করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে দেশে ফেরা প্রবাসীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। আয়ের কোনো উৎস নেই দেশে ফেরা ৮৭ শতাংশ প্রবাসীর। দেশে ফিরে সরকারি বা বেসরকারি কোনো সাহায্য পাননি ৯১ শতাংশ প্রবাসী। জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন ৫২ শতাংশ প্রবাসীর।
‘বিদেশফেরত অভিবাসী কর্মীদের জীবন ও জীবিকার ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব’ শীর্ষক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জরিপটি পরিচালনা করেছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি। আজ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ জরিপের প্রতিবেদন তুলে ধরেছে ব্র্যাক।
ব্র্যাক বলছে, করোনা পরিস্থিতিতে দেশে ফেরা ৫৫৮ জন প্রবাসী কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে ৮৬ শতাংশই ফিরেছেন মার্চে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪৫ শতাংশ এসেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন ওমান এবং কুয়েত থেকে। বাকিরা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইতালি, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরেছেন। ব্র্যাকের ২০ জন কর্মী ঢাকা, টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, নরসিংদী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, খুলনা এবং যশোরে থাকা প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জরিপটি পরিচালনা করেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪০ শতাংশ প্রবাসী বলেছেন, করোনার কারণে তাঁরা দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। ৩৫ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা ছুটিতে এসেছিলেন। ১৮ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা পারিবারিক কারণে চলে এসেছেন। ৭ শতাংশ বলেছেন, তাঁদের ফেরার সঙ্গে করোনার কোনো সম্পর্ক নেই।
কোয়ারেন্টিনের বিষয়ে জানতে চাইলে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৪ শতাংশ প্রবাসী বলেছেন, তাঁরা ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। ১৪ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা কোয়ারেন্টিন ঠিকমতো মানতে পারেননি। ২ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা এক সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে ছিলেন।
ফেরত আসার পর বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা এখন প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ভীতির মধ্যে রয়েছেন। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির ১২ জন কাউন্সিলর অবশ্য তাঁদের সবাইকে মনঃসামাজিক সেবা দিয়েছেন।
২৯ শতাংশ অভিবাসী বলেছেন, তাঁদের প্রতিবেশী এবং আত্মীয়স্বজনেরা তাঁদের ফিরে আসাকে স্বাভাবিকভাবে নেননি এবং তাঁদের প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রদর্শন করেননি। তবে ৯৭ শতাংশ বলেছেন, এ ক্ষেত্রে পরিবার সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
জরিপে অংশ নেওয়া অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ জানান, তাঁদের নিজেদের সঞ্চয় বলতে এখন আর কিছু নেই। ১৯ শতাংশ জানান, তাঁদের যে সঞ্চয় আছে, তা দিয়ে আরও এক-দুই মাস চলতে পারবেন। নিজেদের সঞ্চয় দিয়ে তিন মাস বা তার বেশি সময় চলতে পারবেন, এমন সংখ্যা ৩৩ শতাংশ। ১০ শতাংশ জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ইতিমধ্যেই আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উৎস থেকে তাঁরা ঋণ গ্রহণ করেছেন। ১৪ শতাংশ প্রবাসী তাঁদের সঞ্চয়ের ব্যাপারে কোনো প্রকার তথ্য দিতে রাজি হননি।
মোবাইল ফোনে সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে পরিচালিত এই জরিপে দেখা যায়, ফেরত আসা অভিবাসীদের শতকরা ৮৪ ভাগ এখনো জীবিকা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করতে পারেননি। ৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা পুনরায় বিদেশ যাওয়ার কথা ভাবছেন। বাকিরা কৃষিভিত্তিক ছোট ব্যবসা, মুদি দোকান বা অন্য কিছু করার পরিকল্পনা করছেন।
বিদেশফেরত এই অভিবাসীরা কোনো ধরনের সহায়তা পেয়ছেন কি না, জানতে চাইলে ৯১ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা এখনো সরকারি বা বেসরকারি কোনো জায়গা থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। বাকি ৯ শতাংশ সরকারি বা বেসরকারি কোনো না কোনো জায়গা থেকে সামান্য হলেও সহযোগিতা পেয়েছেন।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, বিদেশফেরত প্রবাসীদের বর্তমান অবস্থা, তাঁদের সংকট এবং করোনা তাঁদের জীবন ও জীবিকার ওপর কী কী প্রভাব ফেলেছে, সেটা জানতেই এই জরিপ। এই প্রবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর কাজটি শুধু সরকারের একার নয়। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে কাজটি করতে হবে।
সমস্যা সমাধানে পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি। এগুলো হলো, ফিরে আসা প্রবাসী ও তাঁদের পরিবারের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ না করে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি নিরূপণ করে মনঃসামাজিক সহায়তাসহ টেকসই পুনরেকত্রীকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করতে সহজ শর্তে বিভিন্ন ধরনের ঋণসুবিধা, গন্তব্য দেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জোর করে দেশে ফেরত পাঠানো বন্ধ করা এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাঁরা যেন কাজে ফিরতে পারেন, সেই উদ্যোগ নেওয়া।
দেশে ফিরে কোনো সাহায্য পাননি ৯১ শতাংশ প্রবাসী: ব্র্যাক
Prothom Alo
২২ মে ২০২০