About 2000 people killed Motijheel

হেফাজতের দাবি মতিঝিলে শহীদ ২ হাজার : র্যাব ছাত্রলীগ যুবলীগের পাশাপাশি ভিনদেশীয় বিশেষ বাহিনীও গণহত্যায় অংশ নেয়

P1_hefajater-dabi-motijheel

সোমবার ভোর রাতে রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে অন্তত ২ হাজার তৌহিদি জনতা শহীদ ও কয়েক হাজার এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেছে হেফাজতে ইসলাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম খা আলমগীরের নির্দেশে পুলিশ, র্যাব, ছাত্রলীগ, যুবলীগের পাশাপাশি ভিনদেশীয় বিশেষ বাহিনীও গণহত্যায় অংশ নেয়। ইসলাম ধ্বংসের চক্রান্তের ধারাবাহিকতায় নাস্তিকদের পক্ষ নিয়ে সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের আলেম ওলামাদের ওপর এই গণহত্যা চালিয়েছে। সমাবেশ চলাকালে রোববার দুপুর থেকেই পল্টন, বায়তুল মোকাররম এলাকায় ভাংচুর অগ্নিসংযোগের সঙ্গেও হেফাজতে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। গণহত্যার পরিবেশ সৃষ্টিতে পরিকল্পিতভাবেই এসব ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয় বলে দাবি করে সংগঠনটি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সম্পাদক মাইনুদ্দিন রুহী ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী স্বাক্ষরিত লিখিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।
ওআইসি, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই গণহত্যার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেন, লাখো-কোটি নবীপ্রেমিক জনতার প্রাণের দাবি ১৩ দফা বাস্তবায়িত না হলে শহীদের রক্তে গোটা দেশে ব্যাপক প্রতিরোধের দাবানল জ্বলে উঠবে।
৬ মে কালরাত উল্লেখ করে তার বর্ণনা দিতে গিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার নজিরবিহীনভাবে বিদ্যুত্সংযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিয়ে পুলিশ, বিজিবি র্যাব ছাড়া বিপুলসংখ্যক বিদেশি সশস্ত্র লোক দিয়ে আচমকা সমাবেশস্থলে ব্রাশ ফায়ার শুরু করে। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা সেই ব্যাপক হত্যাযজ্ঞে কমপক্ষে দুই সহস্রাধিক নেতাকর্মী শাহাদাত বরণ করেছেন। আহতের সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি। অনেক লাশ গুম করা হয়েছে। ভোরের আলো ফোটার আগেই সিটি করপোরেশনের ময়লা বহনের গাড়িতে করে বিপুলসংখ্যক লাশ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বহু নেতাকর্মী এখনও নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করেছে সংগঠনটি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আহত ও নিহতের চূড়ান্ত পরিসংখ্যান এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে।
তৌহিদি জনতার উদ্দেশে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীরা যে যেখানে আছেন সেখানেই শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানান হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারা। হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের গতকাল ভোর থেকেই সরকারের পেটোয়া বাহিনী ফ্যাসিবাদী কায়দায় অবরুদ্ধ করে রাখায় সকাল ১১টায় সাংবাদ সম্মেলন করে জাতিকে দিকনির্দেশনা দেয়ার কথা থাকলেও সেটা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের প্রচারিত খবরে, অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ, জ্বালাও-পোড়াও ও ভাংচুরের ঘটনার সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সামান্যতম সম্পর্কও নেই। এটি অত্যন্ত পরিষ্কার, সারাদেশ থেকে ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা পেট্রল, করাত ইত্যাদি জ্বালানি বা যন্ত্রপাতি নিয়ে যায়নি, তারা প্রত্যেকে শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিতে জায়নামাজ, তাসবিহ, মিসওয়াক নিয়ে গেছেন। তাদের দিয়ে কোনোভাবেই বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ, গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে রাখা সম্ভব নয়। এসব মিথ্যা, উদ্ভট ও অসত্ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে নজিরবিহীন এ পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেয়ার অপচেষ্টা হিসেবেই এসব দুষ্কর্মের দায় হেফাজতের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে।
