এ ঘোষণাকে গুরুত্ব না দেওয়ার কথা বললেও পক্ষ বদলকারী আবু হোসেন বাবলাকে সব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের। জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু রওশনের সম্মেলনকে ‘অন্য দল’ গঠন বলে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, কেউ যদি জাতীয় পার্টি নামে আরেকটা দল করতে চান, করতেই পারেন। বাধা দিতে পারি না। দলের বাইরে কেউ ১০টি কমিটি ঘোষণা করলেও তাতে কিছু যায় আসে না।
যদিও গতকাল গুলশানের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে রওশন দাবি করেছেন, তিনি দল ভাঙছেন না। জাতীয় পার্টি বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। দলকে ফের সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে আগামী ৯ মার্চ জাতীয় সম্মেলন ডেকেছেন।
গত ২৮ জানুয়ারি নিজেকে জাপা চেয়ারম্যান ঘোষণা করে জি এম কাদের এবং মুজিবুল হক চুন্নুকে ‘অব্যাহতি দেন’ রওশন এরশাদ। চুন্নু বারবার বলেছেন, রওশন এরশাদের এসব ঘোষণাকে পাত্তা দিচ্ছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে রওশন বলেন, নেতাকর্মীর দাবির মুখে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছি। কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ দলের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা এবং এরশাদভক্ত সর্বস্তরের অগণিত নেতাকর্মী পাশে দাঁড়িয়েছেন। সবাই মিলে সুন্দর একটি সম্মেলন উপহার দিয়ে জাতীয় পার্টিতে আবার প্রাণশক্তি ফেরাতে চাই।
এরশাদের জীবদ্দশা থেকেই দ্বন্দ্ব চলছে রওশন এরশাদ এবং জি এম কাদেরের। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তা চরমে পৌঁছে। নেতৃত্বের লড়াইয়ে টিকতে না পেরে নির্বাচনে অংশ নেননি গত দুই সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন। তাঁর অনুসারীদের কাউকেই মনোনয়ন দেয়নি জাপা।
জি এম কাদের বিরোধী দলের নেতা হতে পারলেও ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে মাত্র ১১ আসন পেয়েছে জাপা। ভোটের আগে থেকেই লাঙ্গলের প্রার্থীরা অভিযোগ তোলেন, নির্বাচনে অংশ নিয়ে জি এম কাদের সরকারের কাছ থেকে টাকা পেলেও অন্যদের দেননি। তিনি স্ত্রী শেরীফা কাদেরের জন্য আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আসন ছাড় পেতে দলের অন্য নেতাদের বলি দিয়েছেন। জি এম কাদের আওয়ামী লীগকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরাতে রাজি করাতে না পারায় ছাড়ের ২৬ আসনের ১৫টিতে হেরেছেন লাঙ্গলের প্রার্থীরা। ছাড়ের বাইরে যে তিন-চারটি আসনে লাঙ্গলের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন, তারা বারবার চেয়েও জি এম কাদেরের সহায়তা পাননি।
এসব অভিযোগ তোলায় কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদসহ কয়েক জ্যেষ্ঠ নেতাকে অব্যাহতি দেন জি এম কাদের। এর পর জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ অভিযোগ এনে ৬৭১ নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
রওশন বলেন, রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র চর্চার প্রধান ক্ষেত্র সময়মতো সম্মেলন। জাতীয় পার্টির সম্মেলনের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। তাই সফল সম্মেলনে একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেছি।
মহিলা এমপি না পাওয়ার পর পক্ষ বদল
রওশন সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক করেন কাজী ফিরোজকে। সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা কো-আহ্বায়ক, গোলাম সরোয়ার মিলন যুগ্ম আহ্বায়ক, শফিকুল ইসলাম সদস্য সচিব ও জিয়াউল হক মৃধা কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করবেন।
আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আসন ছাড় না পেয়ে ঢাকা-৬ আসনের দু’বারের এমপি ফিরোজ রশীদ এবার নির্বাচনে অংশ নেননি। ঢাকা-৪ আসনের দু’বারের এমপি আবু হোসেন বাবলা হয়েছেন তৃতীয়। আসন ছাড় না পাওয়ায় এ দুই নেতা নীবর থাকলেও ভোটের পর থেকে জি এম কাদেরের সমালোচকদের সমর্থন করছিলেন। বাবলা তাঁর স্ত্রী সালমা হোসেনের জন্য সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। না পেয়ে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে জি এম কাদেরের পক্ষ ছাড়েন। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাপারও সভাপতি ছিলেন। তিনি এবং মহানগর উত্তর জাপার অব্যাহতি পাওয়া সভাপতি শফিকুল ইসলাম জাপার কর্মসূচিতে নেতাকর্মী আনতেন।
পাত্তা দিচ্ছে না জাপা
তবে বাবলার পক্ষ বদলকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না মুজিবুল হক চুন্নু। রওশনের সংবাদ সম্মেলনের পর গতকাল দুপুরে বনানী কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি যেহেতু মূল দলের সঙ্গে থাকতে চান না, অন্য দলের সঙ্গে যেতে চান, তাই পদত্যাগ করলেই ভালো করতেন। যেহেতু অন্য আরেকটি দলে যাওয়ার চেষ্টা করা দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ, তাই তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছেন চেয়ারম্যান।
২০২২ সালে ২৯ ডিসেম্বর জাপার বর্তমান কমিটির মেয়াদ ফুরিয়েছে। কবে সম্মেলন হবে– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, সম্মেলন নিয়ে সাংবাদিকরা এত উতলা কেন? বলেছি তো, সময় হলেই সম্মেলন করব। এ বছরের মধ্যেই করব।
দলের চেয়ে স্ত্রী বড়
জি এম কাদেরের সমালোচনা করে রওশনের সংবাদ সম্মেলনে কাজী ফিরোজ বলেন, শুনেছি ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। আর এবার নির্বাচনে কী দেখলাম? দেশের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে নিজে বড়, আর নিজের চাইতে স্ত্রী বড়। এভাবে কোনো দল চলতে পারে না।
জাপা এমপিদের সমালোচনা করে ফিরোজ রশীদ বলেন, বাজার পরিস্থিতিসহ নানা বিপর্যয় নিয়ে সংসদে যারা আছেন, তারা কথা বলেন না, একতারা বাজিয়ে গান গাইছেন। জাতীয় পার্টির ৯ মার্চের কাউন্সিল অতীতের সব কাউন্সিলের চেয়ে সুসংগঠিত হবে।
রওশন এরশাদের নেতৃত্বে পচা মাংস ফেলে দিয়ে নতুন জাতীয় পার্টি তৈরি হবে বলে দাবি করেছেন আবু হোসেন বাবলা।
সমকাল