ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ পৃথিবীর ইতিহাস কুচক্রীদের ব্যাপারে বরাবরই একই আচরন করেছে । ইতিহাসের কুখ্যাত ঘষেটি বেগম, জগৎ শেঠ ,রাজ বল্লভদের পর হিটলার থেকে শুরু করে যতো কুচক্রী আর ষঢ়যন্ত্রকারী দুনিয়ায় এসেছে তাদের অমোঘ ও করুন পরিনতি যেনো প্রকৃতি অবধারিত ভাবেই নির্ধারন করে রেখেছিলো।
২০০৭ সালের প্রারম্ভে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সদ্য ক্ষমতা ত্যাগী বিএনপি এবং প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের টানা পোড়েনে এ জেনারেল মঈন সরাসরি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছেন তা আজ সকলের কাছে পরিষ্কার । অথচ তিনি ছিলেন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মনোনিত একান্ত বিশ্বস্ত সেনা প্রধান ।
এ প্রসঙ্গে জেনারেল মঈন নিজে তার ঐ সময় লেখা আত্মজীবনী “শান্তির স্বপ্ন” শির্ষক বইয়ে এভাবে বেগম জিয়ার সঙ্গে গাদ্দারী করায় স্বয়ং দুঃখ প্রকাশ করেছেন । এই বইয়ে তিনি ঐ সময় সেনাবাহিনীর সমর্থনে ফখরুদ্দীন সরকার গঠন পেছনে যে কারন এবং যুক্তি দেখিয়েছিলেন তা পরবর্তিকালে সকলের কাছে সম্পূর্ন মিথ্যা বলে প্রমানিত হয় । তিনি বলেন , ঐ সময় ক্ষমতা গ্রহন করা আর কোনো উপায় ছিলো না কারন , অন্যথা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের বহিষ্কার করবে বলে আলটিমেটাম দিয়েছিলো ।
অত্যন্ত শঠ ও ধুর্ত এই জেনারেল মঈনের এসব অজুহাত আমাদের ৯/১১ পরবর্তি যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমনের পূর্বে সাদ্দাম হোসেনের হাতে ভয়ংকর মন বিধ্ধোংসী মারনাস্ত্র রয়েছে বলে অজুহাত বুশ দিয়েছিলো , সেই ঘটনাই মনে করিয়ে দেয়।
তবে মঈনের এই মিথ্যাচার আরও প্রমানিত হয় যখন পরবর্তি কালে ২০১৩/১৪ সালের আরও ভয়াবহ সংঘাতময় পরিবেশেও জাতিসংঘ এধরনের কোন ব্যবস্থা নেয়নি । এভাবেই ইতিহাসের অন্যান্য শঠ ও কূচক্রী মহলের মতো জেনারেল মঈনও নিক্ষিপ্ত হয়েছেন আস্তাকূড়ে ।
১/১১ এর অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে জিয়া পরিবার কে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে চির বিতারিত করার সকল নীলনক্সার প্রনেতা ছিলেন এই মঈন । বেগম জিয়ার অন্যায় কারাবাস এবং তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান কোকোর উপর প্রচন্ড নির্যাতন করা হয় তার সরাসরি নির্দেশেই । এছাড়াও বেগম জিয়ার সেনানীবাসের ৩০ বছরের স্মৃতি বিজরিত বৈধ বাসস্থান থেকে তাকে বিতারিত করার আসল কুশলী ছিলেন এই জেনারেল মঈন ।
এমনকি ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে সংঘটিত পিলখানার বিডিআর গনহত্যার সময়ে সেনা প্রধান হিসাবে তার নির্লিপ্ততা এবং অস্বাভাবিক আচরন , এই দুঃখজনক ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এবং তার সরাসরি জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এসেছে বার বার । অতি সম্প্রতি বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে আবার এ অভিযোগ করে ৫৭ জন মেধাবী ও সিনিয়র সেনা অফিসার হত্যায় হাসিনা ও মঈনের বিচার দাবী করেছেন ।
