মাহফুজ আলম: ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বেশ বড় দুটো আন্দোলন হয়েছিল—নিরাপদ সড়ক আর কোটা সংস্কার নিয়ে। আন্দোলন দুটিতে দেখা গেল, রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ করতে ছাত্র-তরুণদের একটা অংশ রাস্তায় নেমে পড়েছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ দেশের জনগণ আগেরবারের মতো আবারও প্রতারিত হলো। এর পরের দুই-তিন বছর নানা সংকটের কারণে ছাত্র-তরুণেরা আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি।
প্রধানতম সংকট ছিল রাজনৈতিক অভিমুখের অভাব। ছাত্র-তরুণেরা রাজনীতিতে বড় কয়েকটি দাগে বিভাজিত ছিল। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, আর বামপন্থী রাজনীতির ক্ষীণ ধারার বাইরে তারা কিছু কল্পনা করতে পারছিল না।
আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট ছিল যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির যে বয়ান আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে, সেটি টিকিয়ে রেখে আওয়ামী লীগকে কখনোই পরাজিত করা যাবে না।
মুক্তিযুদ্ধের পরে আওয়ামী লীগের কারণে জাতীয়ভাবে রিকনসিলিয়েশন (পুনর্মিলন) না হতে পারা একটা বড় ব্যর্থতা। আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশকে শত্রু বানিয়ে রেখেছে। খালি চোখে আমরা হয়তো কেবল জামায়াত–শিবিরকে দেখব, কিন্তু তাদের নামে সব সময় বড় একটা জনগোষ্ঠী নিপীড়িত হয়েছে।
আমাদের মনে কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। কেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে এত হাজার হাজার শিক্ষার্থী এসেছে, অগ্রজরা এসেছেন? ডাকসুর নির্বাচনের সময় নারীরা কেন এসেছেন? নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর স্কুলের ছেলেমেয়েদের আর কেন পাওয়া গেল না? কেন তাদের কেউ আর রাজনীতিতে নেই? কেন তারা রাষ্ট্র নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারল না?
আমরা দেখতে পেলাম, ভাবাদর্শ আর সাংস্কৃতিক ফল্টলাইনে (বিভাজক রেখায়) বাংলাদেশকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। এই বিভাজক রেখা নিয়ে বিভিন্ন ক্রীড়নকেরা ভূমিকা রাখছে। আমাদের তাই চিন্তা ছিল এই বিভাজক রেখাকে কীভাবে মুছে ফেলা যায়, কীভাবে এর মীমাংসা করা যায়। গত ৫০ বছরে এর মীমাংসা হয়নি, কিন্তু আমাদের চেষ্টা ছিল।
মাহফুজ আলম: আমরা কিছু পাঠচক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করি। জোনাকি গলির কারখানার ব্যানারে ফিল্ম অ্যাকটিভিজিম করি। নাগরিক কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সীমান্ত–হত্যা বন্ধের দাবিতে ৫৪ দিন একটানা রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করেছিলেন। সে অবস্থানের সমর্থনে আমরা পুস্তিকা আর পত্রিকা বের করেছি।
আবার আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আটস্তম্ভ প্রস্তাব করেছিলাম। সেগুলোর ভাবার্থ ছিল নিছক ভারত–বিরোধিতা না করে কীভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
আমরা অনেকে মিলে পড়াশোনা করলাম, লেখালেখি করলাম, নানাজন নানা উদ্যোগ নিল, করোনাকালে অনলাইনে কিছু পাঠচক্র হলো। দেখলাম, এভাবে হচ্ছে না।
২০২১ সালে অক্টোবর মাসে আমরা ‘গুরুবার আড্ডা’ নামে পাঠচক্র শুরু করলাম। প্রথমে নাহিদ ইসলামসহ আমরা ছিলাম চারজন। পরে আবু বাকের মজুমদারসহ আরও তিনজন যুক্ত হলেন।
গুরুবার, মানে বৃহস্পতিবার আমাদের আড্ডাটা বসত। আমরা নানা প্রশ্ন নিয়ে ভাবতাম—রাষ্ট্র, সমাজ, দর্শন, ইতিহাস আর ধর্মতত্ত্ব, যেটা অনেকে বাদ দিয়ে যান। আমরা কামরুদ্দীন আহমেদের লেখা যেমন পড়েছি, তেমনই লেনিনের বা ইসলামি রাষ্ট্রভাবনার বাস্তবতা নিয়েও আলোচনা করেছি। রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, ইকবালকে নিয়ে আলোচনা করেছি।
