Reproduced from BLOG Taza Khobar – In Bengali
প্যান্ডোরার বাক্স যখন খুলেছে, তখন ভালো করেই খুলুক!
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মন্ত্রী হয়েছেন তোফায়েল আহমদ, পার্টির প্রবীণ নেতা। অসভ্যের মত তুই তোকারি আর খিস্তি খেউর করে পার পাবেন না। হাডুডু খেলতে এসে অন্যের ঘরে যখন ছি নিয়ে চলে এসেছেন, তখন পুরো খেলা খেলেই যেতে হবে। তারেক রহমানের তথ্য ভিত্তিক প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পার পাবেন না।
প্রশ্ন এক: তারেক রহমান প্রশ্ন তুলেছিলেন, ১৯৭২ সালে শেখ মুজিব বাংলাদেশে ফিরে অবৈধভাবে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেছিলেন কি নিা? কারন মাত্র ১০ মাস
প্রশ্ন দুই: তোফায়েল সাহেব বলেছেন, ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারী শেখ মুজিবকে ভুট্টো বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে বিদায় দিয়েছেন। হতে পারে আপনার কথা সত্য, সেটা মুজিবের সহচর ডঃ কামাল হোসেনও সাক্ষ্য দিয়েছেন। কিন্তু মুজিব বাংলার রাষ্ট্রপতি হয়ে ৬ জানুয়ারী ১৯৭২ পাকিস্তানের নতুন পাসপোর্ট বানিয়েছিলেন কেনো? একজন পাকিস্তানী নাগরিক হয়ে বাংলাদেশে রাজত্ব করতে? এর ১১ দিন আগে ২৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ বৈঠকে শেখ মুজিব ভুট্টোকে আশ্বাস দিয়ে আসলেন,
“I told you it will be confederation.
This is also between you and me… You leave it to me…Absolutely leave it to me.
Trust me… My idea was we will live together and we will rule this country.
You know the occupation (Indian) army is there.” (Stanley Wolpert, Zulfi Bhutto of Pakistan).
এটা কি কোনো স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য? নাকি পাকিস্তানের একজন অনুগত নেতার?
প্রশ্ন তিন: শেখ মুজিবের জন্য কি বাংলায় কোনো ভিন্ন আইন ছিল? ১৯৭১ সালে জামায়াত নেতা গোলাম আযম এবং আওয়ামীলীগ নেতা শেখ মুজিব দু’জনেই পাকিস্তানে ছিলেন। বাংলাদেশ জন্মের পরে দু’জনেই পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নবায়ন করে পাসপোর্ট নিয়েছিলেন।
প্রশ্ন চার: স্বাধীন বাংলাদেশ পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হলো ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। এরপরে শেখ মুজিবুর রহমান মুক্ত হয়ে নতুন করে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নেন ৬ জানুয়ারী ১৯৭২। এটা কি তোফায়েল সাহেব জানেন না? নাকি সব কিছু জেনেও ঘুমি য়ে আছেন? ১০ জানুয়ারী বাংলাদেশে ফিরে মুজিব কি পাকিস্তানের আনুগত্য ত্যাগ করে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন? নিয়ে থাকলে কবে, কিভাবে, কখন, কোথায় আছে সে তথ্য? নাকি একজন পাকিস্তানী নাগরিক মুজিব অবৈধভাবে রাজত্ব করলেন ১৬৭৯ দিন? ভুট্টোর সাথে মুজিবের গলাগলি ঢলাঢলি বাংলার মানুষ দেখেছে ১৯৭৪ অবধি, এমনকি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মধ্যেও। তাহলে খুব সহজেই প্রশ্ন উঠতেই পারে- ভুট্টো কি মুজিব নামে এক পাকিস্তানের নাগরিককে হাতে পাসপোর্ট ধরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে রাজত্ব করতে পাঠালেন?
