অনেক আগে বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজনীতি তথা সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন, ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’। তার পঙ্ক্তিগুলো এরকম-
…‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ বিরানায়; মুক্তিযুদ্ধ,
হায়, বৃথা যায়, বৃথা যায়, বৃথা যায়।
কোথায় পাগলাঘণ্টি বাজে
ক্রমাগত, এলোমেলো পদধ্বনি সবখানে। হামলাকারীরা
ট্রাম্পেট বাজিয়ে ঘোরে শহরে ও গ্রামে
এবং ক্রন্দনরত পুলিশের গলায় শুকায় বেল ফুল।
দশদিকে কত রকাডেমিতে নিশীথে
গোর-খোদকেরা গর্ত খোঁড়ে অবিরত, মানুষের মুখগুলি
অতি দ্রুত হয়ে যাচ্ছে শিম্পাঞ্জির মুখ।’
স্বাধীনতার পরপর খেদ ও ক্ষোভ থেকে কবিতাটি লিখেছিলেন তিনি। ইতোমধ্যে অতিক্রান্ত হয়েছে অর্ধশতাব্দী। কিন্তু মনে হয় যেন বদলায়নি কিছু। আমরা যে তিমিরে ছিলাম, সেই তিমিরেই রয়ে গেলাম। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেন, ‘Once again at the starting point’ গ্রামের লোকেরা বলে, ‘আল্লাহ আল্লাহ বলো ভাই, ফিরে এলাম গোড়ায়।’ ব্যবসার যেমন আয়-উন্নতি আছে, দালান-কোঠা দেখে যেমন উন্নয়ন বোঝা যায় তেমনি রাজনীতির গতি-প্রকৃতি দেখে ভালো-মন্দ দেখা যায়। উন্নতি-অবনতি চিহ্নিত করা যায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এগুলো ব্যাখ্যার জন্য সুনির্দিষ্ট টার্মেনোলজি আছে : রাজনৈতিক উন্নয়ন বা অনুন্নয়ন (Political Development or Decay)। আমাদের রাজনীতির চালচিত্র দেখে সহজেই বোঝা যায়, এখানে রাজনৈতিক উন্নয়ন ঘটেনি; বরং ঘটেছে অনুন্নয়ন। কী কারণে উন্নয়ন ঘটেনি তা নিয়ে সমাজতাত্ত্বিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা আছে। সেটি আজকের আলোচ্য বিষয় নয়।
বড় আশা করে মানুষ তাকিয়েছিল ৩৬ জুলাইয়ের বিপ্লব-পরবর্তী অধ্যায়ে। এত রক্তপাত, জীবনহানী, ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে গণবিপ্লবটি সফল হয়েছিল। কিন্তু ১০০ দিন পরবর্তী অধ্যায় বিশেষ করে এই ক’দিনে যা ঘটেছে তাতে মানুষ রীতিমতো হতাশ। নাগরিক সাধারণ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন গুনছে। শামসুর রাহমানের কবিতার ভাষায় জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করছে- কোথায় চলেছে স্বদেশ? এবার ফিরে যাই গীতিকার হায়দার হুসেইনের কাছে :
কি দেখার কথা কি দেখছি? কি শোনার কথা কি শুনছি?
কি ভাবার কথা কি ভাবছি? কি বলার কথা কি বলছি?