দোয়া দিবস পালনের আহ্বান ঢাকা মহানগর হেফাজতের : এদিকে রোববার হেফাজতে ইসলামের অবরোধ কর্মসূচি পরবর্তী মতিঝিল শাপলা চত্বরের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে মধ্যরাতে নিরীহ জনতার ওপর সরকারি বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ বাহিনী যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, পৈশাচিকভাবে গুলি চালিয়ে যেভাবে হাজার হাজার শান্তিপূর্ণ জনতার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর নেতারা।
গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, রোববার দুপুরের পর থেকে গুলিস্তান, নয়াপল্টন, বায়তুল মোকররম উত্তর গেট, বিজয়নগরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশের সম্মিলিত আক্রমণে এবং তাদেরই উসকানিতে যে জ্বালাও-পোড়াও ও হত্যাযজ্ঞ চলেছে তার দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। হেফাজতে ইসলাম বারবার প্রমাণ করেছে, তারা শান্তিপূর্ণ, জ্বালাও-পোড়াও ও অগ্নিসংযোগে তারা বিশ্বাস করে না। কিন্তু বায়তুল মোকাররম এলাকার আশপাশে জ্বালাও-পোড়াওয়ের যে তাণ্ডব হয়েছে তা ছিল সরকার দলীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের পূর্বকল্পিত হত্যাযজ্ঞ ও লুটপাট। তারা স্বর্ণের দোকানে লুটপাট করেছে, বইয়ের দোকানে আগুন দিয়েছে, পবিত্র কোরআন শরীফ জ্বালিয়ে দিয়েছে, গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। পুলিশের নির্লজ্জ সহযোগিতায় রাজধানীর মধ্যাঞ্চলকে নরকে পরিণত করেছে। কিন্তু সরকারি সংবাদমাধ্যম ও মিডিয়ার মাধ্যমে হেফাজতকর্মীদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।
নেতারা বলেন, দফায় দফায় হামলা, গুলিবর্ষণ ও গণহত্যা চালানোর পরও মধ্যরাতে যখন হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে শাপলা চত্বরে অবস্থান করছিলেন, কেউ জিকির করছিলেন, কেউ নামাজ পড়ছিলেন, কেউ সামান্য সময়ের জন্য ঘুমন্ত ছিলেন, এই সময় সরকারের পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব যে সাঁড়াশি আক্রমণ চালিয়েছে, হাজার হাজার শান্তিপূর্ণ মানুষকে শহীদ করেছে, ২০ সহস্রাধিক মানুষকে পঙ্গু করেছে, তা ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তদুপরি এই হাজার হাজার শহীদের লাশকে পিকআপ, অ্যাম্বুলেন্স, ট্রাকে করে গুম করা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন। এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের নেই। তবে মনে রাখতে হবে, জুলুম নির্যাতন করে, নিরীহ মানুষকে হত্যা করে কেউ অতীতে পার পায়নি, এখনও পাবে না।
নেতারা বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, গতকাল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কওমি মাদরাসা ও ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারি পুলিশ বাহিনী হামলা চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। সরকারদলীয় সশস্ত্র ক্যাডাররা রাস্তায় রাস্তায় নিরীহ জনগণের ওপর হামলা চালাচ্ছে, তাদের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে, পঙ্গু করে দিচ্ছে। কোথাও কোথাও দূরপাল্লার গাড়ি থেকে দাড়ি টুপিওয়ালাদের নামিয়ে শত শত মানুষের সামনে নির্যাতন চালাচ্ছে। এদেশের জনগণ এই বীভত্স ও নারকীয় হত্যাযজ্ঞ বরদাশত করবে না। এর জবাব ক্ষমতাসীনরা অবশ্যই পাবে ইনশাআল্লাহ।
তারা নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনা ও আহতদের রোগমুক্তির জন্য এবং আল্লাহর দরবারে এই জঘন্য হত্যাযজ্ঞের বিচার চেয়ে খতমে বুখারী, খতমে কোরআনসহ বিভিন্ন খতম পড়ে আজ সারাদেশে বিশেষ দুআ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
বিবৃতি প্রদানকারীরা হলেন- হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, উপদেষ্টা মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, সদস্য সচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, মুফতি তৈয়্যেব, মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী, মাওলানা মনজুরুল ইসলাম, প্রচার সেলের প্রধান মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াছেল, মাওলানা শফিক উদ্দিন, মাওলানা মহি উদ্দিন ইকরাম, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা রিয়াজতুল্লাহ, মাওলানা ওয়ালি উল্লাহ আরমান, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা আলতাফ হোসাইন প্রমুখ।

Source: Amardesh Online