নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন এবং গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে অক্টোবরের শেষ থেকে অবরোধ পালন করছে বিএনপিসহ বেশকিছু দল। গত ৩১ অক্টোবর থেকে এ কর্মসূচি চলছে। এতে জনজীবনে নানা ধরনের প্রভাব পড়ছে। দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকা ছাড়াও রাজধানীতে যান চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও যান চলাচলে ধস নামছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করে ব্যক্তিগত গাড়ি। আর হরতাল-অবরোধে আতঙ্কে যানবাহন বিশেষত ব্যক্তিগত গাড়ি কম চলছে রাজধানীজুড়ে। এরই সরাসরি প্রভাব পড়ছে এক্সপ্রেসওয়েতে। অবরোধের দিনগুলোয় গড়ে ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত যান চলাচল হ্রাস পাচ্ছে। ফলে টোল আদায়ও কমে যাচ্ছে।
সেতু বিভাগের তথ্যমতে, উদ্বোধনের পর থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে দৈনিক ২৭ থেকে ৩৪ হাজার পর্যন্ত যানবাহন চলাচল করত। এতে দৈনিক ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত টোল আদায় হয়েছে। তবে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল রেকর্ড কমে যায়। ওইদিন এক্সপ্রেসওয়েতে মাত্র ১০ হাজার ৯৯৯টি যানবাহন চলাচল করে। এতে টোল আদায় কমে দাঁড়ায় মাত্র ৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা।
২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এতে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল আরও কমে যায়। ওইদিন ১০ হাজার ৬৫৫টি যানবাহন চলাচল করেছে এক্সপ্রেসওয়েতে। এতে টোল আদায় কমে দাঁড়িয়েছে আট লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এটি ছিল উদ্বোধনের পর থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে সবচেয়ে কম যানবাহন চলাচল ও টোল আদায়ের রেকর্ড।
৩০ অক্টোবর বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। অবরোধের ওই তিন দিন এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল করে যথাক্রমে ১২ হাজার ৬৭৮টি, ১৫ হাজার ১৩৪টি ও ২০ হাজার ৫৬৫টি। আর টোল আদায় হয় যথাক্রমে ১০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, ১২ লাখ ২৮ হাজার ও ১৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। যদিও অবরোধ না থাকায় ৩০ অক্টোবর এক্সপ্রেসওয়েতে ৩৬ হাজার ৯১৫টি যানবাহন চলাচল করে। ওইদিন টোল আদায় হয়েছিল ৩০ লাখ ১২ হাজার টাকা।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও ৩ ও ৪ নভেম্বর অবরোধ না থাকায় এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল করে যথাক্রমে ২৬ হাজার ৬৬ ও ৩২ হাজার ৭০৭টি। ওই দু’দিন এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় হয় যথাক্রমে ২১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও ২৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। ৫ ও ৬ নভেম্বর অবরোধে আবারও যানবাহন চলাচল কমে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ২৬০টি ও ১৭ হাজার ৬৫৪টি। আর টোল আদায় হয় ১২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা ও ১৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।
এদিকে ৭ নভেম্বর অবরোধ না থাকায় ওইদিন এক্সপ্রেসওয়েতে ৩৪ হাজার ৫১৬টি যান চলাচল করে। এতে টোল আদায় হয় ২৮ লাখ ১৩ হাজার টাকা। ৮ ও ৯ নভেম্বর পুনরায় অবরোধে যান চলাচল কমে যায়। ওই দু’দিন এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচলের পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৪১৯টি ও ২২ লাখ ৯৬০টি। এতে টোল আদায় হয় যথাক্রমে ১৫ লাখ টাকা ও ১৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
অন্যদিকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও ১০ নভেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ ৩৯ হাজার ৪৭৩টি যান চলাচল করেছে। এতে টোল আদায় হয়েছে রেকর্ড ৩২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। পরের দিন যান চলাচল ছিল ৩৩ লাখ ৫৬৪টি আর টোল আদায় হয় ২৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। তবে ১২ ও ১৩ নভেম্বর আবারও অবরোধে যান চলাচল নামে ১৯ লাখ ২২টি ও ২১ লাখ ৯৭৮টিতে। আর টোল আদায় হয় ১৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ও ১৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
১৪ নভেম্বর অবরোধ না থাকায় আবারও যান চলাচল বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ হাজার ৫২৩টি। ওইদিন টোল আদায় হয় ২৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এতে ২৮ থেকে ১৪ নভেম্বরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অবরোধের দিনগুলোয় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল হ্রাস পায় ৩০-৪০ শতাংশ।
শেয়ার বিজ