অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(১১ ঘন্টা আগে) ৭ মে ২০২৩, রবিবার, ৯:৫৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০১ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অনুমোদিত ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের পুরো অর্থ পেতে বাংলাদেশকে বেশকিছু সংস্কারের শর্ত দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেক শর্ত পরিপালন করা সম্ভব হলেও কিছু ক্ষেত্রে বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে। কারণ, বিশ্ব বাজারে জ্বালানিসহ পণ্যদ্রব্যের মূল্য বেড়েছে, তাই দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চলমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ধারা ঠিক রাখা কঠিন হবে। রোববার আইএমএফ’র সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব সব কথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।
বাংলাদেশের জন্য গত জানুয়ারিতে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের শেষদিকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। এজন্য আইএমএফ’র শর্ত কতটুকু বাস্তবায়ন বা অগ্রগতি হয়েছে তা দেখতে সংস্থাটির প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসেছে। আইএমএফ দলটি মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছে।
মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, আইএমএফ প্রতিনিধিদল তাদের শিডিউল সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সফর করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
বিভিন্ন সংস্কারের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। সংস্থাটি আমাদের নেয়া পদক্ষেপের বিষয়ে দ্বিমত করেনি। তবে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার বিষয়টা আরও পরে। আইএমএফ মিশন দল আগামী অক্টোবরে আবারও বাংলাদেশ সফরে আসবে, তখন এ বিষয়ে জানা যেতে পারে। কারণ সেটিই হবে মূল মিটিং।
আইএমএফ’র দেয়া বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরও অনেক সময় রয়েছে জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, কিছু লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য জুন পর্যন্ত সময় পাওয়া যাবে। আবার কিছু লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সময় দেয়া হয়েছে চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত। সুতরাং এ সময়ের মধ্যে সবগুলো শর্তই আমরা পূরণ করতে পারবো বলে আশাবাদী। ইতিমধ্যেই ঋণের একক সুদ হার উঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামীতে সুদের হার গণনা করা হবে স্মার্ট পদ্ধতিতে, যা আগামী মুদ্রানীতিতে ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মেজবাউল হক বলেন, ডলারের একক এক্সচেঞ্জ রেট প্রায় বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেই দরে ডলার বিক্রি করছে এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক যে দামে আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয় সংগ্রহ করছে তার মধ্যে পার্থক্য অলমোস্ট দুই শতাংশ। নিয়ম অনুযায়ী, এই পার্থক্য ২ শতাংশের মধ্যে থাকলেই তাকে সিঙ্গেল এক্সচেঞ্জ রেট বলা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, এখনো তিনটি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রথমটি কোভিড, দ্বিতীয়টি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং তৃতীয়টি বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি। এ সমস্যার সমাধান কবে হবেÑ সেটা কেউই বলতে পারবে না। সংকট মোকাবিলায় সময়ের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়াও আগামীতে বেশকিছু বিষয় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব বাজারে জ্বালানিসহ পণ্যদ্রব্যে মূল্য বেড়েছে, তাই দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এছাড়া আমাদের অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ আসছে সামনে। এটা হলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সবসময় দেখা যায়, নির্বাচনী বছরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যায়। সবাই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এখন আগামীতে আমাদের পরিস্থিতি কী হবে তা সময় বলে দেবে।
অনুমোদন করা ঋণ পেতে বাংলাদেশকে যে শর্ত দেয়া হয়েছে এর মধ্যে অন্যতম- ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা, আদায়ের অযোগ্য ঋণ বিষয়ে আলাদা কোম্পানি গঠন করা, জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ফর্মুলা কার্যকর করা, আয়কর আইন সংসদে পাস করা, করছাড়ের ওপর বিস্তারিত নিরীক্ষা করা, বাজেটের নির্দিষ্ট অংশ সামাজিক ব্যয়ের (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা কমূর্সচি) জন্য রাখা এবং ক্রমান্বয়ে তা বাড়ানো।