অ্যানালগ অপরাধও বেড়েছে

  • সাইফুল ইসলাম তানভীর
  •  ২২ আগস্ট ২০২২, ১৯:৪৭
অ্যানালগ অপরাধও বেড়েছে – প্রতীকী ছবি

গত ৭ আগস্ট মাতুয়াইল সাদ্দাম মার্কেট এলাকা থেকে রাত ৯টায় মোবাইলফোনে কথা বলা অবস্থায় হেঁটে যাচ্ছিলেন আবুল খায়ের গ্রুপের কর্মকর্তা (সাবেক বিমানবাহিনী কর্মকর্তা) কামরুল হাসান। তিনি তখন ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালে অধ্যয়নরত তার মেয়ের সাথে কথা বলছিলেন। এমন মুহূর্তে তার মোবাইলফোনটি ছিনতাই হয়ে যায়। ছিনতাইকারীরা মোটরসাইকেলে থেকেই ছিনতাই করে। এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনি যাত্রাবাড়ী থানায় জিডিও করেন। এর কিছু দিন আগে আব্দুল কাইয়ুম উদ্দিন যাত্রাবাড়ী এলাকায় বাসে বসে মোবাইলফোনে কথা বলছিলেন। সে সময় বাসের জানালা থেকে ছিনতাইকারীরা তার মোবাইল ফোনটি ছিনতাই করে। আব্দুল কাইয়ুম উদ্দিন ঢাকার নর্দা এলাকার কার লাইটের ব্যবসা করেন। কে অ্যান্ড কে নামে তার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। আমরা প্রায়ই দেখছি বিভিন্ন মানুষের কষ্ট। রাস্তায় চলাফেরা অবস্থায় বিভিন্ন মানুষের মালামাল, টাকা ইত্যাদি ছিনতাই হচ্ছে।

বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণ এলাকায় এই ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটে। মহানগরীর উত্তর এলাকায় তুলনামূলক কম ঘটে। অনেক পণ্ডিত বলছেন, এখন ডিজিটাল যুগ, এই যুগে অ্যানালগ চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি কমেছে। এখন শিক্ষিত মানুষে কলমের মাধ্যমে ডিজিটাল সিস্টেমেই বড় বড় ডাকাতি করতে পারছে। এ কথা অবশ্যই ঠিক। কিন্তু আমাদের দেশে অ্যানালগ চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি তেমন কমেনি। হয়তো গ্রামে অতীতে যেভাবে সিঁধ কেটে চুরি হতো এবং ঘন ঘন ডাকাতি হতো সেটি এখন হচ্ছে না। তবে কোনোভাবে বলা যাবে না অপরাধ কমেছে। অতীতের তুলনায় কয়েক হাজারগুণ অপরাধ বেড়েছে। ইউনিভার্সিটিগুলোতে অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ে পড়ানো হয়। কিন্তু সেখানে এসবের পরিসংখ্যান আছে কি না তা আমরা জানি না। প্রবীণ অনেক বিজ্ঞ লোকের ইন্টারভিউ থেকে জেনেছি একাত্তর-পূর্ব সময়ে আমাদের শোষণ বঞ্চনা কিছু ছিল যেটি অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু সে সময় মানুষ এতটা বেপরোয়া অপরাধ করত না। এত ঘুষেরও প্রচলন ছিল না। চাঁদাবাজি, ধর্ষণ ইত্যাদি অপরাধও খুব কম হতো। একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি যিনি একাত্তর-পূর্ব পুলিশে চাকরি করতেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তিনি দেখলেন ঘুষের প্রচলন শুরু হতে। যেটা পূর্বে ছিল না। এরপর তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। কারণ তিনি সৎ অফিসার ছিলেন। একজন প্রবীণ সাংবাদিক লিখেছেন একাত্তর-পূর্ব সময়ে ঢাকার কাওরান বাজার থেকে বাজার করে বাসায় যাচ্ছিলাম, হঠাৎ রিকশা থেকে একটা সবজির ব্যাগ রাস্তায় পড়ে যায় যেটা তিনি খেয়াল করেননি। রাস্তায় এক লোক দেখে তাকে উচ্চশব্দে ডেকে সেই ব্যাগ উঠিয়ে দেন। কিন্তু একাত্তর-পরবর্তী সময়ে কাকতালীয়ভাবে পুনরায় সেরকম সবজির একটি ব্যাগ পড়ে যায়, তখন ওই সাংবাদিকের চোখের সামনে থেকেই একজন সেই ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে ভেগে যায়!

আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। আমাদের জন্য বিরাট গর্বের বিষয়। আমাদের হওয়া উচিত ছিল অনেক সভ্য। সুশৃঙ্খল জাতিতে পরিণত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ এ দেশে প্রতিদিন কোনো না কোনো জায়গায় ধর্ষণ হচ্ছে আমাদের মা-বোনেরা। অথচ আমরা একাত্তরের ধর্ষণ নিয়ে শত শত কোটি টাকা খরচ করে সিনেমা নাটক তৈরি করি! হাজার রকমের অপরাধ দেশে বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের ওপর নাগরিকদের আস্থা নেই। পুরান ঢাকা এলাকার প্রায় জায়গায় দিন-রাত ছিনতাই, চুরি ঘটে।

আমরা প্রায়ই বিভিন্ন কাজে পুরান ঢাকায় যাই, কিন্তু সে সময় আমাদের অনেকের অনেক কিছু হারাতে হয়। অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের এ বিষয়ে বিশেষ গবেষণা করা দরকার। সোসিওলজিতে আদিম যুগের অসভ্যতা নিয়ে পড়ানো হয়, হাসাহাসি করা হয়! কিন্তু এ যুগে আমরা কতটা সভ্য হয়েছি তা নিজেদের নিজেরা প্রশ্ন করা দরকার। যারা রাস্তা ঘাটে ছিনতাই করছে তারা বিদেশী নয়, তারা বাংলাদেশী। আমরা কতটুকু এগিয়েছি সেটি এখনই হিসাব করে বের করা দরকার।