আশায় আশায় বসতি গড়ে মানুষ। বিগত ৫৪ বছরের ব্যর্থতা কাটিয়ে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতায়’ উদ্বেলিত হয়েছিল মানুষ। তখন যে সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য সূচিত হয়েছিল তিন মাসেই কী তাণ্ডব হয়ে গেল! জাতীয় সমঝোতা (National Consensus), যা অর্জিত হয়েছিল তাতে কি চিড় ধরেছে? সংস্কারের যে প্রত্যাশা জাগ্রত হয়েছে তা কি এত সকালে মিলিয়ে গেছে! নিশ্চিতভাবেই না। দৃশ্যমান ঘটনাবলি যা আমাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তা হলো- প্রথমত. গণবিপ্লবীদের আপাত মতদ্বৈধতার প্রকাশ। দ্বিতীয়ত. বিপ্লবের অভ্যন্তরীণ শত্রুদের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ। তৃতীয়ত. প্রতিবেশী আধিপত্যবাদী শক্তির নগ্ন হস্তক্ষেপের প্রয়াস। চতুর্থত. বাংলাদেশ জনগোষ্ঠীর মজ্জাগত অস্থিরতা ও স্বার্থান্বেষী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। পঞ্চমত. শিক্ষার্থীদের অস্থির, অপরিণত ও অনিয়ন্ত্রিত সম্মিলিত শক্তির অপচয়।
বিগত তিন মাসের ঘটনাবলি যদি পর্যালোচনা করা যায় তাহলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে নবীন ও প্রবীণের কিছু মতদ্বৈধতা লক্ষ করা যায়। যেমন- রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে নবীন শিক্ষার্থী নেতৃত্ব শক্ত অবস্থান নেয়। প্রবীণ নেতৃত্ব এর বিরোধী ছিল এমন নয়। তবে তারা রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছিলেন। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির যৌক্তিকতা তারা মেনে নেন।
এরপর সংস্কার এজেন্ডা এবং নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে প্রবীণ ও নবীনের মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছে। নবীনরা চাচ্ছে রাষ্ট্রব্যবস্থার যথার্থ সংস্কারের পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। অপর দিকে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে দ্রুত নির্বাচন দেয়ার তাগিদ রয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় গণবিপ্লব-উত্তর সময়ে বিএনপি বিকল্প শক্তি হিসেবে আবিভর্‚ত হয়েছে। সুতরাং তাদের দাবি উপেক্ষা করা যৌক্তিক হবে না। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস অবশ্য সংস্কারের পরই নির্বাচন দিতে চান। একই সাথে তিনি এ কথাও বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে তিনি সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন দেবেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ খানিকটা অগ্রসর হয়েছে। অগ্রসর অংশের বক্তব্য হলো- তারা গণবিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য তাদের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। অপর দিকে, বিপরীত বক্তব্য হচ্ছে এই যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি গোটা জাতির যে সমর্থন ও সম্মান রয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তা ব্যাহত হবে। উভয়ের পক্ষেই যুক্তি আছে। শিক্ষার্থী নেতৃত্বের শীর্ষপর্যায়ের দ্বৈত বক্তব্য নিশ্চিতভাবেই ছাত্র ঐক্যকে দুর্বল করবে। বিপ্লবের অভ্যন্তরীণ শত্রুরা শক্তিতে, অর্থে ও ষড়যন্ত্রে কতটা বেপরোয়া চট্টগ্রামের মর্মান্তিক ঘটনা তার প্রমাণ। আরো প্রমাণ গণবিপ্লবের স্টাইলে ‘অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের সংগঠনের শাহবাগ সমাবেশ চেষ্টা। লাখ টাকার লোভ দেখিয়ে পতিত স্বৈরাচার যে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চাইছে তা এর প্রমাণ। এর আগে তারা জিরো পয়েন্টে সমাবেশ করার ব্যর্থ চেষ্টা করে। গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে তারা নামে-বেনামে সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
