What is Chetona? “চেতনা”
চলুন একটি ইন্টারেস্টিং বিষয়ে আলোচনা করা যাক।
চেতনা। বাংলা অভিধানে ‘চেতনা’ শব্দটির অর্থ দেয়া আছে এই রকম: চৈতন্য, সংজ্ঞা, হুঁশ; জ্ঞান, অনুভূতি, সজ্ঞান বা জাগ্রত অবস্থা, প্রাণ, জীবন। বাংলা একাডেমির অভিধানেও সংসদের মতো বলা হচ্ছে চৈতন্য, হুঁশ, জ্ঞান, সংজ্ঞা সম্পাদন, অনুভূতি ইত্যাদি।
চেতনা কয়েক ধরনের হয়ে থাকে যেমন, ধর্মীয় চেতনা রাজনৈতিক চেতনা, শারীরিক চেতনা কিংবা কোন গৌরবময় স্মৃতির৷
আজকাল ‘চেতনা’ কিংবা ‘চেতনা ব্যবসা’ কথাটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যাঙ্গ করে বলা হয়। কথার ফাঁকে যেকোনো প্রসঙ্গে এই শব্দগুলোর উল্লেখ প্রায়ই শোনা যায়। দুঃখের বিষয় হলো, অনেককে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে ঠিক এর বিপরীত কাজ করে যাচ্ছেন। এখানে দুইটা পক্ষ। একপক্ষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে অপকর্মে লিপ্ত অন্যপক্ষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যাঙ্গ করে চলেছে।
স্বাধীন বাংলাদেশ। এই স্বাধীনতার সাথে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা কতটুকু সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া স্বাধীনতা কোন চেতনার মধ্য দিয়ে লাভ করে এবং তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য কোন চেতনার প্রয়োজন আছে কিনা তাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
যে চেতনার মাধ্যমে স্বাধীনতা এসেছে সে চেতনাই স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় রক্ষক হতে পারে। যেটাকে বাংলাদেশী হিসেবে আমরা বলি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
এখন আমি বলি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি, দেশ গঠনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রয়োজনীয়তা কি:
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের এক গৌরবের ইতিহাস। এই ইতিহাস প্রচার করতে গর্ববোধ করি। অনেক স্ট্রাগল করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, গৌরব অর্জন করেছি। আর এই গৌরবকে শক্তিতে রুপান্তর করে রাস্ট্র পরিচালনা করা এবং নাগরিক জীবনে দেশের উপর নিজেদের পজিটিভ ইম্প্যাক্ট ফেলাই হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। যারা দেশ নিয়ে সত্যি সত্যি ভাবে, দেশের জন্মের ইতিহাস, নিজের শেকড় নিয়ে গর্ববোধ করে এবং সেই গৌরবের শক্তি দিয়ে দেশ ও মানুষের কল্যানে কাজ করে তাদের মাঝেই রয়েছে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
আপনার মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকলে আপনি কখনো রাস্ট্রের ক্ষতির কারণ হবেন না৷ আপনার দ্বারা দুর্নীতি হবেনা। কোন অপরাধ করার আগে আপনার মনে হবে আমার পূর্বপুরুষেরা রক্ত দিয়েছে এই দেশের জন্য আর আমি দেশের ক্ষতি করছি। আপনার ভেতর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকলে আপনি ধর্ষণ করতে পারবেন না, ধর্ষণের চিন্তা মাথায় আসলেই আপনার ভেতরটা কাঁপবে। মনেহবে নিজের মাকে লাঞ্চিত করছি। আপনার ভেতর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকলে আপনি দুর্নীতি করতে পারবেন না। আপনার বার বার মনেহবে এ কি করছি আমি, এরজন্যই কি আমাদের বাপ দাদা রক্ত দিয়েছিলো? এই কি সেই সোনার বাংলা? আপনার ভেতর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকলে আপনি দেশের বিরুদ্ধের সকল অন্যায়ে গর্জে উঠবেন। দেশের ভালো হলে আপনি উচ্ছাসিত হবেন। আপনার মনে বাজবে এইতো সেই চেতনা যেটা দেশ স্বাধীন করেছিলো। আপনার ভেতর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকলে আপনি সমাজের জন্য, পরিবারের জন্য, ভবিষ্যত প্রজন্মের নিরাপত্তার জন্য কাজ করতে চাইবেন এটা ভেবে, আহারে দেশটা আমার কত দামে কেনা, কখনো তার কিছু হতে দেবোনা, আমার পূর্বপুরুষদের মত আমিও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নিজেকে বলি করতে পারি। আপনার ভেতর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকলে আপনি ইভটিজিং, নারী নির্যাতন করবেন না, রাস্তায় ময়লা ফেলবেন না, ট্রেনে ঠিল মারবেন না, চুরি ডাকাতি করবেন না, বিমানে লেজার মারবেন না, ট্রাফিক আইন অমান্য করবেন না, অন্যের সাফল্যে হিংসা করবেন না, ঘুস খাবেন না, যৌতুক নিবেন না, বিনাকারণে গাছ কাটবেন না, পরিবেশ দূষণ করবেন না, রাজনীতির নামে হত্যাযজ্ঞ চালাবেন না, রক্ষকের নামে ভক্ষক হবেন না, নিরাপত্তার নামে ঘুস চাইবেন না, রাস্তার ডাস্টবিন তুলে ব্রিজের রেলিং কেটে বেচে খাবেন না, অন্যায় দেখলে চুপ থাকবেন না, সাহায্যের বদলে ছবি তুলবেন না, ধর্মের নামে ব্যবসা করে মানুষকে ঠকাবেন না, পাকিস্তানের অপরাধ হালকা করার চেষ্টা করবেন না, ছাত্রদের উপর হেলমেট পরে হামলা করবেন না, বাসে বোমা মেরে মানুষ পোড়াবেন না, দেশকে গালি দিবেন না, গুজব রটাবেন না। বরং সেই চেতনা ধারণ করে আপনি শিক্ষিত হবেন। সাহায্যকারী হবেন। নারীদের সম্মান করবেন। শিশুদের নিয়ে ভাববেন। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার আইডিয়া নিয়ে আসবেন। আপনার ব্রত হবে মানব কল্যান, আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক নিরাপদ দেশ গঠনের চিন্তা। যেই চেতনায় বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছিলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা।
কিন্ত দুঃখের বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে মুখে ফেনা তোলা লোকটিও খামে করে ঘুস আদানপ্রদান করে। সুযোগ পেলে ধর্ষণ করে, হত্যা নির্যাতন করে। ধর্মীয় চেতনা নিয়ে খেলা করে। ধর্মীয় চেতনা বিক্রি করে খায়। রাজনৈতিক চেতনার ছিটেফোঁটাও দেখিনা আজকের বাংলাদেশে। অথচ চেতনা শব্দটাকে ব্যাঙ্গ করা কোন নরপশুর শারীরিক চেতনার বলি হয় কোন অবলা শিশু, নিরিহ দুর্বল নারী।
.
#হিমেল