ঢাকা
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের একটি ফোনালাপের বিষয়ে তদন্ত চেয়েছে বিএনপি। দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটি মনে করে, ফোনালাপটিকে ‘নির্দোষ ফোনালাপ’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আজ বুধবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লিখিত বক্তব্যে এই দাবি তুলে ধরেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ফোনালাপটির সত্যতা যেহেতু আইনমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, সেহেতু এই ফোনালাপের বিষয়গুলোর অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা এবং ফোনালাপের আলোচিত বিষয়গুলো সম্পর্কে নিরপেক্ষ তদন্ত, জনগণের কাছে সত্য তুলে ধরা এবং জবাবদিহি অত্যন্ত জরুরি।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আইনমন্ত্রী ও উপদেষ্টার ফোনালাপে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। প্রথমত, সরকারের আইটিবিষয়ক একজন উপদেষ্টার নাম উচ্চারণ হয়েছে। দ্বিতীয়ত, উচ্চ আদালতের দুজন বিচারপতির নাম উল্লেখ এবং এর প্রভাব। তৃতীয়ত, সচিবালয়ে প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যকলাপে অনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং প্রভাব বিস্তার। এ বিষয়গুলো পর্যালোচনায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতা এবং হস্তক্ষেপের সুস্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়।
এর আগে গত রোববার এই ফোনালাপের বিষয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, ‘যাঁরা এই অডিও নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করছেন, তাঁরা এতই দেউলিয়া যে একটি “ইনোসেন্ট কনভারসেশন”কে এখন তাঁদের পুঁজি বানানোর চেষ্টা করছেন। তার মানে হচ্ছে, তাঁদের কাছে কোনো হাতিয়ার নেই।’ আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছিলেন, ‘আমাদের সরকারিভাবে এ রকম রেকর্ড করার কোনো সিস্টেম নেই। এটা যদি করে থাকে, তাহলে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে কি না, অন্য কোনো প্রযুক্তি বের হয়েছে কি না, সেটাও আমাদের দেখার বিষয় আছে।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান, যেখানে ল-ফুল (আইন অনুমোদিত) ইন্টারসেপশন, সেটিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া তারাও মনিটর বা প্রকাশ করতে পারে না। কাজেই অনুসন্ধানের ব্যাপার আছে, আমাদের দেখার বিষয় আছে।’
এদিকে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটি অবিলম্বে ফাঁস হওয়া এই ফোনালাপের বিষয়ে শুধু তদন্ত নয়, ফোনালাপের বিষয়বস্তু সম্পর্কে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে। একই সঙ্গে অতীতে ফাঁস হওয়া বিভিন্ন ফোনালাপেরও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছে বিএনপি।
অনুসন্ধান কমিটির কার্যক্রম ‘আইওয়াশ’
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে অনুসন্ধান কমিটির কার্যক্রমকে ‘তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এর একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে, জনগণকে বিভ্রান্ত করা, বিভিন্নভাবে একটা ‘আইওয়াশ’ (লোক দেখানো) দেওয়া।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পরিচালনায় গ্রহণযোগ্য, অংশীদারত্বমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠাই বর্তমান সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব দলীয় সরকারের অধীন ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো অবস্থাতেই নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচনে এই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপি মনে করে এখন অনুসন্ধান কমিটিতে নাম পৌঁছানো এবং নির্বাচন কমিশন গঠন একেবারেই অর্থহীন। বিএনপি বিশ্বাস করে, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত রাখার নীলনকশার অংশ হিসেবে পুনরায় নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকারি তৎপরতা সেই চক্রান্তের অংশ।