বর্তমান নির্বাচন কমিশনটি অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিল। তাত্ত্বিকভাবে এটি হওয়ার কথা ছিল এযাবৎকালের সর্বোৎকৃষ্ট নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে একদম উল্টো। সার্চ কমিটি কী মহামূল্যবান মুক্তা তাদের সার্চের মাধ্যমে বের করেছেন, এ যাবৎ সংঘটিত প্রতিটি নির্বাচনে জাতি তা প্রত্যক্ষ করেছে। এখন বিদেশ থেকে এই নির্বাচন কমিশনের জন্য ‘এশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বাচন কমিশন’ হিসেবে একখান পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে পারলেই কেল্লা ফতে হয়ে যেত।
নির্বাচন কমিশনসহ বিচার প্রশাসনকে এমনভাবে তছনছ করা হয়েছে যে, এদের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন তো দূরের কথাÑ একটি স্থানীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কমপক্ষে ষাট-সত্তর বছর পেছনে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ভেতর থেকে আমাদের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে পঙ্গু ও বিকলাঙ্গ করে ফেলা হয়েছে যে, নিজের পায়ে নিজেরা দাঁড়াতে পারবÑ সেটা দুরাশায় পরিণত হয়েছে।
এ হতাশার মধ্যে এ দেশের মানুষ কেন যেন একটু আশার ঝিলিক দেখেছিলেন হিলারি ক্লিনটনকে নিয়ে। মানুষ আশা করেছিল, এই ভদ্রমহিলা সাদা বাড়িটিতে পা রাখতে পারলে এ দেশে গণতন্ত্রের চাকাটি আরেকটু ঘুরবে। এ ধরনের একটা আশাবাদ সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। স্বীকার করতে লজ্জা নেই, এ ধরনের একটা ক্ষীণ আশা আমার মধ্যেও ছিল।
খুব কষ্ট পেয়েছি, এটা অনুমান করে অস্ট্রেলিয়া থেকে আমার এক বন্ধু সান্ত্বনা দিয়ে বলে, দোস্ত, চিন্তা করিস না। আমাদের জন্য হিলারি ক্লিনটন আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে আসলেই কোনো পার্থক্য নেই।
ট্রাম্প হলো র-প্রডাক্ট অর্থাৎ ভালোভাবে পলিশ বা ফিনিশিং টাচ দেয়ার আগেই এ মাল বাজারে ছাড়া হয়েছে। আর এ কারণেই বিশ্ববাসীর হজমে কষ্ট হচ্ছে। আর হিলারিরা হলেন আমেরিকান এস্টাবলিশমেন্টের ঝকমকে পলিশড প্রডাক্ট। ট্রাম্প কী করবে, তার সবই উন্মুক্তভাবে বলে দিয়েছেন। হিলারিরা যা করতেন, তার সবটুকু বলতেন না। আমেরিকার এস্টাবলিশমেন্ট কোনো মুসলিম দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র চায় কি না, সেটাই বড় কথা। হিলারি বা ট্রাম্প কী চান- সেটা ধর্তব্য নয়।
মুসলিম বিশ্বে গণতন্ত্র নিয়ে আমেরিকান পলিসি তাদের জন্য বুমেরাং হলে কিংবা এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের তেল ফুরিয়ে গেলে তারা এ অবস্থান থেকে ফিরে আসবেন।
আমেরিকান এস্টাবলিশমেন্টের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা হিলারি বা ট্রাম্পের নেই। কাজেই এই সিদ্ধান্তে আসতে কষ্ট হয় না যে, হিলারি ক্লিনটন আর ডোনাল্ড ট্রাম্প আমাদের গণতন্ত্র ও ভাগ্য নিয়ে বোধ হয় একই ধরনের কাজ করতেন। তবে এটা ঠিক, অন্য কিছু না হলেও ডক্টর ইউনূস আর হিলারি ক্লিনটনকে নিয়ে আশায় আশায় থেকে আমরা অনেক মনকলা খেতে পারতাম। এই কলা খেতে খেতেই হয়তো বা আমাদের দুয়ারে ২০৪১ সাল এসে যেত। ট্রাম্পকে নিয়ে সেই মনকলা খাওয়ায় ছেদ পড়েছে মাত্র। এখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চিন্তা ছাড়া অন্য কোনো গতি নেই। এটা আমাদের জন্য শাপে বর হতে পারে।
এ কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য জাতিকে হতাশ করা নয়, প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে সজাগ করা। সবচেয়ে বড় কথাটি হলো, আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, গণতন্ত্র কোনো গিফট আইটেম নয়। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অন্য জাতিকে এই গণতন্ত্র গিফট হিসেবে দান করতে পারে না। আমাদের দেশে তথাকথিত এক-এগারো এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। গণতন্ত্রকে পাশ্চাত্যের গিফট হিসেবে গ্রহণ করতে গিয়ে সঙ্কটে পড়েছে ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া ও সিরিয়ার জনগণ। এটা গণতন্ত্রের স্বাভাবিক পথ নয়। গণতন্ত্রের এই ডিমান্ড বা শুভবোধ সৃষ্টি হতে হবে একটি জাতির ভেতর থেকেই।
