Site icon The Bangladesh Chronicle

When the Pendora’s box has opened; let it open more

Reproduced from BLOG Taza Khobar – In Bengali

প্যান্ডোরার বাক্স যখন খুলেছে, তখন ভালো করেই খুলুক!

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মন্ত্রী হয়েছেন তোফায়েল আহমদ, পার্টির প্রবীণ নেতা। অসভ্যের মত তুই তোকারি আর খিস্তি খেউর করে পার পাবেন না। হাডুডু খেলতে এসে অন্যের ঘরে যখন ছি নিয়ে চলে এসেছেন, তখন পুরো খেলা খেলেই যেতে হবে। তারেক রহমানের তথ্য ভিত্তিক প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পার পাবেন না।

প্রশ্ন এক: তারেক রহমান প্রশ্ন তুলেছিলেন, ১৯৭২ সালে শেখ মুজিব বাংলাদেশে ফিরে অবৈধভাবে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেছিলেন কি নিা? কারন মাত্র ১০ মাস আগে ১০ এপ্রিল ১৯৭১ স্বাধীনতার ঘোষনাপত্রের এক আদেশবলে “সংবিধান রচনা হওয়া অবধি শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে” নিয়োগ করে সত্তরের নির্বাচনে নির্বাচিত আওয়ামীলীগ গণপরিষদ সদস্যরা। দেশে ফিরে মুজিব শপথ নিলেন রাষ্ট্রপতির, কিন্তু দেখলেন তার ক্ষমতা নাই। তখন যা ঘটেছিল সেটা পাওয়া যায় তাজুদ্দিনের বিশেষ সহকারী মঈদুল হাসানের লেখণিতে, “এরপর মূল রাজনৈতিক প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্ব পুনর্নির্ধারণের। ১১ই জানুয়ারী সকালে শেখ মুজিব ও তাজউদ্দিন প্রথম এ বিষয়ে একান্ত আলাপে প্রবৃত্ত হন। এতদিন শেখ মুজিব ছিলেন রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন প্রধানমন্ত্রী। পার্লামেন্টারী ব্যবস্থায় সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কোন কার্যকরী ক্ষমতা নেই। সরকার পরিচালনার সর্বপ্রধান ভূমিকা শেখ মুজিব পালন করেন, তা-ই ছিল অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীদের ঐকান্তিক কামনা। তাদের এই ইচ্ছার কথা উভয় নেতাই অবগত ছিলেন। কাজেই সরকার পরিচালনার মূল দায়িত্ব শেখ মুজিবের কাছে হস্তান্তরিত করার বিষয়টি স্বল্প আলোচনার মাধ্যমেই স্থির হয়” (মূলধারা ৭১)। ঐ ঘটনার সমর্থনে এখন দাবী করা হচ্ছে, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে ওই দিনই রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। পর দিন ১১ জানুয়ারি মুজিব ‘অস্থায়ী শাসনতান্ত্রিক আদেশ’ জারি করে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে গঠিত ‘রাষ্ট্রপতি শাসিত’ সরকারের বদলে ‘প্রধানমন্ত্রী শাসিত’ সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। প্রশ্ন হলো, কলমের এক খোচায় গণপরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই কি মুজিব এটা করতে পারেন? স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি সরকারকে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকারে বানানোর ক্ষমতা অবশ্যই তার ছিল না। এটা কেবল গায়ের জোরে করেছেন, যা অবৈধ। তবে কি মুজিবের কাছে আইন কানুনের কোনো বালাই ছিল না? নাকি দেশটা কেবল একজনের জমিদারী ছিল? যদি তা না হয়, তবে তো শেখ মুজিব নিশ্চিতভাবেই অবৈধভাবে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

প্রশ্ন দুই: তোফায়েল সাহেব বলেছেন, ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারী শেখ মুজিবকে ভুট্টো বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে বিদায় দিয়েছেন। হতে পারে আপনার কথা সত্য, সেটা মুজিবের সহচর ডঃ কামাল হোসেনও সাক্ষ্য দিয়েছেন। কিন্তু মুজিব বাংলার রাষ্ট্রপতি হয়ে ৬ জানুয়ারী ১৯৭২ পাকিস্তানের নতুন পাসপোর্ট বানিয়েছিলেন কেনো? একজন পাকিস্তানী নাগরিক হয়ে বাংলাদেশে রাজত্ব করতে? এর ১১ দিন আগে ২৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ বৈঠকে শেখ মুজিব ভুট্টোকে আশ্বাস দিয়ে আসলেন,

“I told you it will be confederation.

