ব্যারাজের সব গেট খোলায় পানিপ্রবাহ বেড়েছে ১১ লাখ কিউসেক

টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোয় বন্যা চলছে। এর মধ্যেই ভারতের বিহার ও ঝাড়খণ্ডে বন্যার জেরে ফারাক্কা ব্যারাজের ১০৯টি গেট খুলে দিয়েছে ভারত। এতে দেশের পদ্মা নদীর অববাহিকার জেলাগুলো প্লাবিত হয়ে পড়ার আতঙ্ক দেখা দেয়। তবে ভারি বৃষ্টি না হলে আপাতত পদ্মা নদীর অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা কম বলে মনে করছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাহ বাড়ায় পদ্মায় পানির স্তর বাড়লেও এখনো তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

ব্যারাজের জেনারেল ম্যানেজার আর দেশ পাণ্ডে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ফারাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ সবসময় অ্যালার্ট রয়েছে। প্রতি মুহূর্তে নজর রাখা হচ্ছে। খুব কম সময়ের মধ্যে যেভাবে পানির চাপ তৈরি হয়েছে তাতে ১০৯ গেটের সবক’টি খুলে না দিলে ব্যারাজের ওপর বড় চাপ তৈরি হচ্ছিল। বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারত। আপাতত ফিডার ক্যানেলে ৪০ হাজার কিউসেক ও ডাউনস্ট্রিমে ১১ লাখ কিউসেক পানি ছাড়া হচ্ছে।’

পানি ও নদী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ মুহূর্তে পদ্মার অববাহিকায় বন্যার আশঙ্কা কম। তবে কোথাও ভারি বৃষ্টিপাত হলে তা বন্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের আরডিআরসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাঁধ খুলে দিলেও আসাম-মেঘালয়ে যেহেতু ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে না এ কারণে আপাতত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বন্যার সম্ভাবনা নেই। তবে যেহেতু পদ্মার শাখা নদীগুলোর নাব্যতা কমে গেছে এ কারণে কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। এছাড়া কোনো কারণে ভারি বৃষ্টিপাত হলে বন্যার একটা শঙ্কা তৈরি হতে পারে।’

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বণিক বার্তাকে জানান, ‘ফারাক্কার গেটগুলো বেশ কয়েকদিন ধরেই খোলা আছে। পদ্মার পানিও বিপৎসীমার নিচে আছে। বিপৎসীমা হচ্ছে ১৮ দশমিক শূন্য ৫ মিটার। বর্তমানে পানি আছে ১৬ দশমিক ২৮ মিটার। এক সপ্তাহ আগেও তা ছিল ১৬ দশমিক ৩৮ থেকে ১৬ দশমিক ৪০ মিটারের মধ্যে। এছাড়া রাজশাহী শহর ঘিরে বেশ সুরক্ষা রয়েছে। সেক্ষেত্রে রাজশাহী শহরে বাঁধ ভেঙে পানি ঢোকার বড় ঝুঁকি নেই।’

এদিকে ব্যারাজ খুলে দেয়া নিয়ে গতকাল বক্তব্য রেখেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘আমরা ফারাক্কা ব্যারাজের গেটগুলো খোলার বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখেছি, যেখানে বলা হচ্ছে এর ফলে গঙ্গা বা পদ্মা নদীর প্রাকৃতিক গতিপথের ভাটি অংশে ১১ লাখ কিউসেক পানির অতিরিক্ত প্রবাহ ঘটবে। বস্তুত এটি একটি স্বাভাবিক মৌসুমি বিষয়, যা উজানে গঙ্গা নদীর অববাহিকায় ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে প্রবাহ বাড়ার কারণে ঘটে।’

তিনি আরো বলেন, ‘একটি বিষয়ে বুঝতে হবে যে ফারাক্কা শুধু একটি ব্যারাজ, বাঁধ নয়। ফারাক্কা খালে ৪০ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত করার জন্য এটি নিছক একটি কাঠামো, যা প্রধানত গঙ্গা বা পদ্মা নদীর ওপর গেটগুলোর মাধ্যমে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে সাবধানতার সঙ্গে করা হয়, যখন পানির ভারসাম্যপূর্ণ প্রবাহ বাংলাদেশের প্রধান নদীর দিকে প্রবাহিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী এ-সংক্রান্ত উপাত্ত নিয়মিত ও সময়মতো বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট যৌথ নদী কমিশনের কর্মকর্তাদের জানানো হয়। এবারো তাই করা হয়েছে।’

Bonik Barta