নারায়ণগঞ্জ
আগামী নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এই সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দেশে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। বাস, লঞ্চ বন্ধ করেও, পুলিশ-ছাত্রলীগ মাঠে নামিয়েও বিরোধী দলের সমাবেশে জনস্রোত ঠেকিয়ে রাখতে পারছে না সরকার। ফ্যাসিবাদী এই সরকারের বিরুদ্ধে দেশের জনগণ রাজপথে নেমেছে। এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
আজ শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাতটি রাজনৈতিক দলের জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি তাঁর বক্তব্যে বলেন, দেশের মানুষ এক দফার দাবিতে সংগ্রামে নেমেছে। শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওএমএসের লাইনে দীর্ঘ লাইন। প্রধানমন্ত্রী, আপনার উন্নয়ন ১৪ বছরে এসে দুর্ভিক্ষের আওয়াজে পরিণত হয়েছে। আপনার আমলের ১৪ বছরে রিজার্ভ কমে ফাঁকা হয়ে আসছে। উন্নয়নের নামে বছরে দেশের ৭০ থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে, এরা ক্ষমতায় থাকবে, মানুষের ভোটের অধিকার থাকবে না। নির্বাচন খেলা হবে, কিন্তু সেখানে মানুষ ভোট দিতে পারবেন না। ভোটের দাবি করে আন্দোলন করলে গুম, খুন হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার, পরিবহন বন্ধ করে দিয়ে বিরোধী দলের সমাবেশ ঠেকানো হবে।’
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা ৬০০ লোককে গুমের অভিযোগে অভিযুক্ত। হাজার হাজার লোককে ক্রসফায়ার করেছেন—আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। আপনারা র্যাব ও পুলিশের মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে হেয় করেছেন। মানে বাংলাদেশকে হেয় করেছেন। এই সরকারের কাছে বাংলাদেশের মর্যাদা কোনোভাবেই নিরাপদ নেই।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না তাঁর বক্তব্যে বলেন, আওয়ামী লীগ ভোটের আগে দেশের জনগণকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তারা পারেনি। এ জন্য আমি এই সরকারকে মিথ্যুক সরকার বলি। জনগণকে ভাঁওতা দিয়েছে। সেই ভাঁওতাবাজ সরকার এখন গায়ের জোরে টিকে আছে।’ এভাবে এই সরকার টিকে থাকতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেখানে বিরোধী দল সমাবেশ ডেকেছে, দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে জর্জরিত মানুষ সেখানে নদী সাঁতরে, পায়ে হেঁটে, চিড়া, মুড়ি ও গুড় নিয়ে তিন দিন আগে অংশ নিতে ছুটে গেছেন। এ রকম কি আপনারা আগে কখনো শুনেছেন? ঢাকায়ও মানুষকে তারা আটকাতে পারবে না। আমি অন্তত দুজন সরকারি কর্মচারীর কথা জানি, তাঁরা ছুটি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন, ওই মানুষের সঙ্গে ঢাকার সমাবেশে যোগ দেবেন তাঁরা।’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘দেশের লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। দেশে রিজার্ভ নেই আমরা দু-তিন মাস আগেই বলেছিলাম। দেশে শ্রীলঙ্কান সিনড্রোম দেখা দিচ্ছে।’ গণতন্ত্র মঞ্চ ক্ষমতায় গেলে ১০ টাকায় চাল ও দেশের ৬ কোটি গরিব মানুষকে মাসে এক হাজার করে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘সরকার দেশ চালাতে পারছে না, হাওয়া বদলাতে শুরু করেছে। এই সরকারের পেছনে দেশ-আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কোনো মানুষ নেই। আমরা বিএনপির সঙ্গে আলোচনা ও সংলাপ করেছি। সবাইকে জুলুমের বিরুদ্ধে রাজপথে দাঁড়াতে হবে। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত লড়াইয়ে থাকতে হবে।’
মহানগর জেএসডির সভাপতি আবদুল মোতালেবের সভাপতিত্বে এবং গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সভাপতি অঞ্জন দাসের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্যসচিব হাবিবুর রহমান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী, গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, গণতন্ত্র মঞ্চ নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, জেএসডি জেলার সভাপতি খলিলুর রহমান, গণ অধিকার পরিষদ জেলার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আবুল খায়ের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান প্রমুখ।