Sheikh Mujib was arrested after pakistan army to a officer wireless message was sent, big bird cage, little bird has to fly….

 ২৫শে মার্চ রাতে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছিলো শেখ মুজিবকে

শেখ মুজিবুর রহমান
ছবির কপিরাইট Getty Images
Image caption শেখ মুজিবুর রহমান

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ। পাকিস্তানি জেনারেল ইয়াহিয়া খান সেদিন গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। এর দশ দিন আগে তিনি এসেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের এই রাজধানী শহরে।

সেদিন সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ ইয়াহিয়া খানের গাড়ির কনভয় স্টাফ হাউসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো।

অন্ধকার নামতেই সেই বহর আবার ফেরত গিয়েছিল প্রেসিডেন্ট হাউসের দিকে।

 কিন্তু সেই বহরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ছিলেন না। গাড়িতে তার জায়গায় বসেছিলেন ব্রিগেডিয়ার রফিক।

পাকিস্তানি শাসকরা ভেবেছিল যে সবাইকে বুঝি ধোঁকা দেওয়া গেছে।

‘শিশুদের মাঝখানে বসিয়ে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ’

‘আত্মঘাতী বিস্ফোরণে’ নিহতদের চারজনই শিশু

ভারতে স্কুলের ৭০ জন ছাত্রীকে নগ্ন করে দেহ পরীক্ষার অভিযোগ

কিন্তু সেই সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক তার বই ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ এ লিখেছেন: “মুজিবের গোয়েন্দারা গোটা খেলাটা বুঝে গিয়েছিলেন। ইয়াহিয়া খানের নিরাপত্তা টিমে কর্মরত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ আর চৌধুরী দেখে ফেলেছিলেন যে একটা ডজ গাড়িতে ইয়াহিয়া খানের মালপত্র বিমানবন্দরে পৌঁছেছে। তিনি সেটা শেখ মুজিবের কাছে জানিয়ে দিয়েছিলেন। সন্ধ্যে সাতটার সময়ে ইয়াহিয়া খান যখন বিমানে চড়ার জন্য এয়ারফোর্স গেট দিয়ে ঢুকছেন, তখন নিজের দপ্তরে বসে গোটা দৃশ্যটা দেখছিলেন উইং কমান্ডার এ কে খন্দকার। ফোন করে শেখ মুজিবকে খবরটা জানিয়ে দেন তিনি।”

ইয়াহিয়া খান
ছবির কপিরাইট Getty Images
Image caption ইয়াহিয়া খান

মি. সালিক আরও লিখছেন, “ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল থেকে এক বিদেশী সাংবাদিক আমাকে ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন যে ইয়াহিয়া খান ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন, এই খবরটা আমি নিশ্চিত করতে পারি কী না!”

রাত তখন বেশ গভীর। কে জানত যে ওই রাত এতোটা লম্বা হবে।

বোতল থেকে পানি খাচ্ছে তৃষ্ণার্ত সাপ

শেখ মুজিব আর ইয়াহিয়া খানের মধ্যে আলোচনার কী পরিণাম হয়, তা নিয়েই ওইদিন দুপুরে মেজর জেনারেল খাদিম হুসেইন নিজের দপ্তরে বসে ভাবছিলেন। হঠাৎই সামনে রাখা টেলিফোনটা বেজে উঠেছিল। লাইনের অন্য দিকে ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান।

সরাসরি বলেছিলেন, “খাদিম, আজই করতে হবে কাজটা।”

খাদিম এই নির্দেশের জন্যেই অপেক্ষাই করছিলেন। নিজের কর্মচারীদের সঙ্গে সঙ্গেই ওই আদেশ পালনের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

সিদ্দিক সালিক লিখছেন, “আমি দেখছিলাম ২৯ ক্যাভালরির রেঞ্জাররা রংপুর থেকে আনানো পুরনো এম-২৪ ট্যাঙ্কগুলো অয়েলিং করছিল। ক্র্যাকডাউনের সময় ঠিক করা হয়েছিল ২৬শে মার্চ রাত একটায়। আশা করা হচ্ছিল যে ততক্ষণে ইয়াহিয়া খান করাচীতে পৌঁছে যাবেন।”

জেনারেল টিক্কা খান
ছবির কপিরাইট WWW.PAKARMYMUSEUM.COM
Image caption জেনারেল টিক্কা খান

২৫ তারিখ রাত প্রায় সাড়ে এগারোটার সময় ঢাকার স্থানীয় কমান্ডার টিক্কা খানের কাছে অনুমোদন চেয়েছিলেন ক্র্যাকডাউনের সময়টা এগিয়ে আনার। এরকম খবর আসছিল যে ওরা ব্যাপক প্রতিরোধের জন্য তৈরি হচ্ছে।

