মিনার রশীদ
দেশে হচ্ছেটা কী? এই প্রশ্নটি আজ সবার। মগের মুল্লুক, তুঘলকি কাণ্ড, হ-য-ব-র-ল এ ধরনের যত বাগধারা পড়েছিলাম, সেসব স্টক অনেক আগেই খালি হয়ে গেছে। হীরক রাজার দেশ, হবু চন্দ্রের দেশকেও অনেক আগেই হার মানিয়ে ফেলেছে। মগের মুল্লুকেও একটা নিয়মের ভেতর দিয়ে ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ লাগানো হতো। বর্তমানে এমন এক মুল্লুক সৃষ্টি হয়েছে যেখানে আগের বাগধারা উল্টিয়ে বুধোর পিণ্ডি উদোর ঘাড়ে লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। এর সর্বশেষ নমুনা মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি নিয়ে সরকারের ২০১৩ সালের ৪৭ নম্বর আইনটি।
দেশের ঐতিহ্যবাহী মেরিন একাডেমিকে মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উত্তরণের উদ্যোগটি দেশের মেরিটাইম মহলে প্রশংসিত হয়। কিন্তু এখানেও সেই একই নামকরণের বাতিক পরিলক্ষিত হলো। নতুন এই ইউনিভার্সিটির নাম রাখা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি। এই নামকরণের ফলে প্রস্তাবকদের কিছু বৈষয়িক উন্নতি হলেও সেই নেতার কিংবা তার রেখে যাওয়া দেশ কিংবা সেই দেশের মেরিটাইম জগতের কোনো কল্যাণ হয়নি। বরং মেরিটাইম শিক্ষায় নতুন এই খালটি কেটে আরো কুমির আনা হয়েছে। মেরিটাইম জগতের যে রুই-কাতলারা উদ্যোগটি শুরু করেছিলেন তাদের এই কুমিরেরা ইতোমধ্যেই ভক্ষণ করে ফেলেছে। কুমিরের পেটে অবস্থানরত ওই তেলবাজ রুই-কাতলাদের দেখে এক ধরনের তৃপ্তি অনুভব করলেও মনের ব্যথাটি কমছে না।
সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী এই ইউনিভার্সিটির ভিসি হবেন বাংলাদেশ নেভির রিয়ার এডমিরাল কিংবা তদূর্ধ্ব পদবির কর্মরত কিংবা অবসরপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা। বেসামরিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ এই পদটির জন্য দ্বিতীয় কোনো চয়েস নেই। এমনকি নেভির নিচু র্যাঙ্কের কোনো কর্মকর্তাও যদি তার গবেষণা ও শিক্ষার বদৌলতে একজন ভিসির যোগ্যতা অর্জন করেন, তার পক্ষেও এই পদে যাওয়া সম্ভব হবে না। প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, ডিন, রেজিস্ট্রার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নেভি থেকেই নিতে হবে। এসব দেখে যে কেউ দ্বিধায় পড়বেন যে, এটা মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি নাকি কোনো নেভাল ইউনিভার্সিটি ?
সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী এই ইউনিভার্সিটির ভিসি হবেন বাংলাদেশ নেভির রিয়ার এডমিরাল কিংবা তদূর্ধ্ব পদবির কর্মরত কিংবা অবসরপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা। বেসামরিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ এই পদটির জন্য দ্বিতীয় কোনো চয়েস নেই। এমনকি নেভির নিচু র্যাঙ্কের কোনো কর্মকর্তাও যদি তার গবেষণা ও শিক্ষার বদৌলতে একজন ভিসির যোগ্যতা অর্জন করেন, তার পক্ষেও এই পদে যাওয়া সম্ভব হবে না। প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, ডিন, রেজিস্ট্রার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নেভি থেকেই নিতে হবে। এসব দেখে যে কেউ দ্বিধায় পড়বেন যে, এটা মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি নাকি কোনো নেভাল ইউনিভার্সিটি ?
