Site icon The Bangladesh Chronicle

চট্টগ্রামের বারবার নাম বদলের ইতিহাস

চট্টগ্রামের বারবার নাম বদলের ইতিহাস

কেউ বলে বত্রিশ, কেউ বলে আটচল্লিশবার নাম বদল হয়েছে এ জনপদের। গবেষকরা এসব নাম নানা লিখিত বিবরণে, অঙ্কিত মানচিত্রে, শাসক সুলতান, রাজা, বাদশাদের মুদ্রায় খুঁজে পেয়েছেন।

<div class="paragraphs"><p>চট্টগ্রামের নৌকা, ১৮২৮, আঁকা: থমাস প্রিন্সেপ, ছবি: ব্রিটিশ লাইব্রেরি</p></div>
চট্টগ্রামের নৌকা, ১৮২৮, আঁকা: থমাস প্রিন্সেপ, ছবি: ব্রিটিশ লাইব্রেরি
কুমার প্রীতীশ বল
 
চট্টগ্রামের নৌকা, ১৮২৮, আঁকা: থমাস প্রিন্সেপ, ছবি: ব্রিটিশ লাইব্রেরি কুমার প্রীতীশ বল
 
1 May 2023  bangla.bdnews24.com
গবেষক আবদুল হক চৌধুরীর মতে, ছত্রিশবার নাম বদল হয়েছে চট্টগ্রামের। এর মধ্যে সতেরটি নাম খুঁজে পেয়েছেন তিনি। চৌধূরী শ্রীপূর্ণচন্দ্র দেববর্ম্মা তত্ত্বনিধি তার বইয়ে চট্টগ্রামের বত্রিশ নামের উল্লেখ করেছেন। অন্য গবেষকরা বলেছেন, না, তার চেয়েও বেশিবার নাম বদল হয়েছে চট্টগ্রামের। কারও মতে, এ পর্যন্ত চট্টগ্রামের আটচল্লিশটি নাম পাওয়া গেছে। প্রায় শতাধিক বছর আগে চৌধূরী শ্রীপূর্ণচন্দ্র দেববর্ম্মা তত্ত্বনিধি ‘চট্টগ্রামের ইতিহাস’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে এটি চট্টগ্রামের ইতিহাস বিষয়ক প্রথম বই। এখানে চৌধূরী শ্রীপূর্ণচন্দ্র দেববর্ম্মা তত্ত্বনিধি একটি উত্তর রেখে গেছেন। তিনি লিখেছেন, “প্রকৃতির লীলাভূমি ‘শৈলকিরীটিনী’ ‘সাগরকুন্তলা’ চট্টলভূমি ভারতের সুদূর পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। ইহার নৈসর্গিক সৌন্দর্য এমন মনোহরী যে, বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন ভ্রমণকারী ও ভাবগ্রাহীরা ইহাকে আপনাদের মনঃপুত কত কত বিভিন্ন নামে অভিহিত করিয়াছেন তাহা নির্ণয় করা সুকঠিন।” ঐতিহাসিক যুগে চট্টগ্রাম কোনো একক রাজা বা বাদশার অধীনে ছিল না। চট্টগ্রাম বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন শাসকের অধীনে ছিল। ফলে চট্টগ্রামের কোনো একক ইতিহাস তৈরি হয়নি। দখলদার শাসকদের ইতিহাসে প্রাসঙ্গিকভাবে বর্তমান চট্টগ্রামের অঞ্চলের নাম এসেছে, তাদের ইচ্ছেমতো নামকরণ করেছে। দখলদারদের ইতিহাস থেকে খুঁজে পাওয়া যায় প্রাচীন চট্টগ্রামের হরেক রকম নাম। এ ইতিহাস জটিল, এ ইতিহাস বেদনার। চট্টগ্রাম বারবার হাত বদল হয়েছে। সমাজ-সংস্কৃতিতে দেখা দিয়েছে নানা প্রকারের জটিলতা। কারণ এ জনপদে আছে একটি প্রাচীন সমুদ্র বন্দর। অঢেল অর্থবিত্ত। পাহাড়-সমুদ্রঘেরা এ জনপদের