একদিকে ধুঁকছে ব্যাংক খাত, অন্যদিকে চলছে ঋণ মওকুফ

একদিকে ধুঁকছে ব্যাংক খাত, অন্যদিকে চলছে ঋণ মওকুফ. গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যাংকের পাশাপাশি অ-ব্যাংক পরিশোধ সেবাদানকারীদের আইনি কাঠামোতে আনতে ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বিল-২০২৪’ সংসদে পাস হয়েছে। বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে একাধিক এমপি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে বিশৃঙ্খলার সমালোচনা করেন। তারা বলেছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের কথা এলে সবার মধ্যে আতঙ্ক চলে আসে। হরহামেশাই বড় কোম্পানির সুদ মওকুফ করে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারছে না।

গতকাল অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বিলটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

সদস্যদের এত সব সমালোচনার কোনো জবাব দেননি অর্থমন্ত্রী। বিলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি ‘অগ্রিম পরিশোধ দলিল’ ইস্যু, ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া জনসাধারণ থেকে যে কোনো বিনিয়োগ গ্রহণ, ঋণ প্রদান, অর্থ সংরক্ষণ বা আর্থিক লেনদেন উদ্ভব হয়– এ রকম কোনো অনলাইন বা অফলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করা যাবে না। এসব বিধান অমান্য করলে সাজা হবে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।

বিলে বলা হয়েছে, ব্যাংক-কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো পরিশোধ ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ, পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনা বা ইলেকট্রনিক মুদ্রায় পরিশোধ সেবা দিতে পারবে না। একইভাবে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিবন্ধন নেওয়া ছাড়া কোনো পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনা বা পরিশোধ সেবা দিতে পারবে না। এ বিধান না মানলে সাজা হবে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ-সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়, এখন বাংলাদেশে পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা-বিষয়ক কোনো আইন নেই। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ অনুযায়ী, বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস রেগুলেশনস-২০১৪ এবং রেগুলেশনস অন ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার-২০১৪-এর আওতায় সব পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত আলাদা কোনো আইন না থাকায় ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ইলেকট্রনিক লেনদেন ব্যবস্থায় অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিশোধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণেও কোনো আইন নেই। ফলে গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যাংকের পাশাপাশি অ-ব্যাংক পরিশোধ সেবাদানকারীদের আইনি কাঠামোর আওতায় নিয়ে আসা জরুরি। এ কারণে এ আইন হচ্ছে।

বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র সদস্য পংকজ নাথ বলেন, চার শিল্প প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। নিয়ম না মেনে চারটি প্রতিষ্ঠানের ৬ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করা হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন প্রয়োজন ছিল।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক ধুঁকে ধুঁকে মরছে। বেসরকারি ব্যাংক এনবিলের কী অবস্থা, তাও জানি। সুদ মওকুফের বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের তথ্য ধরে তিনি বলেন, সুদ কখন মওকুফ হয়। প্রাকৃতিক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে ধ্বংস, ঋণগ্রহীতার মৃত্যু বা দৈব-দুর্বিপাকে কারণে। কিন্তু কিছুই হয়নি। খোঁড়া অজুহাত দিয়ে তাদের সুদ মওকুফের সুযোগ দেওয়া হয়। আর একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক ধুঁকে ধুঁকে মরছে। এ লোকগুলোকে চিহ্নিত করতে না পারলে প্রধানমন্ত্রীর মহতী উদ্যোগ ম্লান হয়ে যাবে। তিনি বলেন, একটা বিতর্কিত ব্যক্তির নাম প্রতিদিন আলোচনা হচ্ছে দুর্নীতির কারণে। এক ব্যক্তি রাষ্ট্রের তিন-চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও আপিলাত ট্র্যাইবুনালের চেয়ারম্যান। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল ১৫ বছর আগে। কে তাঁকে সুপারিশ করল এনবিআরের পরিচালক বানাতে? কে তাঁকে করল ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের পরিচালক? শর্ষের মধ্যেই ভূত। এই ভূত প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ সরাতে পারবেন না।

জাতীয় পার্টির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, পি কে হালদার টাকা নিয়ে ভারতে চলে গেছেন। অনেক কোম্পানি আজ দেউলিয়া অবস্থায়। বাংলাদেশ ব্যাংক তার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না। ব্যাঙের ছাতার মতো ব্যাংক হয়ে গেছে। ১০-২০টি ব্যাংক আজ বন্ধের অবস্থায় আছে।

সমকাল