এ বাস্তবতায় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বড় অঙ্কের কাটছাঁট আসছে। সরকারের অগ্রাধিকার দেওয়া ফাস্টট্র্যাকভুক্তসহ ১০ বড় প্রকল্পের বরাদ্দও কমানো হচ্ছে। এবারই প্রথম সরকারি উৎসের অর্থ কমানো হচ্ছে । উন্নয়ন সহযোগীদের দেওয়া ঋণের অর্থও কমানো হচ্ছে বড় অঙ্কে। দুই উৎস মিলে কমানো হচ্ছে মোট ১৮ হাজার কোটি টাকা।
এতে সংশোধনের পর এডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ মূল এডিপিতে ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ কমে যাচ্ছে। এ অর্থবছর এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী ১২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দেওয়া হতে পারে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে এডিপিতে সরকারের নিজস্ব উৎসের বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। আরএডিপিতে এ উৎসের বরাদ্দ ৭ হাজার কোটি টাকা কমানো হচ্ছে। এতে সংশোধিত এডিপিতে নিজস্ব উৎসের অর্থের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া ঋণ সহায়তা কমানো হচ্ছে ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অর্থ বরাদ্দ কমানোর ফলে সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। মূল এডিপিতে বৈদেশিক অর্থায়নে বরাদ্দ রয়েছে ৯৪ হাজার কোটি টাকা।
এডিপি বাস্তবায়ন পরিস্থিতি ও কাটছাঁটের এসব প্রস্তাব সম্পর্কে সামগ্রিক মূল্যায়ন জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর সমকালকে বলেন, অর্থ সরবরাহ, বাস্তবায়ন পরিস্থিতি ও রিজার্ভে সংকটের যে বাস্তবতা, তাতে স্থানীয় উৎসের চেয়ে বিদেশি ঋণের ব্যবহার বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, পাইপলাইনে থাকা ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ অব্যবহৃত আছে। এই অর্থের ব্যবহার বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় কমেছে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৭ শতাংশ। তবে গতকাল সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থছাড় বেড়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিবেচনায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেই এবার বরাদ্দ কর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের চাহিদা এবং প্রস্তাব অনুযায়ী বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এডিপি কাটছাঁটের কাজ করছে পরিকল্পনা কমিশন। এ মাসের শেষ নাগাদ আরএডিপি অনুমোদন দেবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। অর্থাৎ আরএডিপি অনুমোদনের পর এ বছরের বাস্তবায়নকাল আর হাতে থাকবে মাত্র চার মাসের মতো। এই চার মাসে বাস্তবায়নে বড় অগ্রগতির সুযোগ নেই। এ কারণে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
আরএডিপি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, মূল এডিপির তুলনায় সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ অনেক কম চেয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। এডিপি ও আরএডিপিতে বরাদ্দ চাহিদার এত বেশি ব্যবধান আগে কখনও দেখা যায়নি। তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে গত সাত মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার অত্যন্ত কম থাকায় এমনটি হয়েছে। সরকারের কৃচ্ছ্রনীতির কারণে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কিছু কেনাকাটা বন্ধ রয়েছে। এসব কারণে এবার এডিপি বাস্তবায়নে গতি অনেক কম। বরাদ্দ কমানো-বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিবেচনা করা হয়েছে।
samakal