আবরার ফাহাদ হত্যার বিরুদ্ধে যারা সক্রিয় লেখালিখি করছেন, তাদের ধন্যবাদ জানাই; ফরহাদ মজহার

Farhad Mazhar

 Poet Farhad Mazhar is an outspoken critic of the current government , Farhad Mazhar: Facebook

আবরার ফাহাদ হত্যার বিরুদ্ধে যারা সক্রিয় লেখালিখি করছেন, তাদের ধন্যবাদ জানাই। তবে তাদের অনেকের প্রধান ত্রুটি ও অদূরদর্শিতার প্রমান হচ্ছে হত্যাকারীদের মধ্যে দু একটি ‘হিন্দু’ নাম দেখে তারা পুরা হত্যাকাণ্ডকে একটা সাম্প্রদায়িক চরিত্র দেবার চেষ্টা করছেন। হিন্দু বিদ্বেষ ছড়ানো খুবই সস্তা, কিন্তু ভয়ংকর আত্মঘাতী কাজ। আশা করি আমরা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা গুলোর ফাঁদে পা দেব না। এরা সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের উস্কানি দেবার চেষ্টা করছে। অপরদিকে এটাও ভাববার কারন নাই খুনি হিন্দু বলে তার ধর্মীয় পরিচয় লুকিয়ে রাখতে হবে, কিম্বা তাকে গ্রেফতার করা যাবে না।

বাংলাদেশে হিন্দু নিজেকে সংখ্যালঘু হিশাবেই দেখে। এটা সংখ্যাগরিষ্ঠদের দোষ, হিন্দুর না। যে কোন কারণেই হোক সংখ্যালঘুর মনে নিরাপত্তাবোধের অভাবকে হাল্কা ভাবে দেখার কোন উপায় নাই। তথাকথিত সংখ্যার রাজনীতি এবং তৎসৃষ্ট সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িকতা সরাসরি আধুনিক নির্বাচনী ব্যবস্থা বা পার্লেমেন্টারি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সেটা ভিন্ন বিতর্ক। এক সময় করা যাবে।

ধর্মীয় সম্প্রদায় হিশাবে বাংলাদেশের হিন্দু ভাইবোনদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা ছাড়া হিন্দুত্ববাদ মোকাবিলার কোন শর্টকাট রাস্তা নাই। ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যকেই আমাদের সমাজের অন্তর্গত, সেখানে কোন বিদ্বেষ তৈরি বা ছড়ানো চলবে না। একটি ইনক্লুসিভ সমাজের ধারণা আমাদের চিন্তায় এবং চর্চায় থাকতে হবে। বাংলাদেশের জনগণকে হিন্দুত্ববাদের ‘হিন্দু, হিন্দি, হিন্দুস্তান’ নামক আগ্রাসী জাতিবাদী রাজনীতি মোকাবিলা করতে হলে অবশ্যই সবার আগে আশেপাশের এবং সারা বিশ্বের সকল বাংলাভাষীর আস্থা অর্জন করতে হবে। হিন্দুত্ববাদ সহ সকল প্রকার ধর্মীয় জাতিবাদ প্রতিরোধের লড়াকু ক্ষেত্র হচ্ছে বাংলাদেশ। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণকেই পথ দেখাতে হবে।

একটি ক্ষুদ্র ও খণ্ডিত ভূখণ্ড হিশাবে বাংলাদেশ দিল্লীর পরাধীন টেরিটরি হিশাবে পর্যবসিত হবার জন্য আসে নি। পুরা উপমহাদেশের জনগণের মুক্তির আশাভরসা হিশাবে একাত্তরে উদিত হয়েছে। আমাদের চিন্তা ও রাজনীতিও তেমনই হওয়া উচিত। গর্ব বোধ করুন, আপনি বাঙালি, বিশেষ ভাবে বাঙালি মুসলমান। একাত্তরে পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। এখন দিল্লির শাস্তি পাওনা হয়ে গিয়েছে। এই কর্তব্য আপনি ধর্ম নির্বিশেষে সকল বাঙালির মন জয় না করে পালন করতে পারবেন না। আগে বলা হোত আপনাকে আপনার ধর্ম ত্যাগ করে বাঙালি হতে হবে। আরে! আপনি সবসময়ই বাঙালি ছিলেন, আপনার ধর্ম ছিল ইসলাম, আর আপনার ঘরের অন্যেরা ছিল হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান। পাকিস্তানীদের যখন মুক্তিযুদ্ধে নাস্তানাবুদ করছিলেন, তখনও আপনি মুসলমানই ছিলেন।

তো ফাইন, ইসলামই হোক আমাদের শক্তি। কিন্তু জাতিবাদী ইসলাম না। সেটা হবে হিন্দু জাতিবাদের পালটা মুখচ্ছবি। নিজ নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ‘বাঙালি’ বানাবার রাজনীতির আমরা কবর দিয়ে দিয়েছি। বাঙালি জাতিবাদের যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন এসেছে গণশক্তি নির্মাণ ও গণপ্রতিরক্ষা নিশ্চিত করবার যুগ। উপমহাদেশকে নতুন করে গড়বার দিন এসে গিয়েছে। দয়া করে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়াবেন না। এতে নরেন্দ্র মোদীর শাসন উপমহাদেশে দীর্ঘস্থায়ী হবে। এই কুকর্ম আমরা করব না।

হিন্দুত্ববাদ হচ্ছে আধুনিক জাতিবাদ, যার ভিত্তি ফ্যসিস্ট মতাদর্শ। কিন্তু হিন্দু বা সনাতন ধর্ম সিন্ধু অববাহিকার বিভিন্ন ও বিচিত্র জীবন যাপন, বিশ্বাস ও সংস্কৃতি। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য নির্মাণ তার আন্তরিক দিক। যার মধ্যে ব্রহ্ম বা একত্ববাদের চর্চাও রয়েছে। যে ধর্ম হাজার হাজার বছর ধরে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের সাধনা করেছে সেই হিন্দুর নামে যখন মুসলমান হত্যা ও ইসলাম নির্মূলের রণধ্বণি ওঠে, বুঝতে হবে এটা হিন্দুর হতে পারে না। এটা হিটলারের মতো নব্য খুনিদের রণধ্বণি, উপমহাদেশে এদের পরাস্ত করতেই হবে।

তৈরি হয়ে নিন। বাঙালি আজ যা বোঝে ও চিন্তা করে সারা ভারতবর্ষ সেটা বোঝে পরের দিন। পুরানা কথা, কিন্তু মনে রাখলে আপনার কর্তব্য আরও ভাল ভাবে বুঝবেন।

From a facebook posting