এখন যদি সিরিয়া, ইরাক বা লিবিয়ার কোনো সংবেদনশীল মানুষকে প্রশ্ন করা হয়, তোমাদের দেশটিকে যদি একটা টাইম মেশিনে বসিয়ে ৫০-৬০ বছর আগে ফিরিয়ে নেয়া হয়, তাহলে তোমাদের দেশকে কেমনভাবে সাজাতে? তাদের উত্তর হবে, প্রথম থেকেই সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে সাজাতাম।
লিবিয়া, সিরিয়া কিংবা ইরাকের জনগণকে তাদের কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে যেতে যেখানে একটা কাল্পনিক টাইম মেশিনের আশ্রয় নিতে হচ্ছে, সৌভাগ্যক্রমে আমরা বাস্তবে এখন অনেকটা সেই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছি। প্লিজ ওয়েকআপ, মাই কান্ট্রিমেন। এ সুযোগ দ্রুত হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
উন্নয়নের ভেল্কি দেখিয়ে তৃতীয় বিশ্বের বেশির ভাগ স্বৈরশাসক নামে এই বাজিকরেরা জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে। এ ধরনের উন্নয়ন যদি কিছু হয়েও থাকে, তা কখনোই টেকসই হয় না। সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান ও লিবিয়ার জনগণ আজ তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। আমাদের দেশে যেকোনো ডিক্টেটরিয়াল রুল বা স্বৈরশাসন এদের চেয়েও খারাপ হবে। কারণ এদের দেশে সোনার খনি থাকলেও আমাদের স্বৈরশাসনে জোটে চোরের খনি। গণতন্ত্র বা জবাবদিহিতার অনুভূতি বা তাগিদ না থাকলে কিভাবে সমাজের সব ক্রিমিনাল ও লুটেরারা বিজলির গতিতে ক্ষমতার কাছাকাছি চলে আসে, সে অভিজ্ঞতা আমাদের চেয়ে অন্য কারো বেশি নেই।
এখন আমাদের সম্মুখে দু’টি রাস্তা খোলা রয়েছে। একটি ইউরোপ-আমেরিকার মতো গণতন্ত্রের পথ। অন্যটি ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়ার মতো স্বৈরশাসনের পথ। পথ একই হলে পরিণতি কখনোই ভিন্ন হবে না।
কাজেই আমাদের এখনকার প্রজ্ঞা ও অ্যাকশনের ওপর নির্ভর করবে আমাদের আগত প্রজন্মের ভাগ্য। আমাদের হিংসা, ক্ষোভ, হতাশা, লোভ, ভীতি ও আক্রোশের দায় আমাদের পরবর্তী সব প্রজন্মকে ভোগ করতে হবে। এ দেশের একজন নগণ্য মানুষ হিসেবে সবার প্রতি অনুরোধ- আসুন, আমরা আমাদের দেশ ও জাতিকে সম্ভাব্য ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করি।
আমরা দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান শিবিরের মধ্যকার মতপার্থক্য ও হতাশা গণতন্ত্র কিভাবে শুষে নিচ্ছে এবং আরো নেবে। পরাজিত প্রার্থী হিলারির অনেক ক্ষোভ ও হতাশা থাকলেও কেমন চমৎকারভাবে তা মেনে নিয়েছেন। যেখানে গণতন্ত্র নেই কিংবা গণতন্ত্রকে বিকলাঙ্গ করে রাখা হয়েছে, সেখানকার জনগণের মধ্যে সৃষ্ট এ ধরনের হতাশা ও ক্ষোভ লাঘবের অনিবার্য উপায় হয়ে দাঁড়ায় রক্তাক্ত সংঘর্ষ। যা আমরা দেখছি ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ায়।
আমরা ভালো পথটি বর্জন করে খারাপ রাস্তাটিতে পরবর্তী প্রজন্মকে চড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছি। সিরিয়া বা ইরাকের মতো ভৌগোলিক অবস্থানে আমরা নেই। আমাদের কাছে বা বর্ডারে কোনো মুসলিম দেশ কিংবা ইউরোপের মতো উদারতাবাদী কোনো দেশ নেই। কাজেই আমরা নিজেরাও উপলব্ধি করতে পারছি না, কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে আমরা ধাবিত হচ্ছি।