This is also between you and me… You leave it to me…Absolutely leave it to me.

Trust me… My idea was we will live together and we will rule this country.

You know the occupation (Indian) army is there.” (Stanley Wolpert, Zulfi Bhutto of Pakistan).

এটা কি কোনো স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য? নাকি পাকিস্তানের একজন অনুগত নেতার?

প্রশ্ন তিন: শেখ মুজিবের জন্য কি বাংলায় কোনো ভিন্ন আইন ছিল? ১৯৭১ সালে জামায়াত নেতা গোলাম আযম এবং আওয়ামীলীগ নেতা শেখ মুজিব দু’জনেই পাকিস্তানে ছিলেন। বাংলাদেশ জন্মের পরে দু’জনেই পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নবায়ন করে পাসপোর্ট নিয়েছিলেন। ১১ই জুলাই ১৯৭৮ গোলাম আযম পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশী নাগরিকত্বের আবেদন করেন। বাংলাদেশ সরকারের চাহিদা অনুয়ায়ী গোলাম আযম বাংলাদেশের আনুগত্য বিষয়ে হলফনামা জমা দেন ৩০শে এপ্রিল ১৯৮১। এটা অনেকদিন ঝুলে থাকার পরে শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ গোলাম আযমের অবৈধ অবস্থানের বিরুদ্ধে মামলা করলে সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান শেলীর রায়ে গোলাম আযম বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পান। শেখ হাসিনা ও তোফায়েলকে জবাব দিতে হবে, তাদের পিতা ও নেতা কোন পদ্ধতিতে কবে বাংলাদেশের নাগরিক হয়েছিলেন? তিনি কি গোলাম আযমের মত কোনো হলফনামা দাখিল করেছিলেন? নাকি তার জন্য ছিল ভিন্ন কোন আইন? স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে সবার জন্য নাগরিক আইন সমান, এটাই জানে নাগরিকরা।

প্রশ্ন চার: স্বাধীন বাংলাদেশ পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হলো ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। এরপরে শেখ মুজিবুর রহমান মুক্ত হয়ে নতুন করে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নেন ৬ জানুয়ারী ১৯৭২। এটা কি তোফায়েল সাহেব জানেন না? নাকি সব কিছু জেনেও ঘুমি য়ে আছেন? ১০ জানুয়ারী বাংলাদেশে ফিরে মুজিব কি পাকিস্তানের আনুগত্য ত্যাগ করে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন? নিয়ে থাকলে কবে, কিভাবে, কখন, কোথায় আছে সে তথ্য? নাকি একজন পাকিস্তানী নাগরিক মুজিব অবৈধভাবে রাজত্ব করলেন ১৬৭৯ দিন? ভুট্টোর সাথে মুজিবের গলাগলি ঢলাঢলি বাংলার মানুষ দেখেছে ১৯৭৪ অবধি, এমনকি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মধ্যেও। তাহলে খুব সহজেই প্রশ্ন উঠতেই পারে- ভুট্টো কি মুজিব নামে এক পাকিস্তানের নাগরিককে হাতে পাসপোর্ট ধরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে রাজত্ব করতে পাঠালেন?

