গতকাল লন্ডনে বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা

ব্রেকিং নিউজ – Breaking News
গতকাল লন্ডনে বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা শুনে আমি প্রায় ঘন্টাখানেক স্তম্ভিত হয়ে ছিলাম। ক্রোধ সংবরণ করে সভ্য হতে সময় লেগেছে। কোন প্রকাশ্য সভায় কোন ব্যক্তি যে এমন  অশ্রাব্য, এমন কুশ্রী, এমন ইতর ভাষায় বক্তব্য দিতে পারে এটা আমার ধারনাতেও ছিল না। তাও নাকি সেই ব্যক্তি কেবল প্রধানমন্ত্রী নন, আবার নারী জাতির! এই নারীর বক্তব্য শুনে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে, মানুষ নাকি “আশরাফুল মাখলুকাত”। অবশ্য সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা তো ইবলিসেরও স্রষ্টিকর্তা। আমার একান্তই ব্যক্তিগত বিবেচনায় চলমান সময়ের নিকৃষ্টতম ব্যক্তির বক্তৃতার সব কথা আজকের সম্পাদকীয়তে লেখার কোন প্রয়োজন নাই। কেবল তার অতি প্রাসঙ্গিক এবং চরম আপত্তিজনক কথাগুলোর জবাব দেয়া আবশ্যক। আজকে আমি হয়ত আমার চিরাচরিত ভদ্রতা রক্ষা করতে সক্ষম হব না। তাই পাঠকের কাছে আগাম ক্ষমা চেয়ে রাখছি।
শেখ হাসিনা বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার আশি বছর বয়স হয়ে গেছে তাই আর বেঁচে থাকার দরকার কি? তা খুকী হাসিনা, আপনার বয়স কত হয়েছে? এই না দুদিন আগে ৭৭তম জন্মদিন পালন করলেন। আমাদের জানা মতে বেগম খালেদা জিয়ার বয়স এখনও আশি হয় নাই। আর যদি হয়েও থাকে তাহলে ৭৭ আর ৮০’র মধ্যে পার্থক্য কত? নাকি অশিক্ষিত, আধা গুন্ডা, পিতার মূর্খ, দুর্বিনীত কন্যা এই অংকটাও করতে জানেন না?
কালকের বক্তব্যে শেখ হাসিনা, স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়া এবং তার স্ত্রী, গণতান্ত্রিকভাবে একাধিকবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর চরিত্র নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করেছেন। এই বৃদ্ধ বয়সে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ম্যাঁখোর বাহুলগ্না হয়ে আবেশে চোখ বন্ধ করার পর অন্যের চরিত্র নিয়ে কুৎসা করা কি আপনার সাজে? আপনার পুত্র, কন্যার সংসারের বিপর্যস্ত অবস্থা দেখার পরও কি আপনার হুঁশ হয় না? কেমন মা আপনি?মরহুম আতাউস সামাদ ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে দিল্লিতে আপনার দাম্পত্য জীবন নিয়ে আমাকে অনেক কথা বলেছিলেন। আপনার নিশ্চয়ই স্মরণে আছে যে, তিনি আপনার বাসার খুব নিকটেই থাকতেন। আজ তিনি জীবিত নেই, তাই তার বলা কথাগুলো আর লিখলাম না। তাছাড়া অন্যের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নোংরা কথা বলা সংস্কৃতি আমাদের সময়ের শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত সমাজে ছিল না। আপনাদের মত নর্দমায় আমরা বড় হয়ে উঠি নাই। বাংলাদেশের জনগণ হয়ত এখনও ভুলে যায় নাই যে, ১৯৯৬ পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীত্বের কালে আপনার গুন্ডাদের ভয়ে, আপনার মরহুম স্বামী ওয়াজেদ মিয়া বঙ্গভবনে তৎকালিন প্রেসিডেন্ট, বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের কাছে প্রাণভয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
কাল আপনি বলেছেন যে, সুযোগ পেলেই খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের আইনসম্মতভাবে প্রাপ্ত বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পরিকল্পনা পূর্ব হতেই করে রেখেছিলেন। আমি এখন সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, যিনি নাকি ওই বাড়িটিকে অবৈধভাবে প্রাপ্ত বলে ফরমায়েসী রায় দিয়েছিলেন তাকে প্রশ্ন করতে চাই, হে বিচারপতি, আপনি কি আজ বিবেকের দংশন অনুভব করছেন? শুধুমাত্র আপিল বিভাগে নিয়োগ প্রাপ্তির লোভে একজন ইবলিসের সহযোগী হতে আজ কেমন লাগছে? সাবেক আর্মি চীফ ইকবাল করিম ভুইয়া যিনি কিউএমজি হিসেবে বেগম জিয়াকে অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে গৃহত্যাগে বাধ্য করেছিলেন, তাকে প্রশ্ন করছি, আপনি কি একজন সৈনিক, নাকি হাসিনা আর দিল্লির দারোয়ান? বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল সাবেক এবং বর্তমান, তথাকথিত জেনারেলদের বলছি, লাজলজ্জা বলে কি এখনও কোন কিছু অবশিষ্ট আছে? আপনাদের চুড়ি পড়তে বলতেও আমার ঘৃনা হয়।
প্রেসিডেন্ট জিয়ার ছোট ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর গুলশানে বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে ঢুকতে না দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে আপনি প্রশ্ন করেছেন, অন্য কোন প্রধানমন্ত্রী হলে কি করতো? কি করতো বলে আপনার ধারনা? বেগম জিয়ার অফিস মানুষজনসহ বোমা মেরে উড়িয়ে দিত? ওটা পেরে ওঠেন নাই বলে আপনার যত দু:খ? ইসলামী জঙ্গীবাদের নামে তো কত দরিদ্র নারী, পুরুষ, শিশুকে হত্যা করেছেন, শাপলা চত্বরে আলেম, ওলামা, মাদ্রাসা ছাত্রদের গণহত্যার পর তাদের রক্ত নিয়ে তামাসা করেছেন, কত মানুষকে গুম করেছেন। তবু রক্তের পিপাসা মিটলো না? কোন শয়তানের হাড় দিয়ে তৈরী আপনি?
