ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)’র ঢাকামুখী লংমার্চের ঘোষণায় সতর্ক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সীমান্তবর্তী জিরো লাইন তাদের কিছুতেই অতিক্রম করতে দেয়া হবে না। গতকাল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ আহম্মেদ মানবজমিনকে বলেন, অন্যায়ভাবে জিরো লাইন অতিক্রমের চেষ্টা করলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনভাবেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তাদের প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এর আগে ভারতীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৮ই মার্চ সোমবার ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ঢাকামুখী লংমার্চের ঘোষণা দিয়েছে। ওই ঘোষণা অনুযায়ী আগরতলা হয়ে আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে তারা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশের চেষ্টা করবে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পাঁচ দফা দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিজিবি’র মহাপরিচালক আরও বলেন, সাধারণত এ ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে থাকে। সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের সহায়তায় তাদের বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ পেয়ে থাকে। তাই বলে সীমান্ত অতিক্রম করে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের চেষ্টা করবে- এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। সূত্রমতে, বিজেপি’র ত্রিপুরা রাজ্য প্রেসিডেন্ট সুনীল দাসগুপ্ত শনিবার জানিয়েছেন ১৮ই মার্চ শ’ শ’ দলীয় কর্মী এবং সমর্থক আগরতলা দিয়ে আখাউড়া সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করবে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাদের এ প্রতিবাদ কর্মসূচিকে অনুমোদন করেছেন। সুনীল দাসগুপ্ত বলেন, আমরা জানি সীমান্তে আমাদের বাধা দেয়া হবে। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর অবিরাম সহিংসতা দেখে আমরা এভাবে চুপ করে বসে থাকতে পারি না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের কোন নিরাপত্তা নেই। বিজেপি এ বিষয়টি লোকসভায় উত্থাপন করে বাংলাদেশের হিন্দুদের রক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে। সুনীল দাসগুপ্ত অভিযোগ করে বলেছেন কংগ্রেস এবং সিপিআই (এম)-এর মতো বড় দলগুলো বাংলাদেশে এ ধরনের নির্যাতনের প্রশ্নে চোখ বন্ধ করে আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। সংশ্লিষ্ট সীমান্তবর্তী এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী বিজিবি’র ১২নং ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লে. কর্নেল মাকসুদুল আলম বলেন, স্বাধীন দেশের ভূখণ্ডে বহির্দেশের নাগরিকরা ঢুকতে পারে না। ঢুকতে চাইলে বাংলাদেশের অনুমোদন লাগবে।
বিজেপির ঢাকা অভিমুখে
লং মার্চ আজ
পরিতোষ পাল, কলকাতা থেকে জানান, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের মন্দির, বাড়িঘর ও সম্পত্তির ওপর হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ভারতে প্রচণ্ড উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের অবস্থা সরজমিনে পর্যবেক্ষণের জন্য সরকারের কাছে একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠানোর দাবি জানানো হয়েছে। তবে ত্রিপুরার বিজেপি প্রদেশ কমিটি পাঁচ দফা দাবিতে আজ সোমবার আগরতলা থেকে ঢাকা অভিমুখে লং মার্চের ডাক দিয়েছে। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের তরুণ প্রজন্ম যে আন্দোলন করছে তার প্রতি একাত্মতা জানানোও এই লং মার্চের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে গত এক মাসে যেভাবে হিন্দুদের বাড়িঘরে লুটপাট চালানো হয়েছে এবং হিন্দু মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে তারই প্রতিবাদ জানাতে এই লং মার্চ বলে জানিয়েছেন ত্রিপুরা বিজেপির প্রেসিডেন্ট সুনীল দাসগুপ্ত। তিনি জানিয়েছেন, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই আন্দোলনে তাদের অনুমোদন দিয়েছেন। মহিলাসহ প্রায় ৭০০ বিজেপি সমর্থক এই লংমার্চে অংশ নেবেন। আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করবেন। বিজেপি নেতা বলেন, আমরা জানি আমাদের সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। তাই বলে সেখানে সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর যে অত্যাচার চলছে তা জানার পরও চুপ করে বসে থাকতে পারি না। বিজেপির পক্ষ থেকে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তি, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদান, সংখ্যালঘুদের ভালমন্দ দেখার জন্য আলাদা মন্ত্রক প্রতিষ্ঠা, ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ এবং হিন্দুদের ধর্মীয় স্থানগুলোর পুনর্গঠন ও রক্ষার দাবি জানানো হয়েছে। সামপ্রতিক এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত এক মাসে ৭০০ হিন্দু পরিবারের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ৪৭টি হিন্দু মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। ভারতের সংসদে বিজেপি নেতারা বাংলাদেশে হিন্দুদের রক্ষার জন্য সে দেশের সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের কথা বলার দাবি জানিয়েছেন। ভারতের প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী হিসেবে বিজেপির সংসদ সদস্য চন্দন মিত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য মন্ত্রীদের সঙ্গে সঙ্গে আলোচনায় হিন্দুদের নিরাপত্তার দিকটি গুরুত্ব দিয়ে দেখবার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। এদিকে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির পক্ষ থেকে গত শনিবার গভর্নর এমকে নারায়ণনের হাতে একটি স্মারকলিপি তুলে দেয়া হয়েছে। এই স্মারকলিপিতে বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ওপর““ কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। গভর্নরের কাছে দেয়া স্মারকলিপিতে বিজেপির রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, নোয়াখালী, পাবনা, নরসিংদি, লক্ষ্মীপুর, বাঁশখালী, রূপনগরসহ বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের ওপর মৌলবাদীরা যে হিংসাত্মক আক্রমণ চালিয়েছে তাতে আমরা এপারে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে যখনই কোন গোলমাল দেখা দেয় তখনই তার আঁচ গিয়ে পড়ে সংখ্যালঘুদের ওপর। তবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর এই নির্যাতন সত্ত্বেও ভারতের তথাকথিত সুশীল সমাজ, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চুপ ভূমিকায় বিজেপি নেতারা হতাশ বলে মন্তব্য করেছেন। ভারত সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমিকারও সমালোচনা করা হয়েছে বিজেপির পক্ষ থেকে। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য নজরদারির কথা বলা হলেও বিজেপির পক্ষ থেকে রাজ্যের গভর্নরের কাছে উদ্বাস্তু হয়ে যারা এপারে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছেন তাদের জন্য ক্যাম্প খোলারও আর্জি জানানো হয়েছে।
Source: Manabzamin