবরোধ নিয়ে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা খুবই সতর্ক হয়ে জনগণের পাশে থাকবেন। শান্ত হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন। অবরোধ চলাকালে রাজধানীতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে আওয়ামী লীগ।
এ জন্য দলের ১৭ জন এমপি (ঢাকা-১, ঢাকা-২, ঢাকা-৩, ঢাকা-৫, ঢাকা-৭, ঢাকা-৯, ঢাকা-১০, ঢাকা-১১, ঢাকা-১২, ঢাকা-১৩, ঢাকা-১৪, ঢাকা-১৫, ঢাকা-১৬, ঢাকা-১৭, ঢাকা-১৮, ঢাকা-১৯ এবং ঢাকা-২০ আসন) তাদের নির্বাচনী এলাকায় দলের নেতাকর্মীকে নিয়ে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করবেন।
আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম জানিয়েছেন, অবরোধ চলাকালে দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সড়ক, রেল ও নৌপথে রাতদিন পাহারায় এবং সজাগ থাকবেন।
খুলনা বিভাগের কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থায় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা দেবেন। এ বিষয়ে সাংগঠনিক নির্দেশনা জানিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন দলের আট সাংগঠনিক সম্পাদক। এর মধ্যে আহমদ হোসেন সিলেট, বি এম মোজাম্মেল হক খুলনা, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন চট্টগ্রাম, এস এম কামাল হোসেন রাজশাহী, মির্জা আজম ঢাকা, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বরিশাল, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ময়মনসিংহ ও সুজিত রায় নন্দী রংপুর বিভাগের আওতাধীন নেতাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি বলেছেন, দলের নেতাকর্মীরা আজ থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনাগুলোর সামনে অবস্থান করবেন। থানা এবং ওয়ার্ডের পাশাপাশি রাজধানীর প্রবেশদ্বারগুলোতে অবস্থান করার পাশাপাশি সতর্ক দৃষ্টি রাখা হবে। নাশকতার অপচেষ্টা করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
প্রায় একই কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, প্রতিদিন দলের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করবেন। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সমাবেশও অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়াও থানা এবং ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা যে কোনো সহিংস পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক থাকবেন।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা বলেছেন, সব সময়ই আওয়ামী লীগ সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ অশান্তি করলে সভা-সমাবেশ তো দূরের কথা কোথাও দাঁড়াতেই পারত না বিএনপি। তারা ২৮ অক্টোবর খুন, অশান্তি, অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা করলেও আওয়ামী লীগ শান্ত থেকেছে। কিন্তু অবরোধের নামে খুন ও অগ্নিসন্ত্রাসের সৃষ্টি করা হলে বিএনপিকে কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ নেতারা আরও বলেছেন, রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শান্ত ও সজাগ থাকবেন। সতর্ক পাহারা দেবেন। কোনো ধরনের উস্কানিতে পা দেবেন না, সংঘর্ষে জড়াবেন না। তারা জনগণের সম্পদ ধ্বংসের মতো কোনো অঘটন ঘটলে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাবেন। তার পরও সম্ভাব্য সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রস্তুতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজধানীর চার প্রবেশ পথ যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর, গাবতলী ও আব্দুল্লাহপুর এলাকায় সতর্ক অবস্থানে থাকবেন দলের নেতাকর্মীরা।