Site icon The Bangladesh Chronicle

বাড়ন্ত ইমেজ বনাম ডুবন্ত মানবতা

(১)
পুলিশের আগুনে পুড়ে মরে গেছে বাবুল মাতব্বর। কিন্তু বেঁচে থেকে ছটফট করছে সারা দেশের মানুষ । বিশ্বজিতের নির্মম হত্যাকান্ডের পর আরেকটি বীভৎস দৃশ্য দেশবাসীকে দেখতে হয়েছে । শতকরা পঁচানব্বই ভাগ দগ্ধ হওয়া এক বনি আদম রাজপথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে – এই নির্মম দৃশ্যটি ইন্টারনেটে দেখে নিজেকে ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে ।
মনে বার বার একই প্রশ্নের উদয় হচ্ছে,, আমরা এ কোন জঙ্গলে বাস করছি ? …
ছাত্রলীগ দিয়ে পুলিশ বাহিনী ভরিয়ে ফেলাকেই এসবের কারণ হিসাবে চিহ্নিত করার সাহস দেখিয়েছেন দেশের বুদ্ধিজীবীদের দুয়েকজন । তাদের মনেও অনেক দেরিতে এই বোধের উদয় হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে ।
যখন কোথাও এধরনের একটা দুর্ঘটনা ঘটে তখন Near Miss হয় কয়েক হাজার , আশংকায় থাকে লাখ থেকে কোটি , আতংকে থাকে সারা দেশ। গত কয় বছরের কাজের ফিরিস্তি দেখলে মনে হবে এগুলি অবিচ্ছিন্ন ঘটনা , একই সূতো দিয়ে গাঁথা। কিন্তু পুলিশের মন্ত্রী বলেছেন , এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা । এতে পুলিশের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয় নি । বরং ইদানীং পুলিশের ইমেজ বেড়েছে !
জানি না , মন্ত্রী সাহেব এই ইমেজ বলতে কী বুঝিয়েছেন ?

(২)
বিশ্বজিত দিন দুপুরে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে অত্যন্ত করুণভাবে খুন হয়েছিলেন। ছাত্রলীগের জন্যে এটা একটা অত্যন্ত মারাত্মক গলদ হিসাবে পরিগণিত হয়েছিল।
হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও বিশ্বজিতের চেহারায় কেমন যেন একটা শিবির শিবির ভাব ছিল । নিরীহ ,শান্ত ও সুবোধ চেহারার বিশ্বজিতকে সহজেই শিবির বলে সন্দেহ করে। চাপাতি দিয়ে শত শত মানুষের চোখের সামনে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। আশেপাশে পুলিশ থাকলেও রয়্যাল আওয়ামী টাইগারদের মুখ থেকে সেই মুহূর্তে এই শিকার ছিনিয়ে নেয়াকে তারা সমীচিন মনে করে নি।

কিন্তু যখন গলদটি স্পষ্ট হয়ে পড়ল তখন মিডিয়া অতি মাত্রায় সজাগ হয়ে পড়ল । যা এর আগে অন্য কারও বেলায় লক্ষ্য করা যায় নি। এই কিছিমের ভুল ছাত্রলীগ এর আগে অনেক করলেও এবারই এদেশের মিডিয়ার ব্যতিক্রমী প্রতিক্রিয়া দেখা গেল। কোন কোন বুদ্ধিজীবী কলাম লিখে জানিয়েছিলেন যে সেই রাতে কীভাবে বিবেকের দংশনে সারা রাত ঘুমাতে পারেন নি।
সঙ্গত কারণেই সরকারের উপর চাপ মারাত্মকভাবে বেড়ে যায় । খুনীদেরকে শিবিরের অনুপ্রবেশকারী বলে চালানো জটিল হলেও তাদের কার ফুপা বা খালুর চাচাতো ভাই জামায়াত বা বিএনপি করেন তাও জানিয়ে দেয়া হলো।

বিশ্বজিত একটি দর্জি দোকানে কাজ করতেন । পুলিশের আগুনে পুড়ে নিহত মিরপুরের বাবুল মাতব্বরও একজন চা দোকানি । বিশ্বজিত উর্দিবিহীন লীগের হাতে নিহত হলে অপরজন নিহত হয়েছেন উর্দিওয়ালা লীগের হাতে । দুজনের জীবন-জীবিকা , সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান , মৃত্যকে ঘিরে সৃষ্ট রাজপথের ট্রাজেডি , স্বজনদের আহাজারি প্রভৃতি অনেক বিষয়ে মিল থাকলেও একটা বিষয়ে অমিল রয়েছে। সেই অমিলটির জন্যেই বাবুল মাতব্বরের করুণ মৃত্যু কোন বুদ্ধিজীবীদের রাতের ঘুম নষ্ট করতে পারে নি ।
বিশ্বজিৎদের জন্যে আহাজারি করলে মানবতাবাদি হিসাবে গণ্য হওয়া যায় । একই জিনিস বাবুল মাতবরদের জন্যে করলে সাম্প্রদায়িক হিসাবে গণ্য হতে হয়। তখন বুদ্ধিজীবী হিসাবে গণ্য হওয়া তো দূরের কথা – সামান্য বিদ্যা বুদ্ধি বা আক্কেল আছে কি না তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দেয় ।

Exit mobile version