চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ১৭ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। এই সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আদায়ের লক্ষ্য ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। তবে এই লক্ষ্যের বিপরীতে সংস্থাটি আদায় করতে পেরেছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা।
প্রতিবছরের মতো এবারও অর্থবছরের শুরু থেকেই লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে পড়ে এনবিআর। তবে বছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই–ডিসেম্বর) যতটা ঘাটতি ছিল, সেই পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি লক্ষ করা গেছে। ওই ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ছিল ২৩ হাজার ২২৭ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। তবে সম্প্রতি এই লক্ষ্য কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়।
এনবিআরের তথ্য–উপাত্ত ঘেঁটে দেখা গেছে, বছরের প্রথম সাত মাসে সার্বিক লক্ষ্যের ৫১ শতাংশ রাজস্ব আদায় হয়েছে। সেই হিসাবে বছরের বাকি ৫ মাসে ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি আদায় করতে হবে। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ৪২ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা আদায় করতে হবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুসারে, চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে হবে।
রাজস্ব আদায় বাড়াতে এই খাতের সংস্কার নিয়ে আলোচনা করতে আইএমএফের একটি বিশেষ দল বাংলাদেশে আসছে। ৪ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত এই দল এনবিআরের শুল্ক, আয়কর ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, রাজস্ব আদায়ে এবারও বড় ঘাটতি থাকবে। এই ঘাটতি বছর শেষে ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তাঁর মতে, রাজস্ব আদায় বাড়াতে রাজস্ব প্রশাসনের পাশাপাশি আইনি সংস্কারও লাগবে।
কোন খাতে কত আয়
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আমদানি, ভ্যাট ও আয়কর—এই তিন খাতের মধ্যে কোনোটিই সাত মাসের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হয়েছে আমদানি খাতে। সাত মাসে আমদানি খাতে ৬৪ হাজার ৭৭০ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে ৫৭ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। আমদানি খাতে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ৭ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। এরপর ঘাটতি আয়কর খাতে। এই খাতে ৭ মাসে ঘাটতি ছিল ৭ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। এ খাতে লক্ষ্য ছিল ৭০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা, তবে আদায় হয়েছে ৬৩ হাজার ৭৪ কোটি টাকা।
আলোচ্য সময়ে ভ্যাট খাতে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। জুলাই থেকে জানুয়ারি—এই সাত মাসে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৭৭ হাজার ২২৪ কোটি টাকা। এই খাতে আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৮০ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা।
prothom alo