Minar Rashid
ইন্ডিয়ার অভিনেতা ,গায়ক,শিল্পী ,শিক্ষাবিদ যারা হিন্দু উগ্রবাদীদের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন তাদেরকে লাথি দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন পশ্চিম বঙ্গের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ । তিনি আরো জানিয়েছেন , পাকিস্তানকে যে পদ্ধতিতে ঠান্ডা করা হয়েছে ,বাংলাদেশকেও একই পদ্ধতিতেই ঠান্ডা করা হবে ।
অন্যদিকে বিজেপির কেন্দ্রীয় মহাসচিব রাম মাধব এদেশে এসে হাসিনা সরকারের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেছেন ।
২৫ শে ডিসেম্বর ২০১৫ তে এই রাম মাধব বলেছিলেন , “বাংলাদেশ-ভারত ও পাকিস্তান একটি অখন্ড রাষ্ট্র হবে । ‘ আর ৪ঠা মার্চ ২০১৬ তে এসে সেই রাম মাধব জানাচ্ছেন , বাংলাদেশে গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে মোদির সরকার শেখ হাসিনার পাশে থাকবে ।
তাহলে কি শেখ হাসিনার গণতন্ত্র এবং রাম মাধবের অখন্ড ভারতের স্বপ্ন এক লাইনে এসে দাঁড়িয়েছে ?
সেই মিটিংএ রাম মাধবের পাশের সিটে একদিকে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং অন্যদিকে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরুদ্দীন ইউসুফ বসেছেন । দেখুন কত বৈপরীত্য ! ইন্ডিয়ার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা যে উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা তাদেরকে কেমন করে কোলে তুলে নিচ্ছে । অথচ এই নাসিরুদ্দীন ইউসুফরা কিছুদিন আগেও শ্লোগান দিয়েছে ,বিজেপি -জামায়াত ভাই ভাই ।
মহিলা সমিতি মঞ্চে নাটক দেখতে গিয়ে এই ধরনের অনেক শ্লোগান শুনেছি । এরা কি তাহলে উদার সংস্কৃতি ও ধর্ম নিরপেক্ষতা চর্চ্চার আড়ালে উগ্র হিন্দত্ববাদ প্রসারের লক্ষ্যে এতদিন কাজ করে গেছে ?
যে দেশে ভাসানীর মত সিংহের জন্ম হয়েছে সেই দেশটিতে ইঁদুরের বাচ্চা দিয়ে ভরে ফেলেছে এই নাসিরুদ্দীন ইউসুফরা । এরা পুরাপুরি ইঁদুরের মত নহে । শরীরের এক অংশ ইঁদুরের , অন্য অংশ সিংহের । দিলীপ ঘোষদের হুংকার শুনে এরা ইঁদুর হয়ে পড়ে । আবার পাকিস্তানের বাতাস কয়েক মাইল উপর দিয়ে গেলেও এরা সিংহের মত গর্জন দিয়ে বসে । হায় সেলুকাস ! কি বিচিত্র এই ইদুরাসিংহ প্রাণী সকল ।
ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন দুটি দেশ নিয়ে কখনই একটি রাষ্ট্র হতে পারে না । রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই চিরন্তন বিধিকে উপেক্ষা করে পাকিস্তান নামক একটি অদ্ভুত রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল । যে অদ্ভুত রাষ্ট্রটি টিকতে পারে নি , সেটাকে আবার জোড়া লাগানোর চিন্তা হাস্যকর । ধর্মই যদি রাষ্ট্র গঠনের একমাত্র উপাদান হতো তবে সমগ্র বিশ্বে মাত্র কয়েকটি রাষ্ট্র থাকতো ।
কাজেই কোন পাগলেও বিশ্বাস করবে না যে এই দেশটি আবার পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত হতে পারে । বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের কোন দল বা ব্যক্তি এই ধরনের খোয়াবের কথা কখনই বলে নি ।
অথচ ভারত মাতার সাথে বিলিন হওয়ার স্বপ্ন নিত্যদিন শোনা যাচ্ছে । বিজেপির দিলীপ ঘোষরা ডান্ডা দিয়ে ঠান্ডা করার কথা বলেন । আবার একই কথা পশ্চিম বঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং চিত্রনায়ক দেবরা বলেন একটু অন্য ভাবে । তারা বাঙালীত্বের আবেগে ডুবিয়ে দুই বাংলার মধ্যে পাসপোর্ট তুলে দিতে চান । এই আবেগী বাঙ্গালীরা দুই বাংলার মধ্যকার সীমানাটি তুলে দিতে চান তবে আমাদের এই প্রিয় দাদারা দিল্লিকে ছাড়তে চান না ।
রাম মাদবরা এদেশে যে কিছিমের গণতন্ত্র বা সংসদকে রক্ষা করে চলছেন , সেই সংসদে তিনশ জন সাংসদ পেতে হয়তোবা আর খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না যারা লেন্দুপ দর্জির মত আইন করে ভারত মাতার সাথে সংযুক্ত হয়ে পড়বেন ।
উপরে উদ্ধৃত রাম মাদবের দুটি কথার সমীকরণ টানলে এটিই স্পষ্ট হয়ে পড়ে ।
বাস্তব ভয় বা থ্রেটকে ভুলিয়ে দিতে এরা সারাক্ষণ কাল্পনিক জুজুর ভয় দেখায় । এদের বিরুদ্ধে যারাই কথা বলবেন তারাই পাকিস্তানের সমর্থক হিসাবে গণ্য হয়ে পড়বেন ।
আমাদেরকে এরা ভালো জায়গাতেই আটকে ফেলেছে ।স্বাধীনতার আবেগ দিয়েই এরা আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে জনমের তরে জব্দ করে ফেলেছে । জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং রাম মাদবরা আমাদেরকে পেয়েছে একটা চূড়ান্ত আহাম্মক জাতি হিসাবে ।
এই সব দেখে অশান্ত মন খুজে শুধু একজন ভাসানীকে । শুনতে চায় তার সেই ‘ খামোশ’ হুংকারটি ।