বগুড়ার শাজাহানপুরে থানায় ঢুকে আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাসহ ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় আট পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই ঘটনায় গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে সাতটি গুলিসহ দুটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন শাজাহানপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মাঝিড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি সাইদুর রহমান, আড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিঠুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী সাদ্দাম রবীন, রমজান আলী, বোরহান উদ্দিন, মিরাজুল রহমান, আমিনুল ইসলাম ও মিঠুন মিঞা।
এ সম্পর্কে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম আজ রোববার সকাল ১০টায় বলেন, থানায় চড়াও হয়ে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় নুরুজ্জামানসহ ৯ সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে। নুরুজ্জামানের দেওয়া তথ্য মোতাবেক রাতেই তাঁর বাসায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় সাতটি গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার হয়। এ ছাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান নাজমুলের বাগানবাড়ি থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। তবে নাজমুল পলাতক।
শহীদুল ইসলাম জানান, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনসহ সরকারি কাজে বাধা প্রদান, পুলিশের ওপর হামলা, থানায় লোকজন নিয়ে বেআইনি প্রবেশ করে শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গ, মহাসড়ক অবরোধ করে যানবাহন ভাঙচুরের চেষ্টাসহ বিভিন্ন আইনে একাধিক মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে।
থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত সোয়া ৯টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া বাজারে অভিযান চালিয়ে আড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিঠুন হাসানকে দুটি বার্মিজ চাকুসহ মদ্যপ অবস্থায় আটক করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন আড়িয়া ইউনিয়ন বিট পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) আনিসুর রহমান। ওই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশকে ফোন দেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান। তবে মিঠুনকে ছেড়ে না দিয়ে থানায় নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন নুরুজ্জামান। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ৩৫ থেকে ৪০ জনকে নিয়ে নুরুজ্জামান থানায় আসেন। তাঁরা মিঠুন হাসানকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে প্রথমে ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় নুরুজ্জামান ও তাঁর সহযোগীদের হামলায় এসআই আনিসুরসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। খবর পেয়ে থানায় আসেন ওসি শহীদুল ইসলাম। নুরুজ্জামান ওসির সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং গালাগালি ও হুমকি দেন। থানা থেকে বেরিয়ে যেতে বললে নুরুজ্জামান ও তাঁর সহযোগীরা হামলা করেন। পুলিশের প্রতিরোধের মুখে তাঁরা থানা থেকে চলে যান।
পুলিশের ভাষ্যমতে, থানা থেকে বের হওয়ার পর নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন থানার অদূরে মাঝিড়া বন্দরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন। তাঁদের হাতে ছিল লাঠিসোঁটা ও লোহার পাইপ। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। তখন তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। একপর্যায়ে লাঠিপেটা করে তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে নুরুজ্জামানসহ আটজনকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। থানায় আক্রমণ ও পুলিশের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে রাতভর যৌথ অভিযান চালানো হয়। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান নাজমুলের বাড়ি থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ছাড়াও বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
শাজাহানপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, থানায় হামলার ঘটনায় দুজন এসআইসহ আট পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আটক মিঠুন হাসানের নামে হত্যা, মাদকসহ সাতটি মামলা রয়েছে।
prothom alo