এ দেশের সবাই লন্ডন, ওয়াশিংটন, ভাংকুভার ও সিডনিতে আশ্রয় নেয়া তো দূরের কথা; পাশের দেশ ইন্ডিয়াতেও সবার আশ্রয় গ্রহণ সম্ভব হবে না। শরণার্থী হিসেবে মিয়ানমারে যাওয়ার কথা কল্পনাতেও আনতে পারব না। স্মার্টবোমা যতই স্মার্ট হোক, তা আওয়ামী লীগ আর জামায়াত-বিএনপির বাড়িঘর কিংবা ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান আলাদা করে চিনতে পারবে না। লেজে আগুন জ্বালিয়ে রেখে পুরো শরীরক নিয়ে যে নিশ্চিন্ততা, তা কিছু দিনের মধ্যেই ভয়াবহরূপে দেখা দিতে পারে। কেউ আমাদের গণতন্ত্রের এই পথ দেখিয়ে দেবে না, বরং নিজেদের স্বার্থে আমাদের বিভ্রান্ত করবে। গণতন্ত্রের মেওয়াটি নাগালের বাইরে রেখে দেবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। অথচ আমাদের গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে তারাই আজ আবির্ভূত হয়েছে।
এমতাবস্থায় ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের রাস্তাই আমাদের একমাত্র রক্ষাকবচ। এটা কোনো বিশেষ দলকে ক্ষমতায় আনা কিংবা কাউকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য নয়। একদিন এ দেশে বিএনপি থাকবে না, আওয়ামী লীগ থাকবে না; কিন্তু জাতি হিসেবে আমাদের টিকে থাকতে হবে। আমাদের অস্তিত্বের স্বার্থেই বিষয়টি নিয়ে আরো সিরিয়াসলি ভাবা দরকার।
যেভাবে হতে পারে এ নির্বাচন
কয়েক মাস আগে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে পর পর পাঁচটি সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তাব করে নয়া দিগন্তে একটি কলাম লিখেছিলাম। লেখাটির প্রতি দেশ-বিদেশের গুণিসমাজের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে বলে অনুমিত হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত পেজটিতেও প্রস্তাবটির সমর্থনে প্রচুর মন্তব্য পড়েছিল। বরাবরের মতোই দু-একজন এর বিরুদ্ধেও যুক্তি দেখিয়েছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন, জাতিসঙ্ঘ এ ধরনের কাজ অতীতে আদৌ করেছে কি না কিংবা এখন করবে কি না। কেউ কেউ বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘের নৈতিক অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। জাতিসঙ্ঘ ও তার বিভিন্ন ভূমিকা নিয়ে আমাদের যতই হতাশা থাকুক না কেন, শেষ কথা হলোÑ আন্তর্জাতিক পরিসরে এ ধরনের মহৎ কাজ করার মতো এখন পর্যন্ত বিশ্ববাসীর এটিই একমাত্র আশা ও ভরসার স্থল। চরম হতাশা থাকার পরও উত্তর কোরিয়া, ইরানের মতো দেশও জাতিসঙ্ঘের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করতে পারেনি বা এখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা ভাবেনি।
জাতিসঙ্ঘ তার শান্তিরক্ষা কর্মসূচির আওতায় এ ধরনের সার্ভিস আরো অনেকবার দিয়েছে। জাতিসঙ্ঘের ওয়েবসাইটে গিয়ে যে কেউ দেখতে পারেন যে, জাতিসঙ্ঘ এ ধরনের সহযোগিতা বেশ কিছু দেশকে দিয়েছে। দক্ষিণ সুদান (২০১১), কম্বোডিয়া, পূর্ব তিমুর প্রভৃতি দেশ জাতিসঙ্ঘের পিস কিপিং ফোর্স থেকে এ ধরনের সাপোর্ট পেয়েছে। যে কেউ নিম্নোক্ত ওয়েবসাইটে গিয়ে তা চেক করে দেখতে পারেন।
http://www.un.org/en/peacekeeping/issues/electoralassistance.shtml
জাতিসঙ্ঘের পিস কিপিং মিশন তিন ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে :
১) কারিগরি সহায়তা বা technical assistance
২) নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বা election monitoring
৩) পুরো নির্বাচন অনুষ্ঠান ও পরিচালনা করা, অর্থাৎ organization and supervision of election
