Site icon The Bangladesh Chronicle

৩৬০০ বর্গফুটের আলিশান বাসায় থাকেন ইফাত

নাইম হাসান

২২ জুন ২০২৪, শনিবার

ধানমণ্ডির ৮ নম্বর রোডের ৪১/২ নম্বর বাসা। ইম্পেরিয়াল সুলতানা ভবন। আলিশান এই ভবনের ৬ তলায় থাকেন মুশফিকুর রহমান ইফাত। এই ফ্লোরে ১৮০০ স্কয়ার ফিটের পাশাপাশি দু’টি ফ্ল্যাট এক করে সাজানো হয়েছে দামি উপকরণে। ফ্ল্যাট দু’টি ইফাতের মা শাম্মী আখতারের নামে কেনা। সেখানে শাম্মীর মা-ভাইও মাঝে মধ্যে থাকতেন। শাম্মী আক্তার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তা ড. মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী। মতিউর রহমান মাঝে মধ্যে ওই ভবনে যেতেন। ঈদুল আজহায় আলোচিত সাদেক এগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কিনে আলোচনায় আসা ইফাতকে নিজের সন্তান হিসেবে প্রথমে অস্বীকার করেছিলেন ড. মতিউর রহমান। পরে অবশ্য ইফাতের মায়ের পক্ষের আত্মীয়রা নিশ্চিত করেন ইফাত মতিউর রহমানের ছেলে।

তার মোবাইলের সিমটিও মতিউর রহমানের নামে নিবন্ধিত। 

এ ছাড়া ইফাত এবং তার মায়ের নিজস্ব কোনো আয়ের উৎস নেই। রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের উপরই তারা নির্ভরশীল। ফ্ল্যাট কিনে দেয়া, তাদের বিলাসী জীবনযাপনের খরচ জোগান মতিউর রহমান। গতকাল সরজমিন ঘুরে এবং ধানমণ্ডির ওই ভবনের বাসিন্দা ও কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে নানা তথ্য পাওয়া যায়। তারা জানিয়েছেন, গত ঈদে ইফাত ওই বাসার নিচে সাতটি গরু ও চারটি ছাগল কোরবানি দিয়েছেন। ১৫ লাখ টাকার ছাগল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়ায় ঈদের পরই ইফাত এবং তার পরিবারের সদস্যরা ওই বাসা ছেড়ে চলে যান। ১৯ বছর বয়সী ইফাত রাজধানীর একটি কলেজের শিক্ষার্থী।

২০১৪ সালে গোলাম মোরশেদ চৌধুরীর কাছ থেকে শাম্মী আক্তারের নামে কেনা হয় ধানমণ্ডির ওই দু’টি ফ্ল্যাট। এরপর অনেকদিন ধরে দামি উপকরণ দিয়ে সাজানো হয় ফ্ল্যাট দু’টিকে। ১৮০০ স্কয়ার ফিটের দু’টি ফ্ল্যাটকে ৩২০০ স্কয়ার ফিটে রূপান্তর করা হয়। এই বাসাটিতে প্রায়ই মতিউর রহমান যেতেন। তবে সেখানে রাতযাপন করতেন না। মতিউর রহমান তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজকে নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় থাকেন। লায়লা কানিজ নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

ধানমণ্ডির ওই ভবনের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল থেকে ২০২৩ সালে এসএসসি পাস করেন ইফাত। এরপর নটরডেম কলেজে ভর্তি হন। ইফাতের বোন ইফতিমা রহমান মাধুবী একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। এ ছাড়ার তার ছোট আরেক ভাই রয়েছে। ভবনের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইফাত বিয়ে করেছেন কিনা সেটা তাদের জানা নেই। তবে একটি মেয়ে নিয়মিত ওই বাসায় আসা-যাওয়া করতে তারা দেখেছেন।

