ক্রিকেটকে রক্ষা করতে হলে আগে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হবে

Minar Rashid

অনেকেই বসের সাথে খেলতে গিয়ে ইচ্ছে করেই হেরে যায় । এতে সেই আহাম্মক বস এবং তেলবাজ কর্মচারী উভয়েই পুলকিত হয় । ব্যক্তিত্বহীন ও সুযোগ সন্ধ্যানী ব্যক্তি টপ বসের স্ত্রীকে মিউজিকাল চেয়ার ধরনের প্রতিযোগিতায় প্রথম বানিয়ে দেয় । অনেক সময় দর্শকদের উসখুস আর মৃদু প্রতিবাদকেও এই তৈলবাজরা গায়ে মাখে না । এই ধরনের নির্লজ্জ চাটুকারিতা আমাদের চারপাশে প্রায়শই দেখা যায় । গত বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার মধ্যকার ক্রিকেট খেলাটি দেখে নিজের চোখে দেখা এই ধরনের কিছু দৃশ্য স্মৃতিপটে ভেসে উঠেছে ।

ব্যক্তিত্বহীন মানুষের মত একটা হীনম্মন্য ও আত্মমর্যাদাহীন জাতিও একই ধরনের আচরন প্রদর্শন করতে পারে । দু:জনকভাবে সেই ফ্যানোমেনাই আমাদের ক্রিকেটে শুরু হয়ে গেছে । রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গোলামীর কালো ছায়া আমাদের সম্ভাবনাময় ক্রিকেটকেও গ্রাস করে ফেলছে । রাজনীতি , অর্থনীতি এবং সংস্কৃতিতে নতজানু থেকে খেলাধুলার মত আবেগের জায়গায় এসে মনিবদের টেক্কা মেরে নিজের শৌর্য বীর্য প্রদর্শন করে ফেলবেন, তা কখনই হবার নয় । মনিব এটা কখনই হতে দেবে না । কোথা থেকে , কখন এবং কোন সূতা দিয়ে টান মারবে, তা টেরও পাওয়া যাবে না ।

অনেকেই বলেন , খেলাকে খেলা হিসাবেই দেখা উচিত । এখানে রাজনীতি বা অন্য নীতিকে টেনে আনা ঠিক নয় । কিন্তু সমস্যা হলো , রাজনীতিতে ধর্ম ও খেলাধূলাকে টেনে আনাকে যারা মারাত্মক ঘৃণা করেন বলে প্রচার করেন , আমাদের এই মুল্লুকে তাঁরাই এই কাজটি বেশি বেশি করে করেন ।
পাকিস্তানের সাথে সাধারণ ম্যাচ থাকলেও খেলোয়াডদের উৎসাহ দিতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী খেলা দেখতে মাঠে চলে যান । বাংলাদেশ জিতে গেলে ক্যামেরার সামনে আনন্দাশ্রু বের করে বিরাট ক্লাইমেক্স সৃষ্টি করে বসেন ।কিন্তু ইন্ডিয়ার সাথে গুরুত্বপূর্ণ ফাইনাল ম্যাচের সময়েও ক্রিকেটপ্রেমী প্রধান মন্ত্রীকে মাঠে দেখা গেলো না ।
জোর করে চেয়ারটি দখল করে রাখলেও প্রধানমন্ত্রী পদটি দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান । খেলা দেখতে তাঁর মাঠে যাওয়া এবং না যাওয়ার মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে । ওবায়দুল কাদের বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করে দিয়েছেন । শত্রু এবং বন্ধুর সাথে জেতার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এই ধরনের কথা বললে কিংবা কাজ করলে খেলা নিয়ে রাজনীতি হয় না । শুধু কেউ এটা নিয়ে সমালোচনা করলেই সেটা হয়ে পডে রাজনীতি ।

ক্রিকেট জাতির জন্যে সুন্দর চেতনা নাশক হিসাবে দেখা দিয়েছে । পিলখানা হত্যাকান্ডের দিনটিকে ক্রিকেট থেরাপি দিয়ে জাতিকে ভুলিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে । আমরা ভুলে গেছি যে এটা ছিল আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের উপর প্রথম আঘাত । এই অবস্থা চলতে থাকলে আমরা সাধের ক্রিকেট নিয়েও বেশিদূর অগ্রসর হতে পারবো না । সেই আলামত স্পষ্ট হয়ে পড়েছে । এখানেও আমাদেরকে বনসাই বানিয়ে রাখা হবে । ক্রিকেটকে রক্ষা করতে হলে আগে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হবে । ক্রিকেট পাগল নতুন প্রজন্মকে এই বিষয়টি সম্যক উপলব্ধি করতে হবে ।