২০০৮ সালে ইন্ডিয়া তাদের জাতীয় মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। আমাদের মতো তাদেরও একজন জাতির পিতা রয়েছেন। ট্র্যাজেডির মাত্রা কিছুটা কম থাকলেও তাদের জাতির পিতাও একজন আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন। তার নামানুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামটি না রেখে স্রেফ ‘ইন্ডিয়ান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’ নাম দেয়া হয়েছে। আমাদের ভাইস-চ্যান্সেলর পদবির তুল্য হলো সেখানকার চ্যান্সেলর পদটি। সেই চ্যান্সেলরের যোগ্যতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছেÑ Persons of eminence in the field of academic, maritime, public administration or public life of the country তা হলে কি ইন্ডিয়ার মেরিটাইম জগৎ তাদের জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সর্বোচ্চ পদটি একমাত্র নেভির জন্য সংরক্ষিত না করে আমাদের মতো প্রজ্ঞা প্রদর্শন করতেও সমভাবে ব্যর্থ হয়েছে! কাজেই সামনের সব ‘ইন্নামাল আ’মালু’ হবে ‘বিন্যিয়ত’ অনুযায়ী। কাজেই ধরে নেয়া যায়, আমরা যখন পিতার আশীর্বাদে বিশ্বের মেরিটাইম সেক্টরে ছক্কার পর ছক্কা পেটাতে থাকব, তখন ইন্ডিয়া আমাদের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখবে!
জানি না, জাতির হুঁশ ইন্ডিয়ার লেভেলেও যেতে আর কত দিন সময় লাগবে?
এসব কাজ এমন চালাকির সাথে করা হয় যে, বেনিফিশিয়ারি মুষ্টিমেয় কয়েকজন হলেও পুরো প্রতিষ্ঠানের স্পর্শকাতরতার চাদর দিয়ে আইনটিকে প্রটেকশন দেয়া হয়েছে। কারণ এর বিরুদ্ধে যারা কথা বলবেন, তারা নেভিবিদ্বেষী বা সেনাবিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত হবেন। দুর্বল রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও বিভ্রান্ত সিভিল সোসাইটির দেশগুলোতে এটাই নিয়তি। এখানে মসির চেয়ে অসি শক্তিশালী হয়ে পড়ে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ (Knowledge based Society) না হয়ে শক্তিভিত্তিক সমাজ (Power based Society) গড়ে ওঠে। জোর যার থাকে মুল্লুকটি তারই হয়ে যায়।
জানি না, জাতির হুঁশ ইন্ডিয়ার লেভেলেও যেতে আর কত দিন সময় লাগবে?
এসব কাজ এমন চালাকির সাথে করা হয় যে, বেনিফিশিয়ারি মুষ্টিমেয় কয়েকজন হলেও পুরো প্রতিষ্ঠানের স্পর্শকাতরতার চাদর দিয়ে আইনটিকে প্রটেকশন দেয়া হয়েছে। কারণ এর বিরুদ্ধে যারা কথা বলবেন, তারা নেভিবিদ্বেষী বা সেনাবিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত হবেন। দুর্বল রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও বিভ্রান্ত সিভিল সোসাইটির দেশগুলোতে এটাই নিয়তি। এখানে মসির চেয়ে অসি শক্তিশালী হয়ে পড়ে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ (Knowledge based Society) না হয়ে শক্তিভিত্তিক সমাজ (Power based Society) গড়ে ওঠে। জোর যার থাকে মুল্লুকটি তারই হয়ে যায়।
মার্চেন্ট নেভির প্রতি যতটুকু ভালোবাসা, বাংলাদেশ নেভির প্রতিও আমাদের সেই ভালোবাসা কোনোক্রমেই কম নয়। সরকারের এই আইনটির বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত শত শত কলিগের ক্ষোভের উত্তাপটি যেমনভাবে অনুভব করেছি, তেমনিভাবে দেশ রক্ষাকারী বাহিনীর স্পর্শকাতরতাটুকুও উপলব্ধিতে এসেছে। দু’টির কোনোটির ক্ষতি হোক, তা কখনোই চাই না।
