Site icon The Bangladesh Chronicle

Is the government scared of its own shadow?

সরকার কি নিজের ছায়া দেখেও ভয় পাচ্ছে?

গত কয়েকদিন যাবত দেশের রাজনীতিতে একটা কৌতুহলোদ্দীপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারের ভেতরেই এক অংশ অন্য অংশের সমালোচনায় মুখর হয়েছে। আর এটা শুরু করেছেন স্বয়ং প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যে কাজটি শেখ হাসিনা এর আগে কখনই করেন নি, এবার তাও করেছেন। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে প্রথম বারের মত ইন্ডিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর নামটি উচ্চারণ করেছেন। বিষয়টি শুধু কৌতুহলোদ্দীপকই নয়, বেশ কৌতুককরও বটে।

বিশ্বের মোড়লদের ( কেন্দ্রীয় অথবা স্থানীয়) কুটনামি বা কুটনীতি অনেক সময় অত্যন্ত নির্মম ও নিষ্ঠুর হয়ে পড়ে । প্রথমে এরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইয়াতিম বানায়। তারপর সেই ইয়াতিমকে সহানুভূতি দেখিয়ে চিরদিনের জন্যে কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করে ফেলে। দেশে দেশে এরা সাদ্দাম, লাদেন, গাদ্দাফী,হোসনে মোবারক, লেন্দিপ দর্জি তৈরি করে। কাজ শেষ হলেই আবার এই দর্জিদের ছুঁড়ে ফেলে।

মন্ত্রী পরিষদের অনির্ধারিত সভায় নিজের মনের এই কষ্টটি প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেছেন। সে সভায় বর্তমান মন্ত্রী পরিষদের সদস্য তোফায়েল ও আমুদের উপরও এক হাত নিয়েছেন। তাদেরকে আবারো স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে তিনি ফরগিভ করলেও ফরগেট করেন নি। কাজেই এখন বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন, ফরগেট না করলেও তাদেরকে মন্ত্রীত্ব দিয়ে পুরস্কৃত করলেন কেন ? কাকে মন্ত্রী বানাবেন, আর কাকে বানাবেন না সেটাতো সম্পূর্ণরূপে প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারে ছিল । নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কেন তাকে এই কাজটি করতে হয়েছিলো ? বাইরে থেকে নিজেকে অত্যন্ত শক্তিসালী দেখালেও ভেতর থেকে তিনি আসলেই অনেক অসহায় হয়ে পড়েছেন ।
শুধু সংস্কারবাদীরাই নহেন, নিজের বাপের হত্যায় ইন্ধনকারীদেরও মন্ত্রী সভায় রাখতে হয়েছে।

সরকার এখন নিজের ছায়া দেখেও আতকে উঠছে । সৈয়দ আশরাফ ‘ভয়ানক কিছু ‘ ঘটে যাওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন। চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেছেন, আওয়ামী লীগের অনেকেই শেখ হাসিনাকে দুর্বল করতে চান। সব আলামত দেখে মনে হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে পার্টি এবং মন্ত্রীসভার মধ্যেই ‘মোশতাক’ খোজা শুরু হয়ে গেছে।

শেখ হাসিনার প্রতি সৈয়দ আশরাফ ও ফিরোজদের এই দরদ দেখে চল্লিশ বছর আগে তাজউদ্দীন আহমেদের একটি কথা মনে পড়ে যায়। বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর তিনি তার মুজিব ভাইকে জানিয়েছিলেন, আপনি যেভাবে স্বাভাবিক পন্থায় আপনাকে অপসারনের সকল রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছেন, তাতে শুধু আপনি নিজের জীবনই বিপন্ন করছেন না – আমাদেরও মরার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে ফেলেছেন।
সত্যি দুর্ভাগ্য আমাদের। এই ধরণের প্রফেটিক একটা ভবিষ্যত বাণী আমাদের ইতিহাস ও অভিজ্ঞতায় মজুদ থাকার পরেও আমরা তা থেকে কোন ফায়দা নিতে সক্ষম হচ্ছি না। বিষয়টি নিয়ে মুক্ত গবেষণার রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। একদিকে আবেগের মেশিন গান এবং অন্যদিকে অন্ধ দোষারোপের বিষাক্ত তীর আমাদেরকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু করে ফেলেছে। এই অভাগা জাতির মাঝে এমন কোন অভিভাবক সৃষ্টি হয় নি যিনি আজ বলতে পারেন, ” মা তুমি বাবার ভুলটিই আবার করতে যাচ্ছো। “

বঙ্গবন্ধুর হত্যার পটভূমি তৈরিতে ১৪ দলের শরীক জাসদের ভূমিকা নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। শেখ সেলিম সহ কয়েকজন নেতা জাসদের উপর বেশ মারমুখো হয়ে পড়েছেন। অনেকেই এটাকে সরকারের পাতানো খেলা বলে ধারণা করছেন। তাদের ধারণা, জাসদের জন্যে বিরোধী দলের ইমেইজ তৈরির জন্যেই এই খেলাটি শুরু করা হয়েছে।

তবে এরশাদের জাতীয় পার্টির চেয়ে ইন গংদের জাসদ কখনই বেশি ওজনদার গৃহপালিত বিরোধী দল হতে পারবে না। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এই ইনু গং নিজস্ব প্রতীক ও পরিচিতি নিয়ে এদেশের ছেষট্টি হাজার গ্রামের মধ্যে কোন একটি গ্রাম থেকেও মেম্বার নির্বাচন করে পাশ করে আসতে পারবে না।

তবে এদের প্রতিভা ও দক্ষতা অন্য জায়গায়। শয়তানের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার জন্যে কেউ কেউ শয়তানকে পূজো করে থাকে । এদেশের রাজনীতি সম্ভবত একই কারণে এদেরকে পূজো ও সমীহ করে। দেশের দুটি প্রধান দলের মাঝে মাত্রাধিক রাজনৈতিক বৈরিতার সুযোগ নিয়ে এরা দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে জব্দ করে ফেলেছে ।

পর পর দুজন প্রেসিডেন্টকে হত্যা সহ এদেশের রাজনীতিতে যত খারাপ কাজ সংঘটিত হয়েছে তার প্রায় প্রতিটিতেই এই জাসদের ইন্ধন বা সম্পৃক্ততা স্পষ্ট হয়েছে। উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর যত কলা কৌশল ও টেকনিক – সবই এদের মগজ থেকে বের হয়েছে । মানুষ তাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় ব্যবহার করে সহজেই এদের কারসাজি ধরে ফেলেছে। কিছু সংখ্যক মানুষকে অল্পদিনের তরে বোকা বানানো যায়। কিন্তু বিশাল জনগোষ্ঠিকে দীর্ঘ দিনের জন্যে বোকা বানিয়ে রাখা যায় না। মানব ইতিহাসের সেই অমোঘ নিয়মটিই এখন ইনুদের উপর আপতিত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

গণতন্ত্রের মূল শত্রুরা চিহ্নিত বা আইডেন্টিফাই হচ্ছে। ইনু গংদের প্রতি এই সামগ্রিক ক্ষোভ সেই গণতান্ত্রিক জাগরণেরই পূর্বাভাষ।
সব আলামত দেখে মনে হচ্ছে, গণতান্ত্রিক এই জাগরণকে আর বেশিদিন জঙ্গিবাদের দোহাই দিয়ে ঠেক দিতে পারবে না।

Exit mobile version