সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ: গণভোটের দ্বিধা এবং গণঅভ্যুত্থানের সাথে বেইমানি

গোলাম সোহরাওয়ার্দী

দানা বাঁধছে নতুন ঝড়

বাংলাদেশের একজন সুপরিচিত রাজনৈতিক বিশ্লেষক গৌতম দাস। তিনি সম্প্রতি একটা বড় ঝুঁকির ব্যপারে সতর্ক করেছেন। গণভোট যদি পরবর্তী নির্বাচনের আগে না হয়, তাহলে দেশে একটা হত্যাযজ্ঞ ঘটতে পারে। ২০০৯ সালের পিলখানা ট্রাজেডির মতো হবে এই হত্যাযজ্ঞ। পিলখানার ঘটনায় বিডিআরের বহু কর্মকর্তা আর তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর ওই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। অনেকেরই অনুমান, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ লোকজন এবং দিল্লিতে তাদের সাহায্যকারীরা মিলে ওই হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে।

অধিকাংশ বাংলাদেশীর জন্য পিলখানা এখনও যন্ত্রণার স্মৃতি। অনুগত অফিসারদের উপর এই হামলা ছিল পরিকল্পিত। আওয়ামী লীগের যে ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণ, এই কর্মকর্তারা হয়তো তার বিরোধীতা করেছিলেন। গৌতম দাসের সতর্কবার্তা যদি সত্যি হয়, তাহলে পরিস্থিতি যথেষ্ট মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে। বাংলাদেশ আবারও একটা গভীর সঙ্কটের কাছাকাছি চলে গেছে। দেশের সামনে এখন দুইটি বিকল্প: গণঅভ্যুত্থানের অন্তর্বর্তী সরকারের অনুমোদনের জন্য গণভোটের আয়োজন করা, অথবা এই গণভোট বিলম্বিত করে প্রতিশোধ, বেইমানি আর সহিংসতার যাদুর বাক্স খুলে দেয়া।

বিএনপির দ্বৈত খেলা

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) হাসিনার কঠোর শাসনের অধীনে বহু বছর দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে তারাও সেই একই খেলা খেলতে চাচ্ছে। এই খেলা আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের আস্থা চুরমার করে দিয়েছে। বিএনপি নেতারা চান গণভোট আর নির্বাচন একই দিনে হোক। সেটা করা হলে পুরনো রাজনীতির নিচে ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানের কবর রচিত হবে।

গণভোটকে ‘অর্থহীন চর্চা’ বলছে বিএনপি। তারা বলছে, এটা নির্বাচন থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেবে। এই নির্বাচনে তারা জিততে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু একটা অশুভ পরিকল্পনা এখানে কাজ করছে। নির্বাচন যদি আগে হয়, তাহলে পুরনো সংবিধানের অধীনে ক্ষমতা পাবে বিএনপি। তখন তারা গণঅভ্যুত্থানের শিক্ষার্থীদেরকে গ্রেফতার করে তাদেরকে হত্যা করতে পারে। তাদেরকে সমস্যা সৃষ্টিকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে, বীর হিসেবে নয়। স্বৈরাচারকে সরিয়ে দেয়ার জন্য যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল, তাদেরকে তখন ফাঁসিতে ঝোলানো হতে পারে। যে আইন হাসিনাকে রক্ষা করেছিল, সেই আইনই এখানে ব্যবহার করা হবে।

গৌতম দাস বলেছেন, বিএনপি ভারতের পরিকল্পনা অনুসরণ করছে। শেখ হাসিনার স্বার্থের যেটুকু উদ্বৃত্ত আছে, সেটুকু তারা পেতে চায়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। দুঃখজনক সত্য হলো বিএনপি আর আওয়ামী লীগ বহু বছর ধরে একই গোপন সিস্টেমের অংশ হয়ে আছে। তাদের লড়াই বাস্তব মনে হয়, কিন্তু তাদের লক্ষ্য একই: যে কোন মূল্যে ক্ষমতা দখল করা, দিল্লির অনুসরণ করা, এবং জনগণের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে অগ্রাহ্য করা।