কোরবানিতে ছিল ৭ গরু ও ৪টি খাসি: ইম্পেরিয়াল সুলতানা ভবনের নিচে এবার ঈদে ইফাতের পক্ষ থেকে ৭টি বড় আকারের গরু কোরবানি দেয়া হয়। এ ছাড়া ৪টি খাসিও কোরবানি দেয়া হয়। সাতটি গরুর দাম অর্ধ কোটি টাকার বেশি বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ছাগল কেনা হয় কয়েক লাখ টাকায়।
ইম্পেরিয়াল সুলতানা ভবনের সামনেই এই পশুগুলোর কোরবানি করা হয়। কোরবানি শেষে নানা চাপে মঙ্গলবার বাসা ছেড়ে চলে যান ইফাতসহ তার পরিবার।

এদিকে ছেলে ইফাতের বিলাসী জীবন নিয়ে আলোচনার সঙ্গে রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের বিপুল সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসছে নানা মাধ্যমে। তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের দুই সন্তান। ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণব বিদেশে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরেছেন। মেয়ে ফারজানা রহমান ইস্পিতা কানাডায় পড়াশোনা করছেন।

দৈনিক যুগান্তরের তথ্য অনুযায়ী, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বহুতল বাড়ি, টঙ্গীতে গার্মেন্ট সরঞ্জাম তৈরির বিশাল কারখানা, ভালুকা ও বরিশালে পাদুকা ফ্যাক্টরি, নরসিংদী ও পূর্বাচলে ইকোপার্ক, রিসোর্টসহ নামে-বেনামে সম্পদ রয়েছে মতিউর রহমানের। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইফাত পার্ল কালারের প্রাডো মডেলের বিলাসবহুল যে গাড়িটি (নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ ১৫-৯৩২৭) হাঁকিয়ে বেড়ান, সেটার মালিকানা এসকে ট্রিম অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে। এটি গার্মেন্ট সরঞ্জাম তৈরি ও সরবরাহের বিশাল একটি প্রতিষ্ঠান। টঙ্গীতে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর ডিরেক্টর হিসেবে মতিউর রহমানের ভাই এমএ কাইয়ুম হাওলাদারের নাম পাওয়া গেছে।

প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক তিনি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকও তিনি। আবার প্রাডো গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নথিতে এসকে ট্রিম ইন্ডাস্ট্রিজের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে নিকেতনের ই-ব্লক, ৮ নম্বর রোডের ৩৪ ও ৩৬ নম্বর প্লটে অবস্থিত মুন আইল্যান্ড নামক ভবনের স্যুট নম্বর ৮। ইফাত ও তার মা শাম্মী আখতার প্রিমিও মডেলের (ঢাকা মেট্রো গ ৩২-৬২৩৯) যে গাড়িটি ব্যবহার করেন, সেটির মালিকানা গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে।

নিকেতনের একই ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সামনে সাঁটানো সাইনবোর্ডে লেখা ওয়ান্ডার পার্ক অ্যান্ড ইকো রিসোর্ট। সাইট অফিসের ঠিকানা-মারজাল, রায়পুরা, নরসিংদী। এ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল খায়ের মানিক এবং পরিচালক মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রীর ছেলে তৌফিকুর রহমান ও মেয়ে ফারজানা রহমান।

সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়, এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরের শেয়ারবাজারে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে। সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারের পাশাপাশি প্রাইভেট প্লেসমেন্টেও বিপুল টাকার বিনিয়োগ আছে তার। ২০১২ সাল থেকে শুধু প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় ১৫ কোম্পানিতে ৩৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বিনিয়োগের তথ্য মিলেছে। বাজারমূল্য অনুযায়ী এসব শেয়ারের দাম ছিল ৮৪ কোটি টাকা। মতিউর রহমানের স্ত্রী শাম্মী আখতারের নামে ৫ কোম্পানির অভিহিত মূল্যে ১০ টাকা দরে ৭৯ লাখ ৬৯ হাজার শেয়ার আছে। এর মূল্য ৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

Exit mobile version