Site icon The Bangladesh Chronicle

৮ গোপন বন্দিশালার সন্ধান, তুলে আনা ব্যক্তিদের রাখা হতো সাধারণ বন্দীদের সঙ্গেও

বন্দিশালা

গুমের শিকার ব্যক্তিদের আটকে রাখা হতো, এমন আটটির বেশি গোপন বন্দিশালা শনাক্ত করেছে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। তাদের ভাষ্যমতে, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), র‌্যাব ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের মতো সংস্থাগুলো এসব গোপন বন্দিশালা পরিচালনা করত। দেশজুড়ে এসব গোপন বন্দিশালায় গুমের শিকার ব্যক্তিদের আটকে রাখা হতো। এর পাশাপাশি গুমের শিকার ব্যক্তিদের কাউকে কাউকে সাধারণ বন্দীদের সঙ্গেও রাখা হতো।

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। কমিশন গত শনিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গুমের ঘটনায় কমিশনে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬৭৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৭৫৮টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে গুমের শিকার ব্যক্তিদের কীভাবে দিনের পর দিন সবার চোখের আড়ালে বন্দী করে রাখা হতো, তা উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, গুমের শিকার ব্যক্তিদের বিভিন্ন মেয়াদে বন্দী করে রাখা হতো। তাদের ৪৮–৬০ ঘণ্টা থেকে কয়েক সপ্তাহ, কয়েক মাস, এমনকি কয়েকজনকে আট বছর পর্যন্ত বন্দী করে রাখা হয়।

সাধারণ একটি ধারণা রয়েছে যে গুমের শিকার ব্যক্তিদের শুধু গোপন বন্দিশালায়ই আটকে রাখা হতো। তবে গুম হওয়ার পর জীবিত ফিরে আসতে পারা ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকারে বেরিয়ে এসেছে যে অনেককে এমন সব বন্দিশালায় রাখা হয়েছিল, যেখানে সাধারণ বন্দীদেরও রাখা হতো। এর উদাহরণ হিসেবে ডিবির হাতে বন্দী ব্যক্তিদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এভাবে বৈধ ও অবৈধ বন্দীদের একই বন্দিশালায় রাখার কারণে গুমের শিকার ব্যক্তিরা বন্দিদশায় কী জটিল অবস্থার মধ্যে থেকেছেন, তা ধারণা করা যায়।

একই চত্বরের ভেতর বন্দীদের অবৈধ কক্ষ থেকে বৈধ বন্দীদের কক্ষে সরিয়ে নেওয়ার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। গুম কমিশন বলছে, খুব সম্ভবত গুমের শিকার ব্যক্তিদের বৈধ বন্দীদের সঙ্গে রাখার মাধ্যমে তাঁদের অবৈধভাবে আটক রাখার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হতো।

বেঁচে ফেরা গুমের শিকার ব্যক্তিদের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নেওয়ার মাধ্যমে কমিশন তাঁদের কোথায় কোথায় বন্দী রাখা হতো, তার একটি মানচিত্র অনুমান করতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিবেদনে এর একটি উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ‘যেমন গুমের শিকার এক ব্যক্তি একটি বন্দিশালায় একটি অন্য ধরনের দরজা থাকার কথা বলেছেন। এর ফলে আমরা একটি কক্ষ শনাক্ত করতে পেরেছি, যেটি একসময় তিনটি আলাদা কক্ষে ভাগ করা ছিল। যদিও আমাদের সেখানে পরিদর্শনের আগে ওই পার্টিশন ভেঙে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগীর সাক্ষ্য নিশ্চিত করতে সেখান থেকে আরও একটি প্রমাণ আমরা তালিকাভুক্ত করেছি।’

এ ছাড়া বেঁচে ফেরা ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার থেকে কমিশন একই বন্দিশালার ওই সব এলাকা চিহ্নিত করতে পেরেছে যেখানে গুমের শিকার ব্যক্তিদের সঙ্গে সাধারণ বন্দীদেরও রাখা হতো। একই বন্দিশালায় এভাবে অবৈধ ও বৈধ বন্দীদের পালা করে রাখার বিষয়টি কমিশন গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটা ইচ্ছাকৃতভাবে অবৈধভাবে আটক ব্যক্তিদের আড়াল করার প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয় এবং এ বিষয়ে পরবর্তীকালে আরও তদন্তের প্রয়োজন।

বন্দীদের যেসব কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো, যেখানে তাদের আটকে রাখা হতো এবং যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হতো, কমিশনের কর্মকর্তারা সেসব জায়গা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তাদের লক্ষ্য ছিল, ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করা। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।

‘আমরা যখন পরিদর্শনে যাই, কয়েকটি বন্দিশালা আগের মতোই দেখতে পাই। তবে কয়েকটি আমাদের যাওয়ার আগেই ভেঙে ফেলা হয়। আমাদের তদন্ত শক্তিশালী করার স্বার্থে, এসব বন্দিশালার বিস্তারিত আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে,’ বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

গোপন বন্দিশালা দেখতে তদন্ত কমিশন যেসব দপ্তরে গিয়েছে সেগুলো হলো, ডিজিএফআই, সিটিটিসি, ডিএমপির ডিবির প্রধান কার্যালয়, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ডিবি, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ইউনিট ২, ৪, ৭ ও ১১, র‍্যাব ২, সিপিসি ৩, র‍্যাবের সদর দপ্তর, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার এবং এনএসআইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়।

Prothom alo

Exit mobile version