সৌন্দর্য ছিল ঈর্ষণীয়। খ্রিস্টিয় প্রথম শতকে কথা। চট্টগ্রামে একটি আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর ছিল। আরব বণিকেরা এ বন্দরে নোঙ্গর করে সারা বাংলায় বাণিজ্য করত। শুধু আরব বণিকেরা নয়, চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙ্গর করেছে পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ।
চট্টগ্রামের ইতিহাস নিয়ে কিছু বই, সংগ্রহ: লেখক
খ্রিস্টিয় দশম শতকের মাঝামাঝি সময়ের আগ পর্যন্ত এ জনপদের নামের সঙ্গে ‘চট্টগ্রাম’ শব্দটা যুক্ত হয়নি। তখন একে ভিন্ন ভিন্ন নামে অভিহিত করা হতো। লিখিত ইতিহাসে এ জনপদের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় গ্রিক ভূগোলবিদ প্লিনির লিখিত ‘পেরিপ্লাস’ বইয়ে। সেখানে ‘ক্রিস’ নামে একটি স্থানের বর্ণনা আছে। ইতিহাসবিদ নলিনীকান্ত ভট্টশালীর মতে, সেটি বর্তমানের সন্দ্বীপ। ইতিহাসবিদ ল্যাসেনের ধারণা সেখানে উল্লিখিত ‘পেন্টা পোলিশ’ আসলে চট্টগ্রামেরই আদিনাম। আরেকটি মতে, ‘জালন্ধর’ চট্টগ্রামের প্রাচীনতম নাম। খ্রিস্টিয় দশম শতকের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত আজকের চট্টগ্রাম ‘জালন্ধর’ নামেই পরিচিত ছিল। একদা সিন্ধু নামে একটি দেশ ছিল। সে দেশে বালপাদ নামে একজন বৌদ্ধ সিদ্ধপুরুষ বাস করতেন। তার আরেক নাম ছিল জালন্ধরীপা। তিনি এই ‘জালন্ধর’ নামের জনপদটিতে বসবাস করতেন, তাই তার নাম হয় জালন্ধরীপা। জনপদটিতে গরম জল প্রবাহিত হতো বলে এর নাম হয় ‘জালন্ধর’। ‘সামন্দর’ চট্টগ্রামের আরেকটি প্রাচীন নাম। ‘সাম’ মানে আগুন। আরব ভূগোলবিদদের কাছে ‘জালন্ধর’ পরিচিতি পায় ‘সামন্দর’ নামে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, বারককুণ্ড এলাকার কোনো কোনো পাহাড় থেকে এখনও নাকি এ গরম জল প্রবাহিত হয়। ‘সামন্দর’ নামের উল্লেখ গবেষকরা নানা জায়গায় পেয়েছেন বলে দাবি করেন। চট্টগ্রামের হাজার বছরের ইতিহাসের এটি আরেকটি নমুনা। বৌদ্ধদের ধারণা, চট্টগ্রাম নামটা ‘চৈত্যগ্রাম’ শব্দের অপভ্রংশ। ‘চৈত্য’ শব্দের অর্থ বৌদ্ধবিহার বা কেয়াং। কারো কারো ধারণা, বৌদ্ধদের স্বর্ণযুগে শহর ও আশপাশের এলাকাকে আরাকানিরা ‘চিটাগুং’ নামকরণ করেন। পালি গ্রন্থ ও পুরাণে চট্টগ্রামকে ‘চট্টল’ নামে উল্লেখ করা আছে। পাতঞ্জল সূত্রে চট্টগ্রামকে ‘আদর্শ দেশ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে বলে জানা যায়। পৌরাণিক গ্রন্থে এ জনপদকে ‘সূক্ষ দেশ’ নামে ডাকা হয়েছে। এছাড়া চৌধূরী শ্রীপূর্ণচন্দ্র দেববর্ম্মা তত্ত্বনিধি তার বইয়ে আরও কিছু নাম উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে আছে – ক্লীং বা কালেন, রম্যভূমি, চরতল, চিতাগঞ্জ, সহরে সবুজ, খোর্দ্দ-আবাদ ও মগরাজ্য। মহাকবি নবীন চন্দ্র নাম রেখেছেন ‘চট্টল’ ও ‘পার্বতী’। কর্নেল উইলফোর্ডের মতে এ জনপদের নাম ছিল ‘পুষ্পপুর’। আরেকটি পুরাতন বইয়ে চট্টগ্রাম ‘চক্রশালা’ নামে পরিচিত।
