গুম-খুনে হাসিনা ও সেনাচক্র

সেনাবাহিনীর বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ তিন কর্মকর্তার সমন্বয়ে শেখ হাসিনা বলপূর্বক গুম ও গুপ্তহত্যার নৃশংস একটি চক্র গড়ে তুলেছিলেন। এই চক্রে ছিলেন তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন এবং বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে গুম ও গুপ্তহত্যা হতো। তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং সরকার ও ভারতের স্বার্থের বিপক্ষে যারা সোচ্চার ও প্রতিবাদী হতেন তারাই গুমের শিকার হতেন। গুম ও গুপ্তহত্যার জন্য শেখ হাসিনা তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিককে নিয়ে পরিকল্পনা করতেন। কোন গুম কে করবে তা নির্ধারণ করতেন তারিক সিদ্দিক। এভাবেই বাস্তবায়ন হতো গুমের পরিকল্পনা।

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনও এ বিষয়ে অনেক প্রমাণ পেয়েছে। শেখ হাসিনাই যে গুম-খুনের নির্দেশদাতা, তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে। এ রিপোর্টে উদাহরণ হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমীর গুমের ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়, শেখ হাসিনা আযমীকে হত্যা করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন।

হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গত পনেরো বছরে এভাবেই গুম করা হয়েছে বহু মানুষকে। গুম সংক্রান্ত কমিশন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনা তদন্ত করে সর্বশেষ যে রিপোর্ট প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে তাতেও বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, গুমের সঙ্গে রাষ্ট্রের পাঁচটি বাহিনীর কিছু কর্মকর্তাকে নিয়োজিত করা হয়। রাষ্ট্রীয় পাঁচ বাহিনীর মধ্যে ডিজিএফআইয়ের সাবেক একাধিক ডিজির নামও অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছে।

জোরপূর্বক গুম ও খুনসহ বিভিন্ন জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকায় ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট জিয়াউল আহসানকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। চক্রের প্রধান শেখ হাসিনা ও তারিক সিদ্দিক গত ৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়েছেন। ‘বুচার অব বাংলাদেশ’ হিসেবে কুখ্যাতি পাওয়া জিয়া এখন কারাগারে এবং মোহাম্মদ আকবর হোসেন দেশেই লোকচক্ষুর আড়ালে রয়েছেন। কয়েকটি সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, আকবর হোসেনও পালিয়েছেন। গুম হওয়া একাধিক ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরাও দায়ী চক্রের নৃশংসতার তথ্য তুলে ধরেছেন।

চক্রের বিরুদ্ধে মিলেছে প্রমাণ

গুম সংক্রান্ত কমিশনও চক্রের নৃশংসতার প্রমাণ পেয়েছে। শুধু গুমই নয়, অপহরণের পর খুনেরও অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। লাশ গুম করতে সিমেন্টের বস্তায় ভরে প্রধানত বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলা হতো। এজন্য পোস্তগোলা ঘাট ও কাঞ্চন ব্রিজ ব্যবহার করা হতো।

গত মঙ্গলবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে গুমের সঙ্গে সামরিক কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি। কোনো ব্যক্তিকে গুমের পর তাকে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখার বিষয়টি শেখ হাসিনা বা তার সরকারের শীর্ষ নেতারা জানতেন। অনেক ক্ষেত্রে শেখ হাসিনাই সরাসরি গুম বা হত্যার নির্দেশ দিতেন।

এই চক্রের মধ্যে গুমের ভয়াবহ সব কাজ করেছেন বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। তিনি জাতীয় টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক ছিলেন। এনটিএমসিতে যোগদানের আগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকও (অভ্যন্তরীণ বিষয়ক) ছিলেন তিনি। এরও আগে তিনি র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনার নির্দেশে চাঞ্চল্যকর গুমের বাস্তবায়ন করতেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। অনুসন্ধানে গুম বাস্তবায়নে জিয়াউল আহসানের দুজন রানারের নামও উঠে এসেছে। এদের মধ্যে একজন একদিনেই ১১ জন এবং আরেকজন একদিনে ১৩ জনকে খুন করে বলে জানা গেছে।

গুমসংক্রান্ত কমিশন ৭৫৮টি গুমের ঘটনা অনুসন্ধান করে এসব বাহিনীর ৩২ কর্মকর্তাকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে। গুম হওয়াদের মধ্যে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম, তেজগাঁও থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিবির নেতা শাহ মো. ওয়ালীউল্লাহ ও মো. মোকাদ্দেস আলীসহ ৪৫০ জনের ফেরার সম্ভাবনা নেই বলে গুম কমিশন মনে করছে।