কূটনৈতিক ভাষ্যকাররা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, এই কার্যাবলির মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চাইছে। তাদের কূটনীতির ভাষা স্বাভাবিক সৌজন্য অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস-ইসকনের (কথিত সাবেক) নেতা চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার ও জামিন না দেয়ায় ভারত উদ্বিগ্ন। একজন সাধারণ নাগরিক নিয়ে তারা যে বিবৃতি দিয়েছে সেটি কূটনীতির ইতিহাসে বিরল। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের শামিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মন্তব্য করেছে, এ ধরনের বিবৃতি ‘প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার চেতনার পরিপন্থী’।
উল্লেখ্য, ভারতে নিত্যদিন মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর যে অন্যায়-অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ড চালানো হয় বাংলাদেশ সরকার কখনোই তার প্রতিবাদ করেনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত হবে এখন থেকে প্রতিটি মুসলিম দলনের প্রতিবাদ করা। তারা একটি গভীর ষড়যন্ত্রের নীল-নকশা অনুযায়ী এসব কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে কূটনৈতিক অভিজ্ঞ মহল মনে করে।
বাংলাদেশের জনমনস্তত্ত্ব সম্পর্কে ইতিহাসের সাক্ষ্য সুখকর নয়। সম্রাট বাবর বাংলা নামের এই জনপদকে বুলখগ নগর বা চিরবিদ্রোহের দেশ বলে চিহ্নিত করেছেন। পরিব্রাজক ইবনে বতুতা জনচরিত্র সম্পর্কে বলেছেন, এরা স্বার্থপরতাক্লিষ্ট, হিংসা-বিদ্বেষে আকীর্ণ এবং অবিশ্বস্ত এক জাতি। আকবর আলি খান ‘অবাক বাংলাদেশ বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি’ গ্রন্থে এ সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য আলোচনা করেছেন। ৫ আগস্ট ২০২৪-এর গণবিপ্লবের পরের দিন অর্থাৎ ৬ আগস্ট সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের কোনো সমর্থক খুঁজে পাওয়া যায়নি। অথচ আগের দিনে গণবিপ্লবের সমর্থনে কোনো কানাঘুষাও শোনা যায়নি। এখন লোকেরা জার্সি বদলের চরম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। বিপ্লবের পক্ষ নেতাদের সাথে অনেক টাকার বিনিময় বিপক্ষের ছবি তোলার ঘটনা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঘটেছে। রাতারাতি ভোল পাল্টে ফেলেছেন নেতাকর্মীরা। এই সুবিধাবাদী ও অবিশ্বাসযোগ্য চরিত্র বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় ধরনের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য।
সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে স্বাভাবিক ঐক্য অস্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিক তখনই যখন তারা ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের নামে ঐক্যের অপব্যবহার করে। বাস কন্ডাক্টর দুর্ব্যবহার করেছে। সুতরাং ভাঙ গাড়ি। প্রেমিকার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে অমুক ভাই। সুতরাং তার দলসুদ্ধ-ক্লাসসুদ্ধ-প্রতিষ্ঠানসুদ্ধ এমনকি এলাকাসুদ্ধ পেটানো প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানভিত্তিক অথবা সাত কলেজ আন্দোলনের মতো দাবি আদায়ে অনির্ধারিতভাবে অবরোধ আজ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। গত কয়েক দিনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যে তাণ্ডবনৃত্য হয়েছে তা রীতিমতো বিভীষিকাময়। গত মঙ্গলবার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজ বনাম সিটি কলেজ খণ্ডযুদ্ধ হয়ে গেল। এই যুদ্ধ কখনো কখনো ঢাকা কলেজ বনাম আইডিয়াল কলেজের মধ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগে রোববার দুপুরে পুরান ঢাকার প্রায় সব কলেজ একত্রিত হয়ে সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা চালায়, সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে আগুন দেয়। এরপর রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে ডক্টর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালায় আরেকদল ছাত্র। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রের সুচিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে এসব হামলা-পাল্টাহামলা চলে। একই সময়ে তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ও বুটেক্সের ছাত্রদের মধ্যে হামলা-পাল্টাহামলার ঘটনা ঘটে। আজকাল রাজধানীতে চলাফেরা অনিশ্চিত ও অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে।