এভাবে আমরা চিন্তা ও সাংস্কৃতিক রাজনীতির ব্যবধান যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। অনেকটা আড়ালেই এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন হতো। আমরা ছাত্রলীগের চক্ষুশূল হতে চাইনি। ছাত্রদের বিভিন্ন আন্দোলনে আমরা ছিলাম। আবার বড় বড় আন্দোলন হলে তার তাত্ত্বিক ভিত্তি দেওয়ারও চেষ্টা করেছি। পরবর্তী সময়ে ‘গুরুবার আড্ডা’র সূত্রে ছয়চক্র ও রসিক আড্ডাসহ বেশ কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন একই লক্ষ্যে কাজ করেছে।
মাহফুজ আলম: ২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর আমরা পূর্বপক্ষ ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে একটা সেমিনারের আয়োজন করেছিলাম। পূর্বপক্ষ–এর পাটাতন থেকে আমরা বললাম, আমরা দায় ও দরদের সমাজ চাই।
অনেকে হয়তো মনে করছেন, আমরা হুটহাট করে এসব কথা বলছি। সেটা কিন্তু মোটেই নয়। রাষ্ট্রের সভ্যতাগত রূপান্তর ইত্যাদি নিয়ে আমরা গত বছরই লিখেছি। আমরা ততক্ষণে ৬০টির মতো আড্ডা দিয়ে ফেলেছি। সেসব আড্ডার ভিত্তিতে আমাদের মনে হলো, এসব তুলে ধরে আমরা একটা নতুন রাজনীতির প্রস্তাব করতে পারি। আমরা সমাজে হাজির হতে পারি।
এ সময় নুরুল হক নূরের সংগঠনের একধরনের সংকট দেখা দিল। তাঁর সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশটি লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলো। সেটা ছিল অনেকটা ভাবনা আর কর্মতৎপরতার মেলবন্ধন।
ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে ছিল ছাত্র অধিকার পরিষদ, আর বুদ্ধিবৃত্তিক স্তরে ছিলাম আমরা। এই দুইয়ের সম্মিলনে গঠিত হলো গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি। আমরা ছাত্রশক্তির রাজনীতিতে যুক্ত না হয়ে বরং পূর্বপক্ষ, রণপা, সিনেযোগ পত্রিকা এবং ওই আড্ডাগুলোর মাধ্যমে চিন্তা ও সংস্কৃতির চর্চা করেছি। বুদ্ধিবৃত্তিক-সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আর রাজনৈতিক কার্যক্রম আলাদা ছিল। আমরা রাজনৈতিক বয়ান নির্মাণ করতে নেপথ্যে লেখালেখি বা গবেষণা করতাম।
মাহফুজ আলম: আমাদের প্রাথমিক বাসনা ছিল সারা বাংলাদেশে ছাত্রশক্তিকে বিস্তৃত করা। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন হলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সুযোগ তৈরি হবে। কিছু নেতৃত্বও তুলে আনা যাবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যে সরকারের পতনের বিষয়টি তো ছিলই।
আমাদের ভাবনা ছিল ছাত্রশক্তি আগে শক্তিশালী হবে, তারপর আমরা রাজনৈতিকভাবে আবির্ভূত হব। সাংস্কৃতিক পরিসর, কলকারখানা, বিদ্যায়তন সবগুলো ক্ষেত্রেই আমরা সম্পৃক্ত হব।
আন্দোলনের ৫ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত সময়টা ছাত্রশক্তির সদস্যরা সমগ্র বাংলাদেশে আন্দোলনের সাংগঠনিক বিস্তার ঘটালেন। ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত আমরা সেই অর্থে কোনো রাজনৈতিক, এমনকি বুদ্ধিবৃত্তিক সমর্থনও পাইনি৷
নানা রাজনৈতিক দল আর বুদ্ধিজীবীর কাছে আমরা গিয়েছি। কেউই উৎসাহী ছিল না। ভেবেছিল, নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোনো আঁতাত আছে। কিন্তু অভিনব কর্মসূচির কারণে দিনে দিনে ক্যাম্পাসে আর নগরাঞ্চলে আন্দোলনের শক্তি বেড়ে যাচ্ছিল।
আমরা ভাবছিলাম, একে বড় একটা ছাত্র-নাগরিক আন্দোলনে পরিণত করে তোলা যায় কি না। আমাদের লক্ষ্য ছিল ২০২৬ সাল, কিন্তু সুযোগ তৈরি হলে এখনই কেন নয়!