গুমের শিকার পরিবারগুলোর অভিযোগ পর্যালোচনার পর কমিশন নিশ্চিত হয়েছে ২৭ শতাংশ (অন্তত ২০৪ জন) আর ফিরে আসেনি। কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৫ বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর সদস্যরা বহু মানুষ গুম করেছে।

যেভাবে কাজ করত চক্রটি

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রশিক্ষিত ব্যক্তিরা ইচ্ছাকৃত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বলপূর্বক গুমের সিস্টেমটি এমনভাবে সাজিয়েছিল যাতে নিজেদের অপকর্ম সহজেই এড়ানো যায়। ভুক্তভোগীদের নিয়মিত চোখ বেঁধে রাখা হতো এবং অপহরণকারীরা তাদের কাছে অবস্থানের তথ্য গোপন করত।

গুম তদন্ত কমিশনের মূল্যায়নে দেখা গেছে, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গুমের ঘটনা বাংলাদেশ পুলিশের অধীনে পরিচালিত কয়েকটি ইউনিট দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডে ডিবি, সিটিটিসি, ডিজিএফআই এবং এনএসআইসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান জড়িত ছিল। ডিজিএফআইয়ের একজন সাবেক মহাপরিচালক কমিশনকে নিশ্চিত করেছেন, তার সংস্থা বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী দলকে নজরদারি সম্পর্কিত লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করত।

শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সরাসরি আদেশে গুমের পর হত্যার একটি নৃশংস উদাহরণ নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলা।

গুমসংক্রান্ত কমিশনের তথ্য থেকে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলার আসামি তারেক সাঈদ মোহাম্মদ (সাবেক র‍্যাব-১১ এর অধিনায়ক) ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি জিয়াউল আহসানের কাছ থেকে ‘এগিয়ে যাওয়ার’ সংকেত পেয়েছিলেন। জিয়াউল আহসান তখন র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

এছাড়া বলপূর্বক গুমের শিকার হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে তার মুক্তির সময় বলা হয়েছিল, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিচ্ছেন, তবে কিছু শর্ত রয়েছে। আপনাকে রাজনীতি থেকে বিরত থাকতে হবে, দেশ ত্যাগ করতে হবে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হলেই ফিরে যেতে হবে। মনে রাখবেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে জীবনে দ্বিতীয় সুযোগ দিচ্ছেন।’

বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার থেকে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রায় নিশ্চিতভাবেই এসব তথ্য জানতেন। এছাড়া এক ব্যাটালিয়ন অন্য ব্যাটালিয়নের এলাকায় অনুমতি ছাড়াও অভিযান চালাতে পারত। এর মাধ্যমে একটা অস্বচ্ছ ব্যবস্থা তারা সৃষ্টি করেছিলেন।

আকবর ও ডিজিএফআইয়ের সম্পৃক্ততা

এই গুমের প্রক্রিয়ায় ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান জেনারেল আকবরের সম্পৃক্ততার যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে। গুমসংক্রান্ত কমিশনের কাছে তিনি স্বীকার করেছেন যে ডিজিএফআইয়ের অফিসাররা তার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেছেন। তবে তিনি বলপূর্বক গুমে নিজের সরাসরি সংযোগের কথা স্বীকার করেননি।

জেনারেল আকবর এমনও দাবি করেছেন যে, হুম্মাম কাদেরের জোরপূর্বক নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তিনি অন্তত দুবার শেখ হাসিনা এবং তৎকালীন নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের সঙ্গে একবার আলোচনা করেছিলেন। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হুম্মামের পরিবার সুপ্রতিষ্ঠিত এবং তার মুক্তির জন্য মরিয়া হয়ে আবেদন করার খবর পেয়ে (পলাতক) প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আচ্ছা দেখি’। সে সময় শেখ হাসিনা জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি উপদেষ্টাকে বলেছিলেন?’ জেনারেল আকবর ইতিবাচক জবাব দেন। হুম্মামকে মুক্ত করার ক্ষমতা হাসিনার আছে কি না জানতে চাইলে জেনারেল আকবর কমিশনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চাইলে সবকিছু করতে পারেন।’

