Minar Rashid
বাকশালের স্যালাইন : এক চিমটি বিজিবি এক মুঠ র্যাব আর আধা সের পুলিশ
নতুন প্রজন্ম রক্ষীবাহিনীর গল্প অনেক শুনেছে। এবার সেই রক্ষীবাহিনীর কর্মকান্ড নিজের চোখে
দেখছে। সত্তর দশকের লাল ঘোড়া সেই রক্ষীবাহিনীকে এনালগ রক্ষীবাহিনী বললে এরা হচ্ছে
ডিজিটাল রক্ষী বাহিনী।
জনগণের উপর নির্মম অত্যাচার চালানো সেই রক্ষীবাহিনীর নৈতিক বল এতটুকু কমে গিয়েছিল যে
যাদেরকে রক্ষা করার জন্যে এই বাহিনী সৃষ্টি করা হয়েছিল প্রয়োজনের সময় তাদেরকে রক্ষা করা
তো দূরের কথা, নিজেদেরকে রক্ষা করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
ডিজিটাল রক্ষী বাহিনীর ফরমেশনটিও লক্ষ্যণীয়। পুলিশ হয়ে পড়েছে এখন পুরাপুরি গোপালিশ। একদা
দেশের মানুষের সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন এখন পুরাদস্তুর র্যাপিড
আওয়ামী ব্যাটালিয়ন হয়ে পড়েছে ।
দেশীবিদেশী গভীর এক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশ রক্ষাকারী বাহিনীর মনোবল ধূলিস্যাত করা হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী বিডিআরকে সেকুলারাইজেশনের নামে সমূলে ধ্বংস করা হয়েছে। এর নতুন নাম দেওয়া
হয়েছে বিজিবি। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ত্রিশ হাজার ক্যাডারকে এই বাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে
বলে শোনা যাচ্ছে । ফলে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) এখন হয়ে পড়েছে আওয়ামী গার্ড অব
বাংলাদেশ(এজিবি)।
এখন এই তিন বাহিনীর প্রধানদের মুখ থেকে যে গরল বের হয় তা সব রাজনৈতিক কথাবার্তা। মনে হচ্ছে
পলিটিকেল থাগ হিসাবে মায়া,শামীম ওসমান, হানিফ, হাছান মাহমুদ বা কামরুলদের এখন আর দরকার
নেই। লুঙ্গি পরে মায়ারা যে কাজ করতেন এখন উর্দি পরে এরাই সেই কাজ করে দিবেন।
যুদ্ধের সময় একটি দেশের সামরিক বা আধাসামরিক বাহিনীগুলি যে ভাষায় কথা বলেন জনগণের
ট্যাক্সের টাকায় লালিত এই প্রধানদের মুখ থেকে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে সেই ধরনের কথাই শোনা
যাচ্ছে। তা দেখে অনেকেরই মনে প্রশ্ন জেগেছে, তাহলে কি আমরা একটা গৃহযুদ্ধের দিকে অগ্রসর
হচ্ছি ?
আমার মনে হচ্ছে যে ইন্ডিয়ার উপর ভরসা করে এই সরকার জনগণের উপর এই নির্যাতন চালাচ্ছে
তারা এই দেশে সর্বাত্মক গৃহযুদ্ধ কখনই চাইবে না। কারন এই দেশে গৃহযুদ্ধ বাঁধলে তারা নিজেরাই
ভয়ানক সংকটে পড়ে যাবে।
আমরা সোমালিয়ার পাইরেটস বা জলদস্যুদের কথা শুনেছি। আমাদের দেশের একটি জাহাজ এবং অনেক
নাবিককেও তারা জিম্মি করে রেখেছিল। বিশ্বের সুপার পাওয়াররা তাদের অত্যাধুনিক নেভি পাঠিয়েও
কিছু সংখ্যক ওয়ার লর্ডদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। এর মূল কারনটি হলো (গৃহযুদ্ধের কারনে)
সেখানে কোন কেন্দ্রীয় সরকার নেই।
তেমনি ভাবে আজ বাংলাদেশ যদি কোন গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে বা দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে পড়ে
