Site icon The Bangladesh Chronicle

বিএনপি যেটাই করে সেটাই ভুল

ইদানীং কিছু বিএনপি নেতা ( প্রাক্তন কিংবা বর্তমান ) এবং বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবীকূল আবেগ নিয়ন্ত্রণে এক ধরনের জিরো টলারেন্সে চলে গেছেন বলে মনে হচ্ছে । এরা বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বিএনপিকে বিজলীর গতিতে মকসুদে মকসিলে পৌঁছে দিতে চাচ্ছেন । এরা সবকিছু নিজেদের প্রজ্ঞা ও উপলব্ধিতে টেনে এটা করছেন , নাকি অন্য কেউ এটা করাচ্ছে – তা মালুম হচ্ছে না । বিএনপি যেটা করে সেটাতেই তারা মারাত্মক গলদ বা ভুল দেখেন । আওয়ামী প্রভাবিত মিডিয়া যা বলাতে চায় , ( আওয়ামী কন্ঠ থেকে জাতীয়তাবাদী কন্ঠে ট্রান্সলেট করে ) এরা তাই বলে যাচ্ছেন ।

সরকারের চরম ফ্যাসিবাদি আচরণই যেখানে সকল সমস্যার মূলে রয়েছে , সেখানে এই বিজ্ঞ পন্ডিতেরা বিএনপি নেতৃত্বের দুর্বলতা অথবা কোন রাজনৈতিক পার্টনারের সাথে জোটকেই বড় কারণ বলে তুলে ধরেন । মূলত: সরকারের মনের কথা বা বক্তব্যটিই এরা বিএনপির সুহৃদ সেজে উচ্চারণ করে যাচ্ছেন ।

এক এগারোর জরুরী সরকারের আমলে আওয়ামীলীগের মত দলের কোন কর্মীকে রাস্তায় দেখা যায় নি । তখন আওয়ামীলীগের যে কয়জন নেত্রী সাহস করে সাব জেলের সম্মুখে টিফিন ক্যারিয়ার হাতে দাঁড়িয়ে থাকতেন, পরবর্তিতে তাদেরই কপাল খুলে গেছে । সেই সময় সকল বুদ্ধিজীবীমহল জরুরী সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের নিন্দা করেছে , আওয়ামীলীগের এই ধরণের অক্ষমতা নিয়ে তিরস্কার করে নি ।

জরুরী সরকারের চেয়েও এই সরকার হাজার গুণ বেশি ফ্যাসিবাদী ও বিরোধী দলের প্রতি নির্মম । রাস্তায় নামলে শুধু ব্ল্যাংক ফায়ার নয় -সরাসরি বুকের মধ্যে গুলি করেছে । বিএনপিকে তো দূরের কথা , রামপাল ইস্যু নিয়ে আনু মুহাম্মদের নিরামিষ কর্মীদেরকেও রাস্তায় নামতে দেয় না । সরকারের এই ধরনের দমন নীতিকে আড়াল করে রেখে যারা বিএনপি বা বিরোধীদের হেডমের অভাব বা জামায়াত সম্পৃক্ততাকে বর্তমান সংকটের বড় কারণ হিসাবে তুলে ধরতে চান , তাদের মতলব নিয়েও প্রশ্ন ওঠতেই পারে । এমতাবস্থায় জামায়াতের কারণে যারা বিএনপির সঙ্গী হতে পারছেন না বলে যুক্তি দেখাচ্ছেন , এরা সবাই বোধহয় একই ইশারায় কাজ করছেন । ১৯৯৬ সালে জামায়াত যখন আওয়ামীলীগের সঙ্গে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে , তখন জামায়াতের প্রতি চরম এলার্জিক এই গুণীগণ কিন্তু বিএনপির পক্ষে দাঁড়ান নি । তারা কিন্তু তখন শারীরিক অথবা মানসিকভাবে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের পক্ষেই ছিলেন ।

আওয়ামী লীগ এদেশে শুধু সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দলই নয় – রাজনৈতিক খেলা বা চালবাজিতেও তারা সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন । মিডিয়া সহ সকল প্রপান্ডা মেশিন ও লজিস্টিক তাদের পুরো কব্জায় রয়েছে । প্রতিপক্ষের সাথে আওয়ামীলীগের প্রতিটা এনকাউন্টারে থাকে ভিলেজ পলিটিক্সের সেই ‘ আই ডোন্ট নো গল্পের’ চালবাজি বা ভেলকি । সকল বিরোধী শক্তিকে নিস্তেজ করে যাচ্ছেতাইভাবে দেশ শাসনের নমুনা দেখে মরহুম বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলে গেছেন , দেশটি বাজিকরদের হাতে পড়ে গেছে । তার এই কথাটি দেশবাসী হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ।