মাহফুজ আলম: ৬ জুলাই বাংলা ব্লকেড ঘোষণা করার পরে। বাংলা ব্লকেড কর্মসূচিটা বিশ্লেষণ করলে দেখবেন, এতে অনেক বেশি জনসম্পৃক্ততা ঘটে গেছে। আমরা সবাই মিলে ছাত্রশক্তির একটা ধারণাপত্র লিখেছিলাম। শুরুতে এ অভ্যুত্থানকে আমরা বলেছিলাম ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থান।
এর মূলে ছিল ছাত্রশক্তির ছাত্র-নাগরিক সংহতির ধারণা। সেই সংহতির পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি সাজানো হয়েছিল। কর্মসূচিটা বিশ্লেষণ করলে দেখবেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছাত্ররা চলে গেল। নাগরিকেরা এসে যোগ দিল। গত ১৬ বছরে কিন্তু এটা সম্ভবপর হয়নি।
মাহফুজ আলম: বাংলা ব্লকেডের পরের সপ্তাহজুড়ে আমরা এটি বুঝতে পারি৷ আমাদের পরিকল্পনা ছিল জনগণকে পক্ষে নিয়ে আসার। গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক দলগুলোর জনমুখী সংযোগ আমরা ঘটাতে পারিনি।
বাংলা ব্লকেডের মাধ্যমে ঢাকা শহরের জনসমর্থন আদায় করতে সমর্থ হলাম। এত দিন যারা প্রতিবাদ করতে পারেনি, তারা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করল। সরকার তখনো ছাত্রদের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। আমরা সেই সুযোগটা গ্রহণ করেছি।
আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের সংহতি তত দিনে বাড়তে শুরু করেছে। ছাত্রসংগঠনের সদস্যরা তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে এসে সমন্বয়ক ও কর্মী হিসেবে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করলেন। আমরাও চেয়েছি সবাই থাকুক, গণ–আন্দোলন হোক।
আমাদের আশঙ্কা ছিল, এ আন্দোলন ব্যর্থ হলে ছাত্রশক্তিই বা কীভাবে টিকে থাকবে! ফলে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমরা স্লোগানগুলো বানাচ্ছিলাম। আমাদের পরিকল্পনা ছিল স্লোগানগুলোকে জাতীয় স্তরে গ্রহণযোগ্য করে তোলা। না হলে পরবর্তী সময়ে আমরা রাজনীতি করে টিকে থাকতে পারব না।
মাহফুজ আলম: এই গণ–অভ্যুত্থানকে আমি অনেক কিছুর মীমাংসা আকারে দেখি। সাংস্কৃতিক প্রশ্নে মীমাংসা, আদর্শিক প্রশ্নে মীমাংসা। বড় একটা স্ফুরণ ঘটিয়ে মীমাংসাগুলো হয়তো নানা দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গিয়েছে। তবে অভ্যুত্থান নিজেই একটা বড়সড় মীমাংসা বা বন্দোবস্ত ছিল।
মাহফুজ আলম: আকাঙ্ক্ষা যে সব সময় সোচ্চার ছিল, তা নয়। বহু আকাঙ্ক্ষা সুপ্তও ছিল। নতুন বাংলাদেশে অনেকেই অনেক কিছু দেখতে চায়। তরুণেরা প্রাথমিকভাবে চায় প্রতিনিধিত্ব। শুধু নির্বাচনে নয়, সবখানেই যেন তারা প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। তারা বাক্স্বাধীনতা চায়।
গণতান্ত্রিক শিল্পী-সাহিত্যিকেরা কথা বলতে চায়। দিনমজুর চায় তার প্রতিদিনের প্রাপ্য মজুরি। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরও নিজস্ব আকাঙ্ক্ষা আছে। শুরুর দিকে না নামলেও পরের দিকে আলেমরা নেমে পড়ল। গোষ্ঠী আকারে গত ১৫ বছরে তারা নিপীড়িত হয়েছে।
আন্দোলনে যখন কমপ্লিট শাটডাউন চলছে, তখন শ্রমিকদের একটা বড় অংশকে আমরা দেখলাম। ১৫ বছর ধরে শ্রেণি আকারে তারা নিপীড়িত হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে চারজন শ্রমিককে মেরে ফেলা হয়। তাজরীন ফ্যাশন বা রানা প্লাজার ঘটনায় তারা বিক্ষুব্ধ ছিল। সবাই একটা চূড়ান্ত বদ্ধ দশা থেকে মুক্তি চাইছিল। নইলে কি কেউ মরার জন্য বুলেটের সামনে বুক পেতে দেয়?