শেখ হাসিনার মুখ নামক “পয়োনিষ্কাশন খামার” থেকে যা বেরিয়েছে তার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং দলটির সমর্থক কথিত বুদ্ধিজীবীকুল ও কবি, সাহিত্যিক, সংস্কৃতি কর্মীদের কাছে প্রশ্ন, আচ্ছা, আপনাদের মধ্যে একজন বিবেকবানও কি নাই যে, এই অসভ্যতার প্রতিবাদ করে হাসিনার সঙ্গ ত্যাগ করতে পারে? আমি জানি নাই। তবু আমার এই জানাটাকে একজন অন্তত: মিথ্যা প্রতিপন্ন করুন। জীবনের এই একেবারে পড়ন্ত বেলায় বাংলাদেশের উত্তরণের ক্ষীণ আশাটুকু এখনও বাঁচিয়ে রাখতে চাই।
শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিএনপি নিয়ে আলোচনা না করলে আমার আজকের সম্পাদকীয় অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এই দলটিতে আমি কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান না করলেও এর নেতাকর্মীদের সাথে আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের শুরু নব্বই দশকের শেষে। বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের মধ্যে আমি শহীদ জিয়াকে তার সাহস, মুক্তিযুদ্ধকালিন ভূমিকা, অতুলনীয় সততা এবং গভীর দেশপ্রেমের জন্য সর্বাপেক্ষো শ্রদ্ধা করি। বেগম খালেদা জিয়ার স্নেহের জন্যও তার প্রতি আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। কিন্তু, ভারত এবং ইসলাম প্রশ্নে দলটির বর্তমান রাজনীতির সঙ্গে আমার যোজন যোজন দূরত্ব। আমি অবগত আছি যে, তারেক রহমানসহ বিএনপির নীতিনির্ধারকরা আমাকে বেশ অপছন্দই করেন। তাদের দৃষ্টিতে আমি অতিবিপ্লবী, অতি মাত্রায় ভারতবিরোধী এবং ইসলামপন্থী। আমার রাজনৈতিক অবস্থানকে তারা দলের জন্য ক্ষতিকারক মনে করে থাকেন। তবে আমাকে সম্ভবত তারা কাপুরুষ, আপসকামী বলবেন না এবং সততার প্রশ্নে আমার সাথে কেউ প্রতিদ্বন্দিতায় আসার সাহস করবেন না। শেখ হাসিনার প্রচন্ড অবমাননাকর বক্তব্য আজ কিন্তু তারেক রহমানসহ বিএনপির সকল নীতিনির্ধারকদের আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। জনসভায় বেগম জিয়ার জন্য কান্নাকাটি করে আর কোন ফায়দা নাই। আল্টিমেটামের নাটক আর চলবে না। ভিরু নেতৃত্ব এখন পিঠ বাঁচানোর জন্য তারেক রহমানকে বলার চেষ্টা করবে যে, শেখ হাসিনার কথায় আখেরে আমাদের লাভ হবে, আমাদের ভোট বাড়বে। শেখ হাসিনা যতই গালাগালি করবে ততই আমাদের ফায়দা। এই জাতিয় কথাবার্তা আমি বিএনপির নেতাদের মুখে বহু বার শুনেছি। এসব কথা অক্ষমের আত্মতৃপ্তি মাত্র।
তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে শুধু বলতে চাই, আপনি প্রধানত: শহীদ জিয়া এবং বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র হওয়ার প্রেক্ষিতেই বাংলাদেশের বৃহত্তম দলের নেতা হয়েছেন। আপনার নেতারা দুর্বল হতে পারে, দল বিপ্লববিমুখ হতে পারে। কিন্তু, পুত্র হিসাবে আপনি এই অপমান বিনা প্রতিবাদে মেনে নিতে পারেন না। বাংলাদেশে দল যদি কিছু নাই করতে পারে, তাহলে ইউ কে তে বসে আপনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যথাসম্ভব আইনী ব্যবস্থা অন্তত: গ্রহণ করার চেষ্টা করুন। জনগণ জানবে আপনি তবু সাধ্যমত চেষ্টা করেছিলেন। নইলে ইতিহাস আপনাকেও ক্ষমা করবে না।
আত্মপরিচয়ের সংকটে ভোগা বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ বাঙ্গালী মুসলমানের কাছেও আমার তেমন কোন প্রত্যাশা নাই। এদের ভিরুতা আমি গত দুই দশক ধরে দেখে আসছি। সম্পাদকীয়র শেষে, অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে, এদেরই কাছে তবু একটাই অনুরোধ করি। আর কিছু না পারুন, অন্তত: সকল আওয়ামী লীগারকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বয়কট করুন। আমার পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে যাদেরই আওয়ামী লীগের সাথে কোনরকম সংশ্রব আছে তাদের সবাইকে আমি বহু আগে পরিত্যাগ করেছি। আপনারা ইচ্ছা হলে বিএনপিপন্থী পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন।
লেখক: সম্পাদক, আমার দেশ
০৩/১০/২০২৩