সালিক লিখছেন, “সকলেই ঘড়ির দিকে তাকালাম। রাষ্ট্রপতি তখন সম্ভবত কলম্বো আর করাচীর মাঝামাঝি। জেনারেল টিক্কা আদেশ দিলেন ববিকে বলো যতটা সম্ভব দেরি করতে।

রাত সাড়ে এগারোটায় পুরো শহরের ওপরে পাকিস্তানি বাহিনী হামলা করেছিল। অপারেশন সার্চলাইট শুরু হয়েছিল।”

গরু জবাই করলে গুজরাটে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

সৈয়দ বদরুল আহসান নিজের বই ‘ফ্রম রেবেল টু ফাউন্ডিং ফাদার’ গ্রন্থে লিখেছেন, “শেখ মুজিবের বড় মেয়ে হাসিনা জানিয়েছিলেন যে গুলির আওয়াজ শুরু হতেই মুজিবুর রহমান ওয়ারলেসের মাধ্যমে খবর পাঠিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে দেন।”

রাত প্রায় একটার সময়ে কর্নেল জেড এ খানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটা দল ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে পৌঁছে গিয়েছিলো।

গেটে পৌঁছাতেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি চালাতে শুরু করেছিল।

শেখ মুজিবের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক স্থানীয় পুলিশ কর্মী সেই গুলিতে মারা যান।

দোতলায় শেখ মুজিব স্ত্রী ও সন্তানদের একটা ঘরে বন্ধ করে বাইরে থেকে আটকিয়ে দেন আর যতটা সম্ভব জোরে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন ‘ফায়ারিং বন্ধ কর।’

প্রখ্যাত সাংবাদিক বি জেড খুসরু তার বই ‘মিথস্ এন্ড ফ্যাক্টস বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার’-এ লিখেছেন “গুলি বন্ধ হওয়ার পরে কর্নেল খান ঘরের ভেতরে ঢোকেন। নিচে কাউকে পান নি তিনি। সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় যান। মুজিব একটা ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একজন সেনাসদস্য তার গালে একটা চড় মারে। শেখ মুজিবকে কর্নেল আদেশ দেন তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য। তিনি জানতে চেয়েছিলেন পরিবারকে বিদায় জানিয়ে আসতে পারেন কী না। কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিবারের সবার সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি।”

মি. খুসরু আরও লিখেছেন, “সেনাবাহিনীর গাড়িতে চড়ার সময়ে শেখ মুজিবের খেয়াল হয় যে তিনি পাইপটা ফেলে এসেছেন। কর্নেল আর শেখ মুজিব আবারও ভেতরে গিয়ে পাইপ নিয়ে গাড়িতে ফেরত আসেন। কিছুক্ষণ বাদে শেখ মুজিবের মনে হয় যে তার হয়তো কোনও ক্ষতি করা হবে না। কর্নেলকে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, আসার আগে আমাকে জানানো হল না কেন? কর্নেল উত্তর দিয়েছিলেন, সেনাবাহিনী আপনাকে দেখাতে চেয়েছিল যে আপনাকে গ্রেপ্তারও করা যেতে পারে।”

ইন্দিরা গান্ধীর সাথে শেখ মুজিবুর রহমান
ছবির কপিরাইট PIB
Image caption ইন্দিরা গান্ধীর সাথে শেখ মুজিবুর রহমান

জেড এ খান ‘দা ওয়ে ইট ওয়াজ’ বইতে লিখেছেন, “শেখ সাহেবকে গ্রেপ্তার করার পরে ৫৭ ব্রিগেডের মেজর জাফর ওয়ারলেস মেসেজ পাঠিয়েছিলেন ‘বিগ বার্ড ইন কেজ, স্মল বার্ডস হ্যাভ ফ্লোন’।

মি. খান লিখেছেন, ‘আমি জেনারেল টিক্কা খানের কাছে ওয়ারলেসে জানতে চেয়েছিলাম আপনি কি চান শেখ মুজিবকে আপনার সামনে হাজির করাই? উনি উত্তর দিয়েছিলেন, আমি ওঁর মুখ দেখতে চাই না।”

সিদ্দিক সালিক লিখছেন, “ওই রাতে মুজিবের সঙ্গে থাকা সব পুরুষ মানুষদের আমরা গ্রেপ্তার করে এনেছিলাম। পরে চাকরবাকরদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আদমজী স্কুলে সবাইকে ওই রাতে রাখা হয়েছিল। পরের দিন ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনদিন পরে করাচী নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আমার বন্ধু মেজর বিলালের কাছে জানতে চেয়েছিলাম গ্রেপ্তার করার সময়েই মুজিবকে খতম করে দিলে না কেন? বিলাল বলেছিল জেনারেল টিক্কা খান ব্যক্তিগতভাবে ওকে বলেছিলেন যে কোনও উপায়ে শেখ মুজিবকে জীবিত গ্রেপ্তার করতে হবে।”