এই আন্দোলনে মেয়েদের সম্পৃক্ততা ছিল বিরাট। এখন অনেকে ভুলে গেলেও এ কথাটা সত্য যে মেয়েরা না থাকলে এই আন্দোলন কোনোভাবেই সফল হতো না। ১০ শতাংশ কোটা থাকা সত্ত্বেও মেয়েরা এসে বলল, আমরা কোটা চাই না। কেন? কারণ তাদের আত্মমর্যাদায় লাগছিল। আত্মমর্যাদা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শেখ হাসিনা দেশের আপামর মানুষের আত্মমর্যাদা ভেঙে ফেলেছিল।
এই লড়াইটা আত্মমর্যাদাবোধেরও ছিল। আন্দোলনকারীরা যে নিজেদের ‘রাজাকার’ হিসেবে স্লোগান দিল, সেটা কিন্তু ‘রাজাকার’ বলে তাদের আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত দেওয়া হয়েছে বলেই। সুতরাং এ আন্দোলনকে আপনি মর্যাদাবোধের পুনরুদ্ধার প্রকল্প আর নানা শ্রেণি–আকাঙ্ক্ষা ও প্রতিনিধিত্বের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও দেখতে পারেন।
মাহফুজ আলম: রাষ্ট্রের একটা থাকে ওপরের দিক, আরেকটা অন্তস্তলের দিক। অন্তস্তলই ওপরের দিকটা ঠিক করে দেয়। তাই সেটা ঠিক না করে উপরিতল ঠিক করার অর্থ হলো পুরোনো ময়লার ওপর নতুন চাদর বিছিয়ে দেওয়া। মানুষ এটা চায় বলে মনে করি না। আমিও নই।
মানুষ বড় ধরনের পরিবর্তন চাইছে; কেবল ক্ষমতার পালাবদলের নয়, বরং ক্ষমতা–কাঠামোর পালাবদলের বন্দোবস্ত। তারা চায় আত্মসম্মান আর বৈষম্যহীনতা বা সমতা। সাংস্কৃতিক ও আদর্শগত জায়গায় বিভাজনের রাজনীতির একটা মীমাংসা তারা চায়। এমন এক পরিসর চায় যেখানে সবাই সবার কথা বলতে পারবে, প্রত্যেকের কণ্ঠস্বর শোনা যাবে। কোনো রকমের যদি আর কিন্তু ছাড়াই মৌলিক মানবাধিকার আর নাগরিক অধিকার তারা ভোগ করবে।
এগুলোই নাগরিকদের প্রত্যাশা। ভাবাদর্শিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক—মোটা দাগে আগের সরকারের এই চারটি বন্দোবস্তকে পরিপূর্ণভাবে ফেলে দিয়ে নতুন বন্দোবস্তের দিকে যেতে হবে।
মাহফুজ আলম: বিএনপি ও জামায়াত গত ১৫ বছরে অনেক নিপীড়নের শিকার হয়েছে। তারা এখন ক্ষমতার হিস্যা নিতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। আবার যারা বাংলাদেশে নতুন রাজনীতির আকাঙ্ক্ষায় গণ–অভ্যুত্থান করেছে, তারাও যে আন্তদলীয় সংস্কার চাইবে, এটাও তো স্বাভাবিক।
প্রশ্ন হলো, আন্দোলনের বিন্যাসটা কী? কেউ কেউ এসে দাবি করছে, এই আন্দোলনে একমাত্র তারাই ছিল। কিন্তু একমাত্র বলে তো কেউই ছিল না। আন্দোলনটা ছিল প্রবহমান নদীর মতো। নানা স্রোত এসে তাতে মিশেছে। এখন যমুনা আর মেঘনার স্রোতোধারার সব আলাদা আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু এর মধ্যেও তো একটা ঐক্য আছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পুরোনো অভ্যাস ও সংস্কৃতি বজায় রাখতে চাইবে। অথচ আমাদের ঘোষিত লক্ষ্য ছিল যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিবর্তন করতে হবে, দলগুলোতে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হবে।
তরুণেরা বাংলাদেশে প্রচলিত ক্লাব রাজনীতি চাইছে না। তাদের চাওয়া দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতি। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে কীভাবে রাজনৈতিক পরিসরে একত্রিত করা যায়, তারা সে কথা ভাবছে। আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী ও সহযোদ্ধারা যদি রাজনৈতিক দল গঠন করে, তাহলে তারাসহ প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে আমরা আহ্বান জানাতে পারি, নিছক ক্ষমতার প্রতিযোগিতা ছেড়ে তারা যেন রাষ্ট্র গঠনের দৃষ্টিভঙ্গিটা নিয়ে আসে।
আগে প্রতিযোগিতা ছিল কে কার আগে ক্ষমতায় বসতে পারে, লুটপাট করতে পারে। এখন প্রতিযোগিতা হওয়া উচিত দেশকে কে কোন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশকে সামনে রেখেই রাজনীতি গোছানো উচিত।
কেবল রাষ্ট্র সংস্কার করলেই তো হবে না। দলগুলোর ভেতরেও সংস্কার দরকার। রাজনৈতিক নেতৃত্ব কীভাবে নির্বাচিত হবে, তার প্রক্রিয়া সংস্কার করা উচিত। তাদের অর্থনৈতিক সংস্কারেরও প্রয়োজন। দলগুলোর বিশুদ্ধিকরণের জন্য সামাজিক চাপ তৈরি করতে হবে। পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি আর বদভ্যাস জিইয়ে রাখার জন্য তো এত মানুষ জীবন দেয়নি।
prothom alo