ঢাকার উপর ভারতের ছায়া

বহু বছর ধরে ভারতের নেতারা বাংলাদেশকে দুর্বল রাষ্ট্র হিসেবে দেখেছে। তাদেরকে অবশ্যই ভারতের আঞ্চলিক পরিকল্পনা অনুসরণ করতে হবে। হাসিনা ছিল তাদের সবচেয়ে ভালো অংশীদার। তার পতন নয়াদিল্লির কৌশলকে ভেস্তে দিয়েছে। এখন তারা বিএনপির মতো ‘মডারেট’ গোষ্ঠিগুলো এবং সরকারী অফিসগুলোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।

এ সব কারণে গণভোটের সময় ঠিক করাটা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। এটা যদি বিলম্বিত বা নির্বাচন পর্যন্ত স্থগিত হয়, তাহলে ভারত তাদের বন্ধুসুলভ সরকার সৃষ্টির চেষ্টা করবে। সেটা বিএনপির অধীনেও হতে পারে বা জোটও হতে পারে। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনের অধিকার মুছে দেবে। এই সরকার এসেছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। ক্ষমতায় এসে এই গণঅভ্যুত্থানকে তারা অবৈধ ঘোষণা করতে পারে। শিক্ষার্থী নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে পারে। পুরনো সিস্টেমকে তারা ফিরিয়ে আনতে পারে, যে সিস্টেম বিদেশী শক্তির কাছে বাধা। এই সিস্টেম ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের ক্ষতি করেছে।

বাংলাদেশের মানুষ স্মার্ট। আমরা আগেও দেখেছি যে অভ্যুত্থান চুরি করা হয়েছে, ত্যাগ ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে, নিয়ন্ত্রণের জন্য আইনের বিকৃতি করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, এটা কি আবার আমরা হতে দেবো?

আইনি বৈধতার বিভ্রম

আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারে শেখ হাসিনা ছিলেন বিশেষজ্ঞ। প্রতিটি হত্যা, ষাঁড়াশি অভিযান, জাতীয় সম্পদ চুরির প্রতিটি ঘটনাকে বৈধ বানানো হয়েছে। যেভাবে খুশি সংবিধান বদলেছেন তিনি। ‘আইনি’ পন্থায় তিনি শত্রুদেরকে সরিয়ে দিয়েছেন। এরপর তিনি নিজেকে গণতন্ত্রের রক্ষাকারী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

বিএনপির কেউ কেউ এখনও সেই পুরনো দুর্গন্ধযুক্ত সংবিধান ব্যবহার করতে চায়। ক্ষমতায় ফিরে আসাকে তারা উদযাপন করতে চায়। ১৪০০ শহীদ আর হাজার হাজার আহতের রক্তের বিনিময়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এটা শুধু ক্ষমতার দখল ছিল না। এটা ছিল নৈতিক অর্জন। এটা বলা হয়ে থাকে যে, সত্যিকারের ক্ষমতা আসে জনগণের আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে, শাসকদের বানানো দলিলের মধ্য দিয়ে নয়। জনগণই কেবল পারে তাদের সম্মান রক্ষা করতে।

গণঅভ্যুত্থানের স্বীকৃতির জন্য যে গণভোট, সেটাকে যদি বিলম্বিত বা দুর্বল করে ফেলা হয়, তাহলে বাংলাদেশ আবার মিথ্যাবাদীদের হাতে চলে যাবে। গণভোটকে প্রত্যাখ্যানের অর্থ হলো জনগণের যন্ত্রণাকে প্রত্যাখ্যান করা। এর মাধ্যমে বলা হচ্ছে যেন তাদের গণঅভ্যুত্থানের কোন অর্থই নেই।

বিভক্ত বিরোধী শিবির, হাতছাড়া সুযোগ

এটা দুঃখজনক যে, হাসিনার দুঃশাসনের শিকার গোষ্ঠিগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। বিএনপি-জামায়াত জোটের দূরদৃষ্টির ঘাটতি ছিল। গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ের উপর দাঁড়িয়ে গঠনমূলক অগ্রগতির চেষ্টা বাদ দিয়ে তারা সময়, নিয়ম কানুন, এবং দলীয় স্বার্থের মতো ছোট ছোট বিষয় নিয়ে লড়াই করছে।

