ইকবালকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নাটক করছে: মির্জা ফখরুল

প্রবীণ আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ মো. ফজলুল হক গত ১৫ সেপ্টেম্বর বার্ধক্যের কারণে মারা যান। মির্জা ফখরুল ইসলামহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সুনামগঞ্জে এসেই প্রয়াত ফজলুল হকের বাসায় যান ও পরে শোকসভায় যোগ দেন।

বিএনপি সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান—আমরা একই বাগানের ফুল। অথচ মানুষ আজ কী নিদারুণ যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছে। আমরা পাকিস্তান দেখেছি, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান দেখেছি, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, যুদ্ধ করেছি। কিন্তু এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি কখনো দেখিনি।’ তিনি আরও বলেন, রংপুরের পীরগঞ্জে হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের দুই নেতা জড়িত। তারা দল থেকে তাঁদের বহিষ্কার করেছে।

অথচ এই কদিন বিএনপির নামে মিথ্যাচার করেছে আওয়ামী লীগ। ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদরা প্রতিদিন বিএনপির বিরুদ্ধে বলেন, মিথ্যাচার করেন।

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। এটা প্রতারক রাজনৈতিক দল। তারা মুখে মুখে গণতন্ত্রের কথা, মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে। আবার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে জনগণকে হত্যা করতেও তারা দ্বিধা করে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম—একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে, মুক্ত বাংলাদেশ, মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার, ভাতের অধিকার, বাক্স্বাধীনতা ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আওয়ামী লীগ যতবারই ক্ষমতায় এসেছে, ততবারই সেই আশা-আকাঙ্ক্ষার জায়গা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। একটি রাষ্ট্রের যেসব স্তম্ভ থাকে, সেগুলো নষ্ট করে দিয়েছে।’

আওয়ামী লীগ সরকারকে অদৃশ্য শক্তির সরকার উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের দিন শেষ, তাদের চলে যেতে হবে। তারা প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, সবকিছু দলীয়করণ করেছে। বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। তিনি (খালেদা জিয়া) আপস করবেন না, কখনো আপস করেননি।

শোকসভায় প্রয়াত ফজলুল হক সম্পর্কে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি আমার প্রিয় মানুষ ছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল, কিন্তু ভাবতেও পারিনি এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন। এ সময় উনার মতো জনকল্যাণে নিবেদিত মানুষের বেশি প্রয়োজন ছিল। অনেকেই অনেক কারণে রাজনীতি করেন। কিন্তু তিনি জীবনভর দেশ ও মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করেছেন।’

সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ কলিম উদ্দিন আহমদ শোকসভায় সভাপতিত্ব করেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর ও এনামুল হক, সংগঠনের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক এম এ সালাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হাসান জীবন, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সাংসদ নাছির উদ্দিন চৌধুরী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সাংসদ ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজির হোসেন, সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপন, কেন্দ্রীয় সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান।

পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন প্রয়াত ফজলুল হকের ছেলে মো. আবিদুল হক।
দীর্ঘ তিন ঘণ্টা চলা শোকসভায় জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাদীর আহমদ, মল্লিক মইন উদ্দিন সোহেল, মো. শেরেনুর আলী, আকবর হোসেন, সেলিম উদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, সৈয়দ তিতুমীর, আবুল মনসুর মো. শওকত, মাসুক আলম, আনসার উদ্দিন, নূর হোসেন, নজরুল ইসলাম, জিয়াউর রহিম, কামরুজ্জামান, আবদুল হক, আনিসুল হক, মুনাজ্জির হোসেন, হাফেজা ফেরদৌস, শামসুজ্জামান, মামুনুর রশীদ ও মো. রায়হান উদ্দিন।