শেয়ারবাজারে ১০ অক্টোবর থেকে দরপতন শুরু হয়েছে। গত ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ৯ দিনই সূচক কমেছে বাজারে। টানা এ পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক ভর করেছে। আসলেই কি আতঙ্কিত হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছেছে সূচক? এ নিয়ে কথা বলেছেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। অনুলিখন করেছেন সুজয় মহাজন।
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরি হওয়া এ আতঙ্ক কাটাতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিয়েই এ উদ্যোগ নিতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে যদি কয়েক দিন বাজারকে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রাখা যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীদের হারানো আস্থা আবার ফিরতে শুরু করবে। তখন বাজার তার নিজস্ব গতি ফিরে পাবে।
মোহাম্মদ হেলাল সামগ্রিকভাবে বর্তমান বাজার ও সূচককে কোনোভাবেই অতিমূল্যায়িত মনে করেন না। তাঁর মতে, এ বাজারে কিছু কিছু শেয়ারের দাম কারসাজির মাধ্যমে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। এ কথা হয়তো সত্য। কিন্তু সব শেয়ার অতিমূল্যায়িত নয়। এখনো ভালো মৌলভিত্তির অনেক শেয়ার অবমূল্যায়িত পর্যায়ে রয়েছে। আবার আমাদের অর্থনীতি ও বাজারের যে সক্ষমতা, তাতে সূচকের ৭ হাজার পয়েন্ট খুব বেশি নয়। তাই এ পর্যায়ে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধসের কোনো কারণ দেখছি না। যদি ভালো মৌলভিত্তিসহ বাজারের অধিকাংশ শেয়ার অতিমূল্যায়িত অবস্থায় চলে যেত, তাহলে হয়তো বাজার নিয়ে উদ্বেগের কারণ থাকত। এখানকার সামগ্রিক বাজার নিয়ে মোটেই উদ্বেগের কিছু নেই। তবে কিছু শেয়ারের দাম উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে গেছে।
মোহাম্মদ হেলালের মতে, অতীতে বাজারের সূচক চার হাজারে নেমে গিয়েছিল। সেটিও ছিল অস্বাভাবিক কম। সেখান থেকে সূচকটি বেড়ে স্বাভাবিক অবস্থায় পৌঁছেছে। চার হাজার থেকে একটানা সূচক বেড়ে সাত হাজারে পৌঁছে যাওয়ায় অনেকে এটিকে অস্বাভাবিক উত্থান মনে করছেন। কিন্তু আমি মনে করি, দেশের অর্থনীতির বাস্তবতায় সূচকের ৬–৭ হাজার পয়েন্ট অস্বাভাবিক কিছু নয়।
হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘১৯৯৬ ও ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে আমরা দুই দফায় ধস দেখেছি। সে সময় বাজার–সংশ্লিষ্ট প্রায় সবার মধ্যেই ধারণা তৈরি হয়েছিল, সব শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। কোম্পানির আয়ের সঙ্গে যার কোনো সামঞ্জস্য নেই। তাই সবার মনেই সেই শঙ্কা ছিল, এ দাম কখনোই ধরে রাখা যাবে না। এ কারণে বাজারে ধস নেমেছিল। কিন্তু বর্তমান বাজারে সে ধরনের কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’
তবে কিছু কিছু শেয়ারের কারসাজির বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরও কঠোর হওয়া উচিত বলে মত দেন হেলাল উদ্দিন। তাঁর মতে, কিছু কোম্পানির কারণে সামগ্রিকভাবে বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কারণ, বাজারে যখন দাম পড়তে শুরু করে, তখন সব শেয়ারেরই দাম পড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা ভীত হয়ে যখন বিক্রি শুরু করেন, তখন বাছবিচার ছাড়া সব শেয়ার বিক্রি করেন। এতে মূল্য সংশোধন বেশি হয়।