Site icon The Bangladesh Chronicle

পদ্মা সেতু নিয়ে ইউনূসকে জড়িয়ে অভিযোগ মিথ্যা’

পদ্মা সেতু নিয়ে ইউনূসকে জড়িয়ে অভিযোগ মিথ্যা’

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২৩:১৩ | প্রকাশিত : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২৩:০৫

 

পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জড়িয়ে সরকারি দলের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন দাবি করেছে ইউনূস সেন্টার। কর ফাঁকির জন্য ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে জরিমানা ধার্য করা এবং বিদেশে অর্থ পাঠানোসংক্রান্ত খবরেরও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ইউনূস সেন্টার থেকে পাঠানো প্রতিবাদে বলা হয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবরই দেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পের একজন সমর্থক এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কোনো প্রশ্নই আসে না।

গত মঙ্গলবার একনেকের বৈঠকে পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন না করার জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনূসকে দায়ী করেন  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একনেকের বৈঠকে ইঙ্গিতে ইউনূসকে দায়ী করলেও প্রধানমন্ত্রী সরাসরি তার নাম বলেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন ব্যক্তির স্বার্থের কারণে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। পদ্মাসেতুর কাজের গতি কমেছে।’

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনুসকে দায়ী করেছেন। ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাও পদ্মা সেতু নিয়ে ইউনূসকে জড়িয়ে বিভিন্ন বক্তব্য-বিবৃতি দেন।

ইউনূস সেন্টারের প্রতিবাদে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, কয়েকজন মন্ত্রী ও কয়েকজন সাংসদসহ দেশের শীর্ষ আইনপ্রণেতারা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে, সংসদে দাঁড়িয়ে, সংবাদ সম্মেলন করে এবং বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী বৈঠকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ সৃষ্টির নেপথ্যে নোবেল লরিয়েট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কঠোরভাবে অভিযুক্ত করে কটু ভাষায় বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে আসছেন। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির সম্ভাবনা বিষয়ে প্রকাশ্যে বা ব্যক্তিগতভাবে কখনো কারও কাছে কোনো বিবৃতি দেননি। প্রতিবাদপত্রে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।

ইউনূস সেন্টারের প্রতিবাদে বলা হয়, অধ্যাপক ড. ইউনূস ২০১১ সাল থেকে বহুবার এই মর্মে বলে এসেছেন যে তিনি বরাবরই বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন পদ্মা সেতু প্রকল্পের একজন সমর্থক এবং এই স্বপ্নের বাস্তবায়নে তাঁর বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এ বিষয়ে তাঁকে অভিযুক্ত করার পর ২৮ জানুয়ারিসহ বহুবার তিনি এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেছেন। আমরা আবারও এর পুনরাবৃত্তি করছি।

ইউনূস সেন্টারের প্রতিবাদে বলা হয়, পদ্মা সেতুসংক্রান্ত অভিযোগ ছাড়াও কয়েকটি পত্রিকা সূত্র উল্লেখ না করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অধ্যাপক ড. ইউনূসের ওপর ৬৯ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করেছে। এ তথ্যটিও সত্য নয়। অধ্যাপক ড. ইউনূসের কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কোনো অনাদায়ি অর্থের দাবি নেই। আমরা বিভিন্ন সময়ে এ মর্মে জানিয়েছি যে অধ্যাপক ড. ইউনূস তাঁর সব কর পুরোপুরি ও সময়মতো পরিশোধ করে থাকেন। তাঁর আয় ও করসংক্রান্ত সব তথ্য এনবিআরের কাছে আছে। তিনি তাঁর আইনগত অধিকারবলে সাম্প্রতিক কিছু কর দাবি সম্পর্কে, যা তাঁর নিকট অন্যায্য মনে হয়েছে, আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। বিষয়টি এখনো আদালতে বিচারাধীন এবং এ বিষয়ে আদালতের যেকোনো সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নেবেন।

প্রতিবাদে বলা হয়েছে, আকস্মিকভাবে এবার আরেকটি অভিযোগ তোলা হয়েছে, গ্রামীণ ট্রাস্টের বিদেশে অর্থ প্রেরণ নিয়ে। গ্রামীণ ট্রাস্ট অন্যান্য দেশে ক্ষুদ্রঋণ পদ্ধতি রেপ্লিকেশনে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামীণ ট্রাস্ট ১৯৯৬-৯৭ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইউএসএআইডি, নেদারল্যান্ডসসহ কয়েকটি সাহায্য সংস্থা থেকে দাতা সাহায্য (ডোনার ফান্ড) ৪৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা সমপরিমাণ অর্থ ৩৮টি দেশে বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পে সহায়তার জন্য পাঠিয়েছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এই স্থানান্তরের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনসংক্রান্ত কোনো তথ্য আয়কর ফাইলে নেই। এতে এ ধারণার সৃষ্টি হতে পারে যে গ্রামীণ ট্রাস্ট বাংলাদেশকে দেওয়া সহায়তার অর্থ বিদেশে স্থানান্তর করছে। বিষয়টি তা নয়। দাতারা গ্রামীণ ট্রাস্টকে এই অর্থ শুধু ওই সব দেশে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই পাঠিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ওই দেশগুলোর ওই সব প্রকল্পে অর্থ প্রেরণের সব আইনগত অনুমোদন গ্রহণ করা হয়েছে। এসব লেনদেনসংক্রান্ত সব দলিল গ্রামীণ ট্রাস্টে সংরক্ষিত আছে এবং বহির্নিরীক্ষণ বার্ষিক ভিত্তিতে এগুলো নিরীক্ষণও করেছে। গ্রামীণ ট্রাস্টের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য সব সময় দেওয়া হয়েছে এবং এসব প্রতিবেদন গ্রামীণ ট্রাস্টের কর বিবরণীর (ট্যাক্স রিটার্ন) সঙ্গে নিয়মিতভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে জমা দেওয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৬ফেব্রুয়ারি/জেডএ)

Exit mobile version