কর্ণফুলি নদী, ১৮৩৭, আঁকা: জেইন ব্লাগ্রেইভ, ছবি: ব্রিটিশ লাইব্রেরি
আরাকানের প্রাচীন রাজার কাহিনি রাজোয়ার মতে, ‘চিৎ-তৌৎ-গৌং’ কথাটি কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে ‘চাটিগ্রাম’ রূপ পেয়েছে। গৌড়ের রাজা গনেশ বা দনুজ মর্দন ও রাজা মহেন্দ্র দেবের সময়ে তৈরি মুদ্রার টাকশালে এই ‘চাটিগ্রাম’ নামটি আছে। হোসেন শাহী আমলের কবীন্দ্র পরমেশ্বর রচিত ‘মহাভারত’, শ্রীকর নন্দী রচিত ‘মহাভারত’ এবং চৈতন্য ভাগবত গ্রন্থেও ‘চাটিগ্রাম’ নামের উল্লেখ আছে। এগার শতকের আরব্য ভ্রমণকারী আল ইদ্রিসীর বইতে কর্ণফুলী নদীর নামানুসারে এ জনপদের নাম লেখা আছে ‘কর্ণবুল’। সাধু-সন্ন্যাসীদের মধ্যে এ জনপদ ‘চন্দ্রনাথ’ হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রাচীনকালে ব্রাহ্মণরা কর্ণফুলী নদীকে ‘সীতাগঙ্গা’ নামে ডাকতেন। সে থেকে চট্টগ্রামকে ‘সীতাগঙ্গা’ নামে ডাকা হতো। ইবনে বতুতা তার ভ্রমণ কাহিনিতে এ জনপদের নাম লিখেছেন ‘সোদকাওয়ান’ বা ‘সতের কাউন’। তিনি ১১৭২ সনে এ জনপদ ভ্রমণ করেন। ‘রোসাঙ্গ’ চট্টগ্রামের আরেকটি প্রাচীন নাম। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ-পূর্ব তীর থেকে নাফ নদীর উত্তর তীর ‘রোসাঙ্গ’ নামে পরিচিত ছিল। মধ্যযুগে আরাকানের রাজধানী ছিল ‘ম্রোহাং’। এ জনপদের মানুষ ম্রোহাংকে বিকৃতভাবে উচ্চারণ করে বলত ‘রোহাং। ‘রোহাং-এর লেখ্যরূপ ‘রোসাঙ্গ। চট্টগ্রামের সঙ্গে আরাকানের সম্পর্ক প্রাচীনকাল থেকে। বলা যায়, হাজার বছরের। এ সুযোগে সহজেই সভ্যতা-সংস্কৃতির ক্রমবিকাশে চট্টগ্রামের প্রতিবেশী আরাকান রাজশক্তি চট্টগ্রামে স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। খ্রিস্টিয় চার-পাঁচ শতক পর্যন্ত আরাকান এবং চট্টগ্রাম মিলে একটি অঞ্চল ছিল। আরাকানবাসীরা চট্টগ্রামকে ‘আনক’, ‘আনফ’ বা ‘পশ্চিম দেশ’ নামে ডাকত। অনেকদিন মগ ও ত্রিপুরা রাজার শাসনাধীন থাকার কারণে একে ‘পদ্মাবতী’ নামেও ডাকা হতো। আবার প্রাচীন ঘটককারিকায় কোন কোন স্থানে ‘মগী মুরুঙ্গের দেশ’ ও ‘রোশাং’ বলা আছে। হোসেন শাহের ছেলে নুসরত শাহ ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম জয় করেন। তিনি এর নাম দেন ‘ফদহ-ই-আবাদ’। শায়েস্তা খান ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম অধিকার করেন। তিনি আরঙ্গজেবের ইচ্ছেনুসারে এর নাম রাখেন ‘ইসলামাবাদ’। ষোল শতকে শহর চট্টগ্রাম ‘ফতেয়াবাদ’ নামে পরিচিত ছিল। একথা ‘লায়লি-মজনু’ কাব্যগ্রন্থেও উল্লেখ পাওয়া যায়। নুসরত শাহ চট্টগ্রামের নাম রাখেন ‘ফতেয়াবাদ’। তারপর চট্টগ্রাম কিছু সময় গৌড় শাসক এবং আরাকানের রাজাদের অধীনে ছিল। নানাজনের কাছে হাতবদল হয়ে হয়ে চট্টগ্রাম বিজয় মাণিক্যের হাতে আসে। ১৫৭০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম ছিল রাজা বিজয় মাণিক্যের অধীন। পর্তুগীজ বণিকদের কাছে চট্টগ্রাম ‘পোর্টো গ্রান্ডে’ নামে পরিচিত ছিল। আবার কোন কোন গবেষকের মতে, আরব্য বণিকরা চট্টগ্রামকে ‘শাৎগাঙ’ বা ‘শাৎগাঁও’ নামে ডাকত। আরবি শব্দ ‘শাৎ’ মানে বদ্বীপ।  ‘গাঙ’ অর্থ গঙ্গা নদী। গঙ্গার মুখস্থিত বদ্বীপ অঞ্চল হিসেবে চট্টগ্রামকে আরব্য বণিকরা ‘শাৎগাঙ’ বা ‘শাৎগাঁও’ নামে ডাকত। এর উচ্চারণ বিকৃত হতে হতে ‘চাটগা’ বা ‘চাটিগাঁও’ হয়েছে। অন্য এক গবেষক অনুমান করেন, সংস্কৃত ‘চর্তুগ্রাম’ বা ‘চারিগ্রাম’ থেকে ‘চাটিগাঁও’ নামের উৎপত্তি। ‘চর্তুগ্রাম’ বা ‘চারিগ্রামের’ অর্থ ‘চার গ্রাম’। এর রূপান্তরিত শব্দ ‘চট্টগ্রাম’। আবার শোনা যায় ‘চাটগা’ ‘চাটিগাঁও’ সংস্কৃতায়নের কারণে নাম হয়েছে ‘চট্টগ্রাম’।
চট্টগ্রামের দৃশ্য, ১৮২৫, আঁকা: থমাস প্রিন্সেপ, ছবি: ব্রিটিশ লাইব্রেরি
চট্টগ্রামের হিন্দুদের ধারণা, এখানে কুলীন ব্রাহ্মণদের বসবাস বেশি ছিল। তাদের পদবী চক্রবর্তী, চট্টোপাধ্যায়। তাদের প্রভাবে এ জনপদের নাম ‘চট্ট’ থেকে ‘চট্টল’ বা ‘চট্টলা’ হয়েছে। দেবী পুরাণ চন্ডী, চুরামণি তন্ত্র, বরাহী তন্ত্র, যোগিনী তন্ত্রে ‘চট্টল’ শব্দের উল্লেখ আছে। পাবর্ত্য ত্রিপুরার রাজন্য কাহিনি রাজমাতার লেখকের মতে, প্রাচীনকালে এখানে ‘চট্ট ভট্ট’ নামে একটি কুলীন ব্রাহ্মণ জাতির বসবাস ছিল। ওখান থেকে ‘চট্টল’ নামের উৎপত্তি। অন্যদিকে ইংরেজ ভ্রমণকারী রালফ ফিচ এ জনপদের নাম ‘রামেশ’ লিখেছিলেন। তবে খ্রিস্টিয় সপ্তম শতকে বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউ-য়াং-সাং এ জনপদের নাম ‘শ্রী চট্টল’ বলে বর্ণনা করেন। এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা স্যার উইলিয়াম জোনসের মতে , এ অঞ্চলের সবচেয়ে সুন্দর ক্ষুদে পাখি ‘চটগা’ থেকে ‘চট্টগ্রাম’ নামের উৎপত্তি। দামোদর দেব বংশীরাও চট্টগ্রাম শাসন করেন। তার হাত থেকেই সোনারগাঁয়ের শাসনকর্তা ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ চট্টগ্রাম দখল করেন। তার চট্টগ্রাম বিজয়ের আগে থেকে চট্টগ্রাম ‘চাটিগাঁও’ নামে পরিচিত ছিল। এর সঙ্গে হযরত বদর শাহ (র.)