অর্থ সংকট: গতি কমেছে সুশাসনভিত্তিক এনজিও’র

Manabzamin নাজমুল হুদা

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবারmzamin

facebook sharing button
viber sharing button

নাজমুল হুদা

২৭ সেপ্টেম্ব০২৩, বুধবার

দেশে নির্বাচন, গণতন্ত্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে নির্দিষ্ট কিছু এনজিও। তবে অর্থ সংকটে ভুগতে হচ্ছে এসব এনজিওকে। বিদেশ থেকে আগের মতো অর্থ আছে না। যাও আসছে তাও আবার সময় মতো ছাড় হচ্ছে না। এতে কাজের গতি কমেছে মানবাধিকার-সুশাসন নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলোর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এনজিওগুলোর অর্থ ছাড় পেতে নানা প্রক্রিয়ায় হয়রানির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। সময় মতো অর্থের জোগান না হওয়ায় এনজিওর কাজের পরিধি ছোট হচ্ছে।

এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি বছর জুন পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছরে দেশের এনজিওগুলোকে অর্থ ছাড় দেয়া হয়েছে ৭ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। আর আইনগত সহায়তা দেয়া এনজিওগুলোকে অর্থ ছাড় দেয়া হয়েছে ১০৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে মানবাধিকার খাতে মাত্র ৯৪ কোটি টাকা ও সুশাসন খাতে ছাড় দেয়া হয়েছে মাত্র ১৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি আইনগত সহায়তা দেয়া এনজিওগুলোর একটি আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, বৈশ্বিকভাবেই এনজিওতে অর্থের জোগান কমে গেছে।

তবে দেশে এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান বিদেশি দাতা সংস্থার অর্থ পাচ্ছে। যতটুকু আসছে তাও সরকারের দপ্তর থেকে অর্থ ছাড় পাওয়া যাচ্ছে না। ‘আসক’ গত দেড়-দুই বছর ধরে নানা প্রক্রিয়ায় অর্থ ছাড়ের হয়রানির শিকার হচ্ছে। তিনি বলেন, নানা কৌশলে আমাদের সময়মতো অর্থ ছাড় দিচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রজেক্ট পিরিয়ড পার হয়ে যাওয়ার পরও আমাদের অর্থ ছাড় হয়নি। ফলে আমরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছি। কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অধিকার নিয়ে যে প্রশ্ন আছে, সরকার এই জায়গায় নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে চায় বলে অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে নানান কৌশল অবলম্বন করছে এবং দীর্ঘায়িত করছে প্রক্রিয়াকে। একটি প্রজেক্টের ৫০ শতাংশ অর্থ ছাড় করার পর ফের বাকি ৫০ শতাংশ অর্থ ছাড়ের আবেদন করলে নানান অজুহাত দেয়। একটার পর একটা চিঠি দিয়ে এটা-ওটা আনেন বলে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ দাঁড় করাতে পারেন না। বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে সময়ক্ষেপণ করে যাতে আমরা আমাদের কাজগুলো সুন্দরভাবে, সুষ্ঠুভাবে করতে না পারি। প্রজেক্ট পিরিয়ডের পরেও যখন অর্থছাড় পাওয়া যায় না তখন স্বাভাবিকভাবে প্রকল্পের কাজ সীমিত হয়ে আসে। একেবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

নূর খান লিটন বলেন, যারা নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে কাজ করে তাদের ক্ষেত্রে এটা তীব্র আকার ধারণ করেছে। অর্থ ছাড় না হলে মানবাধিকারের কাজগুলো সংকুচিত হবে। এতে এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার কেউ থাকবে না। যা সমাজ ও দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করা এনজিও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মানবজমিনকে বলেন, গণতন্ত্র, নির্বাচন এসব খাতে সরকারের যদি অগ্রাধিকার থাকতো তাহলে অর্থ ছাড়ও বেশি হতো। আমরা যে কাজ করি তাতে খুব কম অর্থ লাগে। সভা আয়োজন, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালাতে কিছু অর্থ লাগে। কিন্তু সেই সামান্য অর্থও যদি না পাওয়া যায় তাহলে আমাদের কার্যক্রম চালানো দুরূহ হয়।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বে যদি প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে চাই তাহলে গণতন্ত্র, সুশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা যদি সুশাসন, গণতন্ত্রের ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করি তাহলে এর মাসুল দিতে হবে। এতে জাতি হিসেবে বিপদে পড়তে হবে। আমরা এসবের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি না দেখেই নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। বিদেশিরা সোচ্চার হচ্ছে আমাদের নির্বাচন, গণতন্ত্র নিয়ে। আমরা অগ্রাধিকার হিসেবে এগুলোকে দেখছি না।

এনজিওদের সংগঠন ফেডারেশন অব এনজিও’স ইন বাংলাদেশ (এফএনবি)। সংগঠনটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি এবং ব্যুরো বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মানবজমিনকে বলেন, করোনার পর থেকে এনজিও’র অবস্থা ভালো না। বিদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। দাতা সংস্থার কন্ট্রিবিউশন কমেছে। তাছাড়া আমরা বলি, উন্নত দেশের দিকে যাচ্ছি, তখন দাতা সংস্থাগুলো দরিদ্র দেশে ডোনেশন করবে। সারা পৃথিবীতেই এই ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডের তহবিল কমে গেছে। সেজন্য বাংলাদেশেও আগে এনজিওগুলোতে অনেক প্রজেক্ট ছিল। কিন্তু এখন সেটা নেই। এরমধ্যেও আমাদের দেশে কিছু বড় সংস্থা আছে যারা এখনো অব্যাহতভাবে বিভিন্ন তহবিলে প্রজেক্ট পায়। আমি শুনেছি, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সময়মতো অর্থছাড় পাচ্ছে না।