প্রশ্ন পাঁচ: তোফায়েল সাহেব এবং তাদের নেতারা বহু কাল ধরেই দাবি করে আসছেন তাদের কোনো এক নেতা নাকি ২৫ মার্চ মুজিবের সেই কথিত টেলিগ্রাম পেয়ে স্বাধিনতার ঘোষনা করেন। যদিও সেই টেলিগ্রাম কেউ কোনোদিন চামড়ার চোখে দেখেনি। তবুও তাদের বক্তব্য যদি সত্য বলে ধরেও নিই তবে তাদের পিতা মুজিব কেন জীবিত অবস্থায় সেই টেলিগ্রামের কথা কোনো দিন বলেননি। (আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য মতে জিয়াউর রহমান জীবিত অবস্থায় নাকি কোনো দিন নিজেকে স্বাধিনতার ষোষক হিসাবে দাবি করেনি, তাই তিনি ঘোষক নন।) তাই আওয়ামী লীগ নেতাদের এই থিউরি অনুসারে তাদের নেতাও টেলিগ্রাফের কথা তার লেখনিতে উল্লেখ করেননি। তাহলে হয় তিনি সেদিন তেমন কোন টেলিগ্রাম করেননি অথবা তিনি নিজেও জানতেই মূল ঘোষনাটি জিয়াউর রহমানই দিয়েছিলেন। আসুন দেখি এনিয়ে আনন্দ পাবলিশার্স কলকাতা থেকে প্রকাশিত “বাংলা নামে দেশ” বইটিতে তিনি কি লিখেছেন। “বাংলা নামে দেশ” বইটি প্রথম কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় ২৬ মার্চ ১৯৭২। ঐ বইতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শেখ মুজিবুর রহমান নিজ স্বাক্ষর করা বাণীতে লিখেছেন, “”বাংলা নামের দেশ গ্রন্থে সেই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, সংগ্রামের আগের ও পরের ইতিহাস, ধারাবাহিক রচনা, আলোকচিত্রমালায় চমৎকারভাবে সাজানো হয়েছে। বইটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ন দলিল।” অর্থাৎ শেখ মুজিব নিজেই সার্টিফিকেট দিয়ে গেছেন- এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব প্রশ্নাতীত।
এ পুস্তকের মুজিব আরো লিখেন, “১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ্চ আমি ঘোষণা করেছিলাম ‘এই সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বহু নির্যাতন, বহু দুঃখভোগের পর আমাদের সংগ্রাম স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্র জন্ম নিয়েছে। সেই সংগ্রামের কাহিনী ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়। পাকিস্তানী সমরনায়কদের নরমৃগয়ার শিকার হয়েছে ৩০ লক্ষ লোক, এক কোটি লোক আশ্রয় নিয়েছিল ভারতে।
কিন্তু এই বইয়ের ৮১ পাতায় কি লেখা আছে? পড়ুন,“মুজিব গ্রেফতার। সর্বত্র সঙ্গশক্তি প্রায় তছনছ। এই শূন্য অবস্থাকে ভরাট করে তোলার জন্যে মেজর জিয়া রবিবার ২৮ মার্চ চট্টগ্রাম রেডিও থেকে অস্থায়ী সরকার ঘোষণা করলেন। তার প্রধান তিনি নিজেই।”
এই ঐতিহাসিক দলিলের কোথাও কোনো পাতায় মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষণার কথা বা ২৬ মার্চ থেকে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার ঘোষণা নাই, আছে জিয়ারটা।
এসব বিষয় নিয়ে ঐতিহাসিক দলিলে লিখিত ইতিহাসকে মুজিব নিজে সনদ দিয়ে গেছেন। এখন ইনু হানিফরা যতই চিৎকার করুক না কেনো, কোনো লাভ হবে না। যত ঘাটবেন, আসল ইতিহাস ছড়াবে তত বেশী। তখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসাজীবিদের মুখ লুকানোর যায়গা থাকবে না।
এসব প্রশ্নের জবাব জানা দরকার, জনাব তোফায়েল। শুধু শুধু সংসদের মত পবিত্র জায়গায় মুখ খারপ করে শুধু সংসদকেই নোংরা করেননি, দেশের মানুষের কাছেই ছোট হচ্ছেন। জনগণ পরিশালিত ভাষার বিপরীতে পরিশালিত ভাষাই কামনা করে।
– ডেপুটি সেক্রেটারী মোঃ শামসুল আলমের লেখা থেকে সংকলিত