ওই রাতেই এক পাকিস্তানি সেনা ক্যাপ্টেন ওয়ারলেসে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল আর জগন্নাথ হল থেকে কড়া প্রতিরোধ আসছে।

সপরিবারে শেখ মুজিবুর রহমান
ছবির কপিরাইট BANGLADESH LIBERATION WAR MUSEUM
Image caption সপরিবারে শেখ মুজিবুর রহমান

সিদ্দিক সালিক লিখছেন, “এক সিনিয়র স্টাফ অফিসার আমার হাত থেকে ওয়ারলেস সেটটা কেড়ে নিয়ে জানিয়েছিলেন ওদের শেষ করতে তোমার আর কত সময় লাগবে? চার ঘণ্টা! .. যত্তসব.. তোমার কাছে কী অস্ত্র আছে? রকেট লঞ্চার. রিকয়েলস গান. মর্টার.. সব কিছু একসঙ্গে চালাও.. দু’ঘণ্টার মধ্যে পুরো এলাকা দখল করে রিপোর্ট কর।”

চারটের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর পাকিস্তানি সেনারা দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু বাঙালি জাতীয়তাবাদী ভাবনাকে পাকিস্তানি সেনারা দখল করতে পারে নি।

সকালে ভুট্টোকে ঢাকায় তার হোটেল থেকে উঠিয়ে নিয়ে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

বিমানে চড়ার আগে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে তিনি বলেছিলেন, “ধন্যবাদ, পাকিস্তান বেঁচে গেল।”

পরের দিন সকালে সিদ্দিক সালিক ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবের বাসভবনে গিয়েছিলেন তল্লাশি চালাতে। কিছুই পাওয়া যায় নি সেখানে শুধু রবীন্দ্রনাথের একটা ফ্রেমে বাঁধানো ছবি ছাড়া।

ফ্রেমের কাঁচটা বেশ কয়েক জায়গায় ভেঙে গিয়েছিল, কিন্তু ছবিটা একদম ঠিক ছিল।

ওদিকে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার পরে শেখ মুজিবকে মিয়াওয়ালী জেলের এক সেলে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। রেডিও তো দূরের কথা খবরের কাগজও দেওয়া হত না তাকে।

সপরিবারে শেখ মুজিবুর রহমান
ছবির কপিরাইট BANGLADESH LIBERATION WAR MUSEUM
Image caption শেখ মুজিবুর রহমান, গ্রেফতার হওয়ার পর

প্রায় ন’মাস তিনি ওখানে ছিলেন। ৬ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে চলা এক সেনা ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল।

তারপরে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা গিয়েছিল জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে। মিয়াওয়ালী জেল থেকে বার করে শেখ মুজিবকে রাওয়ালপিন্ডির একটি গেস্ট হাউসে নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

৭ই জানুয়ারি, ১৯৭২, রাতে শেখ মুজিবকে রাওয়ালপিন্ডির চকলালা বিমানঘাঁটিতে ছাড়তে নিজেই গিয়েছিলেন মি. ভুট্টো।

তিনিও কোনও কথা না বলে শেখ মুজিবকে বিদায় জানিয়েছিলেন।

পেছনের দিকে আর না তাকিয়ে সোজা বিমানের সিঁড়ি বেয়ে উঠে গিয়েছিলেন শেখ মুজিব।

দু’দিন লন্ডনে কাটিয়ে ৯ই জানুয়ারি তিনি ঢাকার দিকে রওনা হয়েছিলেন। মাঝে কয়েক ঘণ্টার জন্য দিল্লিতে নেমেছিলেন তিনি।

ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, তার পুরো মন্ত্রীসভা, সেনা, বিমান আর নৌবাহিনীর তিন প্রধান এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় শেখ মুজিবকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। সবার চোখেই ছিল জল।

ঢাকায় ফিরলেন শেখ মুজিবুর রহমান, ১০ই জানুয়ারি, ১৯৭২
ছবির কপিরাইট AFP
Image caption ঢাকায় ফিরলেন শেখ মুজিবুর রহমান, ১০ই জানুয়ারি, ১৯৭২

ক্যান্টনমেন্টে এক সভা আয়োজন করা হয়েছিল।

শেখ মুজিব ইংরেজিতে ভাষণ দিতে শুরু করেছিলেন। মঞ্চে বসা ইন্দিরা গান্ধী অনুরোধ করেন বাংলায় বলার জন্য।

দু’ঘণ্টা পরে ঢাকার পথে রওনা হন শেখ মুজিব। তখন লাখ দশেক লোক তাকে স্বাগত জানাতে তৈরি সেখানে।

বিবিসির হিন্দি বিভাগের রেহান ফজলের এই প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেছে অমিতাভ ভট্টশালী