মিডিয়া , সুশীল সমাজ ও সরকার ২০০৭ সাল থেকেই জাতিয়তাবাদী জোট তথা বিএনপি নামক দলটির বিরুদ্ধে লেগে রয়েছে। আরো সহজ করে বলতে গেলে বলা যায় যে এদেরকে সরকার কেটেছে , আদালত ছিলেছে এবং মিডিয়া লবণ লাগিয়েছে ।
এই ত্রয়ীর কারণে অবস্থা এমন বেগতিক হয়ে পড়ে যে সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরোধিতা করতে গেলেই তা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার ষড় যন্ত্র হয়ে পড়ে । সরকার এবং সরকার বান্ধব মিডিয়ার চোখে ‘গুডিবয়’ সাজতে গিয়ে বিরোধী শক্তি বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে- তাতে কোন সন্দেহ নেই ।
এদের যুগপৎ ক্রিয়ায় গণতন্ত্রের কবর রচিত হয়ে এদেশে পুরাপুরি বাকশাল প্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়েছে। এক কথায় বলা যায় বিরোধী দলগুলির মাজা ভেঙে গেছে। প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্যে জামায়াতের আদর্শিক রসদ ও প্রস্তুতি যতটুকু রয়েছে , সঙ্গতকারণেই বিএনপির ততটুকু নেই ।
কাজেই এই দলটির অনেক আগেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা।
এতকিছুর পরেও সামান্য অবকাশ পেলেই এই দলটির ডাকে লাখ লাখ মানুষ জমায়েত হয়ে যায়। বিষয়টি সত্যিই অবাক করার মত।
গতকাল ৫ই জানুয়ারির সমাবেশের মাধ্যমে তেমনই একটি প্রমাণ দেশবাসীর সামনে হাজির হয়ে পড়েছে। তুলনাটিও সরকারের জন্যে যারপরনাই মনোকষ্টের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। গত সাত বছর ক্ষমতার মধু ছিটিয়ে ও সকল রাষ্ট্রীয় উপকরণ ব্যবহার করে সরকার যত সংখ্যক লোকের সমাবেশ ঘটাতে পারে , তার চেয়ে অনেক বেশি লোক হয়ে পড়ে গত নয় বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা এই দলটির সমাবেশে !
সরকার এবং সরকার বান্ধব মিডিয়া বিশেষ কায়দায় বিষয়টি যতই ঢাকতে চেয়েছে – ততই প্রকট আকারে সেই খবরটি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। মিডিয়ার বড় অংশ অত্যন্ত নেকেডভাবে সমাবেশে উপস্থিত জনতার ছবি না দেখিয়ে বক্তাদের ছবি দেখিয়েছে ।
তাই মানুষ বাকশালের সমর্থক এসব পত্র পত্রিকা থেকে মুখ ফিরিয়ে ফেইসবুক সহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বেশি আস্থায় নিয়ে নিয়েছে । আর সেকারণেই ‘ কিংবদন্তিতুল্য ‘ এক প্রফেসর সাব নববর্ষে তার দশটি চাওয়ার মধ্যে একটি রেখেছেন ফেইস বুকের মোহ থেকে যুব সমাজের মুক্তি । এদেশের এক ডিজিটাল প্রফেসরের এই ডিজিটাল ভীতি সত্যি করুণা জাগায়।
আমরা দেখেছি সরকারের নির্যাতন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে মোটামুটি পরিচিত বিএনপি ও জামায়াতের কোন নেতা বা কর্মীর পক্ষে নিজের বাসস্থানে রাত্রীযাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ ১৯৭১ সালে সেই ভয়ংকর যুদ্ধের মাঝেও মুক্তিযুদ্ধ্রের পক্ষের দেশ বরেণ্য ব্যক্তিগণ ১৪ই ডিসেম্বর পর্যন্ত নিজের চাকুরি-বাকুরি -বউ -বাচ্চা সহ ঢাকাতেই ছিলেন । কাজেই কেউ যদি যুক্তি মানেন তবে তাকে দুটি পরিস্থিতির একটিকে মানতে হবে। হয় মানতে হবে যে তখন ঢাকার পরিস্থিতি আজকের চেয়ে স্বাভাবিক ছিল। নতুবা ঐ সব ব্যক্তিগন তখনকার সরকারের সাথে বিশেষ সম্পর্কে সম্পর্কিত ছিলেন।
বেগম খালেদা জিয়া ও গয়েশ্বর বাবুর প্রতি নিত্য অভিশাপ বর্ষন করা হচ্ছে ! এদের প্রচারণার স্টাইলটি হুবহু গ্রামবাংলার ‘আই ডোন্ট নো ‘ গল্পের মত । ‘ আমি জানি না ‘ এই কথাটি কেন বলেছে তা জানার দরকার নেই। বলেছেন , জানি না , সেটাই বড় কথা।
বেগম জিয়া ও গয়েশ্বর বাবু কী কথাটি বললেন , কেন বললেন তাকে একপাশে রেখে শুধু বলা হচ্ছে – ছিছিছি। মনের দু:খে এদের কেউ কবিতা লিখছেন , কেউ মন্ত্রিসভায় ছড়া পড়ছেন । এই মন্ত্রী সভা এখন আসলেই হিরক রাজার সভা হয়ে পড়েছে। হিরক রাজার দেশে সবাই ছন্দ মিলিয়ে কথা বলত। এরাও শুরু করেছে।
এত কিছুর পরেও যে সমাবেশের সভাপতি গয়েশ্বর বাবু ও প্রধান অতিথি বেগম খালেদা জিয়া সেই সমাবেশে উপস্থিতি দেখে এদের সবার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। দেশের নব্বই ভাগ মানুষ রাজাকার হয়ে পড়েছে।
প্রশ্ন একটাই,
কিসের টানে এই মানুষগুলো এখনও এমনভাবে ছুটে আসে ?