নিউটনের তৃতীয় সূত্র মোতাবেক ‘Every action has itÕs equal and opposite reaction’. ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের দিয়েছে স্বাধীনতা, অস্ত্রের ঝঙ্কারে বিনষ্ট হয়েছে মানবাধিকার। ৩৬ জুলাইয়ের গণবিপ্লব আমাদের দিয়েছে দ্বিতীয়বারের জন্য স্বাধীনতা। তার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থী তথা যুবসমাজে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা। সম্মিলিত শক্তির প্রয়োগে তাদের হতাশা, ক্ষোভ ও আবেগে প্লাবিত হচ্ছে সমাজ। সুতরাং সম্ভাবনাময়, প্রতিশ্রুতিশীল এবং বিদ্যায়তনিক দক্ষতা-যোগ্যতার যথেচ্ছ অপব্যয় ও অপ্রয়োগ হচ্ছে।
বাংলাদেশের জনচরিত্র সম্পর্কে যে নেতিবাচক কথাগুলো এসেছে এখন তার প্রমাণ মিলেছে জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী কার্যক্রমে। ১৫ বছরে যে দাবির কথা তাদের মনে ছিল না এখন তা ঝড়ের বেগে রাজধানীকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। এমন দিন নেই যে দাবির মহড়া থেকে নিরাপদ থেকেছে নগরী। প্রেস ক্লাবের সামনে গেলে এই মহড়ার প্রমাণ মিলবে। সচিবালয় থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। অবশেষে আইন করে নিষিদ্ধ করতে হচ্ছে সমাবেশ। আর শাহবাগ হয়ে উঠেছে দাবিবাগ! সেখানে হাঙ্গামা লেগেই আছে।
এসব আপদ-বিপদ নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিমশিম খাচ্ছে। তারা শক্ত অবস্থান নিতে পারছে না। সুশাসকসুলভ কৌশলী ও সমন্বিত কার্যক্রমের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। শীর্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অদক্ষতা, স্থবিরতা ও বিশেষজ্ঞ মতামতের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। অগ্রাধিকারের গুরুত্ব নির্ণয়পূর্বক কার্যকর ব্যবস্থার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে তা অরাজকতায় পর্যবসিত হতে পারে। সুতরাং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হচ্ছে- ১. অভ্যন্তরীণ দ্বৈধতা নিরসন; ২. অভ্যন্তরীণ শত্রুদের ব্যাপারে কঠোর ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ; ৩. আধিপত্যবাদী প্রতিবেশীর নীল-নকশা সম্পর্কে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখা। শক্তির মোকাবেলায় বিকল্প শক্তির সন্ধান করা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবহিত রাখা; ৪. বাংলাদেশের জনচরিত্রের মেরামত সহজ নয়। সংবিধান, আইন ও ধর্মীয় অনুশীলনের মাধ্যমে সৎ, সাহসী ও জনদরদি সমাজ তৈরির প্রয়াস প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদি সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া (Socialization)-এর মাধ্যমে একটি নৈতিক জাতি সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত সুনাগরিক সৃষ্টি করা কর্তব্য; ৫. শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় ফিরিয়ে নেয়ার আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এ লক্ষ্যে ক্লাস, পরীক্ষা ও বলিষ্ঠ শিক্ষাব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। তাদেরকে দেশ গড়ার মতো ও সমাজ কল্যাণে নিয়োজিত করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সেই সাথে সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করা দরকার। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা উচিত। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা আশু প্রয়োজন।
অবশেষে আবারো গানের ভাষায় বলি : আজো তবু কি লাখো শহীদের রক্ত যাবে বৃথা? এক সাগর রক্তের বিনিময়ে একাত্তরে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা। ২০২৪-এর দ্বিতীয় স্বাধীনতায়ও ঢেলে দিয়েছি তাজা তাজা রক্ত। সেই রক্ত আখেরে রচিত হোক গণবিপ্লবের প্রত্যাশিত নতুন বাংলাদেশ।
লেখক : অধ্যাপক (অব.), সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়