কিছু দিন আগে বাংলাদেশ নেভির এক মেধাবী অফিসার মরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর এলে বাঙালি কমিউনিটির যে অংশটি বেশি সাড়া দিয়েছে, তা বাংলাদেশের মেরিন কমিউনিটি। আমি নিজেও তার জন্য একটি আর্টিকেল লিখেছিলাম এবং চিকিৎসার ফান্ড সংগ্রহে ব্যক্তিগতভাবে অংশ নিয়েছিলাম। কাজেই নেভির বিরুদ্ধে মার্চেন্ট নেভির কোনো ক্ষোভ নেই, বরং এক ধরনের মমত্ববোধ রয়েছে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতি জনগণের এ ধরনের ভালোবাসা সে দেশের প্রতিরক্ষার জন্য বড় অ্যাসেট। রাষ্ট্রের হর্তাকর্তাদের অদূরদর্শী বা ভুল পদক্ষেপের কারণে সেই অ্যাসেট কিভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তা বোঝার মতো মন ও মানসিকতা মাথা মোটা নেতৃত্বের থাকে না। কোনো বিষ জেনে পান করি অথবা না জেনে পান করি, দু’টির পরিণাম একই।
একজন সচেতন বাবা-মাও লক্ষ রাখেন যাতে তাদের কোনো ভুল প্যারেন্টিংয়ের কারণে নিজ সন্তানদের মধ্যে পারস্পরিক ঈর্ষা সৃষ্টি না হয়ে বসে। দেশের পলিসি মেকাররাও সচেতন বাবা-মায়ের মতো। তারা এমন কোনো পলিসি গ্রহণ করবেন না, যাতে দেশের এক প্রতিষ্ঠান অন্য প্রতিষ্ঠানের মুখোমুখি হয়ে পড়ে। অথচ আমাদের জাতির ভাগ্যে এমন প্যারেন্টস জুটেছে যারা এক সন্তানকে অন্য সন্তানের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। কাজেই আমার এই ক্ষোভ কোনোক্রমেই কোনো বাহিনীর ওপর নয়, জাতির এই ভুল বা বিভ্রান্ত ‘প্যারেন্টিং’-এর ওপর।
কিছু দিন আগে বাংলাদেশ নেভির এক মেধাবী অফিসার মরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর এলে বাঙালি কমিউনিটির যে অংশটি বেশি সাড়া দিয়েছে, তা বাংলাদেশের মেরিন কমিউনিটি। আমি নিজেও তার জন্য একটি আর্টিকেল লিখেছিলাম এবং চিকিৎসার ফান্ড সংগ্রহে ব্যক্তিগতভাবে অংশ নিয়েছিলাম। কাজেই নেভির বিরুদ্ধে মার্চেন্ট নেভির কোনো ক্ষোভ নেই, বরং এক ধরনের মমত্ববোধ রয়েছে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতি জনগণের এ ধরনের ভালোবাসা সে দেশের প্রতিরক্ষার জন্য বড় অ্যাসেট। রাষ্ট্রের হর্তাকর্তাদের অদূরদর্শী বা ভুল পদক্ষেপের কারণে সেই অ্যাসেট কিভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তা বোঝার মতো মন ও মানসিকতা মাথা মোটা নেতৃত্বের থাকে না। কোনো বিষ জেনে পান করি অথবা না জেনে পান করি, দু’টির পরিণাম একই।
একজন সচেতন বাবা-মাও লক্ষ রাখেন যাতে তাদের কোনো ভুল প্যারেন্টিংয়ের কারণে নিজ সন্তানদের মধ্যে পারস্পরিক ঈর্ষা সৃষ্টি না হয়ে বসে। দেশের পলিসি মেকাররাও সচেতন বাবা-মায়ের মতো। তারা এমন কোনো পলিসি গ্রহণ করবেন না, যাতে দেশের এক প্রতিষ্ঠান অন্য প্রতিষ্ঠানের মুখোমুখি হয়ে পড়ে। অথচ আমাদের জাতির ভাগ্যে এমন প্যারেন্টস জুটেছে যারা এক সন্তানকে অন্য সন্তানের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। কাজেই আমার এই ক্ষোভ কোনোক্রমেই কোনো বাহিনীর ওপর নয়, জাতির এই ভুল বা বিভ্রান্ত ‘প্যারেন্টিং’-এর ওপর।
সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে, একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ইচ্ছাকৃতভাবে এভাবে চালানোর পালা শুরু করা হয়েছে। যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই এটা লক্ষ করা যায়। স্পর্শকাতর কোনো বাহিনীর ওপর জনগণের ক্ষোভ বেড়ে গেলে বা তারা জনগণের কোনো অংশের মুখোমুখি হয়ে পড়লে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়ে যায়। তাই উন্নত ও সচেতন জাতিগুলো সামরিক বাহিনীকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখে। সিভিল প্রশাসনের সাথে টক্কর লাগে বা সাংঘর্ষিক অবস্থায় চলে যেতে পারেÑ এমন অবস্থায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে কখনোই ঠেলে দেয় না। দেশের থিংক ট্যাংক বা পলিসি মেকারেরা বিষয়টির প্রতি তীক্ষè নজর রাখেন। জনগণের মধ্যে যেন এ ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি না হয়, সে জন্যে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেন। বাংলাদেশে এই ধরনের একটি আইন করার আগে যতটুকু গবেষণা বা গ্রাউন্ড-ওয়ার্কের দরকার ছিল তা মোটেই করা হয়নি।