অন্তর্বর্তী সরকার জনপ্রিয় এবং নৈতিকভাবে সঠিক জায়গায় আছে। তারা চুক্তির জন্য চাপ দিয়েছে। জনগণ ঐক্য চায়। অতীত সহিংসতা ও চুরিচামারির অবসান চায়। কিন্তু তারা লোভের একটা দুঃখজনক প্রদর্শনী দেখছে। দলের নেতারা নির্বাচনে জেতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। অথচ, দেশের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে পড়ে আছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা এসেছে রাজপথ থেকে, পুরনো আদালত বা হাসিনার শতছিন্ন সংবিধান থেকে নয়। যে সব শিক্ষার্থী, শ্রমিক, আর মায়েরা মুক্তির জন্য লড়েছে, তাদের লাশের বিনিময়ে এই সরকার এসেছে। এটা অস্বীকার করার অর্থ হলো গণঅভ্যুত্থানের সাথে বড় ধরণের প্রতারণা করা।

গণভোট হলো জনতার রায়

জুলাই গণঅভ্যুত্থান নতুন একটি বাস্তবতা নিয়ে এসেছে। বহু বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ দেখেছে তরুণদের সাথে সাধারণ জনতা মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা বই হাতে মিছিলে নেমেছে। কৃষকরা তাদের সাহায্য করেছে। সেনারাও এক সময় গুলি থামিয়ে দিয়েছে। পার্লামেন্টের আসন দিয়ে এই ঐক্যের বিচার হতে পারে না। এই দেশ পুনর্গঠনের জন্য জনগণের যে অধিকার, সেটার বৈধতা দেয়ার জন্য একটা গণভোট অবশ্যই দরকার।

নির্বাচনের আগে গণভোট হওয়াটা একটা পদক্ষেপ শুধু হয়। এটা একটা নৈতিক প্রয়োজন। এর মাধ্যমে নির্ধারিত হবে বাংলাদেশ কি আত্মত্যাগকারীদের ভূখণ্ড হবে, নাকি পুরনো শঠতার পথে ফিরে যাবে।

এই গণভোট যদি দ্রুত হয়, তাহলে এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার স্বীকৃতি পাবে। এর মাধ্যমে শহীদেরা বীরের মর্যাদা পাবে। এর মাধ্যমে ন্যায্য প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠিত হবে। দুই পরিবারের দলের যে অশুভ নিয়ন্ত্রণ, এর মাধ্যমে সেই অশুভের অবসান ঘটবে।

কিন্তু নির্বাচন যদি আগে হয়, তাহলে পুরনো নেতারা আবার ক্ষমতায় বসবে। গণঅভ্যুত্থানকে তখন “সাময়িক সমস্যা” বলা হবে। যে সংবিধান হাসিনাকে নিষ্ঠুরতার সুযোগ দিয়েছিল, সেই সংবিধান দিয়ে তখন গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদেরকে গুড়িয়ে দেয়া হবে।

বিএনপির অসহ্য নিরবতা

নয়টি রাজনৈতিক দল আলোচনায় রাজি হয়েছে। ডেমোক্র্যাসি প্ল্যাটফর্ম থেকে নিয়ে জামায়াতে ইসলামি – তারা বিভাজন এড়াতে চায়। তারা একমত যে, গণঅভ্যুত্থানের স্বীকৃতি অবশ্যই নির্বাচনের আগে হতে হবে। দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত জামায়াত আলোচনার মাধ্যমে পরিবর্তনের বিষয়ে ঐক্যমতের আহ্বান জানিয়েছে।

অহংকার আর আতঙ্কের কারণে বিএনপি চুপ করে আছে। জনগণের সাথে তাদের যোগাযোগ নেই। তাদের নেতারা দুর্বল হয়ে পড়েছে। বাস্তবতা থেকে দূরে পড়ে আছে। তারা এমন আচরণ করছে যেন, ক্ষমতা তাদের অধিকার। যে রক্ত দিয়ে হাসিনার শাসন থেকে দেশকে পরিস্কার করা হয়েছে, সেই রক্তকে তারা অস্বীকার করছে।