আমাদের অন্যতম দুই ক্রিকেটারকে অন্যায়ভাবে আই সি সি নিষিদ্ধ করায় এদেশের এক বাহাদুরের কন্যা বলেন, বাবা আইসিসিতে থাকলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যেত । স্কুলে থাকা অবস্থায় এই ধরণের বাহাদুরদের গল্প পড়েছি । এক বাহাদুর আস্ত বটগাছ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করতেন । তা দেখে অন্য বাহাদুরের মেয়ে ঠোঁট বাকিয়ে বলে , তুমি কিসের বাহাদুর মিয়া ? আমার বাবা তো আস্ত বটগাছ দিয়ে দাঁত খেলান করে ।

দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ক্ষয় যত হতে থাকবে , এই ধরনের বাঘ ভাল্লুক মারা বাহাদুরীর গল্প ততই বাড়তে থাকবে ।

ক্রিকেটকে অঘটনের খেলা বলা হয় । এখানে যে কোন অঘটন যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে । আসল ঘটনা যাই হোক না কেন , বিরাট সংখ্যক মানুষের বদ্ধমূল ধারণা , ইন্ডিয়াকে ইচ্ছে করেই জিতিয়ে দেয়া হয়েছে । আর এই পাবলিক পারসেপশন বা সন্দেহ অহেতুক সৃষ্টি হয় নি ।
গত পরশু এক দাওয়াতে গিয়ে দেখি মূল আলোচনা এই ক্রিকেট । সবার সন্দেহ সেই একই । সেখানে এক সিনিয়র ভাই একটি অত্যন্ত দামি মন্তব্য করেছেন , আমরা দেখিয়ে দিয়েছি যে ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধ সহজেই জিততে পারতাম কিন্তু প্রেসারে আছি ।

ক্রিকেট পাগল উপমহাদেশে আমাদের ক্রিকেটে এগিয়ে যাওয়াকে বৃহৎ প্রতিবেশী সঙ্গত কারণেই সুনজরে দেখছে না । শুধুমাত্র ১২০ কোটি জনগণ থেকেই এগারোজন ক্রিকেটার বের হয় না – উপমহাদেশের আলোবাতাসে থেকে মাত্র ১৬ কোটি মানুষ থেকেও একই মাপের এগারোজন ক্রিকেটারের সৃষ্টি হতে পারে । আমরা সেটাই দেখিয়ে দিয়েছি । এই ক্যালকুলেশনটি আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশির জন্যে মোটেই সুখকর নয় । লংকানরা এগিয়ে গেছে , কারণ তাদের গায়ে রাবনের শক্তি আছে । মহাভারতের কাহিনী দিয়ে এটার একটা ব্যাখ্যা দাঁড করানো সম্ভব । কিন্তু এই ভেতো বাংলাদেশিরা কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে – তার কোন সুন্দর ব্যাখ্যা হাতে নেই ।

সিঙ্গেল ইউনিটের একটি জাতি রাষ্ট্রের যে কোন দিকের উন্নতি আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশির জন্যে হুমকিস্বরূপ । কারণ তার ভেতরে যে বিভিন্ন জাতি সত্ত্বা রয়েছে , তারাও আমাদের মত স্বপ্ন দেখা শুরু করতে পারে । তখন ক্রিকেট আর ক্রিকেট থাকবে না । অন্য কিছু হয়ে পড়বে । যে মিঠাই ( ক্রিকেট চেতনা ) খাইয়ে এখন আমাদেরকে মাঝে মাঝে মারতে চাচ্ছে বা রাজনৈতিক চেতনা গুড়িয়ে দিতে চাচ্ছে , সেই মিঠাই তার নিজের জন্যেও মৃত্যুর কারণ হয়ে যেতে পারে ।

সেই কারণেই সম্ভবত পৃথিবীর মধ্যে দশ নম্বর শক্তিসালী প্রধানমন্ত্রী (?) ইন্ডিয়া -বাংলাদেশ খেলার দিনে মাঠে যেতে সাহস করেন না ।