তখন সবচেয়ে খুশী হবে ইন্ডিয়ার সাত বোনের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলি। কেন্দ্রীয় সরকারের
নিয়ন্ত্রন শিথিল হয়ে পড়াতে তখন অনেক ওয়ার লর্ড সৃষ্টি হবে যাদেরকে নিয়ন্ত্রন করা দুরুহ হয়ে
পড়বে। কাজেই নিজের নাক কেটে আমাদের যাত্রা ভঙ্গ করার উদ্যোগ ইন্ডিয়া কখনই গ্রহন করবে
না।
এ কারনেই ইন্ডিয়া আমাদেরকে বনসাই করে রাখবে- কখনই একেবারে শেষ করতে চাইবে না। একটি
দলের সাথে যতই অবৈধ প্রেমে জড়াক না কেন কিন্তু নিজের অঙ্গ কেটে কখনই এই প্রেমিকাকে
প্রেমের অঞ্জলি নিবেদন করবে না। এমন বোকা প্রেমিক কখনই হবে না। হ্যাপির শরীরটি হ্যাপিলি
ব্যবহার করবে, কলেমা পড়ার মত ঝুকিটি কখনই নিবে না।
কাজেই দেশের মানুষকে আঘাত করার হিম্মত ডিজিটাল এই রক্ষীবাহিনীর প্রধানরা কখনই পাবে না।
এই সব হাম্বি তাম্বি এদের ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া কিছু নয় ।
তাছাড়া এখন ডিজিটাল জমানা। মূল ধারার মিডিয়াকে খুদ-কুড়া ছিটিয়ে কিংবা ভীতি ছড়িয়ে নিজেদের
আয়ত্ত্বে নিলেও বিকল্প সামাজিক মাধ্যমগুলি সক্রিয় রয়েছে। এদের কুকীর্তি মুহুর্তেই সারা বিশ্বে
ছড়িয়ে পড়বে। এই সব কারনে প্রথমেই সংকটে পড়বে আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষা বাহিনীতে আমাদের
সেনা ও পুলিশ সদস্যদের অংশগ্রহনের ব্যাপারটি।
উর্দি পরা কয়েকজন নেতা বেসামাল হয়ে পড়লেও আমাদের সেনা ও পুলিশ সদস্যদের বিরাট অংশ
বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত সজাগ ও ওয়াকেবহাল। এদের বৃহত্তর অংশের মনে এখনও দেশের প্রতি
মমত্ত্ববোধ অটুট রয়েছে। এরা কখনই দেশের সাধারন মানুষের বুকে গুলি ছুড়বেন না – এটাই দেশবাসীর
প্রত্যাশা। এরা তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতায় টের পাচ্ছে দেশের কতভাগ মানুষের সমর্থন এই সরকারের
প্রতি রয়েছে।
অন্যদিকে
বিরোধীদলের নেতাদের ভয় কিংবা লোভ দেখিয়ে নিস্ক্রিয় করে রাখার সরকারের কৌশলটি অকেজো
হয়ে পড়েছে। সময়ের প্রয়োজনে হঠাৎ সৃষ্টি হওয়া অবরোধ এই বাকশালের গলার কাঁটা হয়ে পড়েছে।
তৃণমূল পরিচালিত হচ্ছে সরাসরি কেন্দ্রীয় নির্দেশে। মাঝখানের নেতারা যারা বিরোধী দলের
আন্দোলনকে নিস্তেজ করে ফেলেছিল এরারএখন নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই সরকারের টোপ বা
ভয়ের খপ্পড় থেকে বের হয়ে জনতার কাতারে শামিল হচ্ছেন। মিডিয়ার যে অংশ বিভিন্ন কায়দায় ইনিয়ে
বিনিয়ে সরকারকে সাহায্য করে যাচ্ছে সোশাল মিডিয়া তাদের চেহারা উন্মোচিত করছে। জনগণ এখন
তাদেরকে গণ
মাধ্যম হিসাবে গণ্য না করে টয়লেট পেপার হিসাবে গণ্য করছে।
কাজেই গণতন্ত্রের জন্যে ঘর থেকে বের হওয়া জনগণের ভয় নেই। বিজয় তাদের সুনিশ্চিত।
সরকারের ভয়ানক লুজ মোশন শুরু হয়ে গেছে । এখন এই এক চিমটি বিজিবি, এক মুঠ র্যাব আর আধা
সের পুলিশ দিয়ে মনে হচ্ছে বেশী ক্ষণ টিকতে পারবে না।