বিএনপি যদি এখন প্রজ্ঞার সাথে পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে নিজেদেরকে তারা ধ্বংস করে ফেলবে। রাষ্ট্রে তারা আরও হত্যাযজ্ঞ টেনে আনবে। জুলাই বিপ্লবীরা কখনও হাল ছাড়বে না। যে জনতা এক শাসককে বিদায় করেছে, তারা আরেকজনের বিরুদ্ধে লড়বে। ঝুঁকিটা খুবই বাস্তব: গণঅভ্যুত্থানের সাথে যদি বেইমানি করা হয়, তাহলে দেশের ভিতরে আরেকটি যুদ্ধ আসবে।

ভুলে যাওয়ার বিপদ

বাংলাদেশের ইতিহাসে বহু ভুলে যাওয়া বীর আছে। ১৯৫২ সালের ভাষার যোদ্ধা থেকে নিয়ে ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের শিকার, এরশাদের নির্যাতনের শিকার থেকে নিয়ে হাসিনার শিক্ষার্থী হত্যা, প্রত্যেক সময়েই রাজনীতি মৃতদেরকে কবর দিয়েছে। জুলাইয়ের বীরদেরকে এর শিকার হতে দেয়া যাবে না।

গণঅভ্যুত্থানকে “আইন বহির্ভূত” বলার অর্থ হলো ঘাতকদেরকে সাহায্য করা। গণভোট পিছিয়ে দেয়ার অর্থ হলো অভ্যুত্থানের শহীদদের কবরকে তাচ্ছিল্য করা। এক স্বৈরশাসনের বদলে আরেক স্বৈরশাসকের জন্য বাংলাদেশীরা তাদের সর্বস্ব দিয়ে ঝুঁকি নেয়নি। এমন একটা দেশের জন্য তারা লড়েছে, যে দেশটি হবে বাইরের ষড়যন্ত্রমুক্ত, পারিবারিক দুর্নীতি, আর আইনি নিষ্ঠুরতামুক্ত।

জনতার সংবিধান

বাংলাদেশের একটি নতুন জনতার সংবিধান প্রয়োজন। পুরনো ব্যবস্থা নয়। নতুন সংবিধানে অবশ্যই গণঅভ্যুত্থানের ভাবনার প্রতিফলন থাকতে হবে: সমতার আইন, ক্ষমতার ভারসাম্য, সুষ্ঠু ভোট ব্যবস্থা, স্বাধীন আদালত, এবং নেতাদের দায়বদ্ধতা।

কোন দলের পক্ষ থেকে এ ধরণের সংবিধান আসবে না। গণভোটের মাধ্যমেই সেটা শুরু করতে হবে। এটা হলো শাসনের প্রশ্নে জনতার সরাসরি অংশগ্রহণ। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, যাতে গণভোট আগে হয়। কোন দলই তখন পুরনো বাতিল ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে ক্ষমতার দাবি করতে পারবে না।

ভেতর বাইরে থেকে সহিংসতা

ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। আওয়ামী লীগের উচ্ছৃষ্টভোগী এবং বাইরের চক্রান্তকারীরা এটাকে থামানোর চেষ্টা করছে। তাদের ষড়যন্ত্র পরিস্কার: অপেক্ষা করো, বিভাজন সৃষ্টি করো, এবং অপদস্থ করো। তারা জানে গণভোটের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের স্বীকৃতির অর্থ হলো ভারতের হস্তক্ষেপ, গোয়েন্দাগিরি, আর অফিস-কেন্দ্রিক দুর্নীতির অবসান। এগুলো বাংলাদেশকে বহু বছর ধরে ফাঁদে ফেলে রেখেছে।