-এর ‘আধ্যাত্মিক’ কাহিনি জড়িত। ইসলাম প্রচারের জন্য বদর শাহ চট্টগ্রাম এসে দৈত্য-দানবের কাছ থেকে এক ‘চাটি’ পরিমান জায়গা এবাদত করার জন্য চেয়ে নেন। চাটি অর্থ প্রদীপ। মাটির প্রদীপ। এ মাটির প্রদীপের আলো যতখানি স্থান আলোকিত করবে ততখানি জায়গা হযরত বদর শাহ (র.) পাবেন। তার চাটির আলো ও আজানের ধ্বনি শুনে এ এলাকা থেকে দৈত্য-দানবরা পালিয়ে যায়। সে ‘চাটি’ শব্দ থেকে ‘চাটিগাঁও’ নামকরণ হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ‘চাটিগাঁও’-এর ফরাসিরূপ ‘চাটগাঁও’। মুসলমান পীর-ফকিররা একে ‘বার আউলিয়ার দেশ’ বলত। গৌড়ের সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ ও জামাল উদ্দিন মোহাম্মদ শাহের মুদ্রায় ‘চাটগাঁও’ টাকশালের নাম পাওয়া যায়। চন্দ্ররাজ শ্রীচন্দ্রের আমলে বৈশালী রাজ ছিলেন চূড়সিংহ চন্দ্র। তিনি ৯৫১ খ্রিস্টাব্দে এ জনপদ জয় করেন। তিনি একটা বিজয়স্তম্ভ নির্মাণ করেন। বিজয়স্তম্ভে চূড়সিংহ চন্দ্র লিখে রাখেন ‘চিৎ-তৎ-গঙ’। ‘চিৎ-তৎ-গঙ’ বাংলা অর্থ হলো ‘যুদ্ধ করা অনুচিত’। এ কথাটি বিকৃত হতে হতে বিজয়স্তম্ভের আশপাশের জনপদের নাম হয় ‘চাটিগাঁও’। এখানেই শেষ নয়, আরও আছে। তুর্কি সুলতান সোলায়মানের রেডফ্লিটের ক্যাপ্টেন সিদি আলী চেহেলভি ১৫৫৪ খ্রিস্টাব্দে জাহাজে ভারত মহাসাগরের আশপাশের দেশগুলো ভ্রমণ করেন। এসময় তিনি আরাকান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসেন। ভ্রমণ কাহিনিতে তিনি চট্টগ্রামের নাম ‘শাতজাম’ লিখেছিলেন। এর আগে পরিব্রাজক রালফ ফিচ ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম পরিভ্রমণ করেন। তার লিখিত ভ্রমণ কাহিনিতে চট্টগ্রামের নাম ‘চার্টিগান’ লেখা আছে। ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে ফ্যান্ডেন ব্রুক অঙ্কিত মানচিত্রে চট্টগ্রামের নাম ‘জেটিগা’ রূপে লেখা আছে। মীর কাশিম আলী খানের কাছ থেকে এই জেলাটি অধিগ্রহণের পর ব্রিটিশরা এর নামকরণ করে ‘চিটাগাং’। ইতিহাসবিদ আবদুল করিম লিখেছেন, এ জনপদের নামকরণ ‘চট্টগ্রাম’ হয় উনিশ শতকে। তথ্যসূত্র ১. আহমদ শরীফ: চট্টগ্রামের ইতিহাস ২. আবদুল হক চৌধুরী: চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতির রূপরেখা ৩. চৌধূরী শ্রীপূর্ণচন্দ্র দেববর্ম্মা তত্ত্বনিধি: চট্টগ্রামের ইতিহাস ৪. হাজার বছরের চট্টগ্রাম, দৈনিক আজাদী, ৩৫ বর্ষপূর্তি বিশেষ সংখ্যা
Exit mobile version