বেগম খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনার টেলিফোন , কোকোর মৃত্যুর সময়ে শেখ হাসিনার সমবেদনা জানাতে যাওয়া এবং সর্বশেষ আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অধিবেশনে বিএনপির টপ নেতৃত্বকে ঢাকঢোল পিটিয়ে দাওয়াত দেয়া -সবকিছুই যেন সেই একই ফর্মুলায় গ্রন্থিত । সবখানেই সেই আই ডোন্ট নো গল্পের ফাঁদ । এর প্রতি উত্তর বিএনপি নেতৃত্ব যেভাবেই বলুক বা বোঝাক – ‘ আমি জানি না ‘ বলতেই সমস্ত সরঞ্জাম নিয়ে ঝাপিয়ে পড়া হবে । আওয়ামি এই মেকানিজমটি বুঝে বা না বুঝে অনেক বিএনপি সমর্থক সেই কোরাসে যোগ দেয় ।

এই বিষয়গুলি সাধারণ জনগণের বোধগম্য ভাষায় ট্রান্সলেট করতে পারেন দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী ঘরানার ইন্টেলেকচুয়ালগণ । কিন্তু পরম দু:খের সঙ্গে দেখতে হয় যে এই বাঘা বাঘা ইন্টেলেকচুয়ালদের কেউ কেউ নিজেরাই এই ফাঁদে আটকা পড়ে গেছেন ।

আওয়ামী লীগ নামক দলটি দেশ থেকে গণতন্ত্রকে পুরাপুরি নির্বাসিত করে দিয়েছে । বাক স্বাধীনতা ও আইনের শাসন আজ পুরাপুরি ধূলায় ভুলন্ঠিত । রেহমান সোবহানের মত আওয়ামী ভাবধারার ইন্টেলেকচুয়াল জানিয়েছেন , আয়ূব -ইয়াহিয়ার সময় যতটুকু ভয়হীন চিত্তে লিখতে পারতেন, আজ তা পারেন না । শত শত বিরোধী দলের নেতা কর্মীকে খুন , গুম করা হয়েছে । হাজার হাজার বিধবা এবং ইয়াতিমের কান্না বাংলার আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে । খুনের চেয়েও ভয়াবহ হলো গুম – যেখানে আত্মীয় স্বজন প্রিয় জনের লাশটিও পায় না । এখনও বিএনপি জামায়াতের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে দৌড়ের উপর রাখা হয়েছে । যে কেউ যে কোন ক্ষণে গুম হয়ে যেতে পারেন , ক্রস ফায়ারে পড়তে পারেন । অনেক নেতাকর্মী এলাকায় টিকতে না পেরে ঢাকায় এসে রিক্সা টানছেন । একেক নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে বিশ -ত্রিশ চল্লিশটি করে মামলা দেয়া হয়েছে । এই যখন প্রকৃত অবস্থা তখন ঢাকঢোল পিটিয়ে বিএনপি নেতৃত্বকে আওয়ামীলীগের জাতীয় সম্মেলনে দাওয়াত দিয়ে জাতিকে যেন ধন্য করে ফেলেছে । এখন বিএনপি নেতৃত্বের উচিত ছিল অতীত ও বর্তমানের সকল কষ্ট ও যন্ত্রণা ভুলে গিয়ে বাকশালের আলো ঝলমলে বাসর ঘরে উপস্থিত হওয়া । সেটা না করাতে অনেক বিএনপি প্রেমিক ফেইস বুকে নিজের মাথার চুল ছিড়ছেন ।

এমন একটা চমৎকার সুযোগ হেলায় হারিয়েছেন বিএনপি নেত্রী । এটা নিয়ে কেউ কেউ ফেইস বুকে রীতিমত মাতম শুরু করে দিয়েছেন । ম্যাডাম জিয়ার ভুলের খাতায় যেন আরেকটি আইটেম যোগ হয়ে গেলো ।

যারা এই মাতমটি শুরু করছেন এবং যারা প্রতি পদে পদে বিএনপির গলদ দেখছেন – আমাদের সুশীল মিডিয়ার চোখে তারা হলেন উদার পন্থী বিএনপি । আর যাদের অবস্থান এর বিপরীতে তারা হলেন কট্টরপন্থী । এই উদারপন্থীরা স্বপ্ন দেখছেন বাকশালের হাতে পায়ে ঠিকভাবে ধরতে পারলেই বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া হবে । অন্ততপক্ষে কিছু আসন দিয়ে সসম্মানে সংসদে বসিয়ে দেয়া হবে ।

রাজনীতির এই ভিক্ষুকেরা এখন আর ভিক্ষা চান না , কুত্তাটা সামলালেই যেন খুশী ।

Exit mobile version