দেশে, কিছু সরকারী কর্মচারি, পুরনো ব্যবসায়ী নেতা, এবং বিদেশী অর্থভোগী গোষ্ঠি অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘অবৈধ’ বলার চেষ্টা করছে। বাইরে, তাদের বন্ধু মিডিয়াগুলো সেটারই পুনরাবৃত্তি করছে। তারা গণঅভ্যুত্থানকে একটা বিশৃঙ্খলা বলে, মুক্তি বলে না। ইতিহাস লেখার আগেই সেটা বদলে দেয়ার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে নেমেছে তারা।

কাপুরুষতার মূল্য

নেতারা যদি আগে গণভোট করতে ব্যর্থ হন, তাহলে বাংলাদেশ নিজের খোঁড়া অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। হাসিনার অধীনে যে মানুষগুলো কেঁদেছিল, তারাই আবার হাসিনার মতো হয়ে উঠবে। যে সংবিধান চক্রান্তকারীদের সুরক্ষা দেয়, সেটা দিয়ে ভালো মানুষদের শাস্তি দেয়া হবে। বাইরের যে সব শক্তি ঢাকাকে এক সময় নিয়ন্ত্রণ করতো, তারা বাংলাদেশকে আবার সহজ উপনিবেশ হিসেবে দেখবে।

সাহসী শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারী যারা স্বচ্ছ স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল, তাদেরকে বন্দি করা হবে, হত্যা করা হবে, অথবা দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে বেইমান হিসেবে স্মরণ করা হবে, নতুন সূচনাকারী হিসেবে নয়।

বাংলাদেশের জাগ্রত বিবেক

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের ক্ষমতার ক্ষুধা ত্যাগ করতে হবে। তাদেরকে এই গণঅভ্যুত্থানের পবিত্র দিকটি দেখতে হবে। নির্বাচনের আগেই অবশ্যই গণভোট হতে হবে। আর অপেক্ষা করা যাবে না, আর অজুহাত দেখানো যাবে না।

স্পষ্ট করে বলি: বিএনপিকে দুর্বল হয়ে গেলে চলবে না। ডেমোক্র্যাসি প্ল্যাটফর্ম, জামায়াত, ও অন্যদের যে আহ্বান, বিএনপিকে সেই ডাকে সাড়া দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, দিনক্ষণ ঠিক করতে হবে, এবং জনগণের সাথে কথা বলতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের আসল মালিক জনগণ। তাদেরকে অবশ্যই চোরদের ব্যপারে সতর্ক হতে হবে, যারা মিথ্যা দিয়ে এই অভ্যুত্থানকে চুরি করতে চায়।

বাংলাদেশ দিল্লির ভূখণ্ড হতে পারে না। এই দেশ আর পারিবারিক উত্তরসূরীদের দ্বারা শাসিত হতে পারে না।

এই মহান দেশের ভবিষ্যৎ এখন তরুণদের হাতে। সেই একই তরুণ সমাজ যারা জুলাইয়ে স্বৈরশাসনের সমস্ত চিহ্ন মুছে দিয়েছে।

শেষ কথা: গণঅভ্যুত্থান না বাঁচালে জাতি হারিয়ে যাবে

জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। এই অভ্যুত্থান ভেতরের চক্রান্তকারী আর বাইরের নিয়ন্ত্রকদের হাত থেকে আমাদের অধিকার ফিরিয়ে এনেছে। গণভোট দেরি করার অর্থ হলো ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছায় পাল্টা হামলার ঝুঁকি বাড়ানো।

গণভোট আগে হলে জনগণের সম্মতিতে নতুন একটি ব্যবস্থা চলে আসবে। আর অন্য পথটা হলো রক্ত, বন্দুক, আর বেইমানির পথ। আরেকটি পিলখানা সৃষ্টির পথ।

সিদ্ধান্তটা তাই পরিস্কার: আগে গণভোট করো, অথবা চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাও।

দুর্বল নেতৃত্ব আর বাইরের নিয়ন্ত্রণকারীদের কারণে আবার বাংলাদেশের মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া যাবে না। জুলাইয়ের রক্ত ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। আলোচনা হয়েছে, চুক্তিতে সই হয়ে গেছে। এখন অবশ্যই গণভোট হতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশের হৃদয় হারিয়ে যাবে।