আমাদের জন্য প্রথমটি অর্থাৎ কারিগরি সহায়তাটি বেশি উপযোগী বলে জাতিসঙ্ঘের ওয়েবসাইট থেকে তাদের ঘোষিত কর্মপন্থার হুবহু অনুবাদটি নিচে দেয়া হলো। ১. কারিগরি সহায়তা সদস্য দেশগুলো তাদের জাতীয় কর্তৃপক্ষকে কারিগরি সহায়তা দেয়ার জন্য জাতিসঙ্ঘকে অনুরোধ জানাতে পারে। এ ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘের কর্মপরিধি নিম্নরূপ: ক) ভোটারদের নিরাপত্তা প্রদান : ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তার নিশ্চয়তা প্রদান করবে জাতিসঙ্ঘের পোশাক পরিহিত পুলিশ বা সেনা সদস্যরা। খ) নির্বাচনী আইন প্রণয়ন এবং ভোটগ্রহণের পদ্ধতি সম্পর্কে কারিগরি পরামর্শদান। গ) ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স সরবরাহ ও তাদের নিরাপত্তা প্রদান। ঘ) জনগণকে অবহিত করা ও ভোটাধিকার সম্পর্কে তাদেরকে সজাগ ও শিক্ষিত করে তোলা। তার জন্য মাঠপর্যায়ে রেডিও বা এ ধরনের যন্ত্রপাতির সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
আমাদের সেনাবাহিনী শান্তি রক্ষা বাহিনীতে কাজ করে অনেক সুনাম কুড়িয়েছে। কাজেই নিজের দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তারা আরো বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। অন্যথায় তাদের ভূমিকাও বিশ্ব পরিসরে ধীরে ধীরে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। আমাদের নিজস্ব সেনাবাহিনীকে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে এ কাজে নিয়োজিত করলে পুরো বিষয়টি আমাদের জন্য আরো সহজ হয়ে পড়বে। এটি আমাদের সেনাবাহিনীর মর্যাদা ও দক্ষতা দেশের ভেতরে ও বাইরে আরো অনেকগুণ বাড়িয়ে তুলবে।
একজন কলামিস্ট তার লেখায় দেখিয়েছেন কিভাবে ডিসি এবং ইউএনওর পরিবর্তে সেনাবাহিনীর সমপর্যায়ের অফিসারদের রিটার্নিং এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেয়া যায়। এটি একটি উত্তম প্রস্তাব হতে পারে।
কাজেই এ মুহূর্তে একটি ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের জন্য নিম্নোক্ত তিনটি জিনিস প্রয়োজন।
১) সব দলের সম্মতিতে একটি নিরপেক্ষ, দক্ষ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নির্বাচন কমিশন গঠন করা। ২) জাতিসঙ্ঘের পিস কিপিং ফোর্সের কারিগরি সহায়তা গ্রহণ করা। ৩) জাতিসঙ্ঘের পিস কিপিংয়ের আওতায় আমাদের সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা।
এটি শুধু একবারের জন্য নয়, সামনের পাঁচটি সাধারণ নির্বাচন এ পদ্ধতির আওতায় হলে জাতি এক মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে। এর মাধ্যমে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতাও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। বর্তমান সরকার যে বাঘের পিঠে চড়ে বসেছে, সেখান থেকে নিরাপদে নামতে হলে এর চেয়ে ভালো কোনো পদ্ধতি আমার মাথায় আসছে না।
পশ্চিমা জগৎ মুসলমানদের সাব-হিউম্যান লেভেলের প্রাণী বলে জ্ঞান করে। আমরাও আচরণ ও কর্মপন্থার মাধ্যমে এর চেয়ে ভিন্ন কিছু দেখাতে পারিনি।
আমরা নিজেরা হাঁটতে সক্ষম হলে হাঁটার এই সাপোর্টিং টুলটির প্রয়োজন পড়ত না। স্বামী-স্ত্রী নিজেদের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে পারলে তৃতীয় পক্ষের সহায়তার প্রয়োজন পড়ে না। আর যারা সমস্যা রেখেও তৃতীয় কারো সাহায্য নেয় না বা নিতে পারে না, তারা নিজেদের বিপর্যয় এড়াতে পারে না।
আমরা যে মানসিক পর্যায়ে আছি, তাতে আমাদের মগজের কোষগুলো এখন doing nothing পর্যায়ে রয়েছে। এই doing nothing আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর পরিণতি টেনে আনতে পারে।
কাজেই জাতিকে সম্ভাব্য বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে বিবেকবান ও প্রজ্ঞাশীল অংশের এগিয়ে আসা উচিত। সব বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী, শিক্ষক এবং সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের সব কর্মকর্তাকে বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার আপনার নীরবতা বা কোনো শঙ্কা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরো অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
minarrashid@yahoo.com