এবার ফিরে আসি বর্তমান প্রেক্ষাপটে । চাকুরী থেকে অবসর গ্রহনের পর থেকেই এই জেনারেল মঈন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আস্তানা গাড়েন । ১/১১ এর সময়ে অন্যায় ভাবে উপার্জিত বিপুল অর্থ সম্পদ এবং হাসিনা সরকারের সাথে মধুর সম্পর্কে তার দিনকাল বেশ ভালোই কাটছিলো ।
এর মধ্যে হঠাৎ শোনা যায় তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত এবং চিকিৎসা গ্রহন শুরু করেছেন ।অবশ্য এ ব্যাপারে আমাদের সন্দেহের যথেষ্ট কারন রয়েছে । জনমনে তার বিরুদ্ধে পুন্জিভূত ঘৃনা ও ক্ষোভ প্রশমন করে সহানুভূতি আদায়ের উদ্দেশ্যেও এই ক্যান্সার নাটক করা হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করেন ।
উল্লেখ্য , যুক্তরাষ্ট্রে তার এবং তার ছোটভাইয়ের ব্যবসা-বানিজ্য দেখা শোনা করে থাকে মূলত তার গুনগ্রাহী মোহাম্মদ দিনাজ খান । এই দিনাজ খান ছিলেন ফ্লোরিডা বিএনপির সভাপতি এবং ১/১১ সময়ে জেনারেল মঈন যুক্তরাষ্ট্র আসলে তাকে গন – সম্বর্ধনা দেয়ার অপরাধে দল থেকে বহিষ্কৃত হন যুক্তরাষ্ট্রে দাগী ও জেলখাটা আসামী এই মোঃ দিনাজ খান ।
জানা গেছে, জেনারেল মঈন কে জনসমক্ষে আবার স্বাভাবিক ভাবে উপস্থাপনের গোপন উদ্দেশ্যেই আগামী ৭ নভেম্বর ফ্লোরিডায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের অনুষ্ঠা আয়োজন করেছেন এই দিনাজ খান । উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির আরেক বিতর্কিত নেতা ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ।
এর প্রেক্ষাপটে ১/১১ এর কুচক্রী ও কুখ্যাত মঈনের ফ্লোরিডা উপস্থিতি আবার কোন নতুন ষঢ়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করে আল্লাহ মালুম । তবে এক কালের বিশাল প্রতাপশালী সেনা প্রধান, যিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পূর্ন পাল্টে দেয়ার অশুভ চেষ্টা করেছিলেন, তার এই একাকী , রিক্ত ও পরিত্যক্ত ছবি দেখলে আশ্চর্যই লাগে বৈকি । গাদ্দারী এবং মিথ্যাচারই ছিলো যার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তার পক্ষে এভাবে একা একা মসজিদে বসে থাকা বেশ কঠিনই বৈকি ।
ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বীচের লেক ওয়ার্থ বায়তুল মোকাররম মসজিদে জেনারেল মঈনের এই দূর্লভ ছবিগুলো তার অজান্তেই তুলেছেন এনটিভির ফ্লোরিডা প্রতিনিধি জনাব রফিকুল ইসলাম । তার কাছ থেকে জানা যায় ঘৃনিত ও কুখ্যাত এই সাবেক জেনারেল কে উপস্থিত মুছল্লীদের অধিকাংশই চিনতে পেরে জুম্মার নামাজের পর তাকে প্রতিরোধের মুহুর্তে তিনি তাদের এড়িয়ে দ্রুত সটকে পড়েন ।
তবে এই কুচক্রী মঈনের হঠাৎ ফ্লোরিডা উপস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশীগন বেশ চিন্তিত বলে জানা গেছে । এছাড়াও মঈনের দোষর বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দিনাজ খানের উদ্যোগে ও খোকার উপস্থিতিতে ৭ই নভেম্বর পালনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্লোরিডা বিএনপির নেতা কর্মীদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে । এই কুখ্যাত মঈন-খোকা গংদের প্রতিহত করার লক্ষ্যে ফ্লোরিডা বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রের সকল রাজ্যের বিএনপি নেতাকর্মীদের বিপুল অংশগ্রহনে এক ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর আয়োজন করতে যাচ্ছে ।