ব্যারিস্টার আরমান এবং ব্রিগেডিয়ার আযমীকে একই সময়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের মুক্তি মিলেছিল আট বছর পর। যদিও হুম্মামকে সাত মাসের মধ্যে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এই সাক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে হুম্মামের জোরপূর্বক গুমে শেখ হাসিনার জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।

জানা গেছে, হুম্মাম কাদেরকে ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট বলপূর্বক গুম করা হয়েছিল এবং ২০১৭ সালের ২ মার্চ মুক্তি দেওয়া হয়। তাকে ডিবি সদস্যরা অপহরণের পর ডিজিএফআইয়ে হস্তান্তর করেন। তাকে জেআইসি-তে আটকে রাখা হয়। সুতরাং প্রাথমিকভাবে এই অপরাধের দায় শেখ হাসিনা এবং ডিবি, ডিজিএফআই ও সিটিআইবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপরই বর্তায়।

হুম্মাম কাদের সম্পর্কে শেখ হাসিনা এবং তারিক সিদ্দিকের সঙ্গে জেনারেল আকবরের কথোপকথনের পরিপ্রেক্ষিতে এটা স্পষ্ট যে, হাসিনার নেতৃত্বাধীন চক্রই গুমের শিকার ব্যক্তিদের ভাগ্য নির্ধারণ করতেন।

চাঞ্চল্যকর সব গুমেই জিয়াউল আহসানের নাম

২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকায় র‍্যাব-১-এর অধিনায়ক কিসমত হায়াতের নেতৃত্বে এক রাতে তুলে নেওয়া হয়েছিল বিএনপি ও ছাত্রদলের আট নেতাকর্মীকে। গুম হওয়াদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা মহানগরের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমন (৩৪)। তার বাসা শাহীনবাগ এলাকায়।

সুমনের মা হাজেরা বেগম (৭৬) আমার দেশকে বলেছিলেন, নির্বাচনের আগে জীবননাশের শঙ্কায় সাজেদুল বিভিন্ন আত্মীয়ের বাসায় থাকতেন। যে রাতে তাকে র‍্যাব ধরে নিয়ে যায়, সেই রাতে সে বসুন্ধরার আই-ব্লকে খালার বাসায় ছিল। ওই খালার একটি ভবনের নির্মাণকাজ চলছিল। সুমন ও তার খালাতো ভাই জাহিদুল করিম তানভীরসহ (৩০) ছয়জনকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায় র‍্যাব।

বাকি চারজন হলেন পূর্ব নাখালপাড়ার বাসিন্দা আবদুল কাদের ভূঁইয়া ওরফে মাসুম (২৪), পশ্চিম নাখালপাড়ার মাজহারুল ইসলাম ওরফে রাসেল (২৪), মুগদার আসাদুজ্জামান ওরফে রানা (২৭) ও উত্তর বাড্ডার আল আমিন (২৬)। এর কয়েক ঘণ্টা পর রাত ২টার দিকে শাহীনবাগের বাসা থেকে একই বাহিনী তুলে নিয়ে যায় এএম আদনান চৌধুরী (২৮) নামের আরেকজনকে। সুমনের বৃদ্ধ মা হাজেরা বেগমের কাছে সুমনকে তুলে আনার কথা স্বীকার করেছিলেন জিয়াউল আহসান। নিখোঁজ হওয়া সেই তরুণদের খোঁজ আর মেলেনি।

র‍্যাব-১-এর তৎকালীন কমান্ডিং অফিসার কিসমত হায়াত চাকরি থেকে অবসর নিয়ে এখন বিদেশে আরাম আয়েশে জীবনযাপন করছেন বলে জানা গেছে।

হতাশা কাটছে না

শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী, তুলে নিয়ে কাউকে নির্জন বন্দিশালায় আটক রাখা হতো। আবার কাউকে দুনিয়া থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় করা হতো। তাদের লাশটিও ফেরত দেওয়া হতো না পরিবারের কাছে। যাদের লাশ ফেরত দেওয়া হয়নি, তাদের পরিবার জানে না ভিকটিমদের পরিণতি কী হয়েছে।

আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও ব্যারিস্টার আরমান আয়নাঘর থেকে মুক্ত হওয়ার পর গুমের শিকার অনেকের পরিবার আশায় বুক বেঁধেছিলেন, তাদের স্বজনরাও হয়তো ফিরে আসবেন। কিন্তু হতাশা তাদের আর কাটছে না।

Amardesh

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here