এক-এগারোর পর থেকেই একটা গ্রুপ অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে একটি প্রতিষ্ঠানকে অন্য এক প্রতিষ্ঠানের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফেলছে। এরা আসছে বন্ধু সেজে। সব প্রতিষ্ঠানকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয়াই এদের টার্গেট। তথাকথিত এক-এগারোর হোতারা বিডিআরকে দিয়ে মুদির কাজ করানো শুরু করেছিল। এই কাজটিকে বিডিআরের জন্য খুবই সম্মানজনক ও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। যার কাজ তাকে দিয়ে তা না করানোর বিপদ কিছু দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে। এ কাজের ভয়াবহ পরিণাম আমরা কিছু দিনের মধ্যেই প্রত্যক্ষ করেছি। একে কেন্দ্র করে একটি বাহিনী অন্য একটি বাহিনীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায়। ফলে পুরো স্বাধীনতা যুদ্ধে যতজন অফিসার হারিয়েছি শুধু বিডিআর বিদ্রোহে তারচেয়েও বেশি অফিসার হারাতে হয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো প্রতিরক্ষা বাহিনীর মনোবল মারাত্মকভাবে নষ্ট হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমাদের সরকার ও স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ধরনের ক্ষতিকর সিদ্ধান্তে প্রলুব্ধ করার লক্ষ্যে সেই গ্রুপটি এখনো সক্রিয়। কারণ এই মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এ যাবৎ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে যেসব মিটিং হয়েছে, সেসব মিটিংয়ে যেসব প্রস্তাব এসেছে, সেগুলোর যেসব সংশোধনী এসেছে তার কোনোটিতেই গেজেটে প্রকাশিত আইনটির এসব অংশ ছিল না। কোথা থেকে কিভাবে এই নতুন সংযোজনী এলো, কারা আনলেন? এই আইন তৈরির প্রক্রিয়া দেখে দেশবাসীর মনে রঙিন প্রশ্ন আরো বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
এক-এগারোর পর থেকেই একটা গ্রুপ অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে একটি প্রতিষ্ঠানকে অন্য এক প্রতিষ্ঠানের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফেলছে। এরা আসছে বন্ধু সেজে। সব প্রতিষ্ঠানকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয়াই এদের টার্গেট। তথাকথিত এক-এগারোর হোতারা বিডিআরকে দিয়ে মুদির কাজ করানো শুরু করেছিল। এই কাজটিকে বিডিআরের জন্য খুবই সম্মানজনক ও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। যার কাজ তাকে দিয়ে তা না করানোর বিপদ কিছু দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে। এ কাজের ভয়াবহ পরিণাম আমরা কিছু দিনের মধ্যেই প্রত্যক্ষ করেছি। একে কেন্দ্র করে একটি বাহিনী অন্য একটি বাহিনীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায়। ফলে পুরো স্বাধীনতা যুদ্ধে যতজন অফিসার হারিয়েছি শুধু বিডিআর বিদ্রোহে তারচেয়েও বেশি অফিসার হারাতে হয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো প্রতিরক্ষা বাহিনীর মনোবল মারাত্মকভাবে নষ্ট হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমাদের সরকার ও স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ধরনের ক্ষতিকর সিদ্ধান্তে প্রলুব্ধ করার লক্ষ্যে সেই গ্রুপটি এখনো সক্রিয়। কারণ এই মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এ যাবৎ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে যেসব মিটিং হয়েছে, সেসব মিটিংয়ে যেসব প্রস্তাব এসেছে, সেগুলোর যেসব সংশোধনী এসেছে তার কোনোটিতেই গেজেটে প্রকাশিত আইনটির এসব অংশ ছিল না। কোথা থেকে কিভাবে এই নতুন সংযোজনী এলো, কারা আনলেন? এই আইন তৈরির প্রক্রিয়া দেখে দেশবাসীর মনে রঙিন প্রশ্ন আরো বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বা যুদ্ধের সময় নেভি আর মার্চেন্ট নেভি পরস্পরের পরিপূরক হতে পারে। এরা কখনোই পরস্পর প্রতিপক্ষ নয়। একই সমুদ্রে পরিভ্রমণ করলেও দু’জনের পথ ও গন্তব্য আলাদা ও সুনির্দিষ্ট। একজন সামরিক, অন্যজন বেসামরিক। এই সম্পর্কটি ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি আর মার্চেন্ট নেভির মধ্যকার সম্পর্কের আলোকে গড়ে উঠেছে। এক পক্ষ অন্য পক্ষের পরিপূরক হলেও ব্রিটেনে কোনো মেরিটাইম ইনস্টিটিউটে রয়্যাল নেভির কোনো অফিসার পাওয়া যাবে না। আমরা কিছুতেই এ ধরনের দু’টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ ¯œায়ু চাপ সৃষ্টি করতে পারি না।
সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সুযোগ সুবিধা দিতে হলে তা তাদের আওতার মধ্যে রেখেই দিতে হবে। সামরিক বাহিনীকে সুযোগ সুবিধা দেয়া এবং ঘুষ দেয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কোনো কারণে এই দু’টির মধ্যকার পার্থক্য বুঝতে অক্ষম হলে পরিণামে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পুরো দেশ। আমি নিজে একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী সৃষ্টির পক্ষে। আমার অনেক কলামেই দেশের মধ্যে একটা প্রফেশনাল ও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনী রাখার পক্ষে মতামত রেখেছি।
নদীমাতৃক ও বিশাল সমুদ্রসম্পদের অধিকারী একটি দেশের নেভি যতটুকু শক্তিশালী হওয়ার কথা ছিল, বাস্তবে তা হয়নি। আমাদের দৃষ্টি সেদিকে নিবদ্ধ না করে কেন যেন একটি সঙ্কীর্ণ গণ্ডিতে আবদ্ধ করে ফেলা হচ্ছে।
১৬ কোটি মানুষের অপার সম্ভাবনাময় এই দেশটিতে ব্লু-ওয়াটার নেভি সৃষ্টি ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় অতি জরুরি হলেও সেদিকে আমরা যাচ্ছি না। যে দেশ কয়েক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনতে পারে, সেই দেশের নেভির হাতে কেন এখনো ডেসট্রয়ার, সাবমেরিন আসেনি? কিংবা তা আসার চিন্তাভাবনাও শুরু হয়েছে কি? এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার নিয়ে স্বপ্ন দেখলেও তা অবাস্তব হবে না। সমুদ্রে রয়েছে জানা অজানা বিপুল সম্পদ। সামনের পৃথিবীর বিপুলসংখ্যক মানুষের খাবারের জন্য সমুদ্রের দিকেই হাত পাততে হবে। হয়তোবা এই সমুদ্র থেকেই মিলিয়ন মিলিয়ন টন খাদ্য সংগ্রহ করা হবে। বিপুল জনসংখ্যার এই মেরিটাইম নেশনটি সমুদ্রসম্পদ আহরণে এগিয়ে থাকতে হবে। তখন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পদ প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পড়বে এই নেভির হাতে।
তা ছাড়া দেশের প্রত্যেকটি নদী-বন্দরে শক্তিশালী নেভাল বেইস স্থাপন করলে দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মজবুত হওয়া ছাড়াও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা অনেক সহজ হবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় একজন রিয়ার এডমিরালের পদ সৃষ্টি করলেও এ ধরনের ব্যবস্থা কয়েক ডজন রিয়াল এডমিরাল ও সমানুপাতিক হারে অফিসার ও নৌসেনার চাকরি ও প্রমোশনের সুযোগ সৃষ্টি করবে। নৌবাহিনীতে একটি ফ্রিগেট যোগ হলে কমপক্ষে পাঁচ শ’ অফিসার ও নৌসেনার প্রমোশন ও চাকরি নিশ্চিত হবে।