প্রশ্ন পাঁচ: তোফায়েল সাহেব এবং তাদের নেতারা বহু কাল ধরেই দাবি করে আসছেন তাদের কোনো এক নেতা নাকি ২৫ মার্চ মুজিবের সেই কথিত টেলিগ্রাম পেয়ে স্বাধিনতার ঘোষনা করেন। যদিও সেই টেলিগ্রাম কেউ কোনোদিন চামড়ার চোখে দেখেনি। তবুও তাদের বক্তব্য যদি সত্য বলে ধরেও নিই তবে তাদের পিতা মুজিব কেন জীবিত অবস্থায় সেই টেলিগ্রামের কথা কোনো দিন বলেননি। (আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য মতে জিয়াউর রহমান জীবিত অবস্থায় নাকি কোনো দিন নিজেকে স্বাধিনতার ষোষক হিসাবে দাবি করেনি, তাই তিনি ঘোষক নন।) তাই আওয়ামী লীগ নেতাদের এই থিউরি অনুসারে তাদের নেতাও টেলিগ্রাফের কথা তার লেখনিতে উল্লেখ করেননি। তাহলে হয় তিনি সেদিন তেমন কোন টেলিগ্রাম করেননি অথবা তিনি নিজেও জানতেই মূল ঘোষনাটি জিয়াউর রহমানই দিয়েছিলেন। আসুন দেখি এনিয়ে আনন্দ পাবলিশার্স কলকাতা থেকে প্রকাশিত “বাংলা নামে দেশ” বইটিতে তিনি কি লিখেছেন। “বাংলা নামে দেশ” বইটি প্রথম কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়  ২৬ মার্চ ১৯৭২। ঐ বইতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শেখ মুজিবুর রহমান নিজ স্বাক্ষর করা বাণীতে লিখেছেন, “”বাংলা নামের দেশ গ্রন্থে সেই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, সংগ্রামের আগের ও পরের ইতিহাস, ধারাবাহিক রচনা, আলোকচিত্রমালায় চমৎকারভাবে সাজানো হয়েছে। বইটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ন দলিল।” অর্থাৎ শেখ মুজিব নিজেই সার্টিফিকেট দিয়ে গেছেন- এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব প্রশ্নাতীত।

এ পুস্তকের মুজিব আরো লিখেন, “১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ্চ আমি ঘোষণা করেছিলাম ‘এই সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বহু নির্যাতন, বহু দুঃখভোগের পর আমাদের সংগ্রাম স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্র জন্ম নিয়েছে। সেই সংগ্রামের কাহিনী ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়। পাকিস্তানী সমরনায়কদের নরমৃগয়ার শিকার হয়েছে ৩০ লক্ষ লোক, এক কোটি লোক আশ্রয় নিয়েছিল ভারতে। জঙ্গীচক্র আঘাতের পর আঘাত হেনেছে, কিন্তু আমার সাড়ে সাত কোটি মানুষের মনোবল তাতে ভেঙ্গে পড়েনি, আমরা স্বাধীনতা, আদায় করে নিয়েছি।” এখানে দেখা যাচ্ছে, প্রথম স্বাধীনতা দিবস বার্ষিকীর একদিন আগে অর্থাৎ ২৫ মার্চ ‘৭২, শেখ মুজিব নিজেই ২৬ মার্চের তথাকথিত স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে নীরব রইলেন। তার মানে হতে পারে দুটোঃ হয় স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয়টি শেখ মুজিবের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো না, কিংবা তিনি ঘোষণা দেন নি বিধায় এখানে উল্লেখ করেন নি। তাহলে কোথায় মুজিবের তথাকথিক ঘোষণা, টেলিগ্রাম…হান্নান, সন্দীপ…..ডট ডট ডট?

কিন্তু এই বইয়ের ৮১ পাতায় কি লেখা আছে? পড়ুন,“মুজিব গ্রেফতার। সর্বত্র সঙ্গশক্তি প্রায় তছনছ। এই শূন্য অবস্থাকে ভরাট করে তোলার জন্যে মেজর জিয়া রবিবার ২৮ মার্চ চট্টগ্রাম রেডিও থেকে অস্থায়ী সরকার ঘোষণা করলেন। তার প্রধান তিনি নিজেই।”

এই ঐতিহাসিক দলিলের কোথাও কোনো পাতায় মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষণার কথা বা ২৬ মার্চ থেকে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার ঘোষণা নাই, আছে জিয়ারটা।

এসব বিষয় নিয়ে ঐতিহাসিক দলিলে লিখিত ইতিহাসকে মুজিব নিজে সনদ দিয়ে গেছেন। এখন ইনু হানিফরা যতই চিৎকার করুক না কেনো, কোনো লাভ হবে না। যত ঘাটবেন, আসল ইতিহাস ছড়াবে তত বেশী। তখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসাজীবিদের মুখ লুকানোর যায়গা থাকবে না।

এসব প্রশ্নের জবাব জানা দরকার, জনাব তোফায়েল। শুধু শুধু সংসদের মত পবিত্র জায়গায় মুখ খারপ করে শুধু সংসদকেই নোংরা করেননি, দেশের মানুষের কাছেই ছোট হচ্ছেন। জনগণ পরিশালিত ভাষার বিপরীতে পরিশালিত ভাষাই কামনা করে।

– ডেপুটি সেক্রেটারী মোঃ শামসুল আলমের লেখা থেকে সংকলিত

Exit mobile version