চিন্তার ক্ষেত্রে আমরা স্থবির ও প্যারালাইজড হয়ে পড়েছি। ভাবনার মহাসমুদ্র বাদ রেখে চিন্তার কুয়ায় এসে আমরা আটকা পড়েছি। এই সঙ্কীর্ণতা ও স্থবিরতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
নদীমাতৃক ও বিশাল সমুদ্রসম্পদের অধিকারী একটি দেশের নেভি যতটুকু শক্তিশালী হওয়ার কথা ছিল, বাস্তবে তা হয়নি। আমাদের দৃষ্টি সেদিকে নিবদ্ধ না করে কেন যেন একটি সঙ্কীর্ণ গণ্ডিতে আবদ্ধ করে ফেলা হচ্ছে।
১৬ কোটি মানুষের অপার সম্ভাবনাময় এই দেশটিতে ব্লু-ওয়াটার নেভি সৃষ্টি ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় অতি জরুরি হলেও সেদিকে আমরা যাচ্ছি না। যে দেশ কয়েক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনতে পারে, সেই দেশের নেভির হাতে কেন এখনো ডেসট্রয়ার, সাবমেরিন আসেনি? কিংবা তা আসার চিন্তাভাবনাও শুরু হয়েছে কি? এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার নিয়ে স্বপ্ন দেখলেও তা অবাস্তব হবে না। সমুদ্রে রয়েছে জানা অজানা বিপুল সম্পদ। সামনের পৃথিবীর বিপুলসংখ্যক মানুষের খাবারের জন্য সমুদ্রের দিকেই হাত পাততে হবে। হয়তোবা এই সমুদ্র থেকেই মিলিয়ন মিলিয়ন টন খাদ্য সংগ্রহ করা হবে। বিপুল জনসংখ্যার এই মেরিটাইম নেশনটি সমুদ্রসম্পদ আহরণে এগিয়ে থাকতে হবে। তখন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পদ প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পড়বে এই নেভির হাতে।
তা ছাড়া দেশের প্রত্যেকটি নদী-বন্দরে শক্তিশালী নেভাল বেইস স্থাপন করলে দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মজবুত হওয়া ছাড়াও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা অনেক সহজ হবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় একজন রিয়ার এডমিরালের পদ সৃষ্টি করলেও এ ধরনের ব্যবস্থা কয়েক ডজন রিয়াল এডমিরাল ও সমানুপাতিক হারে অফিসার ও নৌসেনার চাকরি ও প্রমোশনের সুযোগ সৃষ্টি করবে। নৌবাহিনীতে একটি ফ্রিগেট যোগ হলে কমপক্ষে পাঁচ শ’ অফিসার ও নৌসেনার প্রমোশন ও চাকরি নিশ্চিত হবে।
চিন্তার ক্ষেত্রে আমরা স্থবির ও প্যারালাইজড হয়ে পড়েছি। ভাবনার মহাসমুদ্র বাদ রেখে চিন্তার কুয়ায় এসে আমরা আটকা পড়েছি। এই সঙ্কীর্ণতা ও স্থবিরতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
নেভির সদস্যরাও এ দেশেরই সন্তান। কাজেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পদে নেভি বসতে পারবে না, সে ভাবনাও ঠিক নয়। তবে এতে সবাই আসতে হবে মেধার জোরে। কাজেই আশা করব এই লেখার মাধ্যমে যে মেসেজটি দিতে চেয়েছি, সমাজের বিভিন্ন অংশ তা সম্যক উপলব্ধি করতে পারবেন।
পৃথিবীর উন্নত জাতিগুলো আজ এ পর্যায়ে এসেছে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কারণেই। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো বিপরীত দিকে মোড় নিয়েছে। এসব দেশে লাঠিওয়ালা মানুষ লাঠিবিহীন মানুষ থেকে শক্তিশালী। পেশিওয়ালা মানুষ পেশিবিহীন মানুষ থেকে শক্তিশালী। অস্ত্রওয়ালা (বৈধ কিংবা অবৈধ) মানুষ অস্ত্রহীন মানুষ থেকে বেশি শক্তিশালী। কাজেই নলেজ বেইসড সোসাইটি না হয়ে এটি হয়ে পড়েছে পাওয়ার বা শক্তিভিত্তিক সমাজ।
এই সমাজের কুফল আজ সবাইকে উপভোগ করতে হচ্ছে। আজ পেশি বা পেশার জোরে আপনি যে সুযোগটি গ্রহণ করছেন, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলে রাস্তায় এক গুণ্ডা আপনার কাছ থেকে তা আদায় করে নিচ্ছে। কাজেই আসুন, শক্তিভিত্তিক সমাজ নয়, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় এখনো অবশিষ্ট বোধ ও শক্তিটুকু খরচ করি।
minarrashid@yahoo.com
Source: Nayadiganta